গাছকাটা ঝর্ণা (Gaskata Waterfall), রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার গাছকাটাতে অবস্থিত একটি ঝর্ণা যা ধন্দতাং (Dhondtang Jhorna) ঝর্ণা নামেও পরিচিত। সৌন্দর্যের দিকে এটা এক কথায় অসাধারণ। এই ঝর্নার ট্রেইলটা বেশ সুন্দর, আর বেশ বড় কিছু ক্যাসকেড আছে। মজার ব্যাপার হলো, গাছকাটা ঝর্ণার পাশাপাশি আপনি দেখতে পারবেন মুপ্পোছড়া, ধুপপানি, ন’কাটা। ২দিনে সবগুলো কভার করতে পারবেন।
বিলাইছড়িতে যারা ঘুরতে যায় তারা সর্বোচ্চ মুপ্পোছড়া, ন-কাটা, ধুপপানি ঝর্না দেখেই ফিরে আসেন, কিন্তু গাছকাটা এর মত সুন্দর ঝর্নাটা কেউই দেখতে যায় না। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল এর ঝর্নার পাশেই আকারে এর থেকে কিছুটা ছোট কিন্তু সুন্দর আরেকটা ঝর্না আছে। ঝর্নাতে যেতে আসতে প্রায় ৪-৫ ঘন্টা লাগবে।
সাথে যা থাকতেই হবে
ভোটার আইডি কার্ড (1st priority) অন্যথায় কলেজ/ভার্সিটি আই,ডি,কার্ড বা জন্মসনদ/পাসপোর্ট এর ফটোকপি যথেষ্ট পরিমান পলিথিন ট্রেক করার উপযোগী জুতা/সেন্ডেল
যেভাবে যাবেন
রাত ১০টার ঢাকা থেকে কাপ্তাই এর সরাসরি বাসে উঠতে হবে, ভাড়া ৫৫০ টাকা। যাতে সকাল ৮.৩০ টায় কাপ্তাই হতে বিলাইছড়ির লোকাল বোট ধরতে পারেন। কারন এর পরের লোকাল বোট ১০:৩০ টায়। আপনি চাইলে রিজার্ভ বোটও নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে ভাড়া ১০০০-১৫০০টাকা। ভোরে কাপ্তাই পৌছে সকালের নাস্তা করে পরেরদিন রাত ৮:৩০ টার ফিরতি টিকেট করে নিবেন। কারন কাপ্তাই থেকে এটাই ঢাকার শেষ বাস। বাস স্ট্যান্ড থেকে সোজা হাটলেই কাপ্তাই ঘাট। ঠিক ৮:৩০ টায় বোট ছাড়ে। ভাড়া ৫৫ টাকা।
প্রায় ২ঘন্টার এই বোট জার্নিতে, কাপ্তাই লেকের সৌন্দর্য আপনার রাতের বাস-জার্নিকে অনেকটাই ভুলিয়ে দিবে। পথে আর্মির প্রথম চেকপোস্ট পড়বে। সেখানে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। সকাল ১০:৩০ – ১১ টার মধ্যে বিলাইছড়ি পৌছে যাবেন। ওখান থেকে সোজা হাসপাতাল ঘাটের দিকে চলে যেতে পারেন। সেখানে ‘নিরিবিলি বোর্ডিং’ পাবেন ফ্রেশ হবার জন্যে। ৪ জনের ডাবল বেডের রুম ৫০০ টাকা, ২ জনের সিঙ্গেল বেডের রুম ৩০০ টাকা।
এরপরে দুইদিনের জন্য বোট ঠিক করে নিবেন। ২দিনের ৪টা ঝর্নার জন্য বোট ভাড়া ২৮০০-৩৫০০ টাকা। হোটেলে ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে বোটে উঠে পরেন। রওনা হবার আগে ‘ভাতঘর’ নামের হোটেল থেকে দুপুরের খাবার প্যাকেট করে নিয়ে নিবেন (ডিম ভাজি+আলু ভর্তা+ডাল+ভাত= ৬৫ টাকা)।
ট্রলার ছাড়ার ৩০ মিনিট পর মুপ্পোছড়া ট্রেইলের মাথায় (বাঙ্গালকাটা) পৌছে যাবেন। মাঝিকে বলে রাখলে মাঝিই গাইড ঠিক করে রাখবে (৫০০ টাকা)। প্রায় ১:৩০ ঘণ্টা ট্রেকিং-এর পর মুপ্পোছড়া পৌছাবেন। পথে ৫/৬ টা ছোট ছোট ঝর্ণা দেখতে পাবেন। মুপ্পোছড়া ঝর্ণার সৌন্দর্য দেখে নৌকায় চলে আসবেন। নৌকা কিছুক্ষন চলার পরে নৌকা থেকে নেমে আরও প্রায় ১:৩০ ঘণ্টার মত হাটলে আপনি গাছকাটা ঝর্ণা দেখতে পারবেন। এক্ষেত্রে কোন গাইড লাগবে না কারন মাঝিই নিয়ে যাবে, ঐভাবেই কথা বলে নিবেন। এভাবেই প্রথম দিনের যাত্রা শেষ করে হোটেল এ ফিরবেন।
এখানে বলে রাখি আপনি যদি সময়ের সদ্ব্যবহার না করেন তাহলে গাছকাটা / ধন্দ তাং ঝর্ণা দেখার সময় পাবেন না। এক্ষেত্রে বিকালে নৌকায় কাপ্তাই লেক ঘুরে সময় কাটাতে পারেন।।
গাছকাটা ঝর্ণার রুট প্ল্যান
ঢাকা – কাপ্তাই জেটিঘাট – গাছকাটা আর্মি ক্যাম্প – দোছড়িপাড়া। এখান থেকে ট্রেকিং করে ধন্দতাং/ধন্দতারাং ঝর্নায় যেতে হবে।
কোথায় থাকবেন
বিলাইছড়িতে “স্বপ্ন বিলাস” নামক আবাসিক হোটেলে প্রতিজন ২০০ টাকা করে থাকতে পারবেন। এছাড়া হাসপাতাল ঘাটে নিরিবিলি বোর্ডিং এ থাকতে পারবেন।
সতর্কতা
আপনাকে অবশ্যই সময়ের সাথে চলতে হবে। কারন এখানের লোকাল বোট, রাঙ্গামাটি থেকে ফিরতি বাস ( রাত ৮:৩০) একদম সঠিক সময়ে ছাড়ে। এখানে Teletalk আর Robi ছাড়া অন্য কোন সিমের নেটওয়ার্ক থাকে না।
ম্যালেরিয়া এক বিভিষিকার নাম,যা পার্বত্য অঞ্চলে স্ত্রী এনোফিলিস মশার কামড় থেকে শুরু হয়। জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থার মতে – পার্বত্য অঞ্চলে ৪ ধরনের ম্যালেরিয়া প্রকোপ,আর প্রচলিত প্রতিষেধক গুলো সব ধরনের ভাইরাসে কাজ করে না। বর্ষাকাল হচ্ছে সবচাইতে ঝুঁকিপুর্ন সময়, তাই মশার কামড় থেকে সতর্ক থাকতে হবে। ওডোমাস, মশারি ব্যবহার করা উত্তম। আর ট্যুর থেকে ফেরার ৬ মাসের ভেতর জ্বর হলে অনতিবিলম্বে কয়েকবার রক্ত পরীক্ষা করবেন চিকিৎসক এর পরামর্শ অনুযায়ী।
WhatsApp us