চায়নায় পড়তে আসার সুবিধা এবং অসুবিধা । কেন চায়না পড়তে আসবেন অথবা আসবেন না


Study in China

Advantages and Disadvantages

চায়নায় পড়তে আসার ভালো এবং মন্দ ২টি দিক আছে। চায়নাতে কেন পড়তে আসবেন আর কেন চায়নাতে আসবেন না তা নিয়ে আজকের এই প্রতিবেদন।

একটা দেশের সুবিধা যেমন আছে কিছু অসুবিধা ও আছে। ২টি দিক আলোচনা করা যাকঃ

চায়নাতে কেন আসা উচিৎ :

শিক্ষা ব্যবস্থা : চায়না বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনীতির দেশ এবং প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেক এগিয়ে আজকের এই অবস্থানের পিছনে মূলত রয়েছে শিক্ষার প্রসার । আপনি জেনে হয়রান হয়ে যাবেন আজকের এই চায়না ৩০-৩৫ বছর আগে কিছুই ছিলো না ।না ছিলো শিক্ষা , না চাকুরী এবং অর্থনীতি ও ছিলো ভঙ্গুর এই অবস্থার কারণে তাদের সরকার ৫ বছর বিশ্ববিদ্যালয় গুলো বন্ধ রেখে শুধু কারিগরী প্রশিক্ষণ দিত সেই অবস্থা থেকে আজকে চায়না বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। চাইনিজ বিশ্ববিদ্যালয় গুলো আমাদের দেশের মতো স্টুডেন্ট দের এতো ছাড় দিয়ে থাকে না একদম আমাদের দেশের স্কুলে যেভাবে রেগুলার সকাল থেকে বিকাল অবধি ক্লাস হয় এখানে ও ঠিক সেম । ওদের সেমিস্টারে ৮-৯ টা কোর্স থাকে বুঝতেই পারছেন কত চাপে থাকে । তবে আরেকটা জিনিস ইন্টারেস্টিং লাগে ওরা কখনোই ম্যাথ করতে ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে না। মোট কথা ইউনিভার্সিটি একটা শিক্ষার্থীকে কিভাবে যোগ্য করে তোলা যায় সেই কাজটাই করে থাকে। আর তাদের ইনোভেশন এতো বড় অর্থনীতির দেশ হওয়ার পিছনে তাদের শিক্ষার্থীদের নিষ্ঠা ও শিক্ষকদের দায়িত্ববোধ নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। বর্তমানে ৫ লাখের মতো বিদেশী শিক্ষার্থী চায়নাতে অধ্যয়নরত আছে । বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এখানে পাড়ি জমাচ্ছে জ্ঞান আহরণের জন্য।

blank

লিভিং কস্ট : চায়নার জীবন ব্যবস্থা ওয়ার্ল্ডের মধ্যে সবচাইতে এফোর্ডেবল দেশ গুলোর মধ্যে অন্যতম । তবে সস্তা বলেই যে মান খারাপ তা কিন্তু নয় কোন অংশে পশ্চিমা দেশ গুলো থেকে কম না। একজন স্টুডেন্ট খুব কম খরচে এখানে চলতে পারে যদি সে স্টুডেন্ট ডরমিটরি তে থাকে নিজে রান্না করে খায় তার ফুড কস্ট গড়ে ৩-৫ হাজার ইনাফ এটা সিটির উপর ডিপেন্ড করে আর খাদ্যাভ্যাস এর উপর। আর যদি কেউ বাহিরে থাকে সেক্ষেত্রে ১০০০-১৫০০ ইউয়ানের মধ্যে ওয়েল ফার্নিশ ২-৩ রুমের ফ্ল্যাট পাওয়া যায় । যেগুলো তে সব কিছুই থাকবে জাস্ট আপনি গিয়ে থাকবেন ব্যবহার্য সকল কিছু মালিক পক্ষ দিবে।

যাতায়াত ব্যবস্থা: চায়নার যাতায়াত ব্যবস্থা বিশ্বে সমাদৃত । ইভেন শিক্ষার্থী ছাড়াও প্রতি টা নাগরিক এর জন্য রয়েছে পুরো সিটি এক ইউয়ান এ ঘুরার সুবিধা। তাছাড়া দূর পাল্লার ক্ষেত্রে রয়েছে আধুনিক বাস, হালের বুলেট ট্রেন , বিমান প্রায় প্রতিটা গুরুত্তপূর্ণ শহরে বিমানবন্দর আছে।

শিক্ষার পরিবেশ : এইখানে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে পড়া শুনার পরিবেশ এতটাই ভালো যে নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। মনোরম পরিবেশ চোখ জুড়ানো ক্যাম্পাস , অনেক ক্যাম্পাসে কৃত্রিম লেক, পার্কের মতো ছোট ছোট বসার স্থান যা একজন শিক্ষার্থীর মাইন্ড ফ্রেশ করার জন্য নিয়ামক ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া ক্লাস রুমের এনভায়রনমেন্ট ও যথেষ্ট ভালো সুসজ্জিত ক্লাস রুম মাল্টিমিডিয়া ব্যবস্থা । স্টুডেন্ট ডরমিটরি তে সবার জন্য আলাদা টেবিল, বেড, আলমারি, ডেস্ক মোট কথা সব কিছুই পড়া শুনার অনুকূলে।

blank

স্টাডি কস্ট : বর্তমানে চায়নাতে প্রচুর পরিমাণে স্কলারশীপ দিচ্ছে টিউশন ফিস হোস্টেল ফিস ওয়েভার , টিউশন হোস্টেল ফিস ফ্রী সাথে মান্থলি এলাউন্স ও দিয়ে থাকে। যারা পর্শিয়াল স্কলারশিপে আসে তাদের ইউনিভার্সিটি তে নাম মাত্র ফিসে পড়ার সুযোগ দিচ্ছে। যেটা বাংলাদেশ থেকে অনেক কম।

গবেষণার সুযোগ: চায়নাতে সব কিছু র দাম নাগালের মধ্যে থাকা এবং সহজলভ্যতার কারণে শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে গবেষণা করতে পারে।তাছাড়া ইউনিভার্সিটি গুলোতে ল্যাব সুবিধা ও প্রচুর ফান্ডিং থাকে।

নিরাপত্তা : এটা চায়নার একটা বিশেষ দিক তারা নিরাপত্তা নিয়ে কখনো কার্পণ্য করেনা। স্টুডেন্ট ডরমিটরি ২৪ ঘণ্টা সিসি টিভি নিয়ন্ত্রিত এবং আপনি নিজের রুম থেকে বের হলেও সর্বত্র আপনি ক্যামেরার ভিতরই থাকবেন প্রতিটা রাস্তায় মোড়ে, গেট এ সর্বত্রই সিসিটিভির নিয়ন্ত্রনে।

ব্যবসা করার সুবিধা: এখানে আসলে আপনি এক্সপোর্ট ইমপোর্ট বিজনেস সম্পর্কে প্রচুর ধারণা হবে এবং চাইলেই নিজে ব্যবসা করতে পারবেন।

কোর্স শেষে জবের সুযোগ: এখানে স্টাডি করে আপনি চাইলেই কোর্স শেষে জব করতে পারবেন তবে চায়নাতে জব করতে হলে চাইনিজ জানা টা আবশ্যক।

কেন আসা উচিৎ নয় :

স্টুডেন্টদের জব পারমিট নেই: এখানে শিক্ষার্থীদের কাজের সুবিধা নেই এবং এটা পুরোপুরি অবৈধ। যদি কেউ করে থাকে ইউনিভার্সিটি জানতে পারলে সরাসরি দেশে ফেরত পাঠাবে।

হোম সিকনেস: বর্তমানে প্রচুর স্টুডেন্ট চায়না আসতেছে যাদের ম্যাক্সিমাম ইয়ং বা যারা আগে কখনো ফ্যামিলি ছাড়া থাকেনি ।এমন অনেক কেই দেখেছি আসার পর ফ্যামিলি ছাড়া থাকতে পারবেনা দেখে দেশে ব্যাক করেছে।

ড্রাগ নেয়ার অভ্যাস: ড্রাগ নেওয়ার অভ্যাস থাকলে চায়না আপনার জন্য না । কারণ এখানকার নারকো টিক্স ডিপার্টমেন্ট খুবই একটিভ মাদকের সাথে জড়িত থাকলে ডেথ পেনাল্টি থেকে জেল এবং দেশে ডিপো র্ট পর্যন্ত করে থাকে। সম্প্রতি ইয়াংযু ইউনিভার্সিটি থেকে ৩২ জন কে দেশে পাঠানো হয়েছে যার অধিকাংশ বাঙ্গালী।

উগ্র লাইফ স্টাইল: যদি ভেবে থাকেন শুয়ে বসে দিন কাটাবেন সন্ধ্যায় বারে, ক্লাবে রাত কাটাবেন মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করবেন তাহলে না আসাই আপনার জন্য উত্তম ।কারণ এসব জিনিস নিয়ে আপনি কোর্স পাস করতে পারবেন না ,পারলেও গুড গ্রেড পয়েন্ট নিয়ে পাস করতে পারবেন না তখন এই শিক্ষা লাইফে কাজে লাগবে না।

চাইনিজ “ল” : চাইনিজ ল অনেক স্ট্রিক্ট আপনি যদি কোন চাইনিজ ল ব্রেক করেন তারা আপনাকে ক্রিমিনাল হিসাবেই ট্রিট করবে এবং প্রয়োজনে ফাইন করবে এবং দেশ থেকে সাথে সাথে বহিষ্কার করবে। তাই চায়না থাকতে হলে তাদের ল নিয়ে আপনাকে কনসার্ন থাকতে হবে । শুধু গভঃ ল না ইউনিভার্সিটি ল নিয়েও কনসার্ন থাকা আবশ্যক ।

আবহাওয়াঃ যাদের ওয়েদার জনিত রোগ আছে বা প্রচণ্ড ঠান্ডায় প্রচণ্ড গরমে শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে যান তারা চায়নাতে এপ্লাই এর ক্ষেত্রে ভেবে আসবেন কারণ এখানে শীতকালে প্রচুর ঠান্ডা সাথে তুষার এবং গরম কালে চামড়া ঝলসানো গরম থাকে তাই আসার সময় ভেবে আসবেন।

অমনোযোগী স্টুডেন্টস যারা এমনিতেই পাস করবো এমন মনভাবাপন্ন স্টুডেন্টস ও চায়না আসা থেকে বিরত থাকবেন কারণ যখন এখানে এসে আসল অবস্থা সম্মুখীন করবেন তখন উপলব্ধি করবেন আপনি কত ভুল চিন্তা পোষণ করে ছিলেন।

নোটঃ চায়নাতে ডিপ্লোমা অথবা ব্যচেলর অথবা মাস্টার্স অথবা পিএইচডি যাই করতে যান না কেন, HSK লেভেল 4 না পাস করলে জীবনেও সার্টিফিকেট পাবেন না। তখন চায়না পড়তে আসা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়ে যাবে। আর HSK লেভেল 4 পাস করা এখন অনেক কঠিন হয়ে গিয়েছে!