ঢাকা থেকে কলকাতা ৩ ভাবে যাওয়া যায়। প্লেনে, বাসে এবং ট্রেনে। ৩ ভাবে যাওয়ার কথা আমরা তুলে ধরছি।
যাওয়ার আগে অবশ্যই ইন্ডিয়ার ভিসা লাগিয়ে নিবেন পাসপোর্টে। আপনি যদি টুরিস্ট হন তাহলে টুরিস্ট ভিসা নিবেন, মেডিকেল হলে সেটার ভিসা। https://www.ivacbd.com এই ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনি অনলাইনে নিজেই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এরপরও যদি আপনার সাহায্য লাগে তাহলে আমাদের এই লিঙ্কে গিয়ে বিস্তারিত দেখতে পারেনঃ India visa
ঢাকা থেকে কলকাতা যদি আপনি প্লেনে ভ্রমন করেন তাহলে Spicejet, Indigo Airlines ব্যবহার করতে পারেন। Spicejet এর ফ্লাইট সকালে আর দুপুরে থাকে। Indigo ফ্লাইট বিকেলে থাকে। ভাড়া ওয়ান ওয়ে ৪০০০-৪৫০০ রূপি পড়ে এবং আপ-ডাউন ভাড়া ৮০০০-৯০০০ রূপি। মাঝে মাঝে অল্প ডিস্কাউন্ট ও পাওয়া যায়। হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট থেকে বিমান মাত্র ৩০ মিনিটে কলকাতার নেতাজি সুবাস চন্দ্র বোস আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট এ পৌঁছে যাবে। এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশনে কোন ঝামেলা করে না। কোন পেপারসও দেখতে চায় না সাধারণত কারন তারা বিমানে ভ্রমনকারীদের এলিট পারসন ভাবে। ইমিগ্রেশন শেষ করে আপনি এয়ারপোর্ট থেকে বের হবেন। ভুলেও এয়ারপোর্ট থেকে সিম কিনবেন না এবং টেক্সি ভাড়া করবেন না। এয়ারপোর্ট থেকে ৫০ ডলার ভাঙ্গাতে পারেন কিন্তু রেট অনেক কম পাবেন। বাংলাদেশে রূপি অহরহ পাওয়া যায়। ২০০০-৩০০০ রূপি সাথে করে নিতে পারেন। এয়ারপোর্টে সেটাও চেক করে না। এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে হাতের বাম পাশে হাটা শুরু করবেন। ৫০০ মিটার হাটলেই একটা ফ্লাইওভারের নিচেই অনেক দোকান দেখতে পাবেন। সেখান থেকে ২০০ রূপিতে সিম সহ ৭ দিনের ইন্টারনেট প্যাকেজ আর ১০০ রূপি টকটাইম পেয়ে যাবেন। ভোদাফোন সবাই ব্যবহার করে। সেটার প্যাকেজ অনেক ভাল। এয়ারপোর্টে এই প্যাকেজ ৬০০ রূপি নিবে। এরপর আপনি OLA/ UBAR কল করবেন। নিউমার্কেট এরিয়াতে সবাই থাকতে চায়। তাই সেখানে ভাড়া আসবে ২০০ রুপির মত। আপনি যদি এয়ারপোর্ট থেকে টেক্সি ভাড়া করেন তাহলে টেক্সি ৭০০-৮০০ রূপি চাইবে। ৫০০ রুপির নিচে কোন টেক্সি যাবে না।
হোটেল ভাড়াঃ কলকাতাতে সবাই নিউমার্কেট/পার্কস্টিটে হোটেল বুকিং করে। আপনি Booking.com থেকে সহজেই সেটা করতে পারবেন। হোটেল ৫০০ রূপি থেকে ৮০০০ রুপির আছে পার ডে। আপনি ফ্যামিলি নিয়ে গেলে ১০০০-১৫০০ রুপিতে ভাল মানের হোটেল পাবেন।
ঢাকা থেকে কলকাতা যদি আপনি বাসে ভ্রমন করেনঃ নন এসিঃ ৯০০-১২০০ (রয়েল,দেশ, শ্যামলী,সৌদিয়া) এসিঃ ১৫০০-২০০০ (রয়েল, দেশ, শ্যামলী, সৌদিয়া, গ্রীনলাইন-সৌহার্দ্য) তবে বর্তমান সময়ে ফেরিতে যেই সময় ব্যায় করতে হয় তাতে ভেঙ্গে ভেঙ্গে বেনাপোল গেলে অনেক সময় বেচে যাবে৷ নোটঃ শুধুমাত্র শ্যামলী এবং গ্রীনলাইন-সৌহার্দ্য বাস সরাসরি কলকাতা পর্যন্ত যেতে পারে৷ শ্যামলী আপনাকে একদম পার্কস্টিটে নামিয়ে দিবে।
রাত ১১ টার পর বাসগুলো ছাড়ে। ঘুমন্ত যশোরের উপর দিয়ে খুব ভোরে বেনাপোল পৌছাবেন। বর্ডার খোলে ৯টায়। তাই নাস্তা করে এদিক সেদিক ঘুরতে পারেন। ব্যাংক খোলার পর ৩০০ টাকা বাংলাদেশ সরকারের নামে জমা দিয়ে কাগজ সহ রর্ডারের মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করবেন। অনেক দালালরা ট্রাই করবে আপনার থেকে ব্যাগ নিয়ে বর্ডার ক্রস করে দেবে বলে। ব্যাগ চেক করবেনা কর্মকরর্তারা। কান দিবেন না। তাই নিজের মত সামনে আগাবেন। কোন ঝামেলা ছাড়াই ক্রস করতে পারবেন। ইন্ডিয়ার মাটিতে পা দিয়েই প্রথমেই শ্যামলী কাউন্টারে ঢুকে ফ্রেস হবেন। সেখানেই ডলার এক্যচেন্জ করা যায়। চাইলে ৫০ ডলার করতে পারেন কিন্তু রেট একটু কম পাবেন। নিউমার্কেট এড়িয়াতেই ভালো রেট পাবেন। কোলকাতার ভেতরে প্রায় ১০-১২ কিমি পর্যন্ত গ্রামীন এবং রবি নেটেওয়আর্ক কাজ করে। রোমিং অন করে যেয়েন না। তাহলে বাঁশ খাবেন মোবাইল অপারেটরের কাছে। ডলার ভাংগিয়ে রুপি নিলে রিসিটটা/রশিদ নিতে ভুলবেন না। শ্যামলীর বাসে করে কোলকাতা যাত্রা শুরু করবেন। পথে ধাবা মতো একটা প্লেসে গাড়ি দাড়াবে। ১০০ রুপি দিয়ে নাস্তা করে নিতে পারেন। দুপুর দুটা নাগাদ বাস আপনাকে কলিং স্ট্রিট নামিয়ে দিবে। সেখান থেকে অল্প হেঁটেই আপনার হোটেলে আপনি পৌঁছে যাবেন। সেখানের দোকান থেকে আপনি ডলার ভাঙ্গাবেন এবং সিম কিনবেন।
ঢাকা থেকে কলকাতা যদি আপনি ট্রেনে ভ্রমন করেনঃ মৈত্রী এক্সপ্রেস (Maitree Express) ট্রেন হচ্ছে ঢাকা থেকে কলকাতা আসা-যাওয়ার সবচেয়ে সহজ ও আরামদায়ক মাধ্যম যা অল্প খরচে চলে যেতে পারে। এছাড়াও ঢাকা থেকে কলকাতা যাওয়ার সরাসরি বাস চালু আছে। এই পোস্টে মৈত্রী ট্রেন এবং বাস দুটোরই দরকারি বিষয়গুলো বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। আশা করি অনেকের উপকারে আসবে।
মৈত্রী ট্রেন ঢাকা থেকে কখন ছাড়ে? মৈত্রী ট্রেন ঢাকা থেকে সকাল ৮ টা ১০ মিনিটে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এই ট্রেনের টিকিট কাটতে হবে কমলাপুর রেল স্টেশন এবং চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে। ঢাকা টু কলকাতা ট্রেনের টিকিট আর কোথাও বিক্রি করে না।
মৈত্রী ট্রেনের রিটার্ন টিকিট ঢাকা থেকে কাটা যাবে? জ্বি পারবেন তবে কলকাতা টু ঢাকার ট্রেনের টিকিট কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে শুধু কাটতে পারবেন। কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে ২০% টিকিট দিতে পারে। আর বাকি ৮০% টিকিট কলকাতা কাউন্টার থেকে দিয়ে থাকে।
কলকাতার কোথা থেকে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেট টাকা যাবে? কলকাতা থেকে মৈত্রী এর টিকিট কাটতে হবে ফেয়ারলী প্লেস অথবা কলকাতা স্টেশনে গিয়ে। কলকাতা-ঢাকা ট্রেনের টিকিট আর কোথাও বিক্রি করে না। ফেয়ারলী প্লেস: সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত টিকিট দেওয়া হয়। কলকাতা স্টেশন: বিকাল ৪ টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত টিকিট দেয়া হয়। স্টেশনের ২য় তলায় যেতে হবে মৈত্রী ট্রেনের টিকিটের জন্য। টিকিট কাটার জন্য প্রথমে পাসপোর্ট দেখিয়ে ফর্ম নিতে হবে। ফর্মে সিরিয়াল নাম্বার লিখে দিবে। তারপর ফর্ম পূরন করে অপেক্ষা করতে হবে। সিরিয়াল অনুযায়ী ডাকা হবে টিকিট নেয়ার জন্য।
কোন কোন দিন মৈত্রী ট্রেন চলে এবং কোন দিন বন্ধ থাকে? মৈত্রী ট্রেন নিম্নোক্ত দিনগুলোতে চলাচল করে শুধু। সপ্তাহের বাকি দিনগুলো বন্ধ থাকে।
ঢাকা থেকে কলকাতাঃ শুক্রবার, শনিবার, রবিবার, মঙ্গলবার, বুধবার।
কলকাতা থেকে ঢাকাঃ শুক্রবার, শনিবার, সোমবার, মঙ্গলবার, বুধবার।
মৈত্রী ট্রেনের ভাড়া কত করে?
ঢাকা থেকে কলকাতা ট্রেনের ভাড়াঃ
AC কেবিন – ২৫২২ টাকা + ৩৭৮ টাকা (ভ্যাট)+ ৫০০ টাকা ট্রাভেল ট্যাক্স = ৩৪০০ টাকা
AC চেয়ার – ১৭৪৮ টাকা +২৫২ টাকা ( ভ্যাট ) + ৫০০ ট্রাভেল ট্যাক্স = ২৫০০ টাকা।
শিশুদের জন্য ৫০% ডিস্কাউন্ট হবে যদি ১ থেকে ৫ বছরের মধ্যে বয়স হয়ে থাকে নতুবা ফুল ভাড়া দিয়ে টিকিট কাটতে হবে। পাসপোর্ট অনুসারে বয়স ধরা হয়ে থাকে। ট্রাভেল ট্যাক্স প্রতিজনের জন্য ৫০০ টাকা করে যা টিকিট এর টাকার সাথে যুক্ত।
কলকাতা থেকে ঢাকা ট্রেনের ভাড়াঃ AC কেবিন – ২০১৫ রুপি, AC চেয়ার – ১৩৪৫ রুপি
টিকিট কখন পাওয়া যাবে?
কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে সকাল ৯ টা থেকে রাত ৭ টা পর্যন্ত টিকিট দেওয়া হয়। আর ৩০ দিন আগ পর্যন্ত অগ্রিম টিকিট নিতে পারবেন।
ব্যাগের ওজন কত কেজি পর্যন্ত নিতে পারবেন? একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি ৩০ কেজি পর্যন্ত ফ্রি নিতে পারবেন মানে একটা লাগেজে ৩০ কেজি পর্যন্ত নিতে পারবেন আর শিশুদের ক্ষেত্রে ২০ কেজি পর্যন্ত মানে সাথে যদি বাচ্চা থাকে তার জন্য ২০ কেজি পর্যন্ত ফ্রি নিতে পারবেন। ৩১ কেজি থেকে ৫০ কেজি হলে প্রতি কেজিতে ২ ডলার করে এক্সট্রা ফি দিতে হবে এবং ৫০ কেজি + হলে প্রতি কেজিতে ১০ ডলার করে গুনতে হবে।
ঢাকা থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া ট্রেন কখন পৌছায়?
ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে সকাল ৮ টা ১০ মিনিটে ছাড়বে আর কলকাতা পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৭ টার দিকে। তবে মাঝে মধ্যে লেট হতে পারে সেক্ষেত্রে রাত ৮টা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
কলকাতা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা ট্রেন কখন পৌছাবে?
কলকাতা থেকে সকাল ৭ টা ১০ মিনিটে ছাড়ে আর ঢাকা আসে সন্ধ্যা ৭ টার একটু আগে। যদি দেরি হয় তাহলে সেটা রাত ৮/৯ টা পর্যন্ত হতে পারে। এই ভ্রমনে সর্বমোট ১১ ঘণ্টা সময় লেগে থাকে। তবে মাঝে মাঝে দেরি হলে হয়তো সর্বোচ্চ ১৩ ঘণ্টা লাগতে পারে। মোট ঢাকা টু কলকাতা ৪০০ কি.মি. পথ যেতে হয়। আর ট্রেনের স্পিড থাকে ৪০/৪২ কি.মি. ঘন্টায়।
ঢাকা থেকে কলকাতা যাওয়ার সময়ঃ
ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে পৌছানোর পর আপনার কাজ হবে ইমিগ্রেশন ফর্ম নিয়ে সেটা পূরণ করা। ফর্ম এর মধ্যে পাসপোর্ট ইনফো এবং ভিসা ইনফো ঠিকভাবে লিখেবেন। যাওয়ার সময় কাস্টমস সেরকম কিছু জিজ্ঞেস করে না। হাতে একটু সময় নিয়ে আগে থাকে স্টেশনে পৌঁছাবেন। কলকাতা স্টেশনে পৌছানোর আগেই ট্রেনে একটা ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন ফর্ম দিবে সেটা ঠান্ডা মাথায় পূরন করবেন। ফর্মে ঠিকানা ও ফোনের জায়গায় আপনার হোটেলের ঠিকানা ও ফোন নম্বর দিবেন, যারা আত্মীয়ের বাসায় উঠবেন তারা আত্মীয়ের ঠিকানা ও তার পুরো নাম ঠিকানার জায়গায় লিখবেন এবং তার ফোন নাম্বার দিবেন। ট্রেন থামার পর ইমিগ্রেশন লাইনে দাড়াবেন। তখন একটি ডিকলারেশন ফর্ম দিবে, সেটি পূরন করবেন ফর্মের দুদিকে বাংলা/ইংরেজী দুটি ভাষাই আছে যেকোন একভাবে পূরন করবেন। মনে রাখবেন – চাকুরীজীবীদের NOC সাথে রাখা আবশ্যক।
কলকাতা থেকে ঢাকা আসার সময়ঃ
কলকাতা স্টেশনে প্রথম কাজ হল ডিকলারেশন ফর্ম নিয়ে পূরন করে ইমিগ্রেশনে দাড়ানো। ইমিগ্রেশনের আগে ও পরে ৩/৪ বার ব্যাগেজ ও বডি চেক হবে কুকুর, মেশিন, BSF দ্বারা এবং এগুলো খুব দ্রুতই হয়ে যায়। আর এসব কারনে স্টেশনে ৬টার দিকে পৌছে যাওয়াই ভাল। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে পৌঁছানোর পর কেবিন যাত্রী ও চেয়ার কোচ যাত্রীদের আালাদা লাইন করা হয় এবং প্রথম দিকের যাত্রীদের সময় নিয়ে কাস্টম, ইমিগ্রেশন করা হয় আর শেষের দিকে যাত্রীদের দ্রুত ইমিগ্রেশন করে ছেড়ে দেয়।
কলকাতাতে যদি কম খরচে ভ্রমন করতে চান তাহলে মেট্রোরেল ব্যবহার করতে পারেন। কলকাতাতে মেট্রোরেল ব্যবহারের জন্য আমাদের এই পোস্ট পড়তে পারেনঃ Kolkata MRT
WhatsApp us
1 Comment
Thank you