ভারতের উত্তর পূর্বে অবস্থিত দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম রাজ্য সিকিম (Sikkim) প্রকৃতি প্রেমিকদের কাছে এক স্বর্গ যার দক্ষিণ দিক ঘেরা আছে পশ্চিমবঙ্গ দ্বারা, দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ভূটান, পশ্চিমদিকে নেপাল এবং উত্তর-পূর্ব দিকে চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল তিব্বত। সুন্দর পাহাড়, গভীর উপত্যকা এবং জীব বৈচিত্র্যে ভরা সিকিম পর্যটকদের কাছে একটি অতি পছন্দের জায়গা। গ্যাংটক এই রাজ্যের রাজধানীসহ সিকিমের বৃহত্তম শহর হিসাবেও পরিচিত এবং এটি শিবালিক পর্বতের উপরে ৫৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। মোট ৬ লাখেরও বেশি জনসংখ্যা সহ সিকিমের মোট আয়তন হল মোটমুটি প্রায় ৭০০০ বর্গ কিলোমিটার। রাজ্যের অধিকাংশ এলাকা পার্বত্যময় হওয়ায় সিকিমে গ্রীষ্মকালে বেশ দারুন একটা আবহাওয়া বিরাজ করে, তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রীর বেশি অতিক্রম করে না। অন্যদিকে শীতকালে তাপমাত্রা হিমাঙ্কেরও নীচে নেমে যাওয়ার কারণে এখানকার বাসিন্দারা মেরুদন্ড শিহরিত কম্পন অনুভব করে। ১৯৭৫ সালে সিকিম, ভারতের একটি অংশ হয়ে ওঠে এবং তারপর থেকে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিকাঠামো, দেশের বাকি রাজ্যগুলির মতোই মেনে চলে। সঠিক নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত ৩২ জন সদস্যকে নিয়ে এখানকার বিধানসভা পরিষদ গঠিত।
ভারতের প্রথম রাজ্য হিসেবে সিকিমকে রাসায়নিক মুক্ত বা অর্গানিক রাজ্য হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে ২০১৬ সালে। সিকিমে চাষবাসে কীটনাশকের ব্যবহার রীতিমত অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। কেউ জমিতে কীটনাশক ব্যবহার করলে এক হাজার চারশো ডলার বা সমপরিমাণ পর্যন্ত অর্থ জরিমানা হতে পারে। এমনকি জেল হতে পারে প্রায় তিন মাসের জন্য।
সিকিমের পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ সমস্তটাই বৈচিত্র্যময়। পাহাড়-পর্বত, পাহাড়ি ঝর্ণা, ঔষধি গাছের জঙ্গল, ঘন বন, সবকিছু মিলিয়ে এক আলাদা মাত্রা পায়ে সিকিম। সিকিম প্রদেশটিতে চারটি জেলায় বিভক্ত। উত্তর সিকিম, পূর্ব সিকিম, দক্ষিণ সিকিম এবং পশ্চিম সিকিম। চলুন দেখে নেই প্রতেকটি জেলার গুরুত্ত্বপূর্ণ স্থানসমূহ যেখানে ঘুরতে না গেলেই নয়।
সিকিম এর দর্শনীয় স্থানগুলো
উত্তর সিকিম
সিঙ্গিক, লাচুং, ইয়ুমথাং, কাটাও, কালা পাত্থার, জিরো পয়েন্ট, লাচেন, গুরুদংমার লেক। বাংলাদেশীরা কাটাও, গুরুদংমার, জিরো পয়েন্ট এর পারমিশন পাবেন না।
পূর্ব সিকিম
ঋষিখোলা, আরিতার, জুলুক, নাথাং ভ্যালি, কুপাপ লেক, সাজং, নাথুলা, ছাঙ্গু লেক, গ্যাংটক। বাংলাদেশী সহ বিদেশীরা নাথুলা এর পারমিশন পাবেন না।
দক্ষিণ সিকিম
নামচি, সিকিপ, টেমি টি গার্ডেন, সামদ্রূপটসে, রাবাংলা, বোরং, রিনচেনপং, কালুক।
পশ্চিম সিকিম
পেলিং, ভার্সে, ওখড়ে, গেজিং, উত্তরে, সিংসর ব্রিজ, হি-বারমিওক, ইউকসম, রিনচেনপং, কাঞ্চনজঙ্ঘা ফলস, খেছিপরি লেক।
সিকিম এ তিনটে জায়গা খুব গুরুত্বপূর্ণ –
এক নাম্বার জায়গাটি হলো সিংতাম। এখান থেকে পূর্ব (গ্যাংটক ) আর উত্তর (মঙ্গন) সিকিম এর রাস্তা আলাদা হয়।
দুই নাম্বার জায়গাটি হলো জোরথাং। এখান থেকে পশ্চিম (পেলিং) আর দক্ষিণ (রাবাংলা) সিকিম এর রাস্তা আলাদা হয়। পশ্চিম সিকিমের যাওয়ার প্রধান পথই হলো জোড়থাং। জোড়থাং থেকে পশ্চিম সিকিমের সমস্ত জায়গার শেয়ার গাড়ী মেলে।
তিন নাম্বার জায়গাটি হলো লেগশিপ। এখান থেকে পশ্চিম (পেলিং), দক্ষিণ (জোরথাং) ও পূর্ব (রাবাংলা হয়ে গ্যাংটক) সিকিম যাওয়া যায়।
সিকিম ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
উত্তর সিকিম যাওয়ার সময় হলো সেপ্টেম্বর শেষ থেকে নভেম্বর এবং ফেব্রুয়ারী শেষ থেকে মে। এর আগে-পরে গেলে বরফে রাস্তা বন্ধ থাকার সম্ভাবনা থাকবে। এছাড়া উত্তর সিকিম খুব ধস প্রবন এলাকা, তাই বছরের যে কোনো সময়ই রাস্তা বন্ধ থাকতে পারে। দক্ষিণ ও পশ্চিম সিকিম সারা বছরই যাওয়া যায়, তবে বর্ষায় কোনো কোনো জায়গা যেতে সমস্যা হতে পারে। পূর্ব সিকিম এ জুলুক ও নাথাং ভ্যালি এবং ছাঙ্গু লেক সহ বাবমন্দির/নাথুলা যেতে গেলে সেপ্টেম্বর শেষ থেকে নভেম্বর এবং ফেব্রুয়ারী শেষ থেকে মে এর মধ্যে যাওয়াই ভালো। গ্যাংটক যে কোনো সময়ই যাওয়া যায়।
সিকিম কিভাবে যাবেন
এনজেপি স্টেশন বা বাগডোগরা এয়ারপোর্ট থেকে ট্যাক্সি বা শেয়ার জিপ মেলে গ্যাংটক যাওয়ার জন্য। দু’ জায়গাতেই প্রিপেড ট্যাক্সি পাওয়া যায়। চেষ্টা করবেন সিকিম রেজিস্ট্রেশনের গাড়ি নিতে। ওয়েস্ট বেঙ্গল রেজিস্ট্রেশনের গাড়ি নিলে সেই গাড়ি নামিয়ে দেবে গ্যাংটক সিটি সেন্টারের ২ কিমি নীচে দেওরালিতে। সেখান থেকে লোক্যাল ট্যাক্সি নিয়ে হোটেলে পৌঁছোতে হবে।
এছাড়া সিকিম ন্যাশনালাইজড ট্রান্সপোর্টের (SNT) বাস চলাচল করে শিলিগুড়ি-গ্যাংটক রুটে। এনজেপি স্টেশন থেকে অটো ধরে চলে আসুন শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডে, তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনালের পাশে এসএনটি বাসস্ট্যান্ডে।
চাইলে কলকাতা থেকে বিমানে পাকিয়ং যেতে পারেন। পাকিয়ং থেকে জীপে গ্যাংটক।
আসলে সিকিমে ঢোকার অনেকগুলো রাস্তা রয়েছে। আপনার ট্যুর প্ল্যানের উপর ডিপেন্ড করে আপনাকে ঠিক করতে হবে আপনি কোন দিক দিয়ে সিকিমে ঢুকবেন।
সিকিম ভ্রমণে কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য যা মনে রাখা আবশ্যক
- গ্যাংটকে রোপওয়ে চালু থাকে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টে পর্যন্ত।
- নাথুলা ও নর্থ সিকিম ভ্রমণে সিকিমের পর্যটন ও অসামরিক পরিবহণ দফতরের ছাড়পত্র সংগ্রহ করতে হবে। কোনো রেজিস্টার্ড ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে অনুমতিপত্র সংগ্রহ করতে পারেন। অনুমতিপত্রের জন্য ফোটো আইডি এবং দু’টি পাসপোর্ট সাইজের ছবি লাগবে। সরকার অনুমোদিত যে সব ট্রাভেল এজেন্ট অনুমতিপত্র সংগ্রহে সাহায্য করতে পারেন তাদের তালিকার জন্য দেখুন:
www.sikkimtourism.gov.in/Webforms/General/TATO/TATO_List.aspx - নাথুলা যাওয়া যায় বুধবার থেকে রবিবার।
- নর্থ সিকিম ভ্রমণসূচিতে কাটাও থাকে না। সময় থাকলে গাড়ির ড্রাইভারদের অতিরিক্ত টাকা দিলে তাঁরা সানন্দে কাটাও নিয়ে যান। বাংলাদেশীদের জন্যে এটা নয়।
- গ্যাংটকের সব সার্বজনীন এলাকায় ধূমপান, আবর্জনা ছড়ানো এবং থুথু ফেলা আইনত অনুমোদিত নয়।
- সিকিমে বিদেশীদের জন্য অবাধ প্রবেশে বিধিনিষেধ রয়েছে। তাদেরকে একটি সংরক্ষিত অঞ্চলের অনুমতিপত্র বা আর.এ.পি. নিয়ে যেতে হয়। এখানে প্রবেশ বিনামূল্যে এবং শুধুমাত্র একটি বৈধ পাসপোর্ট এবং একটি ভারতীয় ভিসা প্রয়োজন।
- নির্দিষ্ট কিছু এলাকায়, বিশেষ করে সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায়, বিদেশীদের প্রবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয় না। যেমন নাথুলা পাস, জিরো পয়েন্ট এসব এলাকায় বিদেশীদের প্রবেশ নিষেধ।
- সিকিমে কিন্তু আধার চলে না, পার্মিট করতে হলে ভোটার কার্ড অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে (ভারতীয়দের জন্যে প্রযোজ্য)।
সিকিম এর রেস্ট্রিকটেড এরিয়া কোনগুলো এবং অনুমতি পাবার উপায়
সম্প্রতিকালে ভারত সরকার বাংলাদেশীদের জন্যে সিকিম ভ্রমণ করার অনুমতি পাওয়া অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে, আগে যেটা খুব একটা সহজ ছিলো না। যার কারনে অনেকের মনে সিকিম ভ্রমণ, পারমিট কালেক্ট এবং সিকিমের কোথায় কোথায় ভ্রমণ করা যাবে এসব নিয়ে হাজারো রকমের প্রশ্ন ঘুরছে। আজ এখানে সে সব সম্ভাব্য সকল প্রশ্ন এবং তার উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হবে।
ট্যুরিস্ট পারমিটের উপর ভিত্তি করে সমগ্র সিকিমকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। একটি হলো – রেস্ট্রিক্টেড এরিয়া (Restricted Area) এবং আরেকটি হলো প্রটেক্টেড এরিয়া (Protected Area)।
পুরো গ্যাংটক, রুমটেক, ওয়েস্ট সিকিম এর পেলিং, সাউথ সিকিম এর নামচি, চার ধাম ইত্যাদি দর্শনীয় স্থানগুলো রেস্ট্রিক্টেড এরিয়ার মধ্যে পড়ে। রেস্ট্রিক্টেড এরিয়াতে আপনি অন্য স্টেট এর গাড়ি নিয়েও ঘুরতে পারবেন।
অন্যদিকে ইস্ট সিকিম এর ছাঙ্গু লেক, নাথুলা, নিউ বাবা মন্দির, হাঙ্গু লেক, এলিফ্যান্ট লেক, ওল্ড বাবা মন্দির, নাথাং ভ্যালি, থান্ডি ভিউ পয়েন্ট, জুলুক এসব জায়গাগুলো প্রটেক্টেড এরিয়ার অন্তর্গত।
আর নর্থ সিকিম এর লাচেন, লাচুং, গুরুদংমার লেক, জিরো পয়েন্ট, ইয়মথাং ভ্যালী, চোপতা ভ্যালী, কালা পাত্থার, কাটাও এসব জায়গাগুলো প্রটেক্টেড এরিয়ার অন্তর্গত।
প্রটেক্টেড এরিয়ায় ঘুরতে যাবার জন্যে অনুমতি/পারমিট লাগবে এবং সিকিম স্টেট এর গাড়ি নিয়ে ঘুরতে পারবেন। তবে অন্য স্টেট এর সরকারি গাড়ি সরকারি কাজে যেতে পারবে।
সিকিম ভ্রমণে খরচের ধারনা এবং গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ
- বাংলাবান্ধা থেকে শিলিগুড়ি মাত্র ১২ কি.মি রাস্তা। সুতরাং ভিসার সময় পোর্ট সেলেক্ট করে রাখুন ফুলবাড়ি-বাংলাবান্ধা।
- যাদের ফুলবাড়ি পোর্ট দেয়া নাই তারা ৩০০/- টাকা খরচ করে নতুন দুইটা পোর্ট খুব সহজেই এড করে নিতে পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে ভিসার মেয়াদ থাকতে হবে মিনিমাম ৩ মাস।
- বাংলাবান্ধা পোর্টে স্পিড মানি দিতে হবে ১৫০-২০০/- টাকা আর ইন্ডিয়ায় ১০০/- রুপি। অনেক সময় টাকার চেয়ে সময়ের দাম বেশি। তাই চলুন নিজেই জিনিসটা বিবেচনা করি।
- পোর্টের ঝামেলা মিটিয়েই ডলার এক্সচেঞ্জ করে রুপি করে নিন। সাথে সাথে একটা সিম কিনে নিন। ডলারের রেট পাবেন ৭০-৭১ টাকা। আর সিম নিবে ২৫০-৩৫০/- রুপি। দাম বাড়তে পারে সিজনে।
- ফুলবাড়ি পোর্ট থেকে শিলিগুড়ি জাংশন বা গ্যাংটক এর গাড়ি স্ট্যান্ড পর্যন্ত রিজার্ভ অটোতে ১৫০-২০০/- রুপি নিবে। আর পোর্ট থেকে জনপ্রতি অটোতে ১০/- রুপি ফুলবাড়ি মোড় পর্যন্ত, ওখান থেকে শিলিগুড়ি জাংশনের জনপ্রতি বাসভাড়া ১০/- রুপি। সময় লাগবে মাত্র ২৫ মিনিট।
- শিলিগুড়ি থেকে ৪ সিটের ওয়াগন গাড়ি গ্যাংটক পর্যন্ত ভাড়া নিবে ১৫০০-১৮০০/- রুপি আর বড় গাড়ি (মহেন্দ্র বলেরু) রিজার্ভ নিবে ২২০০-২৫০০/- রুপি বড় গাড়িতে ৮-১০ জন বসতে পারবেন। তবে রিলাক্সে বসা যায় ৭ জন। আর সিকিম ট্যুরে ৭ জনের গ্রুপ হলে আপনি পুরা ট্যুরে রিলাক্স ও পাবেন আবার সস্তায় ও পাবেন সবকিছু। এছাড়া কেউ চাইলে শেয়ার্ড জিপে যেতে পারেন। জনপ্রতি ভাড়া পরবে ২৫০/- রুপি
- ড্রাইভারকে বলে রাখবেন গাড়ি যেন সিকিমে ঢোকার মুখে রাংপো চেজপোস্টে দাঁড়ায়। ২০-২৫ মিনিট সময় লাগবে। ড্রাউভার ওয়েটিং চার্জ করে বসতে পারে ৩০০/- রুপি , তাই আগেই বলে রাখবেন। এই চার্জ এভয়েড করার জন্য। আর গাড়ি ঠিক করবেন এম.জি. মার্গ পর্যন্ত। নাহলে যে স্ট্যান্ডে আপনাকে নামিয়ে দিবে, ওখান থেকে এম. জি. মার্গ আসতে আপনার রিজার্ভ গাড়িতে খরচ পরে যাবে এক্সট্রা ৩০০/- রুপি
- রাংপো চেকপোস্টে ইনার লাইন পারমিটের জন্য ভিসা, পাসপোর্ট এর জেরক্স কপি ও আপনার পিপি ছবি লাগবে। তাই সব ডকুমেন্ট রেডি করে রাখুন। পুরা টিমের সবগুলো পাসপোর্ট একসাথে করে ডকুমেন্ট সহ একজন জমা দিলেই হবে। সবার দোতালায় ওঠার কোন দরকার নাই।
- শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটক যেতে সময় লাগবে ৪ ঘন্টার মত। নেমেই এম.জি. মার্গের আশে পাশে হোটেল খুজুন। ৭০০-১০০০/- রুপি এর ভেতর ভাল মানের কাপল বেড পাবেন। আর গ্রুপ করে ৩-৪ জন থাকলে খরচ পরবে ১০০০-১৫০০/- রুপি এর মত।
- সিকিম সাইট সিন করুন। গাড়ির সিট ভেদে ভাড়া ১২০০-২০০০/- রুপি লাগতে পারে। এখানেই এজেন্সির কাছে সাঙুলেক অথবা ইয়াংথাম ভ্যালি (লাচুং) যাবার জন্য ভিসা, পাসপোর্ট আর পিপি ছবি দিয়ে রাখুন পার্মিশন এর জন্য। ইনার লাইন পারমিট কপিও জমা দিতে হবে এখানে।
- সাঙ্গুলেক এর গাড়ি ভাড়া পরবে ৩৫০০-৪৫০০/- রুপি এর মত আর ইয়াংথাম ভ্যালি প্যাকেজ পরবে ১১,০০০-১৩৫০০/- রুপি এর মত। এখানে আবার থাকা খাওয়া সব ইনক্লুডেড।
- ইয়াংথাম ভ্যালি থেকে ওয়েদার ভাল থাকলে কাটাও চলে যান ড্রাইভারকে এক্সট্রা ২০০০-২৫০০/- রুপি দিয়ে।
- শীতের পর্যাপ্ত কাপড়, হাত মোজা, কানটুপি মাস্ট নিবেন। যাদের শ্বাসকষ্ট আছে তারা অবশ্যই সাথে প্রয়োজনীয় ওষুধ সাথে রাখবেন।
- লাচুং (Lachung) এ আপনাকে অবশ্যই রুম হিটার এক্সট্রাভাবে নিতে হবে। খরচ পরবে ৩০০/- রুপি এর মত। কিন্তু বিদ্যুতের ক্নডিশন খুবই খারাপ।
- লাচুং এ ঢোকার আগে নাগা ফলস থেকে প্লাস্টিক বোতল যা আছে সরিয়ে ফেলুন। এখানে বোতল পাইলে জরিমানা গুনতে হবে পুরো ৫০০০/- রুপি
- ১০ কপি করে পাসপোর্ট, ভিসা, ইনারলাইন পারমিটের জেরক্স কপি সবসময় সাথে রাখুন।
- বমি, মাথা ব্যাথা, গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ, রেইন কোট, ছাতা এগুলো সাথেই রাখুন।
৪ জনের জন্য সিকিম ট্যুরের খরচের হিসেব
যাত্রা ভাড়া
ঢাকা- পঞ্চগড় (এনা হুন্দাই) ভাড়া ১৬০০/- টাকা, নন এসি বাসের ভাড়া ৬৫০/- টাকা। কেউ চাইলে ট্রেনেও যেতে পারেন। খরচঃ ১৬০০ * ৪= ৬৪০০/- টাকা
১ম দিন
সকালের নাস্তাঃ ৪০ * ৪= ১৬০/- টাকা (পরোটা, ডিম, সবজি)
পঞ্চগড় টু বাংলা বান্ধা (লোকাল বাস)ঃ ৭০ * ৪ = ২৮০/- টাকা
ভ্রমণ ট্যাক্সঃ ৫১০ * ৪= ২০৪০/- টাকা
বিডি স্পিড মানিঃ ২৫০ * ৪= ১০০০/- টাকা
ইন্ডিয়া স্পিড মানিঃ ১০০ * ৪= ৪০০/- রুপি
ফুলবাড়ি পোর্ট টু ফুলবাড়ি মোড়ঃ ১০ * ৪= ৪০ রুপি
এয়ারটেল সিমঃ ৩০০-৫০০ রুপি
ফুলবাড়ি টু শিলিগুড়ি জংশনঃ ১০ * ৪= ৪০ রুপি
দুপুরের খাবারঃ ১১০ * ৪= ৪৪০ রুপি (ভাত, সবজি, ভর্তা, কলিজা)
শিলিগুড়ি টু গ্যাংটকঃ ১৯০০ রুপি ( ৪ সিটের ওয়াগন গাড়ি, এম.জি. মার্গ পর্যন্ত)
নাইট স্টেঃ ১৪০০ রুপি (হোটেল প্রতিজ্ঞা রেসিডেন্সি, দুইটা কিং সাইজের বেড, ১ রুমেই ৪ জন)
রাতের খাবারঃ ১২০ * ৪ = ৪৮০/- রুপি (পাঞ্জাবি রুটি, ডাল মাখানি, মিস্টি, সবজি)
২য় দিন
সকালের নাস্তাঃ ৪ * ৪= ২০০ রুপি (লুচি, সবজি, ডাল)
দুপুরের খাবারঃ ১২০ * ৪= ৪৮০ রুপি ( লোকাল থালি ভেজ)
রাতের খাবারঃ ২২০ * ৪= ৮৮০ রুপি ( আলু পরটা, ডাল মাখানি, ছোলা বাটোরা, মিস্টি)
সাইট সিনের জন্য মেইন উদ্দেশ্য বরফ দেখা হলে মনেস্ট্রি আর পার্ক দেখার জন্য আলাদা গাড়ি নেয়ার দরকার নেই। পুরা শহরটা পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখতে পারবেন।
৩য় দিন
সকালের নাস্তাঃ ২১০*৪= ৮৪০ রুপি (লোকাল ভেজ থালি+ ফিস)
লাচেং-ইয়াংথাম ভ্যালি-কাটাও প্যাকেজঃ ৬৪০০/- রুপি
রুম হিটারঃ ৩০০/- রুপি
সাঙ্গুলেক এর গাড়ি ভাড়া পরবে ৩৫০০-৪৫০০/- রুপি এর মত আর ইয়াংথাম ভ্যালি প্যাকেজ পরবে ১১,০০০-১৩৫০০/- রুপি এর মত। এখানে আবার থাকা খাওয়া সব ইনক্লুডেড।
৪র্থ দিন
বিকালের নাস্তাঃ ২২০ রুপি
গ্যাংটক টু শিলিগুড়িঃ ১১৫০ রুপি
রাতের খাবারঃ ২৪০ * ৪= ৯৬০ রুপি ( খানা খাজানাতে ভাত, মাছ, মুরগি)
নাইট স্টেঃ ১২০০ রুপি
৫ম দিন
সকালের নাস্তাঃ ১১০ * ৪ = ৪৪০ রুপি (শের ই পাঞ্জাবে রুটি, ডাল মাখানি, মিক্স ভেজিটেবল)
শিলিগুড়ি টু সিটি সেন্টারঃ ১৫ * ৪= ৬০ রুপি
সিটি সেন্টার টু হংকং মার্কেটঃ ২৫ * ৪= ১০০ রুপি
শিলিগুড়ি টু ফুলবাড়ি বর্ডারঃ ১৫০ রুপি
ইন্ডিয়া পোর্টঃ ১০০ * ৪= ৪০০/- রুপি
বিডি পোর্টঃ ২৫০ * ৪= ১০০০/- রুপি
দুপুরের খাবারঃ ১০০ * ৪= ৪০০/- রুপি
বাংলাবান্ধা টু পঞ্চগড়ঃ ২৫০/- টাকা (৪ জন)
পঞ্চগড় টু ঢাকাঃ ১৬০০ * ৪= ৬৪০০/- টাকা (এনা হুন্দাই)
বাংলাদেশীরা সিকিম ভ্রমণের অনুমতি কিভাবে পেতে পারেন?
বাংলাদেশীদের জন্যে সিকিম ভ্রমণের অনুমতি পাওয়ার বেশ অনেকগুলো উপায় রয়েছে। এখানে আমরা চার ধরনের উপায় নিয়ে আলোচনা করবো।
প্রথম উপায় (বাংলাদেশে অবস্থিত ইন্ডিয়ান ভিসা সেন্টার থেকে নেয়া)
ইন্ডিয়ান ভিসা অ্যাপ্লিকেশান সেন্টার, বাংলাদেশ এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে সুরক্ষিত/সীমাবদ্ধ স্থানে অনুমতির আবেদনপত্র অথবা ভারতীয় হাই কমিশন, ঢাকা, বাংলাদেশ এর ওয়েবসাইট এর লিংক থেকে নামিয়ে সঠিকভাবে পূরন করে ভিসা আবেদন কেন্দ্রে জমা দিতে হবে। সব কিছু ঠিক থাকলে জমা দেয়ার ৭ দিন পর, ৭/১৫/৩০/৬০ দিনের জন্য সিকিমের পারমিশন পেয়ে যাবেন। এক্ষেত্রে পারমিশন চার্জ – ৩০০ টাকা
সিকিম, অরুণাচল প্রদেশসহ ভারতের সীমাবদ্ধ বা সংরক্ষিত এলাকাসমূহে পারমিশন কিভাবে নিতে হবে তার নির্দেশাবলী এই লিংকে গিয়ে বিস্তারিত দেখে নিতে পারেন।
২য় উপায়
(রংপো চেকপোস্ট) শিলিগুড়ি থেকে শেয়ার জিপ/রিজার্ভ জিপ/বাসে করে গ্যাংটক যাওয়ার পথে রংপো (RANGPO, EAST SIKKIM) চলে যান। রংপো এর Foreigners Reporting Office থেকে অল্প সময়ে এবং খুব সহজেই কোন ফি ছাড়া পারমিশন নিতে পারবেন। কদিন থাকবেন পারমিশন নেয়ার সময় বলে দিতে হবে। ২-৪ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি অবশ্যই সাথে রাখবেন।
৩য় উপায় (সিকিম ট্যুরিস্ট ইনফরমেশন সেন্টার)
শিলিগুড়িতে সিকিম ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট (SNT Bus Terminus) বাস টার্মিনালের কাছে SNT কলোনিতে সিকিম ট্যুরিস্ট ইনফরমেশন সেন্টার অবস্থিত। পাসপোর্ট, ভিসার কপি আর পাসপোর্ট সাইজের ২ কপি ছবি নিয়ে গেলে এখান থেকে ১০ মিনিটেই কোন ফি ছাড়া অনুমতি পাওয়া সম্ভব। অনুমতি মিলবে সর্বোচ্চ ৩০ দিনের জন্যে। শিলিগুড়িতে সিকিম হাউজের ঠিকানা নীচে দেওয়া হলো – SIKKIM TOURIST INFORMATION CENTRE, SNT COLONY, HILL CART ROAD, SILIGURI. PHONE: 43646
৪র্থ উপায় (মেল্লি চেক পোস্ট) এছাড়া কেউ যদি দার্জিলিং থেকে সাউথ সিক্কিম হয়ে ঢুকতে চান, তাহলে মেল্লি চেক পোস্ট থেকে পারমিট নিয়ে ঢুকতে পারবেন।
কিছু ব্যাপার জেনে রাখুনঃ
- একবার সিকিম ভ্রমণ শেষ করার পর ৩ মাস (৯০ দিন) পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে আবার পারমিট নিতে চাইলে।
- ওয়েস্ট এবং সাউথ সিকিম এর পুরোটাই বাংলাদেশ সহ অন্য সব দেশের ট্যুরিস্টরা ঘুরতে যেতে পারবেন।
- ইস্ট সিকিম এর সাঙ্গু লেক পর্যন্ত বাংলাদেশ সহ অন্য সব দেশের ট্যুরিস্টরা ঘুরতে যেতে পারবেন।
- নর্থ সিকিম এর লাচেন এর থাঙ্গু/চোপতা ভ্যালী পর্যন্ত এবং লাচুং এর ইয়মথাং ভ্যালী পর্যন্ত বাংলাদেশ সহ অন্য অন্য সব দেশের ট্যুরিস্টরা ঘুরতে যেতে পারবেন।
- প্রটেক্টেড এরিয়ার পারমিট পেতে পারবেন – ট্যুরিজম এন্ড সিভিল এভিয়েশন ডিপার্টমেন্টের পারমিট সেল থেকে। গ্যাংটকের এমজি মার্গ এর টাইটানিক পার্কের নীচে এদের অফিস। প্রটেক্টেড এরিয়ার পারমিট পেতে হলে সিকিম গভর্মেন্ট এর রেজিস্ট্রার্ডকৃত ট্যুরিস্ট এজন্সি দ্বারা অ্যাপ্লাই করতে হবে। ব্যক্তিগত ভাবে অ্যাপ্লাই করলে পারমিট দেয়া হয় না।
- গাড়িতে এবং বাইকে ভ্রমণ করতে চাইলে পারমিট পেতে কত টাকা লাগে? ইস্ট সিকিম এর পারমিট পেতে প্রতিজন ৫০ রুপী এবং নর্থ সিকিম এর জন্যেও প্রতিজন ৫০ টাকা জমা দিতে হয় যা এনভারয়মেন্ট ফি হিসেবে State Bank of Sikkim এর Revenue Head – 1452 / Tourism 800 একাউন্টে জমা দিতে হবে। গাড়িতে এবং বাইকে উভয় ক্ষেত্রেই ৫০ রুপী করে ফি জমা দিতে হবে যা ক্যাশ দিলে হবে না। ভারতীয়দের জন্যে কোন টাকা লাগে না।
- বাংলাদেশ সহ অন্য সব দেশের ট্যুরিস্টরা যদি বাইকে নর্থ সিকিম ভ্রমণ করতে চান তাহলে পারমিটের জন্যে তাদের জমা দিতে হবে – পাসপোর্ট, ভিসা, ভ্যালিড ইনার লাইন পারমিট, বাইকের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, ইন্সিওরেন্স সার্টিফিকেট, পলিউশন সার্টিফিকেট আর বাইক ভাড়ার হলে অথোরাইজেশন লেটার অন জুডিশিয়াল পেপার, ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স, ফোন নাম্বার এবং আপনার কোন এক আত্মীয়ের ফোন নাম্বার যা বাধ্যতামূলক। উপরে উল্লেখিত সকল কাগজের ২ কপি করে ফটোকপি জমা দিতে হবে এবং সাথে লাগবে ৩ কপি কালার ছবি।
- মনে রাখবেন, বিদেশীদের বাইকের পারমিটও কিন্তু সিকিম সরকার দ্বারা স্বীকৃত লোকাল ট্যুর এজন্ট দ্বারা করাতে হবে। নিজে নিজে করা যাবে না। ভারতীয়রা নিজের বাইকের পারমিট নিজেরাই করতে পারবেন। বিদেশীদের বাইকে ভ্রমণ করার সময় একজন লোকাল গাইড সাথে রাখা বাধ্যতামূলক।
- ভারত ছাড়া অন্য কোন দেশের ট্যুরিস্ট লাচেন এ অবস্থিত গুরুডংমার লেক যেতে পারবে না।
- ভারত ছাড়া অন্য কোন দেশের ট্যুরিস্ট লাচুং এর জিরো পয়েন্ট যেতে পারবে না।
- ভারত ছাড়া অন্য কোন দেশের ট্যুরিস্ট নাথুলা পাস (Nathu La Pass) বা ওল্ড সিল্ক রুট (Old Silk Route) যেতে পারবে না।
4 Comments
Heloo
We wants to travel to sikim with five member.At 9 pm if we reach gangtok,with parmission is it possible to travel next day to sikkim?
yes possible.
Gangtok থেকে পেলিং কি ভাবে কম খরচে যেতে পারব ?
You can go there by hiring a taxi. Fare will be USD 50 to 65.