পুন হিল গোরেপানির কাছেই অবস্থিত একটি পাহারচূড়া, যেটির উচ্চতা ৩২১০ মিটার। নেপালের হিমালয়ের অন্নপূর্ণা রেঞ্জের অসাধারণ সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে পুন হিল ট্রেক (Pun Hill Trek) এর জুড়ি নেই। আকাশ পরিস্কার থাকলে পুন হিল থেকে অন্নপূর্ণা এবং ধবলগীরি রেঞ্জের ১২টি চূড়া দেখা যায়। এটি অপেক্ষাকৃত সহজ একটি ট্রেক। পাঁচ দিনের এই ট্রেকে পথ চলার সময় বরফে ঢাকা একাধিক পর্বতশৃঙ্গ তো বটেই, আপনাকে বিমোহিত করবে পাহাড়ি এলাকার অসাধারণ সব দৃশ্য। পুনহিল থেকে ধাওয়ালগিরি রেঞ্জের অসাধারণ ভিউ পাওয়া যায়।
কষ্ট হলেও পোখারায় গেলে সময় নিয়ে অন্তত এই ট্রেকে যাওয়া উচিত। অনেকেই এভারেস্ট বেস ক্যাম্প ট্রেক বা অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প ট্রেকে যেতে পারেন না সময় বা শারীরিক সামর্থ্য না থাকায়। সেক্ষেত্রে পুন হিল ট্রেকটি পাঁচ বা চার দিনে শেষ করা যায়।
পোখারা থেকে যাত্রা শুরু করে অন্নপূর্ণা সংরক্ষিত এলাকায় পৌঁছে ঘড়ির কাটার দিকে বা ঘড়ির কাটার বিপরীতে দুইভাবেই ট্রেকটি করা যায়। বেশিরভাগই ট্রেক শুরু করে ঘড়ির কাটার দিকে। তবে ঘড়ির কাটার বিপরীত দিক দিয়ে ট্রেকটি করলে প্রথম দুই দিন কষ্ট অপেক্ষাকৃত কম হয়। আর শুরুর দিন থেকেই অসাধারণ সব দৃশ্য হাঁটা বা পাহাড়ে ওঠার কষ্ট ভুলিয়ে দেয়।
প্রথম রাতে থাকতে পারেন ঘান্দ্রুকে, দ্বিতীয় রাতে তাদাপানিতে, তৃতীয় রাতে ঘোরেপানিতে। চতুর্থ দিন সূর্য ওঠার আগে পুন হিলে উঠে উপভোগ করতে পারেন অন্নপূর্ণা আর ধবলগিরি রেঞ্জের অসাধারণ সব পর্বতচূড়ায় সূর্যোদয়। আকাশ পরিষ্কার থাকলে এবং মেঘ কম থাকলে খুব কাছ থকে মাচ্ছাপুচ্ছরে, হিমছুলি, অন্নপূর্ণা সাউথ, অন্নপূর্ণা-১ (বিশ্বের দশম সর্বোচ্চ শৃঙ্গ, ৮,০৯১ মিটার), নীলগিরি, তুকুচে, ধবলগিরি-১ (বিশ্বের সপ্তম সর্বোচ্চ শৃঙ্গ, ৮,১৬৭ মিটার)- সবগুলো চূড়াই পরিষ্কার দেখতে পাওয়া যায়।
প্রয়োজনীয় পারমিট
পুন হিল ট্রেকের জন্য ট্রেকারদের ‘টিআইএমএস’ কার্ড ছাড়াও লাগে এন্ট্রি পারমিট। পোখারার টুরিস্ট সেন্টার থেকে সহজেই এই দুই কার্ড নেওয়া যায় অথবা যে কোনো এজেন্সি বা হোটেলের লোকজন সামান্য ফি নিয়ে তা করে দেয়। অন্নপূর্ণা কনজারভেশন এরিয়া (ACAP) পারমিট ফি: ২০০০ নেপালী রুপী বিদেশীদের জন্যে, সার্কভুক্তদের জন্যে ২০০ রুপী। টিআইএমএস (TIMS) পারমিট ফি: ১০০০ নেপালী রুপী
সম্ভাব্য ট্যুর প্ল্যান
Time needed: 5 days.
পোখরা থেকে ঘান্দ্রুক
পোখরা থেকে ট্যাক্সি করে যেতে হবে বাগলুং বাস স্টেশন। এখান থেকে ঘান্দ্রুকের উদ্দেশ্যে বাসে উঠতে হবে। ৫ ঘন্টার যাত্রা। বাস যে জায়গায় নামিয়ে দিবে সেখান থেকে ২ ঘন্টার ট্রেক করে পৌছাতে হবে ১৯৫০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত ঘান্দ্রুক। রাতে ঘান্দ্রুকের কটেজে রাত্রি যাপন।
ঘান্দ্রুক থেকে তাদাপানি
সকালে নাস্তা সেরে ঘান্দ্রুক থেকে ২৬৮০ মিটার উচ্চতার তাদাপানির উদ্দেশ্যে ট্রেকিং শুরু। ৬ কিলোমিটারের এই ট্রেকে সময় লাগবে ৩.৫ থেকে ৪ ঘন্টা। তাদাপানিতে রাত্রি যাপন।
তাদাপানি থেকে ঘোরেপানি
সকালের নাস্তা সেরে ২৮৫০ মিটার উচ্চতার ঘোরেপানি (Ghorepani) এর উদ্দেশ্যে ট্রেকিং শুরু। সময় লাগবে ৫-৬ ঘন্টা। ঘোরেপানিতে রাত্রি যাপন।
ঘোরেপানি থেকে উল্লেরি
খুব সকালে উঠে ১ ঘন্টার ট্রেক করে চলে যেতে হবে পুন হিল, সূর্যোদয় দেখার জন্যে। পরে মেঘে ঢেকে যায় চূড়া গুলো। তাই সকাল সকাল যাওয়াটাই উত্তম। এরপরে ব্যাক করে নাস্তা সেরে নিয়ে উল্লেরির উদ্দেশ্যে ট্রেকিং শুরু। এবার শুধুই নামা। রাতে উল্লেরিতে রাত্রি যাপন।
উল্লেরি থেকে পোখরা
উল্লেরি থেকে আবার নামা শুরু। প্রায় ৩৫০০ এর মত সিড়ি নামতে হবে। এরপরে পৌছানো যাবে হিলে গ্রামে। হিলে থেকে পোখরার জীপ পাবেন।
কেউ চাইলে পোখরা থেকে জীপ নিয়ে নয়াপুল যেয়ে ঘান্দ্রুকের উদ্দেশ্যে ট্রেক শুরু করতে পারে। সেক্ষেত্রে সময় লাগবে ৫-৬ ঘন্টা। আবার ফেরার সময়, কেউ চাইলে পুন হিল থেকে সরাসরি Tikhedunga চলে আসতে পারেন। এক্ষেত্রে সময় লাগবে ৪-৫ ঘন্টা। পরদিন সকালে তিখেদুঙ্গা থেকে ৩ ঘন্টার ট্রেকিং শেষে নয়াপুল এসে পোখরার জীপ নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে নয়াপুল থেকে পোখরা সময় লাগবে ১.৫ থেকে ২ ঘন্টা।
WhatsApp us