হিমাচলের নিরালা নির্জনে ছোট্ট পার্বত্য শহর চেইল (Chail) যা সোলান জেলার অন্তর্গত। সিমলা থেকে কুফরীর পথে ৪৫ কিলোমিটার দূরে এই শহরটি যাকে বলা হয় ‘লিটল মাউন্টেন অফ হেভেন’। এই শৈল শহরটি গড়ে ওঠার পিছনে একটি প্রেমের গল্প আছে। উনবিংশ শতাব্দীতে দ্বিতীয়ার্ধে ভারতের দায়িত্ব প্রাপ্ত ইংরেজ কমান্ডার ইন চিফ কিচেনের সুন্দরী কন্যাের প্রেমে পড়েন পাতিয়ালার মহারাজা ভূপেন্দ্র সিংহ। সেই খবর জানাজানি হতেই মহারাজা ভূপেন্দ্র সিংহ এর উপরে সিমলা এ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। মহারাজা তখন গোর্কাদের কাছে থেকে ৭৫ একর জমি কিনে চেইল শহরের পত্তন করেন। ওক, রডোডেনড্রন, হেমলকে ছাওয়া ২২৫০ মিটার উচ্চে অবস্থিত চেইল। বিক্ষিপ্ত তিনটি পাহাড় নিয়ে গঠিত। এরমধ্যে একটিতে আছে বিশ্বের সব্বোর্চ্চ ক্রিকেট খেলার মাঠ, দ্বিতীয়টিতে আছে প্যালেস আর তৃতীয়টিতে শিখ মন্দির
মহারাজা ভূপেন্দ্র সিংহ এর গড়া চেইল এর এই প্যালেস ‘চেইল প্যালেস’ বলে বিখ্যাত। যেটি বর্তমানে হিমাচল ট্যুরিজিমের হোটেলে পরিনত হয়েছে। এই প্যালেসকেই ‘থ্রী ইডিয়েটস‘ সিনেমায় ‘চাঁচড় ভবন’ বলে দেখানো হয়েছিল। এখানে পুরাতন এবং নব শিল্পকলার সম্ভার দেখা যায়। যদিও এই প্যালেসটি রাজার প্যালেস বলে খ্যাত কিন্তু একটি ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে রাজার মূল প্যালেসটি পুড়ে যাওয়াতে এটি নতুন করে গঠন করা হয় ১৯৫১ সালে।
ভূপেন্দ্র সিংহ এর মৃগয়াক্ষেত্র টি ও ঘুরে দেখে নেওয়া যেতে পারে। যেটি বর্তমানে ‘চেইল অভয়ারণ্য’ বলে বিখ্যাত। এই অভয়ারণ্যটি একটি গাইডের সাহায্য দুই তিন ঘন্টার জন্য ঘুরে নেওয়া যেতে পারে। প্রবেশমূল্য ২০ টাকা। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির রং বেরঙের পাখি, ভাল্লুক, হরিন, সাম্বার, ইউরোপিয়ান লাল হরিন, তিব্বতিয়ান নেকড়ে, লেঙ্গুর ইত্যাদি দেখা যায়।
রাজা ভূপেন্দ্র সিংহকে এক সিদ্ধিবাবা স্বপ্নে দেখা দিয়ে মন্দির নির্মাণের আদেশ দেন। চেইলে ঘুরতে গিয়ে সেই সিদ্ধিবাবার মন্দির ও দেখে আসা যায়। কালী কা টিব্বা নামক স্থান এ কালী মন্দির আছে। যেখানে পর্যাটক বিশেষত ট্রেকিং করে যাও। তবে এখন গাড়ি ও মন্দির পর্যন্ত যায়। এখানে কালী মন্দির আছে সাথে বাঁদিকে শিবের ও ডানদিকে পঞ্চমুখী হনুমান মন্দির। এখানের থেকে শিবালিক অসাধারণ দেখা যায়। সূর্যাস্ত এখানে দাঁড়িয়ে দেখার একটা আলাদা অনুভুতি হয়।
ভূপেন্দ্র সিংহ তার সময়ে চেইলে একটি ক্রিকেট এর স্টেডিয়ামও বানিয়ে ছিলেন। এটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু স্টেডিয়াম। এর উচ্চতা ২১৪৪ মিটার। এই স্টেডিয়ামে ক্রিকেট ছাড়াও ফুটবলের পোষ্ট এবং বাস্কেটবল এর কোর্ট ও আছে। আজ বহু ভ্রমনাথী সিমলার কোলাহল থেকে দূরে এই নিরিবিলি শৈল শহর এ কয়েকটি দিন কাটানোর জন্য আসে।
কিভাবে যাবেন
কোন পর্যাটক যদি সিমলা না যেতে চান তাহলে কালকা থেকে ৮৪ কিলোমিটার দূরের এই শৈল শহর এ পৌঁছাবেন কালকা সিমলার পথে সোলান কান্দাঘাটের পর্যন্ত একই ভাবে পৌঁছে কান্দাঘাট থেকে বাঁদিকের রাস্তায় সিমলা না গিয়ে ডানদিকের রাস্তা দিয়ে ৬০ কিলোমিটার এগিয়ে গিয়ে।
WhatsApp us