পেলিং

blank
ইটানগর
October 18, 2020
blank
কল্পা
October 18, 2020
Show all

পেলিং

blank

পেলিং (Pelling) ওয়েস্ট সিকিম এর খুব পরিচিত হিল স্টেশন যা ৬৭০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এবং এটি কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ শোভা দেখার জন্য বিখ্যাত। মূলত তিনটি ভাগে পেলিংকে ভাগ করা হয়েছে – আপার, মিডল এবং লোয়ার পেলিং। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা পেলিং এর আশেপাশে ছড়িয়ে আছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান। পাগল করা ঝর্ণা, নদী, কমলালেবুর বাগান, পাহাড়ঘেরা লেক, উপত্যকা, সুপ্রাচীন বৌদ্ধ মনাস্ট্রি, বিখ্যাত ব্রীজ – এ সবই পেলিং ভ্রমণের অন্যতম আকর্ষণ।

পেলিং এ ঘোরার জায়গা
পেলিং এর খানিক নিচের দারাপ ভিলেজ (Darap Village) হোম স্টের জন্য ইদানিং বেশ খ্যাতি পেয়েছে। পেলিং থেকে এই গ্রামের দূরত্ব বেশি না কিন্তু, মাত্র ৬ কিমি। পেলিং কাছে দূরে ঘোরার মধ্যে অন্যতম হলো রিম্বি ফলস। দারাপ থেকে আরো ৬ কিমি চললে পথের বাঁদিকে দেখা মিলবে সুন্দরী রিম্বি ঝর্ণার (Rimbi Falls)। মাঝারি উচ্চতার ঝর্ণাটি বেশ সুন্দর, ঠিক যেন রেশমী মখমলের মত ঝরে পড়ছে। বর্ষার পর জল বেশ ভালো পাওয়া যায়। জলপ্রপাতের নিচে তৈরি হয়েছে একটি কুন্ডের মত। রিম্বি ফলস থেকেই উৎপত্তি রিম্বি খোলা নদীর। রিম্বি নদীতে গড়ে উঠেছে ‘রিম্বি হাইডেল প্রোজেক্ট’। রিম্বি নদীকে পথের নিচে সঙ্গী করে গাড়ি করে কিছুটা আগালেই রিম্বি অরেঞ্জ গার্ডেন (Rimbi Orange Garden)। এটি এদিককার নতুন পর্যটন সংযোজন। আর এখানেই রিম্বি নদীর তীরে পৌঁছনোর ব্যবস্থা। টিকিট কেটে সিঁড়ির পথ বেয়ে নিচে নামা। খুব সুন্দর সাজানো গোছানো বাগানে নানান ফুলের গাছের পাশাপাশি রয়েছে অনেক কমলালেবুর গাছ। আরো খানিকটা নেমে রিম্বি নদী। খরস্রোতা পাহাড়ি নদী রিম্বি খোলা, নদীবক্ষে ছড়ানো প্রস্তরখন্ডের মধ্যে দিয়ে কলকল করে বয়ে চলেছে।
এছাড়া পেলিং এর দ্রষ্টব্য স্থানগুলোর মধ্যে আরেকটি নামকরা ঝর্ণা হলো কাঞ্চনজঙ্ঘা ফলস। পেলিং থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা প্রপাতের দূরত্ব ২৪কিমি। ঘন সবুজ পাহাড়ের প্রেক্ষাপটে অনেক উঁচু থেকে সশব্দে ঝরে পড়ছে দুগ্ধ ফেনিত জলধারা। যা দেখে মুগ্ধ হতে হ্য়। সিকিম এর অন্যতম সুন্দর জলপ্রপাত এই কাঞ্চনজঙ্ঘা ফলস (Kanchenjaungha Falls)। এই জলপ্রপাতের দুটি ভাগ। উপর থেকে পাথরের গা বেয়ে ধাপে ধাপে তিনটি মূল ধারায় জল কয়েকটা পাথরখন্ডের উপর ঝরে পড়ার পর আবার আরেকটি ধারা প্রপাতের আকারে সশব্দে আছড়ে পড়ছে নিচের খাদে। তারপর একটি নদীর আকারে রাস্তার ব্রীজের নিচ দিয়ে বয়ে চলেছে আরো নিচে। প্রপাতের কাছাকাছি পৌছা দায়, গেলেই ঝর্ণার পানি লেগে ভিজে যাবার সম্ভাবনা। পাথরের উপর পা ফেলে একটু উঠে মূল ঝর্ণার পাদদেশ পর্যন্ত যাওয়া যায়। কেউ কেউ বলে কাঞ্চনজঙ্ঘার কোন গ্লেসিয়ার থেকেই নাকি উৎপত্তি এই জলের ধারার। ফলসের একপাশে বেশ কিছু দোকানপাট হয়েছে। খাওয়া দাওয়া কিছু করতে চাইলে করে নিতে পারবেন। ইদানীং এখানে শুরু হয়েছে অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের আয়োজনও।

পেলিং এর আরেকটি দর্শনীয় স্থান হলো খেচিপেরি লেক। খেচিপেরি লেক এর গেট থেকে জঙ্গলের পথে মিনিট দশেক হাটলেই লেকের কাছে পৌঁছানো যায়। পাহাড় ঘেরা বিশাল লেক। স্থানীয়দের কাছে খুবই পবিত্র এই লেক। খেচিপেরিকে Wishing Lake বা ইচ্ছাপূরণের লেকও বলা হয়। লেকের পাড়ে নানা রঙের নিশান। কথিত আছে যে লেকের জলে পাতা পড়ে না। অথচ লেকের চারিপাশে প্রচুর গাছ।
খেচিপেরি লেকের কাছেই গড়ে উঠেছে বিশাল এক মনাস্ট্রি, বৌদ্ধ ধর্মের কনভেনশন সেন্টার। পেলিংয়ের সাইট সিয়িং ট্যুরের আরেকটা পর্ব হল দক্ষিণ দিকের সিংশোর ব্রিজ, ডেন্টাম ও নেপাল সীমান্তের কাছের গ্রাম উত্তরে। তবে বর্ষায় ধ্বস নামলে পেলিং থেকে ডেন্টামের সংযোগকারী রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়।
রাস্তা খোলা থাকলে যেতে পারেন সিংশোর ব্রিজে। এশিয়ার দ্বিতীয় উচ্চতম এই সাস্পেনশন ব্রীজটি। ঝুলন্ত সেতুর উপর দিয়ে দুলতে দুলতে ওপারে যাওয়া। নিচে, অনেক নিচে খাদের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে একটি পাহাড়ি নদী। ব্রীজের উপর থেকে নিচের দিকে তাকালে মাথা ঘুরে যাওয়ার জোগাড়। খাদ এতই গভীর যে, উপর থেকে পাথর ফেললে নাকি নিচের মাটি স্পর্শ করতে ৮ সেকেন্ড লাগে। সিংশোর ব্রিজ থেকে ৬ কিমি দূরে একদিকে ডেন্টাম ভ্যালি ও তার মাঝে ডেন্টাম শহর। এই ডেন্টামেই রয়েছে প্রসিদ্ধ “অ্যাল্পাইন চিজ ফ্যাক্টরি”।
সিনসোর ব্রিজ ব্রীজ থেকে আরেকদিকে ৫ কিমি দূরে উত্তরে। আগে সিংশোর ব্রীজ পেরিয়েই রাস্তা ছিল উত্তরে যাবার। ব্রীজে গাড়ি চলাচল বন্ধ বলে এখন রাস্তাটি একটু ঘুরে, উপরে আরেকটি সেতু দিয়ে নদীটি পার হয়। চারিদিকে পাহাড় দিয়ে ঘেরা পাইনের সারিতে সজ্জিত ছবির মত একটি উপত্যকার মাঝে ৬৬০০ ফুট উচ্চতায় ছোট্ট গ্রাম উত্তরে। ভারত – নেপাল সীমান্তের শেষ গ্রাম। এখান থেকে শুরু কয়েকটি ট্রেক রুটের। পর্যটকদের জন্য উত্তরেতে রয়েছে তিন চারটি হোটেল।
গাড়ি নিয়ে চলে যেতে পারেন পেমিয়াংশি মনাস্ট্রি (Pemayangtse Monastery) দেখতে। পেলিং থেকে ৩ কিমি দূরে পাহাড়ের একেবারে মাথায় অবস্থিত সিকিমের দ্বিতীয় প্রাচীনতম বৌদ্ধ গুম্ফা ‘পেমিয়াংশি মনাস্ট্রি’। খাড়াই রাস্তার পাশে প্রেয়ার ফ্ল্যাগের সারি। শেষ কিছুটা খাড়াই রাস্তা হেঁটে উঠতে হবে। তিব্বতি কারুকাজময় তিনতলা বিশাল মনাস্ট্রিতে রয়েছে মিউজিয়াম। ১৭০৫ সালে এর নির্মাণ হয়। ভিতরে রয়েছে গুরু পদ্মসম্ভব বা রিনপোচের মূর্তি। এছাড়াও মিউজিয়ামে আছে অনেক প্রাচীন মূর্তি, চিত্র, বৌদ্ধ ধর্মের নানান গ্রন্থ, নথি ও নানান তিব্বতী ভাস্কর্য্য। তিনতলায় রয়েছে কারুকাজময়, সাতটি টায়ারের চিত্রিত একটি অদ্ভুত কাঠের তৈরি কাঠামো। সেটি নাকি গুরু রিনপোচের স্বর্গীয় প্যালেসের অবয়ব, যাকে তিব্বতিতে বলে ‘Sanghthokpalri’। মুল উপাসনা গৃহ নিচে মনাস্ট্রির সামনের দিকে। সকাল বেলা গুরুগম্ভীর পরিবেশে সেখানে চলছে উপাসনা। সারিবদ্ধ ভাবে বসে লাল কাপড় জড়ানো বৌদ্ধ লামারা ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ করছে। সেই সাথে চলছে বাদ্যযন্ত্রে তিব্বতী সুরের মূর্চ্ছনা। পেমিয়াংশি সিকিমের অন্যতম প্রধান মনাস্ট্রি ধর্মীয় গুরুত্বের দিক দিয়েও।

কিভাবে যাবেন
এনজিপি অথবা শিলিগুড়ি থেকে রিজার্ভ গাড়ি করে তিস্তা বাজার, মেলি, জোরথাং, লেগশিপ, গেজিং পার হয়ে সাড়ে ৫ ঘন্টায় পৌঁছে যেতে পারবেন পেলিং। সিজনে রিজার্ভ গাড়ির ভাড়া পড়বে ২০০০ রুপী এর মত। আবার গ্যাংটক থেকেও সরাসরি পেলিং যাওয়া যায়। তবে পেলিং ঘুরে গ্যাংটক যাওয়া ভালো। কেননা, তাতে সময় বাঁচবে। ফেরার পথে গ্যাংটক থেকে ফিরতে পারবেন। তবে মনে রাখবেন, NJP থেকে পেলিং যাওয়ার জীপস্ট্যান্ড আলাদা।

কোথায় থাকবেন
আপার পেলিংয়ে হোটেলের ভাড়া একটু বেশি। মিড্‌ল এবং লোয়ার পেলিংয়ে কম। মোটামুটি হাজার দে়ড়েক থেকে দুইয়ের মধ্যে ভাল হোটেল পেয়ে যাবেন। তবে কাঞ্চনজঙ্ঘামুখী ঘরের ভা়ড়া স্বাভাবিকভাবেই বেশি।

পেলিং ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
গ্রীষ্ম এবং পুজার পরে পেলিং এ পর্যটকদের ভিড় বেশী থাকে। তবে পাহাড়ে ধসে রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবার ভয়ে বর্ষা এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।

খাবারের খোঁজ
পেলিং এ হোটেলেই খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। তবে পেলিংয়ে কয়েকটি ভাল রেস্তোরাঁ রয়েছে। সবার প্রথমে যে নামটি আসে সেটা হলো ‘‘মেলটিং পয়েন্ট’’। রান্নার মান বেশ ভালো, দামও আয়ত্তের মধ্যে। এছাড়া আরও আছে কাবুর রেস্তোরাঁ, বিগ বোল এবং রাবডান্টসে। মদ্যপানের জন্যও এই সব রেস্তোরাঁ বেশ ভাল। দামও কিন্তু কোথাওই খুব বেশি নয়। খাবারের মানও যথেষ্ট ভাল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *