ডালহৌসি (Dalhousie) – আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর জায়গা গুলোর মধ্যে অন্যতম। ব্রিটিশদের নামকরণে জায়গাটির নামকরণ করা হয় ডালহৌসি। মিনি সুইজারল্যান্ড নামে পরিচত এই জায়গাটি অবস্থিত ভারতের হিমাচল প্রদেশে।
পাইন গাছ দ্বারা বেষ্টিত এই জায়গাটির তাপমাত্রা গরমকালে থাকে ১৫-২২℃। আমি ঠিক এই সময়ে ভ্রমণ করেছি। আমার ভাগ্যটা বোধহয় একটু বেশি ভালো ছিল তাই দুই দিনের ট্রিপ এ আমি দুই ধরনের আবাহাওয়া উপভোগ করতে পেরেছি। প্রথম দিন পুরো দিনটাই ছিল সাদা মেঘ দ্বারা আচ্ছন্ন আর মিষ্টি রোদ। চারিদিকে বাতাস। আর দ্বিতীয় দিন টি ছিল বৃষ্টিময়। চারিদিকে বৃষ্টির টিপ টিপ আওয়াজ আর মেঘ এর গর্জন। দুই দিন দুই রকম আবহাওয়া হওয়াতে জায়গাটার দুই রকম সৌন্দর্য একসাথে উপভোগ করাটা ভাগ্যের ব্যাপার।
ডালহৌসি যেতে যেতে আপনি অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা পাবেন , যেই সব জায়গাতে না নামলেই নয়। যখন আপনি হিমাচল প্রদেশে প্রবেশ করবেন তখনই আপনি অনুভব করতে পারবেন ঠান্ডা বাতাস। তাই আপনি যতক্ষণ ভ্রমণ করবেন ততক্ষণ ই আপনি এনজয় করতে পারবেন আসে পাশের মনমুগধকর পরিবেশ। পাহাড় গুলোতে যেন সবুজ মাদুর বিছানো, মাঝে মাঝে মেঘের ছোয়াতে হয়ে উঠে অসম্ভব সুন্দর।
যে জায়গাটির জন্য ডালহৌসি কে মিনি সুইজারল্যান্ড বলা হয় সে জায়গাটির নাম হচ্ছে খাজিয়ার (khajjiar)। সবার প্রথমে আমরা সেই জায়গাতে যাই। ডালহৌসির মেইন পয়েন্ট থেকে এপ্রক্স ২৪ কি. মি. গেলেই পৌঁছে যাবেন খাজিয়ার। পানি পাহাড় মাঠ আর গাছের এক অপরূপ সমাহার এই জায়গাটি। নিঃসন্দেহে বলতে পারি এমন জায়গাতে যাওয়ার পর আপনার মন প্রকৃতির রুপ এর কাছে হার মানবেই। আরো কিছু আকর্ষণীয় জিনিস আছে এখানে সেটা হচ্ছে para gliding আর horse riding. আপনারা চাইলে এই দুইটি জিনিস উপভোগ করতে পারবেন।
আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ছিল পাঁচ পুলা(panch pula)। এই জায়গাটিও বেশ সুন্দর। কিছু এডভেন্চার আক্টিভিটিস করতে চাইলে জায়গাটা আপনার জন্য পারফেক্ট। পাহাড়ের মাঝখানে বড় বড় পাথর আর ঝর্ণা নিয়ে গঠিত হয় পাঁচ পুলা। ছোট একটা পার্ক আছে বাচ্চাদের জন্য। পাহাড়ের মাঝখানে কিছু ক্যাফে ও পাবেন। বিকেলের চা নাস্তার জন্য এমন পরিবেশ পাওয়াটা দুর্লভ।
এরপর আমরা সোজা চলে যাই ডালহৌসির মেইন পয়েন্ট এর দিকে। যাওয়ার রাস্তা তেই একটা সুন্দর স্পট আছে, গ্রীন ভ্যালী নামে পরিচিত। পাইন গাছের সৌন্দর্য টা এখানে স্পষ্ট বুঝা যায়, মনে হবে যেন গাছ গুলো কে একই রকম করে কাটা হয়েছে, অথছ এগুলা প্রাকৃতিক ভাবেই এমন ভাবে গড়ে উঠেছে।
আরেকটা বিখ্যাত স্পট হচ্ছে গান্ধী চৌক(gandhi chowk)। এখানে কিছু মার্কেট আছে, যেগুলা থেকে আপনি টুকটাক কিছু শপিং করতে পারেন। অনেক সুন্দর একটা স্পট ও আছে গান্ধী চৌকে। এখান থেকে আপনি মোটামোটি পুরো ডালহৌসি শহর টা কে দেখতে পাবেন। এখানে আরেকটা মজার জিনিস পাবেন সেটা হচ্ছে “তন্দুরি চা”। শুনতে একটু অবাক লাগলো “তন্দুরি চা” তাই না? আমাদেরও অবাক লেগেছিল দেখার পর। এই জন্য এটা একটা এখানকার মাস্ট ট্রাই আইটেম।
মোটামোটি কম খরচ এর মধ্যেই ঘুরে আসতে পারেন এই অসম্ভব সুন্দর জায়গাটি। কিন্তু আপনাকে সঠিক রুট সম্পর্কে জানতে হবে। যতটুকু বিবরণ দেয়া সম্ভব ততটুকু আপনাদেরকে জানায় দিচ্ছি। কিছু সহজ রুট আছে।
ট্রেন- ঢাকা- কলকাতা- পাঠানকোট- ডালহৌসি ফ্লাইট- ঢাকা- দিল্লী এরপর পাঞ্জাব- পাঠানকোট- ডালহৌসি বাস এ ট্রাভেল করতে হবে। অথবা ৩০০০ টাকা/দিন গাড়ি ভাড়া করে আপনি সরাসরি পাঞ্জাব থেকে ডালহৌসি ঘুরে আসতে পারেন।
হোটেল ভাড়া মোটামোটি কম। কিন্তু একটু খুঁজতে হবে। খাবার এর খরচ টা একটু বেশি। হালাল মাংস পাওয়াটা একটু কঠিন। দুই দিন এর জন্য একটু কম ই খেলেন না হয়! যদি ইন্ডিয়া তে কেউ ঘুরার জন্য পরিকল্পনা করে থাকেন, তাহলে আমার মতে ডালহৌসি অবশ্যই আপনাদের ঝুলিতে রাখবেন। আজ এ পর্যন্তই। ধন্যবাদ।
WhatsApp us