হর কি দুন ট্রেক, উত্তরাখন্ড

blank
রোথাং পাস
October 17, 2020
blank
মনোলিথ পার্ক
October 17, 2020
Show all

হর কি দুন ট্রেক, উত্তরাখন্ড

blank

ভারতের সবচেয়ে পুরোনো ট্রেকিং গুলির মধ্যে একটি হলো হর কি দুন ভ্যালি ট্রেক যা Valley of Gods নামেও পরিচিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩৫৬৬ মিটার (১১৬০০ ফুট) উচ্চতাবিশিষ্ট এই ট্রেককিং রুটটি উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশি রাজ্যের গারোয়াল হিমালয়ের পশ্চিম পারে অবস্থিত। শীত এবং গ্রীষ্ম উভয় সিজনেই যাওয়া যায় এই রুটে। হর কি দুন পিকের পাশাপাশি স্বর্গরোহিনী পর্বতমালা সর্বদা আপনার সাথেই থাকবে মোটামুটি সমস্ত ট্রেকটি জুড়েই। স্বর্গের দ্বার শুধু নয়, স্বর্গেরই এক অংশ যেন হর-কি-দুন (Har ki Dun Trek), এজন্যই এর আরেক নাম ঈশ্বরের উপত্যকা। সমস্ত পথটি জুড়ে রয়েছে পাইন জঙ্গলের নিস্তব্ধতা এবং বিস্তৃত উপত্যকার মন্ত্রমুগ্ধতা। শীতকালীন বরফাবৃত এলপাইন ম্যাডো, সঙ্গে মেঘ চিরে বেরিয়ে আসা সূর্যকিরণ এবং অন্যদিকে গ্রীস্মকালীন সবুজ উপত্যকা ও সঙ্গে দূরের স্বর্গরোহিনীর মাথার সাদা বরফ জীবনের এক নতুন মানে শেখাবে আপনাকে। তামসা নদীর পাশে ৫ কোটি তারার নিচে ক্যাম্প করে রাত্রি কাটানো আপনার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় ঘটনা হিসেবে রয়ে যাবে। এখান থেকে স্বর্গরোহিনী ১,২,৩, বন্দরপুচ, ব্ল্যাকপিক, রুইনসারা পিক সহজেই দৃষ্টিগোচর হয়। এই ট্রেকটির রুটে কিছু ২০০০ বছর পুরোন গ্রামের মধ্যে দিয়ে যাবেন আপনি, পরিচিত হবেন সেই সকল প্রাচীন জনগোষ্ঠীর জীবনধারার সাথে। হর কি দুনের শাব্দিক অর্থ ঈশ্বরের উপত্যকা। বলা হয়ে থাকে পঞ্চপান্ডবের কোন একজন এই উপত্যকা দিয়েই স্বর্গারোহিনী পর্বত অতিক্রম করে স্বর্গে যান। স্বর্গরোহিনী পিকই নাকি স্বর্গের শেষ দ্বার এবং সেই থেকেই এই পাহাড়ের এই নাম। স্বর্গারোহিনী পর্বত এই ভ্যালির পাশেই অবস্থিত। মজার বিষয় হচ্ছে এখানকার আঞ্চলিকেরা মনে করেন এই পর্বত মাউন্ট এভারেস্ট থেকেও উঁচু।


যাওয়ার সেরা সময়
গ্রীষ্মকাল (এপ্রিল থেকে জুন) এবং বর্ষার পরেই (সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর) হর কি দুন ট্রেকের জন্য সেরা সময়। এটি একটি Moderate Trek হিসেবে বিবেচিত হয়। ভালো ভাবে সময় নিয়ে ঘুরতে চাইলে ১০ দিন হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন।


যাওয়ার উপায়
হর কি দুনে যেতে গেলে আপনাকে দেরাদুন যেতে হবে প্রথমেই। সেখান থেকে মোটামুটি ১০ ঘন্টার জার্নি করে সানক্রি গ্রাম যা ১৯৫০ মিটার উচুতে অবস্থিত। এটিই হর কি দুন ট্রেকের বেস ক্যাম্প। কেদারকান্থা, বালি পাস, বরাসু পাস ট্রেক করতে গেলেও এই সানক্রি গ্রাম থেকেই যেতে হবে আপনাকে। সানক্রি থেকে অনেক ভাবেই আপনি যেতে পারেন নিজের সুবিধা মতন। এখানে যে রুটটি নিয়ে আলোচনা করা হলো সেটি বেশ প্রচলিত একটি রুট। আপনি গাইডের সাথে কথা বলে নিজেদের মতন রুট বানিয়ে নিতে পারেন।


সানক্রি থেকে আবার গাড়ি ঠিক করে আপনাকে ১২ কিলোমিটার দূরে ২১০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত তালুকা পৌঁছতে হবে, ছোট গাড়ি চলে এখন। এখান থেকে পায়ে হাঁটা রাস্তা শুরু। সেদিনের উদ্যেশ্য ১০ কিলোমিটার দূরের ২৫০০ মিটার উচ্চতার পুয়ানি গড়াত। তালুকা থেকে সময় লাগবে মোটামুটি ৬ ঘন্টা। এখানে আপনি টেন্ট পিচ করে থাকতে পারেন। পরের দিন পুয়ানি গড়াত থেকে ২৯৫০ মিটার উচ্চতার কালকাটতিয়াধার। পরের দিনই পৌঁছে যাবেন ৩৫৬৬ মিটার উচ্চতার হর কি দুন। রাত কাটান হর কি দুন ক্যাম্প সাইটে। এখান থেকে স্বর্গরোহিনীকে সত্যিই মনে হবে যেন পাহাড়টি মাটি ফুঁরে স্বর্গের দিকে উঠে গেছে।


হর কি দুন ভ্যালির শেষটি দুটি পৃথক রাস্তা সৃষ্টি করে, একদিকে মনিন্দ্র তাল ও বরাসু পাস, অন্য দিকে যৌনদর গ্লেসিয়ার এবং এই দুইয়ের মাঝে কর্মনাসা নামক ছোট্ট একটি জলধারা। স্বর্গ দেখতে না পেলেও এই জায়গাটিই আপনার কাছে স্বর্গ হয়ে থেকে যাবে। হাতে সময় থাকলে মনিন্দ্র তাল এবং যৌনদর গ্লেসিয়ার দুইই ঘুরে আসতে পারেন, তাতে অবশ্য সমস্ত ট্রেকটি দুদিন বেড়ে যাবে। ফিরতি পথে ওসলা
গ্রামে একটি রাত কাটান। এখানেই রয়েছে ৫০০০ বছর পুরোন একটি কাঠের ঘর, এই জায়গাটিকে স্থানীয় লোকেরা দুর্যোধনের মন্দির হিসেবে পূজিত করেন। পরের দিন পৌঁছে যান সানক্রি, যেখান থেকে শুরু করেছিলেন এই দীর্ঘ যাত্রা। সেখান থেকে পুনরায় দেরাদুন। যাওয়া আসা মিলে ৫০ কিলোমিটার হাঁটা। হাঁটতে হবে মোট চারদিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *