আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ

blank
October 18, 2020
blank
পেহেলগাম – Pahalgam
October 19, 2020
Show all

আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ

blank

আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ যা ব্রিটিশদের কাছে কালাপানি নামে পরিচিত ছিলো। চারদিকে নীল জলরাশি। তার মাঝে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে স্থলভূমি। রয়েছে সবুজ পাহাড়ি অরণ্য আর রুপালি বালুকাবেলা। বর্তমান সময়ে পর্যটকদের কাছে নীলপানির দ্বীপ হিসেবে এটির গ্রহনযোগ্যতা বেশ। বঙ্গোপসাগরের উপরে উত্তর থেকে দক্ষিণ দিক বরাবর ৫৭২টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত হয়েছে আন্দামান ও নিকোবর আইল্যান্ড। কিছু উত্তর দিকের দ্বীপ নিয়ে গঠিত আন্দামান (Andaman Islands) যার রাজধানী পোর্ট ব্লেয়ার আর কিছু দক্ষিনের দ্বীপ নিয়ে গঠিত নিকোবর যার রাজধানী Car Nicobar। সাধারণ পর্যটকদের নিকোবর ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারি বিধিনিষেধ আছে। তাই নিকোবর ভ্রমণ বন্ধ। আন্দামান ও নিকোবর আইল্যান্ডের একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বীর সাভারকার বিমানবন্দর যা পোর্ট ব্লেয়ার এ অবস্থিত, ছোট্ট কিন্তু ছিমছাম।
নারকেল গাছের ছায়ায় নির্জন দ্বীপপুঞ্জের কোথাও কোথাও দেখা যাবে হরিণের দল। হাত বাড়ালেই সমুদ্রের জলে মিলবে বিবিধ রঙের প্রবাল ও রঙিন মাছের দেখা। মনোরঞ্জনের জন্য সমুদ্রবুকে রয়েছে ওয়াটার স্পোর্টসের ব্যবস্থা।
সমুদ্রবুকে ভ্রমণের পাশাপাশি আন্দামানে দেখে নেওয়া যেতে পারে ভারতের একমাত্র জীবন্ত আগ্নেয়গিরি ব্যারেন আইল্যান্ড। আদিম জনজাতি অধ্যুষিত এই দ্বীপে রয়েছে স্বাধীনতা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত সেলুলার জেল ও ভাইপার দ্বীপ। এই ভাইপার দ্বীপে রয়েছে ১৪ তলার লাইটহাউস। ১৪৫টি সিঁড়ি ভেঙে লাইটহাউসের উপরে উঠে উপভোগ করতে পারেন প্রকৃতির মনোরম দৃশ্য। পাশাপাশি ঘুরে দেখতে পারেন দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী শহর পোর্ট ব্লেয়ার। চারদিকে সমুদ্র ও পাহাড়ের বেষ্টনীতে গড়ে উঠেছে এই সুন্দর ও গোছানো শহর। বেড়াতে পারেন হ্যাভলক, রস আইল্যান্ড, লিটল আন্দামান ও নীল দ্বীপে।

রস আইল্যান্ড
যেখানে সেলুলার জেলের ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত ব্রিটিশ অফিসার ও তাদের পরিবারদের বিলাসী জীবনযাপন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। রস একটি ছোট্ট দ্বীপ যা মোটর বোটে মাত্র ১০ মিনিটে যাওয়া যায়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও উন্নত জীবনযাপনের ব্যবস্থাপনার জন্য এ দ্বীপ তখন প্যারিস অব ইস্ট নামে পরিচিত ছিল, যা এখনো দৃশ্যমান সুইমিংপুল, পানি শোধনাগার, ডিজেল জেনারেটর, ছাপাখানা, চিত্রশালা, চার্চ, বেকারি, উন্মুক্ত মঞ্চ ও ক্লাব দেখে অনেকখানি অনুধাবন করা যায়।

হ্যাভলক আইল্যান্ড
পোর্টব্লেয়ার থেকে উত্তর-পূর্বে ৪১ কিলোমিটার দূরে হ্যাভলক আইল্যান্ড। হ্যাভলক দ্বীপই হল আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে সবচেয়ে বড় দ্বীপ৷ এই দ্বীপের নামকরণ হয়েছিল ব্রিটিশ জেনারেল স্যার হেনরি হ্যাভলক-এর নামানুসারে৷ এই আইল্যান্ডের বর্তমান জনসংখ্যা সাড়ে ৬ হাজারের মত, যার অধিকাংশরাই বাঙালি৷ এঁদের অনেকেই এসেছেন ১৯৭১ সালের যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ থেকে৷
হ্যাভলক আইল্যান্ডের সব থেকে জনপ্রিয় বিচ হল রাধানগর বিচ৷ ২০০৪ সালে টাইম পত্রিকার মতে এই বিচ ছিল ‘বেস্ট বিচ ইন এশিয়া’৷ অর্ধচন্দ্রাকৃতি বিচে শ্বেতশুভ্র রুপোলি বালুচর রোদে ঝকঝক করতে থাকে। তীরে ঘন নারকেলের বন দূর সমুদ্রে নেমে গিয়েছে বেশ খানিকটা। রাধানগর ছাড়াও আর যে তিনটি বিচ জনপ্রিয় সেগুলি হল কালাপাথর বিচ, বিজয়নগর বিচ এবং এলিফ্যান্ট বিচ৷ কালাপাথর বিচে
সমুদ্রের মধ্যে কালো-কালো বড় পাথর জেগে আছে। কালাপাথর বিচ থেকে এলিফ্যান্ট বিচ যেতে পারেন। এলিফ্যান্ট বিচ ট্রেক করে যেতে চাইলে অবশ্যই ট্রেকিং পয়েন্টে দুপুর ১টার মধ্যে এন্ট্রি করতে হবে।

যেভাবে যাবেন
পোর্ট ব্লেয়ারের ফেনিক্স-বে জেটি থেকে দিনে তিনটি জাহাজ ছাড়ে হ্যাভলকের উদ্দেশে। জাহাজ ছাড়ে সকাল ৬.০০, ১১.০০ (ভায়া নীল), দুপুর ২.০০, ঘণ্টা তিনেক সময় লাগে। দ্রুতগামী বিলাসবহুল এম ভি ম্যাক্রুজ ছাড়ছে সকাল ৮.৪৫। প্রয়োজনে অনুসন্ধান: ০৩১৯২-২৩১৭৯৪ নম্বরে। ভাড়া কেবিন ৬৫ টাকা, আপার ডেক/বাঙ্ক ৩৫ টাকা সাধারণ জাহাজে।

নীল আইল্যান্ড
হাভেলক ভ্রমণ শেষে শিপে নীল দ্বীপ তবে এবারের যাত্রা ৪৫ মিনিটের। এ দ্বীপ বিখ্যাত তার জীবন্ত প্রবালের জন্য। এই ছোট দ্বীপটির জনসংখ্যা খুবই কম। এখানকার সৈকতে ছড়িয়ে অজস্র সাদা প্রবাল। ইতিউতি ছড়ানো নানা রঙের ঝিনুক, ছোট শাঁখ। এ সব অবশ্য সংগ্রহ করা নিষিদ্ধ। মাত্র ২ ঘণ্টার গ্লাস বটম বোটে স্বচ্ছ পানিতে জীবন্ত প্রবাল আর মাছের লুকোচুরি সারা জীবন মনে রাখার মতো স্মৃতি। এ দ্বীপেই আছে কোরাল ব্রিজ।
দুপুর ৩.০০ হ্যাভলক ছেড়ে সরাসরি জাহাজ বিকেল ৪ঃ৩০ নীলে পৌঁছায়। দূরত্ব মাত্র ১৫ কিমি। ভাড়া কেবিন ৮০ টাকা, বাঙ্ক ৫০ টাকা, ডেক ৩৫ টাকা। নীল থেকে পোর্ট ব্লেয়ার এ ফেরার জাহাজ বিকেল ৪ঃ৩০ এ। ২০ কিলোমিটার জলপথের ভাড়া-কেবিন ৬০, বাঙ্কে ৪৫, ডেক ৩৫ টাকা। সময় লাগে দু’ঘণ্টা।

লং আইল্যান্ড
ডলফিন দেখতে চাইলে যেতে পারেন লং আইল্যান্ড। ভ্রমণপ্রেমিদের জন্য অন্যতম ভ্রমণের স্থান লং আইল্যান্ড, সেখানে গিয়ে দেখতে পাবেন ডলফিনদের রক্ষণাবেক্ষণ আর বালুকাময় সৈকত তো রয়েছেই।

নর্থ বে আইল্যান্ড
এখানে রয়েছে স্কুবা ডাইভিং সহ নানা ওয়াটার স্পোর্টের আয়োজন।

কচল আইল্যান্ড
অতুলনীয় সুন্দর দ্বীপ কচল। শীত ও গ্রীষ্ম দুই ঋতুতেই এখানে যেতে পারেন, সব সময়ই আপনাকে মুগ্ধ করে দিবে। সামুদ্রিক মাছ ও প্রবাল দ্বীপের কচলে সাঁতার কাটার জন্য এবং সমুদ্রস্নান করার জন্যও উৎকৃষ্ট। এখানে রয়েছে বিভিন্ন উদ্ভিদ ও বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর সমারোহ। এখানে কাচের জলের মত স্বচ্ছ জল দেখতে পাবেন।

কিভাবে যাবেন
কলকাতা থেকে আকাশপথে আন্দামান পৌঁছতে পারেন দু’ঘণ্টায় আর জাহাজে গেলে সময় লাগবে চারদিন। কলকাতা, বিশাখাপত্তন ও চেন্নাই থেকে জাহাজে করে আন্দামান যাওয়া যায়। এক দ্বীপ থেকে আর এক দ্বীপে যাওয়ার জন্য মিলবে লঞ্চ, জাহাজ, বোট ও ফেরির ব্যবস্থা। আর স্থলভূমিতে যাতায়াত করা যেতে পারে অটো, রিকশা, ট্যাক্সি ও বাসে।

কোথায় থাকবেন
থাকার জন্য রয়েছে অজস্র আধুনিকমানের হোটেল, গেস্ট হাউস ও কটেজ, তেমনি বাজেট হোটেল ও রয়েছে প্রচুর। কিন্তু সমস্যা হলো অনেক বাজেট হোটেলে বিদেশীদের রাখতে চায় না। ৫০০-৭০০ রুপীতে অনেক বাজেট হোটেল পাওয়া যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *