টাকা জাদুঘর (Taka Museum) বা মুদ্রা জাদুঘর বাংলাদেশের ঢাকা জেলার মিরপুরে বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমির দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত। ২০১৩ সালে টাকা জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়। মূলত ২০০৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল ভবনে কারেন্সি মিউজিয়াম চালু করা হয়। টাকা মিউজিয়ামটি আসলে তাঁর বর্ধিত এবং আধুনিক রুপ। প্রাচীন বাংলা থেকে শুরু করে আধুনিক কাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ের ধাতব মুদ্রা এবং কাগুজে নোট সংরক্ষণ এবং প্রদর্শনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এই টাকা জাদুঘরে। সেই সঙ্গে এখানে জায়গা পেয়েছে মুদ্রা সংরক্ষণের প্রাচীন কাঠের বাক্স ও লোহার সিন্দুক।
জাদুঘরের প্রবেশপথের বাম দিকের দেয়ালে তৈরি করা হয়েছে টাকার গাছ। ভবনের গায়ে গাছের মতো রূপ দেওয়া হয়েছে স্টিলের কাঠামো, সেই কাঠামোতে সাজানো হয়েছে বিভিন্ন সময়ের মুদ্রার অনুলিপি। আরও একটু সামনে এগোতেই দেখা মিলবে দেয়ালে সুদৃশ্য টেরাকোটা। প্রাচীনকাল থেকে আধুনিককাল পর্যন্ত লেনদেনের ধারাবাহিক চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই টেরাকোটায়।
দ্বিতীয় তলাকে দুইটি গ্যালারীতে সাজানো হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশে মুদ্রা ব্যবহারের বিবর্তনের ইতিহাসের সচিত্র উপস্থাপন যেন প্রথম গ্যালারির শোকেসগুলো। খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতক থেকে খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে ব্যবহৃত ছাপাঙ্কিত রুপার মুদ্রা রয়েছে প্রথম শোকেসে। এভাবে খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতক থেকে দ্বিতীয় শতকে ব্যবহৃত কৃষাণ মুদ্রা, সপ্তম শতক থেকে নবম শতকে ব্যবহৃত হরিকেল রূপার মুদ্রা, দিল্লির সুলতানি আমলের মুদ্রা, বাংলার স্বাধীন সুলতানদের রাজত্বের সময় ব্যবহৃত মুদ্রাসহ ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান আমল হয়ে বাংলাদেশি মুদ্রা রাখা কাচের ঘরে।
টাকা জাদুঘরের দুই নম্বর গ্যালারির প্রদর্শনী সাজানো হয়েছে নানা দেশের মুদ্রায়। চীন, আফগানিস্তান, কম্বোডিয়া, হাইতি, বাহরাইন, নিউজিল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাগুজে নোট ও মুদ্রার দেখা মিলবে এখানে। বিচিত্র সেসব নকশা এবং তাদের উপস্থাপনা। এমন নানা দেশের টাকা দেখা শেষে নিজের দেশের লাখ টাকার নোটে নিজের ছবি ছাপিয়ে মাত্র ৫০ টাকার বিনিময়ে আপনিও হয়ে যেতে পারেন লাখোপতি।
টাকা জাদুঘরে রয়েছে স্যুভেনির শপ। স্মারক মুদ্রা ও নোট, জাদুঘরের প্রকাশনাসহ টাকা জাদুঘরের মনোগ্রাফ, বাংলাদেশ ব্যাংকের রজতজয়ন্তীতে প্রকাশিত স্মারক, বাংলাদেশে আয়োজিত বিশ্বকাপ ক্রিকেটের স্মারক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতার ৯০ বছর পূর্তি স্মারক, বিজয় দিবসের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তৈরি স্মারক, জাপানিজ কয়েন সেটসহ নানা স্মারক রয়েছে এখানে। কোন স্মারকের মূল্য কত, তা দোকানের বাইরে একটি কাগজে সাঁটানো আছে।
টিকেট মূল্য এবং সময়সূচী
বৃহস্পতিবার আর সরকারি ছুটির দিন বাদে প্রতিদিনই সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যে ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে টাকা জাদুঘর। শুধুমাত্র শুক্রবার এটি বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যে ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এটি পরিদর্শনে কিংবা প্রবেশে কোন টিকেট লাগে না, একদম ফ্রি। সাপ্তাহিক বন্ধ বৃহস্পতিবার।
কিভাবে কিভাবে
যাবেন ঢাকার যে কোন স্থান থেকে সরাসরি চলে যেতে হবে মিরপুর – ১ কিংবা মিরপুর – ১০ নাম্বার গোলচত্ত্বর। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে, রিক্সা করে কিংবা অন্য লোকাল বাসে করে চলে যেতে পারবেন টাকা জাদুঘর। তবে মানুষজন বাংলাদেশ ব্যস্নগকা ট্রেনিং সেন্টার নামেই এই জায়গাকে চিনে থাকেন বেশী। মিরপুর-১ কিংবা মিরপুর-১০ নাম্বার গোলচত্ত্বর থেকে রিক্সা ভাড়া ১৫-২০ টাকা।
WhatsApp us