কংথং গ্রামটি (Kongthong Village) ভারতের চেরাপুঞ্জি থেকে ৫৬ কিলোমিটার দূরে এবং শিলং থেকে ৫৪ কিমি দূরে অবস্থিত একটি গ্রাম যেখানের মানুষদের নাম থাকা সত্ত্বেও সবাই পরস্পরকে ডাকেন সুরে সুরে। সবার জন্য রয়েছে পৃথক নামের সুর! এক জনের ডাকে মোটেই অন্য জন ভুল করে সাড়া দেন না। আর এই কারনেই এই গ্রামের নাম হয়েছে A whistling village যেখানে নামের বদলে পাখির আওয়াজ করে একে অপরকে ডাকা হয়।
তুরষ্কের কুস্কয় আর স্পেনের লা গোমেরা থেকে ভারতের চেরাপুঞ্জির কংথং। ভৌগোলিক অবস্থানে তিনটি জায়গা তিনটি পৃথক দেশের হলেও তাদের ভাব প্রকাশের মাধ্যম কিন্তু একটা, ‘পাখির ডাক’। সেটাই তাদের মিলিয়ে দিয়েছে একজায়গায়।
মেঘের আড়ালে ঢাকা ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম কংথং (হুইসলিং ভিলেজ) এর বাসিন্দার সংখ্যা প্রায় ৭০০। মেঘালয়ের এই মাতৃতান্ত্রিক গ্রামের মূল জীবিকা ঝাঁটার কাঠির গাছ চাষ করা। আর এই কাজ করেই তারা আর্থিকভাবে স্বনির্ভর। কিন্তু নিজেদের অভ্যাস ছাড়তে পারেননি। পাখির ডাকও তো একটা ভাষা। যার সঙ্গে মনের যোগ রয়েছে, বিশ্বাস করেন তারা। শব্দ তো ব্রহ্ম, হোক না সে পাখির ডাক। গ্রামের লোকজন জানান, আগেকার দিনে শিকারের সময় এই ভাবে নাম ডাকার শুরু। সেই প্রথাই চলছে। শুধু নাম-গান নয় তার সঙ্গে এক লোকগাথা ও বয়ম্বর ধাঁচের প্রথাও জড়িয়ে। প্রতি বছর গ্রীষ্মকালের নির্দিষ্ট পূর্ণিমায় গ্রামের অবিবাহিত নারী-পুরুষ আগুন জ্বেলে গানের আসর বসায়। যে ছেলে সবচেয়ে ভাল গান গায়, সে গ্রামের সবচেয়ে সুন্দরী কুমারীকে বিয়ে করার অধিকার পায়।
কংথং ট্যুরিজম কো-অপারেটিভ সোসাইটির চেয়ারম্যান রোথেল খংসিট জানান, বহু যুগ ধরে এই গ্রামের গর্ভবতী মায়েরা পাহাড়-জঙ্গলে কান পেতে পাখির ডাক, ঝর্নার শব্দ থেকে সুর বোনেন। সন্তান জন্মের পরে, সেই সুর তার কানের কাছে গুনগুন করা হয়। সুর থেকে জন্ম নেয় গান। যার নাম জিংগারওয়াই লেওবেই। আর ওই গানের প্রথম অক্ষর আর তার সুরটাই হয়ে যায় সন্তানের নাম। শিশুও জন্মের পরে তার নামের ‘জিংগারওয়াই লেওবেই’টাই আগে আওড়াতে শেখে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে গ্রামের মানুষ লেখাপড়া জানে না! গ্রামের প্রায় প্রতিটি শিশুই স্কুলে যায় এবং এখানকার অনেকেই স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে শহরের উদ্দেশ্যে চলে গিয়েছে কাজের খোঁজে।
কংথং গ্রামের দুই বোন সিডিয়াপ খংসিট ও সিথোহ খংসিটের জীবন নিয়ে স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি ‘মাই নেম ইজ ইউউউউ’ গড়েছেন মণিপুরি পরিচালক ওইনাম দোরেন। দেখানো হয়েছে, তাঁদের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনার জন্য শিলং শহরে গিয়ে নগরসভ্যতা, পশ্চিমী গানের সংস্পর্শে এলেও কী ভাবে বাঁচছে ‘জিংগারওয়াই লেওবেই’। দেশ-বিদেশে পুরস্কারপ্রাপ্ত ওই সিনেমা দু’বার দেখেছেন অসমের রাজ্যপাল বনোয়ারিলাল পুরোহিত। পরে তিনি সেই গ্রামের দেড়শো মানুষকে রাজভবনে আমন্ত্রণ জানান। নিজের কানে শোনেন সুর-নামের গল্প।
ঘোরার জায়গা
যেদিন যাবেন সেদিন গ্রামটা ভালো করে ঘুরে নিতে পারেন, সাথে গাইড নিলে ভালো হয়। গ্রামে ঘোরার সময় শুনতে পাবেন পাখির আওয়াজে গ্রামবাসীরা ডাকছে একে অপরকে। গাইডকে বললে এসবের অর্থ বুঝিয়ে দেবে। পরেরদিন গাইড নিয়ে ট্রেকিং এর জন্যে বেরিয়ে পরতে পারেন। কাছেই রয়েছে Longslang view point, সময় নেবে ৩০ মিনিট অথবা যেতে পারেন local living root bridge , যা সময় নেবে ৪ ঘন্টা।
গাইড এর খরচ = ৪০০-৬০০ রুপী প্রতিদিন।
কিভাবে যাবেন
ডাউকি, শিলং বা চেরাপুঞ্জি থেকে বেশ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে কংথং গ্রামে যেতে হয়। শিলং থেকে প্রতিদিন দুপুর দুইটায় একটা মাত্র শেয়ার জীপ কংথং এর উদ্দেশ্যে রওনা করে মানুষ এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু জিনিস নিয়ে। গ্রামে পৌছাতে পৌছাতে সন্ধ্যা বা রাত হয়ে যায়। তবে আপনি চাইলে চেংরাপুঞ্জি থেকে শিলং এর শেয়ার জীপে করেও এই গ্রামে যাত্রা করতে পারেন তবে সেক্ষেত্রে আপনাকে নেমে যেতে হবে মৌজরং (Mawjrong) নামের স্থানে। সেখান থেকে শেয়ার জীপ কংথং যায়। তবে শেয়ার জীপ কমই পাওয়া যায়। আপনাকে গাড়ী রিজার্ভ করে কংথং যেতে হবে।
তবে যে কোন জায়গা থেকে রিজার্ভ গাড়ীতে কংথং যাওয়া যাবে। শিলং থেকে কংথং এর ভাড়া পড়বে রিজার্ভে ৩০০০-৪০০০ রুপি। ডাঊকি থেকে যেতে ভাড়া গুনতে হবে ২০০০-২৫০০ রুপী।
কোথায় থাকবেন
কংথং গ্রামটিতে একটি মাত্র হোম স্টের ব্যাবস্থা রয়েছে, নাম “Kongthong Travellers Nest”। এখানে ২টি কটেজ এবং টেন্ট এর ব্যবস্থা রয়েছে। Advance booking করতে পারেন। কটেজ গুলো ২০০০ রুপী, চারজন থাকতে পারবে। এচ্ছাড়া ২ জন থাকবার মতো তাবুর ব্যবস্থা রয়েছে। ৩০০ রুপী করে গুনতে হবে এক একজনকে সেক্ষেত্রে। বুকিং এর জন্যে যোগাযোগঃ রোথেল – +91-9856060347
WhatsApp us