পলওয়েল পার্ক এন্ড কটেজ

blank
রিলিতে লেক
October 25, 2020
blank
October 25, 2020
Show all

পলওয়েল পার্ক এন্ড কটেজ

blank

রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশের তত্ত্বাবধানে ডিসি বাংলো রোডের পাশে কাপ্তাই লেকের ঠিক কোল ঘেঁষে তৈরি করা হযেছে পলওয়েল পার্ক এন্ড কটেজ (Polwel Park and Cottage) যা সৃজনশীলতার ছোঁয়ায় হয়ে উঠেছে রাঙ্গামাটির অন্যতম সেরা বিনোদন কেন্দ্র। বৈচিত্রময় ল্যান্ডস্কেপ, অভিনব নির্মাণশৈলী ও নান্দ্যনিক বসার স্থান পার্কটিকে দিয়েছে ভিন্ন ধরনের এক মাত্রা। নৈসর্গিক প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটাতে এবং চিত্ত বিনোদনের জন্য প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে পলওয়েল পার্ক।

মুখোশের আদলে তৈরী করা হয়েছে পার্কটির প্রবেশপথ। প্রবেশপথের পাশেই ভিন্ন আরেকটি মুখোশ আকৃতির টিকেট কাউন্টার। প্রবেশমূল্য, জনপ্রতি ৩০ টাকা। পাঁচ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের জন্য টিকেট লাগবেনা। পার্কটি রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

পার্কে প্রবেশের পর চোখে পড়বে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক) কর্তৃক পরিচালিত প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্র। এখানে পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরণের স্যুভেনির, আদিবাসীদের হাতে বোনা কাপড় ইত্যাদি। বিনোদনের সাথে সাথে প্রিয়জনের জন্য পাহাড়ি স্মৃতি নিতে চাইলে এখানে কিছুটা সময় খরচ করতে পারেন। এরপরেই শিশুদের বিনোদনের জন্য রয়েছে কিডস জোন। শিশুদের আনন্দ দিতে এই পার্কে বিভিন্ন রকম রাইডের ব্যবস্থা রয়েছে। টিকেটের মূল্য রাইড ভেদে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। টিকেটের দামের তুলনায়, অনেক বেশি সময় ধরে বাচ্চারা এখানে রাইডগুলো উপভোগ করতে পারে। বাঙালির জীবনের সাথে মিশে থাকা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য তুলে ধরতে কিডস জোনের অপর প্রান্তে তৈরী করা হয়েছে ঢেঁকিঘর আদলের একটি স্থাপনা। গ্রামের নারীদের ঢেঁকিতে ধান ভানার এই ভাস্কর্য গ্রামীণ জীবনের কথা মনে করিয়ে দেয়। এই ভাস্কর্যের স্থাপত্য শৈলী এতটাই সুনিপুন, প্রথম দেখায় আপনার মনে হতে পারে বাস্তব কোনো দৃশ্য দেখছেন।

কিডস জোন থেকে সামনে এগিয়ে গেলে রাস্তার পাশে বসার জন্য কিছু বেঞ্চ তৈরী করা আছে। এখানে বসলে কাপ্তাই লেকের মনোরম দৃশ্য চোখে পড়ে। সামনে যতদূর দৃষ্টি যায়, লেকের অথৈ জলের সীমানা দূরের আকাশে গিয়ে মিশেছে। আকাশ আর লেকের নীলের মাঝে পাহাড়গুলো যেন সীমারেখা হয়ে আছে। এর ঠিক পেছনেই তৈরী করা আছে কলসি কাঁখে নারী ভাস্কর্য। তাদের কলসের প্রবাহমান পানিতে তৈরী হয়েছে ঝর্ণা। দিনের আলো নিভে গেলে কৃত্তিম আলোয় এই ঝর্ণা আরও মোহময় হয়ে ওঠে।

এখান থেকে কিছুটা এগোলেই চটপটি আর ফুচকার দোকান। অনেকটা খোলা জায়গা জুড়ে চেয়ার টেবিল পেতে বসার ব্যবস্থা। ফুচকা আর চটপটি প্রেমীরা কাপ্তাই লেকের সৌন্দর্য দেখে আর ফুচকা খেয়ে বিকেলটা এখানে কাটাতে পারেন। আরও একটু সামনে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামলেই পলওয়েল ক্যাফেটেরিয়া। মুখরোচক খাবারের সাথে আইসক্রিম আর কফিও পাওয়া যাবে এখানে।

ক্যাফেটেরিয়া থেকে সামনে এগোলে ফিশিং পিয়ার। ফিশিং পিয়ার হচ্ছে এমন একটা স্তম্ভ বা প্ল্যাটফর্ম, যেটা উপকূল থেকে শুরু হয়ে লেক/নদী/সমুদ্রের যেখানে পানির গভীরতা অনেক বেশি, এমন দূরত্ব পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। আসলে জাহাজ, বড় নৌকা গুলো পানির গভীরতা কম থাকায় তীরে ভিড়তে পারেনা। তাই পানি গভীর থাকে সবসময়, উপকূল থেকে এমন দূরত্ব পর্যন্ত ফিশিং পিয়ার তৈরী করা হয়। যেন জাহাজ, নৌকা গুলো সহজেই সেখানে ভিড়তে পারে এবং নোঙ্গর ফেলে অবস্থান করতে পারে। এখানে দাঁড়ালে কাপ্তাই লেকের দৃশ্য বেশ ভালোভাবে উপভোগ করা যায়।

পলওয়েল পার্কটির একেবারে শেষপ্রান্তে তৈরী করা হয়েছে লাভ পয়েন্ট। এছাড়াও পার্কটিতে রয়েছে পলওয়েল পার্ক কটেজ এবং সুইমিং পুল। লেকে ঘোরার জন্য বোটের ব্যবস্থা আছে, আছে জেট স্কিইং এর ব্যবস্থা, আছে কায়াকিং এর ব্যবস্থা। লেকের পার ঘেঁষে রাখা আছে বিচ চেয়ার। লেক আর পাহাড়ে সন্ধ্যা নামার দৃশ্য উপভোগ করতে শেষ বিকেলে এখানে বসতে পারেন আয়েশ করে।

রাঙামাটির অন্য সব গুলো স্পটের পাশাপাশি যেই কেউ এই স্পটে চাইলে ফেরার দিন ঘুরে যেতে পারে। সারা দিন সময় কাটানোর মত একটি জায়গা। এতো অসাধারণ কিছু দৃশ্য এখান থেকে দেখা যায়, যা অন্য কোথা থেকে পাওয়া যায় না। আর এই পার্কটি রাঙামাটির একদম প্রান কেন্দ্রে। খুব সহজেই অটো রিক্সা নিয়ে চলে যাওয়া যায়।

কি আছে পলওয়েল পার্কে সুইমিংপুল (২০০ টাকা প্রতিজন) পলওয়েল কটেজ জেট স্কিইং প্যাডেল বোট কায়াক পার্কটির প্রবেশে ভুতুড়ে পাহাড়ের গুহা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি শিল্প বিভিন্ন প্রকারের রাইড কলসি ঝর্ণা পাহাড়ী কৃত্রিম ঝর্ণা ক্রোকোডাইল ব্রিজ হিলভিউ পয়েন্ট লেকভিউ পয়েন্ট লাভ লক পয়েন্ট ফিশিং পিয়ার মজাদার ও মুখরোচক খাবারের সমারোহ সমৃদ্ধ পলওয়েল ক্যাফেটেরিয়া
সুইমিংপুল (২০০ টাকা প্রতিজন)
পলওয়েল কটেজ
জেট স্কিইং
প্যাডেল বোট
কায়াক
পার্কটির প্রবেশে ভুতুড়ে পাহাড়ের গুহা
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী
ঢেঁকি শিল্প
বিভিন্ন প্রকারের
রাইড কলসি ঝর্ণা পাহাড়ী কৃত্রিম ঝর্ণা ক্রোকোডাইল ব্রিজ হিলভিউ পয়েন্ট লেকভিউ পয়েন্ট লাভ লক পয়েন্ট ফিশিং পিয়ার মজাদার ও মুখরোচক খাবারের সমারোহ সমৃদ্ধ পলওয়েল ক্যাফেটেরিয়া

ঠিকানা এবং যোগাযোগ
অবস্থান – ডিসি বাংলো রোড, রাঙ্গামাটি সদর ফোন নাম্বার – 01837-335595, 09613-500-900 ওয়েবসাইট – https://www.polwelpark.com ই-মেইল – info@polwelpark.com ফেইসবুক – https://www.facebook.com/PolwelParkRmtOfficialPage/

যাওয়ার উপায়
ঢাকার ফকিরাপুল মোড় অথবা সায়দাবাদ থেকে রাঙ্গামাটিগামী অসংখ্য বাস কাউন্টারের অবস্থান। সকল বাসই সকাল ৮.০০ হতে ৯.০০ টা এবং রাত ৮.৩০ হতে ১১.০০ এর মধ্যে ঢাকা ছাড়ে। ভাড়াঃ ঢাকা-রাঙ্গামাটিঃ এসি ৯০০ টাকা (শ্যামলী), বিআরটিসি এসি ৭০০ টাকা, নন এসি সকল বাস- ৬২০ টাকা।

চট্টগ্রাম থেকে রাঙ্গামাটি
চট্রগ্রামের অক্সিজেন এলাকার রাঙামাটির বাস টার্মিনাল যেতে হবে। এখান থেকে আধ ঘন্টার ব্যবধানে আপনি পাবেন পাহাড়ীকা ও লোকাল বাস সার্ভিস। পাহাড়ীকা বাসের ভাড়া ১১০ টাকা এবং লোকাল বাসের ভাড়া ৮৫টাকা। পাহাড়ীকা বাসে সময় লাগে আড়াই ঘন্টা এবং লোকাল বাসে ৩-সাড়ে ৩ ঘন্টা। সকাল ৭টা হতে রাত ৮টা পর্যন্ত পাওয়া যায় বাস। এছাড়া যারা আরামদায়ক ভ্রমন করতে চান, তাদের জন্য আছে বিলাস বহুল সার্ভিস এস. আলম, ইউনিক, হানিফ ও বিআরটিসি। এসব বাস সার্ভিসের ভাড়া ১০০-১২০টাকা। সময় লাগবে ২.৩০-৩ ঘ

কোথায় থাকবেন
পলওয়েল পার্কটি ঘুরে দেখার পাশাপাশি এখানে রয়েছে থাকার জন্য বেশ কিছু কটেজ। একদম লেকের প্রান্ত ঘেঁষে রয়েছে বেশ কয়টি কটেজ এবং সুইমিংপুল। রাঙামাটির অন্যতম সুন্দর ভিউ রয়েছে এই কটেজ গুলোর। হানিমুন কটেজের ভাড়া নির্ধারন করা হয়েছে ৬০০০ টাকা, ফ্যামিলি কটেজের ভাড়া ৮০০০ টাকা এবং VIP কটেজের ভাড়া নির্ধারন করা হয়েছে ১০০০০ টাকা প্রতিরাত।

পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত ইন্সপেক্টর থেকে তদুর্ধ কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের জন্যে কটেজে রয়েছে ৪০% ছাড়। এছাড়া সরকারি কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের জন্যে রয়েছে ২০% ছাড়া। এছাড়া রাঙামাটিতে পর্যটকদের থাকার জন্য বেশ কিছু ভালমানের হোটেল আছে যেমন, তেমনি আছে মাঝারি মানের হোটেলও। ভালোমানের হোটেলের মধ্যে হোটেল সুফিয়া, নীডস হিল ভিউ, মোটেল জর্জ, হোটেল গ্রীন ক্যাসেল, শাইনিং হিল গেষ্ট হাউজ, টুকটুক ইকো ভিলেজ, হোটেল আনিকা অন্যতম। ভাড়া ৫০০টাকা হতে ২০০০টাকা পর্যন্ত।

কমদামী হোটেলগুলোর মধ্যে আছে মধুমিতা, সৈকত, শাপলা, ডিগনিটি, সমতা, উল্লেখযোগ্য। এগুলো ভাড়া সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া পর্যটনের রয়েছে নিজস্ব মোটেল। ভাড়া ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত। রয়েছে ছোট ছোট কটেজ। কটেজগুলোর প্রতি রাতের ভাড়া ৩০০০-৫০০০ টাকা। সরকারি বিভিন্ন দফতরের রেষ্ট হাউস, গেষ্ট হাউস এবং বাংলোগুলো নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ এবং অনুমতি সাপেক্ষে ভাড়া দেওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *