ঢাকেশ্বরী মন্দির ঢাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্দির। সলিমুল্লাহ হল থেকে আনুমানিক ১.৬ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ঢাকেশ্বরী রোডের উত্তর পার্শ্বে একটি অনুচ্চ আবেষ্টনী প্রাচীরের মধ্যে মন্দিরটি অবস্থিত। মন্দির অঙ্গনে প্রবেশের জন্য রয়েছে একটি সিংহদ্বার। সিংহদ্বারটি নহবতখানা তোরণ নামে অভিহিত।
জনশ্রুতি অনুযায়ী মন্দিরটির নির্মাতা বল্লাল সেন নামে একজন রাজা। তবে এ বল্লাল সেন প্রকৃত অর্থেই সেন বংশের বিখ্যাত রাজা কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট মতপার্থক্য আছে। কেউ কেউ দাবি করেন যে, এখানে প্রতিষ্ঠিত ঢাকেশ্বরী মূর্তি ও মন্দির মহারাজা বল্লাল সেনের আমলের। কিন্তু স্থাপত্য নির্মাণ কৌশলের বিবেচনায় এটি গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমানদের আগমনের পূর্বে তথা সেন রাজবংশের রাজত্বকালে বাংলার স্থাপত্যশিল্পে মর্টার হিসেবে চুন-বালি মিশ্রণের ব্যবহার ছিল না। কিন্তু ঢাকেশ্বরী মন্দিরটি আগাগোড়াই চুন-বালির গাঁথুনিতে নির্মিত, যা বাংলার মুসলিম আমলেরই স্থাপত্য রীতির বৈশিষ্ট্য।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের মূল ফটক দুইটি। এছাড়া মাঝখানে একটি ফটক আছে। মূল ফটকের সোজাসুজি দূর্গা মার প্রতিমা। পাশের প্রবেশ গেটের প্রবেশ পথেই নাঠ মন্দির আর একটু এগোলেই পুকুর। পাশেই আরেকটি ভবন। এখানে ৪টি শিব মন্দির আছে এবং তার পাশেই সন্তোষী মাতার মন্দির, অনুভোগের স্থান, রান্নাঘর, ফল কাটার কক্ষ, জুতা রাখার স্থান এবং পূর্ব পাশের বিশাল ভবনটি প্রশাসনিক ভবন ও
কোয়ার্টার অফিস কক্ষ, গেষ্ট রুম/অতিথী কক্ষ, সভাকক্ষ, লাইব্রেরী, আনসার ক্যাম্প ও পাশেই পাবলিক টয়লেট এবং মেলাঙ্গন। প্রতিটি ভবনের উপর যেমন শিব মন্দির ও নাঠ মন্দির এ গম্বুজ আছে।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের আরেকটি অন্যতম অংশ হল এর ভেতরে অবস্থিত পুকুরটি। যা এখনও মন্দিরের শোভা বাড়ায়। প্রাচীন এই পুকুরটিতে পূণ্যার্থীরা স্লান ও ভোগ দিয়ে থাকেন। পুকুরটির দু’পাশে বাধাই করা। এখানে বিভিন্ন প্রজাতীর ছোট-বড় মাছ আছে। অতীতের তুলনায় বর্তমানে মন্দিরটিকে আরও সুন্দরভাবে সাজানো ও সংস্কার করা হয়েছে। তার মধ্যে অভ্যন্তরে ফুলের বাগানটি অন্যতম উদাহরণ। নতুনভাবে নানা জাতের ফুলগাছ দিয়ে মন্দিরটির সৌন্দর্য্যকে আরও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
সাপ্তাহিক প্রার্থনার দিন
শুক্রবার – মা সন্তোষীর পূজা, সময়: সকাল ১০.০০ টায়। শনিবার – শনি পূজা, সময়: সন্ধ্যা ৬.০০ টায়। রবিবার – কীর্তন হরী সেবা, সময়: বিকেল ৫.০০ টা থেকে রাত ৯.০০ টা পর্যন্ত। সোমবার – শিব পূজা, অন্যান্য, সময়: সকাল ৭.০০ টা থেকে রাত ৯.০০ টা পর্যন্ত। মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার – দূর্গা মাতার অর্চনা, সময়: সকাল ৭.০০ টা থেকে রাত ৯.০০ টা পর্যন্ত।
কিভাবে যাবেনঃ
রাজধানীর মতিঝিল থেকে বাসে করে শাহবাগ নেমে রিক্সা যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ হলের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত নান্দনিক এই মন্দিরে যাওয়া যায়। অবশ্য মতিঝিল থেকে সরাসরি রিক্সা বা সিএনজি চালিত অটো বা টেক্সি ক্যাব-এ যাওয়া যায়। মতিঝিল থেকে সরাসরি রিক্সাভাড়া হবে ৫০-৭৫, সিএনজি চালিত অটো বা টেক্সি ক্যাব-এ ১৫০-২২০ টাকা। মতিঝিল থেকে শাহবাগ বাস ভাড়া ১০ টাকা এবং শাহবাগ থেকে রিক্সাভাড়া হবে ২০-৩০ টাকা।
WhatsApp us