সেন্ট মার্টিনস দ্বীপটি বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্ব অংশের একটি ছোট দ্বীপ, কক্সবাজার-টেকনাফ উপদ্বীপের দক্ষিণ দিক থেকে প্রায় 9 কিলোমিটার দক্ষিণে এবং বাংলাদেশের দক্ষিণতম অংশ গঠন করে। সংলগ্ন একটি ছোট দ্বীপ রয়েছে যা উচ্চ জোয়ারে পৃথক করা হয়, তাকে ছেঁড়া দ্বিপ বলে। নারিকেল গাছের আধিক্যের জন্য এ দ্বীপটি নারিকেল জিঞ্জিরা নামেও পরিচিত। এ দ্বীপে কিভাবে যাবেন, কি খাবেন, কোথায় থাকবেন এসব বিষয় আপনাদের সামনে তুলে ধরা হল।
সেন্টমার্টিন যেতে হলে আপনাকে প্রথমে টেকনাফ যেতে হবে, তারপর সেখান থেকে জাহাজ বা ট্রলারে করে সেন্টমার্টিন পৌঁছাতে হবে। ঢাকা, চট্টগ্রাম বা কক্সবাজার থেকে সহজেই আপনি টেকনাফের জেটিতে পৌঁছুতে পারবেন। ঢাকা থেকে টেকনাফের বাস রাত ৭ টা থেকে ৯ টার মধ্যে ছেড়ে যায়। যত তাড়াতাড়ি রওনা করতে পারেন তত ভালো, কারণ পথে যানজটে দেরী হয়ে গেলে জাহাজ না পাওয়ার আশংকা থেকে যায়।
চট্টগ্রাম থেকে রাত দেড়টায় বাস ছাড়ে নগরীর সিনেমা প্যালেস থেকে। আর কক্সবাজার থেকে সকাল ৬ টায় রওনা দিলেও জাহাজ ধরা সম্ভব। এছাড়া ছোট গাড়িতে বা সিএনজিতে করে কক্সবাজার থেকে টেকনাফের জেটিতে পৌঁছানো সম্ভব। ঢাকা থেকে টেকনাফ নন এসি বাসের ভাড়া ৯০০ টাকা। ইউনিক সার্ভিস, শ্যামলী, হানিফ, ইয়ার ৭১, সৌদিয়াসহ বেশ কিছু বাস চলে।
এসি বাসের মধ্যে সেন্টমার্টিন হুন্দাই সবচেয়ে ভালো। এ ছাড়া গ্রীনলাইন, গ্রীন সেন্টমার্টিন, তুবা লাইনসহ আরও অনেকগুলো বাস চলে। ক্লাস অনুসারে এর ভাড়া ১৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ২৩৫০ টাকা পর্যন্ত। শীতের সময় এসব বাসে টিকেট পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, তাই শীতে সেন্টমার্টিন পরিকল্পণা করলে আগে থেকেই টিকেট কেটে রাখতে হবে।
- জাহাজঃ
সেন্টমার্টিনগামী সব জাহাজ টেকনাফের জেটি থেকে সকাল ৯:৩০ এ ছেড়ে যায়। একই জাহাজ বিকাল ৩ টায় সেন্টমার্টিন থেকে ফিরে আসে। বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়ে সেন্টমার্টিন পৌঁছুতে সাধারণত ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিটের মতো সময় লাগে। তবে দ্রুতগামী গ্রীনলাইন দেড় ঘণ্টা সময়ের মধ্যেও পৌঁছে যায়।
জাহাজের আসা-যাওয়ার জন্য সর্বনিম্ন ভাড়া থাকে ৫৫০ টাকা। ক্লাস ও জাহাজ অনুসারে সর্বোচ্চ ভাড়া ১৬০০ টাকা। কেয়ারী সিন্দবাদ, কেয়ারী ক্রুজ অ্যান্ড ডাইন, বে ক্রুজ, এমভি দোয়েল, এমভি পারিজাত, এলসিটি কাজল, এমভি ফারহান, আটলান্টিক ক্রুজ এবছর চলাচল করছে। প্রতিবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ১৫ অক্টোবর থেকে জাহাজ চলাচল শুরু হয়ে বন্ধ হয় এপ্রিলে এসে। জাহাজ চালু হয় নভেম্বরের ১ তারিখ থেকে।
সেন্টমার্টিনের জাহাজের ভাড়া:
কেয়ারী সিন্দবাদ: মেইন ডেক ৫৫০ টাকা, ওপেন ডেক ৭০০, ব্রীজ ডেক ৮০০
কেয়ারী ক্রুজ এন্ড ডাইন: এক্সিকিউটিভ লাউঞ্জ ১০০০ টাকা, কোরাল লাউঞ্জ ১,০০০ টাকা, পার্ল লাউঞ্জ ১,৪০০ টাকা।
বে ক্রুজ: গ্রীন জোন ১,৩০০ টাকা, ব্লু জোন ১,৪০০ টাকা, রেড জোন ১,৬০০ টাকা।
এম ভি দোয়েল: ওপেন ডেক ৭৫০ টাকা, বিজনেস ক্লাস ৮৫০ টাকা
এম ভি পারিজাত: ওপেন ডেক ৭৫০ টাকা, বিজনেস ক্লাস ৮৫০ টাকা
এম ভি ফরহান: মেইন ডেক ৬০০ টাকা, ওপেন ডেক ৭৫০ টাকা, বিজনেস ক্লাস ৮৫০ টাকা।
এলসিটি কাজল: মেইন ডেক ৬০০ টাকা, ওপেন ডেক ৭৫০ টাকা, বিজনেস ক্লাস ৮৫০ টাকা।
আটলান্টিক ক্রুজ: ইকোনমি ডেক ৭৫০ টাকা, ওপেন ডেক ৮৫০ টাকা, রয়েল লাউঞ্জ ১,০৫০ টাকা (এসি), লাক্সারী লাউঞ্জ: ১,৩৫০ টাকা (এসি)
মনে রাখবেন জাহাজের ভাড়া সবসময় রিটার্ণ ধরেই কাটা হয়। আপনি যেদিন ফিরতে চান সেভাবে বললেই হবে, তারা সেভাবে টিকেট দিবে।
জাহাজগুলোর নিজস্ব অফিসগুলো থেকে টিকেট কেনা যায়। অধিকাংশ যাত্রীই একদিন থেকে পরের দিন আসেন, টিকেটও সেই ভাবে কিনেন। তবে চাইলেও দিনে দিনে ফিরে আসা সম্ভব। যদিও অন্তত একরাত দ্বীপে না থাকলে এর সৌন্দর্য বোঝা সম্ভব নয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম বা কক্সবাজার থেকে টিকেট কেনা সম্ভব।
অনেকেই আগে থেকে টিকেট কেটে তারপর যেতে চান। কেয়ারী সিন্দবাদ ও কেয়ারী ক্রুজ এন্ড ডাইনিংয়ের টিকেট অনলাইনে তাদের সাইট থেকে কাটা সম্ভব। এ ব্যপারে বিস্তারিত জানার জন্য ফোন করতে পারেন: 01886016460
সেন্টমার্টিনে প্রায় ১৩০ টি হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। এদের লিস্ট এখানে দেয়া হলঃ
CLICK HEREসেন্টমার্টিনে দ্বীপের জীব বৈচিত্র রক্ষার জন্য রাত ১১ টার পর জেনারেটর চালানোর নিষেধাজ্ঞা আছে। ফলে রাতের বেলা বিদুৎ ছাড়া কাটাতে হয়। শীতকালে কোন সমস্যা না হলেও গরম থাকলে বেশ কষ্ট হয়। জেটি ও বাজারের কাছে বেশিরভাগ হোটেল ও রিসোর্ট অবস্থিত। একটু নিরিবিলি চাইলে পশ্চিম বিচে থাকা ভালো।
প্রতিটি হোটেল বা রিসোর্টে খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। আগে থেকে বলে রাখলে তারা খাওযার ব্যবস্থা করে রাখে। কি খাবেন সেটার উপর নির্ভর করে প্রতিবেলা খরচ ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা পড়তে পারে। সামুদ্রিক মাছের মধ্যে কোরাল খুব জনপ্রিয়। এছাড়া লবস্টারসহ অন্যান্য মাছ তো আছেই।
রিসোর্ট ছাড়াও জেটির কাছে ও সমুদ্র বিলাস রিসোর্টের কাছে অনেকগুলো খাবার হোটেল পাবেন। সেখানে মাছ দেখিয়ে দিয়ে, সেটা ভেজে খাবার সুযোগ আছে। রিসোর্ট/হোটেলগুলোতে বললে তারা রাতে বার-বি-কিউ করে দেয়। মুরগি বা মাছের বার-বি-কিউ বেশি জনপ্রিয়। দাম মোটামুটি, আলোচনা করে ঠিক করে নিবেন।
কি কি করবেন:
সেন্টমার্টিন দ্বীপে আসলে হ্যামকে শুয়ে সমুদ্র দেখে দেখেই কয়েকদিন পার করে দেয়া সম্ভব। আর করতে চাইলেও অনেক কিছু করার আছে। কয়েকটি নিচে দিলাম। পরবর্তীতে আরেকটি বিস্তারিত আর্টিকেল লিখবো এ ব্যাপারে।
১. সমুদ্র সৈকত দেখা। অগভীর স্বচ্ছ নীলাভ সমুদ্রের পানিতে না নামলে তো সেন্টমার্টিন দেখাই বৃথা। নামার আগে অবশ্যই নিরাপদ জায়গা কোথায় শুনে নিবেন, জেটির পাশে নামবেন না।
২. সাইকেল চালানো। আপনি যদি সাইকেল চালাতে পারেন, তবে পুরো দ্বীপ সাইকেলে ঘুরে দেখতে পারেন। খরচ প্রতি ঘন্টা ৪০/৫০ টাকা নিবে। সবখানেই সাইকেল ভাড়া পাবেন।
৩. ছেঁড়া দ্বীপ ভ্রমণ। সেন্টমার্টিনের দক্ষিণে বিচ্ছিন্ন অংশটুকুকে ছেঁড়া দ্বীপ বলে। নৌকা ভাড়া করে, হেঁটে বা স্পিড বোটে ছেঁড়া দ্বীপ ঘুরে আসতে পারবেন।
৪. স্কুবা ডাইভিং। প্রতিবছর নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সেন্টমার্টিনে স্কুবা ডাইভিং করা যায় । প্রশিক্ষণসহ খরচ পড়ে ৩৫০০ থেকে ৪০০০ টাকার মতো।
খরচ:
ঢাকা থেকে সেন্টমার্টিনে এক রাত থেকে আবার আসতে মোটামুটি ৫-৬ হাজার টাকা খরচ হবে। বাস ভাড়া: আসা-যাওয়া ১৮০০ টাকা, জাহাজ ৫৫০ টাকা, হোটেল ১৫০০ টাকা, খাবার প্রতি বেলা ১৫০ টাকা ধরে বাজেট করে নিতে পারেন। বাকিটা আপনি কতটুকু বিলাসি তার উপর নির্ভর করে।
ভ্রমণ পরিকল্পণা:
সেন্টমার্টিনে অন্তত একরাত না থাকলে এই ভ্রমণটা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তাই রাতের বাস ধরে রওনা দিয়ে সকালের জাহাজে সেন্টমার্টিন যেয়ে এক রাত থেকে পরের দিন বিকাল তিনটার জাহাজে ফিরে এসে টেকনাফ থেকে বাস ধরে ফিরতে পারেন। বাসগুলো জাহাজ না আসা পর্যন্ত ছাড়েনা।
বিষেশ সতর্কতা:
সেন্টমার্টিন বর্তমানে ইকোলজিক্যালি ক্রিটিকাল এরিয়া হিসেবে আছে যার অর্থ পর্যটনের ভারে এখানকার জীব বৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন হয়ে আছে। সেন্টমার্টিন বেড়াতে গেল প্রবাল ও প্রকৃতির ক্ষতি হয় এমন কিছু করবেননা। কোন প্রকার অপঁচনশীল দ্রব্য কোথাও ফেলবেন না।
ভাল লাগলে শেয়ার করুন।