তিলের খাজা কিংবা কুলফি আইসক্রিম খেতে চান? তাহলে সাগতম আপনাকে কুষ্টিয়ায়।
বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত; খুলনা বিভাগের অন্যতম একটি জেলা হচ্ছে, ‘কুষ্টিয়া’। এইখানে প্রায় ৪ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস(২০২০) এর সমীক্ষা অনুযায়ী। এই জেলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির রাজধানী হিসেবেও পরিচিত। বাংলাদেশের একমাত্র সরকারী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এইখানে অবস্থিত। কুষ্টিয়া জেলার নাম নিয়ে একাধিক মতবাদ রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি ধারণা হচ্ছে, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তৎকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট “সৈয়দ মুজতবা আলী” নবদ্বীপ বা নদীয়ার নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘কুষ্টিয়া’। এছাড়া অনেকে মনে করেন, এক সময় এলাকাটি ‘কুস্তি’ খেলার জন্য বিখ্যাত ছিল, তাই এই খেলা থেকে এর নাম হয় ‘কুস্তিয়া’ যাঁর অপভ্রংশা ‘কুষ্টিয়া’। আবার অনেকে মনে করেন, ‘কুন্ঠ’ ( প্রধান অর্থকারী ফসল) শব্দ থেকে কুন্ঠিয়া আর এই কুন্ঠিয়া থেকে কুষ্টিয়া নামের উৎপত্তি।
মোঘল বাহিনীর হাতে রাজা প্রতাপাদিত্যর পতন হলে,(১৬৬১) খ্রিস্টাব্দে ‘কুষ্টিয়া’ মোঘল সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। ইংরেজ আমলে কুষ্টিয়া মহকুমা ছাড়া; বৃহত্তর কুষ্টিয়ার বাকি অংশ রাজশাহী রাজ্যের জমিদাতি ভুক্ত ছিল। গভর্নর স্যার “পিটার গ্র্যান্ট” এর আমলে কুষ্টিয়া মহাকুমার উন্নীত হয়(১৮৬৩) খ্রিস্টাব্দে। “কুমারখালি ও খোকসা” থানাকে কুষ্টিয়া মহাকুমায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় (১৮৭১) খ্রিস্টাব্দে।(১৯৪৭) সালে ভারত বিভক্তর পূর্ব পর্যন্ত, কুষ্টিয়া নদীয়া জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ভারত বিভক্ত হওয়ার পর বঙ্গদেশের নদীয়া জেলা খন্ডিত হয় ; পরবর্তীতে (১৯৫৭) সালের অক্টোবর মাসে ‘কুষ্টিয়া’ নাম দেওয়া হয় ‘নদীয়া’ নামের পরিবর্তে।
আপনি যে এলাকা থেকে কুষ্টিয়া আসতে চাচ্ছেন সেই এলাকা থেকে যেসব বাস যায় তাদের খোঁজ নিয়ে এরপর টিকিট কাটবেন। ঢাকা থেকে কুষ্টিয়া যেসব বাস যায় এর মদ্ধে এস বি সুপার ডিলাক্স অন্যতম। ভাড়া বিজনেস – ১৩০০ টাকা, আরএন৮ – ১০০০ টাকা। বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন এই লিঙ্কে।
আপনি যদি ট্রেনে যেতে চান তাহলে নিচের ট্রেনের লিস্ট দেখে প্ল্যান করতে পারেনঃ
কুষ্টিয়া গেলেই পেয়ে যাবেন ফকির লালন শাহের মাজার সহ, আরও কিছু বিখ্যাত স্থান। আপনাদের ভ্রমণ সুবিধার্থে ; কিছু দর্শনীয় স্থান তুলে ধরা হলো।
কুষ্টিয়ার অন্যতম হলো ফকির লালন শাহের মাজার। তৎকালীন তিনি কুমারখালির ছেঁউড়িয়াতে আশ্রয় লাভ করেন। তিনি নিরক্ষর হয়েও রচনা করেছেন অসংখ্য সংগীত। তাঁর মৃত্যু পরবর্তী সেখানে তাকে সমাধি দেওয়া হয়। তাঁর সমাধি স্থলেই ফকির লালন শাহের শিষ্য এবং দেশ বিদেশের অগনিত বাউলকুল; বিশেষ তিথিতে সমবেত হয়ে উৎসবে মেতে উঠতেন এই মিলন কেন্দ্রে। পরবর্তীতে(১৯৬৩) সালে সেখানে তাঁর মাজারটি নির্মাণ করা হয়। ২০০৪ সালে সেখানে আধুনিক অডিটোরিয়াম সহ একাডেমি ভবন নির্মাণ করা হয়।
যেভাবে যাবেনঃ কুষ্টিয়া বাস হতে রিক্সা/ অটোরিক্সা যোগে ছেউরিয়া নামক স্থানে (ভাড়া ৩০-৫০) খুব সহজে যেতে পারবেন। এছাড়া কুষ্টিয়া বড় রেলস্টেশন থেকে রিক্সা/ অটোরিকশা যোগে যেতে পারবেন(ভাড়া২০-৩০ টাকার মধ্যে।
রবীন্দ্রনাথের ‘কুঠিবাড়ি’ অবস্থিত শিলাইদহে। এটি বাংলাদেশের (দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে) কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি উপজেলায় অবস্থিত। এই ‘কুঠিবাড়ি’ পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদী। এইখানে বসে তিনি রচনা করেন, সোনার তরী, চিত্রে, গীতাঞ্জলি, চৈতালী ইত্যাদি।
যেভাবে যাবেনঃ রবীন্দ্রনাথের ‘কুঠিবাড়ি’ শহর থেকে দূরত্ব প্রায় (২০) কিলোমিটার। কুষ্টিয়া শহর হতে অটোরিক্সা, সিএনজি, ইজি বাইক ও অন্যান্য বাহন যোগে সহজেই এবং খুবই কম খরচে যেতে পারবেন।
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাসিক “মীর মোশাররফ হোসেন”। ” বিষাদ সিন্ধুর” রচয়িতা এই উপন্যাসিকের বাস্তভিটা অবস্থিত কুমারখালী উপজেলার লাহিনীপাড়ায়। এটি কুমারখালির অন্যতম দর্শনীয় স্থান। তিনি ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলার লাহিনী পাড়ায়, এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা “মীর মোয়াজ্জেম হোসেন” ছিলেন জমিদার। তিনি “আরবি ও ফারসি” ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন। এখানে রয়েছে ১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ছোট আকারে একটি লাইব্রেরি।
যেভাবে যাবেনঃ কুষ্টিয়া বাস স্ট্যান্ড হতে রিক্সা/অটোরিক্সা যোগে যেতে পারবেন। সৈয়দ মাসুদ রুমি সেতুর টোল ঘাটের পাশে লাহিনীপাড়া মোড় নামক স্থান পর্যন্ত ভাড়া (৩০-৫০) টাকা।
লালন শাহ সেতু নির্মাণ কাজ শেষ করা হয় ২০০৪ সাল ১৭ মে। যানবাহন চলাচল শুরু হয় ১৮ মে, ২০০৪ সালে। এটি ১৭৮৬ মিটার লম্বা, প্রস্থ ১৮.১০ মিটার এবং এতে রয়েছে ১৭ টি পিলার। এটি উত্তরবঙ্গের ২য় বৃহত্তম সেতু। এই সেতুর ফলে দক্ষিণ অঞ্চলের সাথে উত্তর ও পশ্চিম অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়েছে।
যেভাবে যাবেনঃ বাংলাদেশের যে কোন জায়গা থেকে সড়ক অথবা রেলপথে গিয়ে, ঈশ্বরদী/ পাকশী রেলওয়ে স্টেশন অথবা বাস টার্মিনালে নেমে ; টেম্পু অথবা রিক্সা করে পৌঁছে যেতে পারবেন।
মীর মশাররফ হোসেন (১৮৪৭), কাজী মোতাহের হোসেন(১৮৯৭-১৯৮১), কাঙাল হরিনাথ(১৮৩৩-১৮৯৬), শিল্পী আব্দুল জব্বার(১৯৩৯), ফরিদা পারভীন (১৯৫৪), সাহিত্যিক জোবেদা খানস (১৯২০-১৯৮৯),আবু জাফর(“এই পদ্মা এই মেঘনা গানের”) রচিয়তা এবং বিখ্যাত ফকির লালন শাহসহ আরও অনেকে।
WhatsApp us