blank
ঝান্ডি
October 19, 2020
blank
তিনচুলে
October 19, 2020
Show all

Lepchakha

blank

ভুটানের কাছে ছোট্ট গ্রাম লেপচাখা (Lepchakha) যা আলিপুরদুয়ার জেলার বক্সা-জয়ন্তি ন্যাশনাল পার্ক এর একটি অংশ। এই জায়গাটিকে Heaven of Dooars বলা হয়। প্রায় সাড়ে তিন হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত পাহাড়ি এই গ্রামটি। কখনও রোদ ঝলমলে দুপুরের আকাশে হঠাতই উড়ে আসা মেঘের চাদর, ক্ষণিকের জন্য ঢেকে দিয়ে যায় লেপচাখাকে। সবুজ পাহাড়ে ঘেরা গ্রামটি। সুন্দর বনানীর মধ্য দিয়ে চওড়া পথ। ভদ্রস্থ চড়াই পথ। যেকোনো বয়সের মানুষ এ পথে আরামে চলতে পারবেন। পথের মাঝে দু’ধারে নানা রঙের ফুলের গাছ। পথের দু’পাশের দৃশ্য চলার কষ্ট ভুলিয়ে দেয়। ক্লান্তির অনুভবই আসে না। ট্রেক করতে করতে যেখানে প্রকৃতির অপরূপ শোভায় হারিয়ে যাওয়া যায়। গ্রামটি পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত হলেও এটি আদৌতে একটি ভুটানি (Drukpa’s Village) গ্রাম। এখানকার সকল অধিবাসীই ডুকপা সম্প্রদায়ের। প্রায় সত্তর-আশি ঘর লোক। আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বাস করেন। এই গ্রামের মানুষের প্রধান জীবিকা চাষাবাদ। ভুট্টা, আদা, আলু, বাঁধাকপি, স্কোয়াশ, লেবু ইত্যাদি চাষ হয়। গ্রামের মাঝে তিব্বতি গুম্ফা। চারধারে প্রার্থনা পতাকা।

ভুটানের পাহাড় দিয়ে ঘেরা ডুয়ার্সের উচ্চ তরাই অঞ্চল। পাহাড়ের ওপাশেই ভুটান। এ পাশের গ্রামগুলো হলো— ফুলবাড়ি, আদমা, গোপ্তা, নামনা, চুনাভাটি, সদরবাজার, বক্সা, লেপচাখা, তাসিগাও, অংচুলুং। ব্রিটিশরা চলে যাওয়ার পরে চীনা ও তিব্বতিরাও এসব অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে।

জাভাতখাওয়া থেকে প্রায় ১৫ কিমি গাড়িতে করে যাবার পর ৬ কিমি ট্রেকিং রুট। পথে পড়বে বক্সা ফোর্ট (Buxa Fort) এর ভগ্নাবশেষ। বক্সা দুর্গ যাওয়ার পথেই পড়ে সদর বাজার। এখানে একটু জিরিয়ে নিতে পারেন। চা-মোমো বা ঠান্ডা পানীয় দিয়ে একটু চাঙ্গা হয়ে আবারও হাঁটুন বক্সা দুর্গের উদ্দেশ্যে, যেখানে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বন্দি করে রাখত ব্রিটিশ সরকার যদিও সেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের
লেখা স্বাধীনতা সংগ্রামী বন্দী বিপ্লবীদের উদ্দেশ্যে লেখা কবিতার স্তম্ভ ছাড়া আর তেমন কিছু অবশিষ্ট নেই। বক্সা দুর্গের সামনেই রয়েছে বক্সা ডাকঘর ও বক্সা মিউজিয়াম।

বক্সা ফোর্ট এর পরে এবার লেপচাখা গ্রাম। বক্সা ফোর্ট থেকে মাত্র এক ঘণ্টায় পৌঁছে যাওয়া যায় লেপচাখা যার নৈসর্গিক দৃশ্য মুগ্ধ করবে সকলকে। সবুজ রঙের কাঠের দো’তলা ডুকপা ট্রেকার্স হাট আশ্রয়স্থল। সামনে উন্মুক্ত দিগন্ত। সবুজ পাহাড়, ছোট ছোট গ্রাম, সোপান খেত, নদীধারা, বৃক্ষরাজি। বাংলার উচ্চ তরাইয়ের এই অখ্যাত গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে কারও চোখ জুড়িয়ে দেয়।

এখানে সূর্যোদয় মিস করা যাবে না। সূর্যোদয় দেখার জন্য যেতে হবে রোভার্স ভিউ পয়েন্ট। ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে চড়াই পথ। আর আপনার থাকার রাতটা যদি পূর্ণিমার রাত হয় তাহলে তো আর কথাই নেই।

যা যা দেখবেন
প্রধান আকর্ষণ লেপচাখার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। লেপচাখা থেকে ছোট ছোট ট্র্যাক করে ঘুরে আসা যায় চুনাভাটি, অংচুলুং ও তাসিগাও। ভুটান পাহাড় দিয়ে ঘেরা টেবিলের মতো একচিলতে লেপচাখায় দিন দুয়েক কাটানোর অভিজ্ঞতা এক কথায় অসাধারণ। লেপচাখা থেকে ট্রেক করে যাওয়া যায় রোভার্স পয়েন্ট ও রুপম ভ্যালি। অতি উৎসাহীরা রূপম ভ্যালি (১৪ কিমি) ট্রেক করতে চাইলে সঙ্গে টেন্ট ও খাবার থাকা বাঞ্ছনীয়।

কোথায় থাকবেন
লেপচাখায় থাকার জন্য গোটা পাঁচেক হোম স্টে আছে। ব্যবস্থা বেশ ভালো। থাকা-খাওয়া জন প্রতি, প্রতিদিন ৮০০ টাকা। আছে সন্ধ্যায় camp fire এর সুব্যবস্থা। বক্সায় থাকার জন্য সাধারণ মানের দু’একটি হোম স্টে রয়েছে। লেপচাখার ইকো হাটে আপনাদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত থাকেন চামা ডুকপা, তেনজিং ডুকপাদের মতো অনেকেই। ৮০০ থেকে ১২০০
টাকার মধ্যে থাকার রুম পাওয়া যায় লেপচাখা ইকো হাটে। বিদ্যুৎ থাকলেও তা বেশ অনিয়মিত। তবে, সৌরবিদ্যুৎ রয়েছে। রুমের ছাদে বসে আরাম করে বসে কথা বলতে পারেন বন্ধু বান্ধব পরিবার পরিযনদের সেথে। মোবাইল পরিষেবা বলতে বিএসএনএল পাওয়া যায়। মাঝে মাঝে পাওয়া যায় আইডিয়াও।
সান্তালাবাড়িতে থাকার জায়গা- বক্সা ভ্যালী রিসোর্ট, ফোঃ +919434184624, +919434043463 বক্সাফোর্টের এর কাছে – রোভার্স ইন (Rovewr’s Inn) হোমস্টে। ফোঃ ইন্দ্র শঙ্কর থাপা +91 91972 06414, হিলটপ হোটেল- ফোঃ +91 83459 52969, বক্সা হিল ফরেস্ট বাংলো, বক্সা হিল ফরেস্ট, যোগাযোগ- ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর, বক্সা টাইগার রিসার্ভ আলিপুরদুয়ার কোর্ট ফোঃ 03564 256005 লেপচাখাতে থাকার জায়গা- লেপচাখা, হেভেন অফ ডুয়ার্স হোমস্টে, ফোঃ +91 96141 47795

কিভাবে যাবেন
কলকাতা থেকে ট্রেনে নিউ আলিপুরদুয়ার বা আলিপুরদুয়ার জংশন। মোট সাতটি ট্রেন চলে এই রুটে। সেখান থেকে ট্যাক্সি বা অটো করে ৩২ কিলোমিটার দূরে সান্তালাবাড়ি/ সান্ত্রাবাড়ি। বড় গাড়ির ভাড়া প্রায় ১২০০ টাকা। সেখান থেকে বক্সাফোর্ট ৫ কিমি। রাজাভাতখাওয়া চেকপোস্টে জন প্রতি ৬০ টাকা প্রবেশমূল্য লাগে। গাড়ি পিছু লাগে ২৫০ টাকা। লেপচাখা চার কিলোমিটার দূরে এখান থেকে। ট্রেকিং করে যাওয়া যায়। রাস্তা বেশ চওড়া। ফোর্ট থেকে সরাসরি রোভার্স পয়েন্ট যাওয়ার রাস্তা আছে। দূরত্ব ৩ কিমি। আর চুনাভাটি ৪ কিমি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *