কক্সবাজার বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটি ভ্রমণ স্থান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার বছরে পুরোটা সময় জুড়ে পর্যটকদের আকর্ষণ করে। আমাদের এই পোস্টে কিভাবে কক্সবাজার সহজে ভোলা যায় কম খরচে এবং কি কি করা যায় ভ্রমণ করার সময় সেটাই বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হলো। সাধারণত ভ্রমণের খরচ আপনার নিজের উপর নির্ভর করে তবে বিশেষ যে খরচ গুলো সেগুলো আমরা এখানে তুলে ধরছি এবং সাথে সাথে কি কি সুযোগ সুবিধা আছে এবং কি কি অসুবিধা আছে সেগুলো আপনাদের কাছে তুলে ধরছি।
কক্সবাজারে ঘুরতে যাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে শীতকাল। এই সময় আবহাওয়া একটু ঠান্ডা থাকে। তাই ঘুরতে গেলে একটি অন্যরকম সুন্দর আবহাওয়া পাওয়া যায়। এছাড়াও গরমের সময়ে ঘুরতে যেতে পারেন কারন সেই সময় বিভিন্ন হোটেলে ভাড়া অনেক কম থাকে কিন্তু আপনাকে প্রচন্ড গরম সহ্য করতে হবে আর শীতকালে আপনি যদি ভ্রমণ করতে চান তাহলে খরচ কিছুটা বাড়বে বিশেষ করে ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে এবং জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে খরচ একটু বেশি হয়।।
ঢাকা থেকে কক্সবাজার যদি আপনি ট্রেন এবং বাস মিলে যেতে চান তাহলে ট্রেনে ঢাকা থেকে চিটাগাং ট্রেনে যেতে হবে যার ভাড়া আসবে ৪৫০ টাকা এবং এরপর চিটাগাং থেকে আপনাকে বাসে যেতে হবে যার ভাড়া ৩০০ টাকা। আর আপনি যদি সরাসরি ঢাকা থেকে কক্সবাজার নন এসি বাসে যেতে চান তাহলে ভাড়া ৮০০ টাকা আর আপনি যদি এসি বাসে যেতে চান তাহলে সেটা ১২০০ টাকা থেকে বাস ভেদে বিভিন্ন রকমের দাম হয়ে থাকতে পারে। যদি ট্রেনে করে চিটাগাং যেতে চান তাহলে ট্রেনের টিকিট আগে থেকেই কাটা থাকতে হবে। রাত ৯ টায় 'মহানগর এক্সপ্রেসে' করে চিটাগং যেতে পারেন খরচ কমানোর জন্য। নামে এক্সপ্রেস হলেও ট্রেন লোকাল বাসের মত। ট্রেন ভোর ৪.৩০ এর দিকে চিটাগং নামিয়ে দিবে।স্টেশন থেকে নিউ মার্কেটের দিক কিছুক্ষণ হাটাহাটির পর দেখবেন হানিফ এর একটা বাস কক্সবাজার যাবে। ৫.৩০ এর দিকে বাস ছাড়ে এবং ৮.৩০ এর দিকেই কক্সবাজার পৌছে যাবেন। আর যদি এসি ট্রেনে দ্রুত যেতে চান তাহলে সুবর্ণ একপ্রেসে যেতে পারেন। কিন্তু এই ট্রেন সকালে। তাই কক্সবাজার পৌঁছাতে আপনার সন্ধ্যা হবে। আপনি পৌঁছায়ে হোটেলে রাত পার করলে ১ দিনের হোটেল ভাড়া লস হবে। চেষ্টা করবেন এমন ভাবে রউনা করতে যেন কক্সবাজার সকালে পৌঁছান। তাহলে হোটেলে চেক ইন করে আপনি একটু রেস্ট নিয়েই বীচে ঘুরতে চলে যেতে পারবেন। যারা আপনারা প্লেনে করে যেতে চান তারা সরাসরি এয়ারপোর্ট থেকে রউনা করবেন। টিকিট ওয়ান ওয়ে ৩৫০০ টাকার মত হয়। ৩০ মিনিটে আপনি কক্সবাজার এয়ারপোর্টে পৌঁছে যাবেন। সেখান থেকে টমটম ব্যাটারি চালিত একটি টেক্সি নিয়ে কলাতলি চলে আসবেন। ভাড়া যতই চাইবে আপনার দামাদামি করতে হবে। আসল ভাড়া ১০০ টাকা।
সাধারণত কক্সবাজারে হোটেল গুলোর ভাড়া বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। অফ সিজনে একটি থ্রি স্টার মানের হোটেল এ আপনি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায় এসি রুম পেয়ে যাবেন। কিন্তু সিজনের টাইমে সেই একই রুম আপনাকে হয়তো দুই হাজার টাকা দিয়েও নিতে হতে পারে। বীচ থেকে হোটেলের দূরত্ব যত বেশি হোটেলে ভাড়া তত কম, বীচের কাছের হোটেল গুলো ভাড়া একটু বেশি হয়ে থাকে। আপনি সরাসরি কলাতলী বাস্ট্যান্ড এসে সেখানে আশেপাশের প্রচুর হোটেল দেখতে পারবেন। বুকিং আগের থেকেও দিতে পারেন যদি আপনার পরিচিত কেউ থাকে অথবা সেখানে উপস্থিত হয়ে বিভিন্ন হোটেলের সরাসরি কথা বলতে পারেন আপনার দামের সাথে যদি মিলে তাহলে আপনি হোটেল ভাড়া করতে পারেন।
সাধারণত দাম অনুসারে কক্সবাজারে হোটেল রিসোর্ট গুলো কে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার গুলো হলঃ মারমেইড বিচ রিসোর্ট, সায়মন বিচ রিসোর্ট, ওশান প্যারাডাইস, লং বিচ, কক্স টুডে ইত্যাদি। ৩ হাজার থেকে ছয় হাজার টাকা হোটেলঃ সী ক্রাউন, সী প্যালেস, শৃগা্ল, কোরাল রিফ, বিচ ভিউ ইত্যাদি। ৮০০ থেকে ৩০০০ টাকার গুলোঃ উর্মি গেস্ট হাউস, কোরাল রিফ, ইকরা বিচ রিসোর্ট, সেন্টমার্টিন রিসোর্ট, হানিমুন রিসোর্ট। যদি কাপল যেতে চান অবশ্যই একটি ভালো হোটেলে থাকার চেষ্টা করবেন।
ভ্রমণের খরচ বাঁচাতে এবং একটু ভাল মানের খাবার খেতে বিভিন্ন রকমের রোস্তরা আপনি এখানে দেখতে পাবেন। এছাড়াও এখানে আপনি পিজা হাট, কেএফসি ও পাবেন। তবে সুলভ মূল্যে ভালো মানের খাবার পরিবেশনের জন্য রোদেলা, ঝাউবন, ধানসিঁড়ি, পৌষী, নিরিবিলি হোটেলের বেশ সুনাম রয়েছে।
কক্সবাজার সাধারণত দুই দিন ভ্রমণের জন্য যথেষ্ট। আপনি যদি বাসে ভ্রমন করে থাকেন তাহলে রাতের বাসে রওনা দিবেন এবং পরের দিন সকালে কক্সবাজার পৌঁছে যাবেন। হোটেলে উঠে কয়েক ঘণ্টা রেস্ট নিয়ে আপনি তারপর বিচার আশেপাশে ঘুরে দেখতে পারেন। এভাবে প্রথম দিন আপনি বিচার আশেপাশে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে পার করতে পারেন। কক্সবাজারের মূল পয়েন্ট কলাতলী বিচ, সুগন্ধা বিচ, লাবনি বিচ এসব জায়গায় আপনি প্রথম দিন ঘুরে দেখতে পারেন।
বিতীয় দিন আপনি হিমছড়ি এবং ইনানী বিচ যেতে পারেন। মেরিন ড্রাইভ দিয়ে হিমছড়ি ইনানী বিচ ঘুরতে গেলে আপনার দারুন একটি সময় পার হবে। খরচ কমাতে হিমছড়ি ইনানী বিচে যেতে চাইলে কলাতলী থেকে অটোরিকশা রিজার্ভ করে নিতে পারেন। ভাড়া নেওয়ার সময় অবশ্যই ভালোমতো দরদাম করবেন। পর্যটন মৌসুমে ভাড়া অনেক বেশি চেয়ে থাকবে। সাধারণত হিমছড়ি এবং ইনানী বিচ ঘুরতে যেতে 500 টাকায় যথেষ্ট। আপনাকে কলাতলী থেকে পিকআপ করে নিয়ে যাবে দুই থেকে তিন ঘণ্টা ঘুরিয়ে আবার আপনার স্পটে পৌঁছায় দিবে। পর্যটন মৌসুমে এই ভাড়া 1000 টাকা হয়ে থাকতে পারে।
কিছু বিশেষ টিপস
- ভ্রমণ করতে গেলে অবশ্যই দলগতভাবে যাবেন। যদি কাপল হয়ে ভ্রমণ করতে চান তাহলে যেই সময় টিভির সবচেয়ে বেশি যায় সেই সময়ে ভ্রমণ করাই উত্তম। হোটেল থেকে বিচে আসার জন্য হাঁটার চেষ্টা করুন যদি কোন অটোরিকশা ভাড়া করেন তাহলে অবশ্যই ভাড়া বলে উঠবেন।
- প্রয়োজন না হলে বীজ মার্কেট থেকে কোন কিছু কিনবেন না যদি কিনতে চান তাহলে ভালোমতো দরদাম করে কিনবেন।
- ঝুঁকি এড়াতে বেশি রাতে একাকী সাগর সৈকতে ঘোরাফেরা করবেন না কাপল হলে অবশ্যই যেই সময় সবাই বিচে ঘুরতে বের হয় সেই সময় বের হবেন।
- যারা আপনাদের লোকাল ছেলেপেলেরা ছবি তুলে দিতে চায় তাদের থেকে দূরে থাকুন। কারণ তারা প্রত্যেক ক্লিকে আপনার কাছে অপ্রত্যাশিত টাকা চেয়ে বসবে এবং আপনাকে সমস্যায় ফেলতে পারে।
- যদি আপনার চেক আউট টাইম এবং ফেরার সময় গাড়ি ছাড়ার টাইম এর ব্যবধান অনেক বেশি হয় তাহলে ব্যাগ তালা মেরে হোটেল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে তাদের কাছে রাখতে পারেন আর যদি তাদেরকে বিশ্বস্ত মনে না হয় নিজের সাথে করে নিয়ে বাকি সময়টা ঘুরে তার পরে যখন আপনার গাড়ি ছাড়ার সময় হবে তখন গাড়িতে উঠবেন।
আশাকরি আপনাদের এই গাইড আমাদের এই প্রচেষ্টা আপনাদের কক্সবাজার ভ্রমণ করতে সাহায্য করবে।
ভাল লাগলে শেয়ার করুন।