মানালি (Manali) হিমাচল প্রদেশে বিয়াস নদীর উপতক্যায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০৫০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত একটি পাহাড়ি শহর। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী মনু নামে দেবতার নাম থেকে এই জায়গার নাম হয়েছে মানালি। মানালি যাওয়া-আসার জন্য যে পথ আছে, সেটাকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু মোটরওয়ে। হিন্দিতে মানালিকে বলা হয় “ধারতি কা সওয়ার্গ” বা “পৃথিবীর স্বর্গ”। এখানে এলে মনে হবে যেন কোন এক স্বর্গে চলে এসেছি। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে এতটাই বিমোহিত হতে হয় তখন ক্ষণিকের জন্য হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। মানালিতে অনেক দর্শনীয় স্থান আছে যেখানে একবার গেলে বার বার সেখানে ছুটে যেতে ইচ্ছে হবে।
মানালি এর দর্শনীয় স্থানসমূহ
রোহতাং পাস এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩,৯৭৮ মিটার বা ১৩,০৫০ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত। মানালি শহর থেকে এর দূরত্ব ৫১ কিঃমিঃ বা ৩২ মাইল। এটি কুলু (Kullu), লাহাল (Lahaul) এবং স্পিতি (Spiti) উপত্যকার সাথে সংযুক্ত করে রেখেছে। পাহাড়ি রাস্তার আঁকাবাঁকা পথ আর প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করতে করতে রোহতাং পাসে যেতে হয়। এখানে এলে দেখতে পাবেন শ্বেতশুভ্র সুবিশাল পাহাড়ের সারি আর বিশাল বিশাল প্রস্থর খন্ড। যারা আইস স্কেটিং, টবগ্যানিং (Tobogganing) ইত্যাদি ভালোবাসেন তাদের জন্য Rohtang Pass এ সুন্দর ব্যবস্থা আছে। যেহেতু সেখানকার আবহাওয়া অনেক ঠান্ডা তাই সেখানে ওভারকোট, বুট ইত্যাদি ভাড়ায় পাওয়া যায়
সোলাং ভ্যালি
এটি রোহতাং পাস যাওয়ার পথে পড়ে এবং এর দূরত্ব মানালি শহর থেকে ১৪ কি.মি. উত্তরপশ্চিম দিকে অবস্থিত। Solang Valley অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য সুপরিচিত। এখানে প্যারাসুটিং, প্যারাগ্লাইডিং, স্কেটিং ইত্যাদির ব্যবস্থা আছে। এখানে অনেক হোটেল মোটেল গড়ে উঠেছে তাই প্রকৃতিপ্রেমিদের এখানে থাকতে অসুবিধা হবে না।
রাহালা জলপ্রপাত
এটি রোহতাং পাস থেকে ফেরার পথে পড়বে। এটি মানালির চমৎকার একটি জলপ্রপাত। এখানে গেলে দেখা যায় কিভাবে পাহাড়ের গা বেয়ে কূলকুল শব্দ করে জলরাশি নেমে বিপাশা/ বিয়াস (Beas River) নদীতে গিয়ে মিশছে।
ডেট গুলাবা
এখান থেকে চমৎকার নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করা যায়। রেহালা জলপ্রপাত (Rehala Falls) থেকে খানিকটা দূরে ডেট গুলাবা (Dett Gulaba) এর অবস্থান।
বিপাশা/বিয়াস
নদ শহরের একদম গাঁ ঘেষে কূলকুল রবে আঁকাবাঁকা ভাবে বয়ে চলা বিপাশা/বিয়াস নদী আসলেই প্রকৃতির এক অপরূপ বিস্ময়। নদীটির দৈর্ঘ্য ৪৭০ কি:মি: বা ২৯০ মাইল যা পাঞ্জাবের সুটলেজ (Sutlej) নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। এই নদীর পানি ভীষণ ঠাণ্ডা আর এর স্রোত বেশ বিপজ্জনক। যারা রিভার রাফটিং (River Rafting) করতে ভালোবাসেন তাদের জন্য এখানে রাফটিং এর ভালো ব্যবস্থা আছে।
মণিকরণ (Manikaran)
মানালি যাবার পথে, কুলু থেকে ৪৫ কি.মি. দূরত্বে, এ অঞ্চল পার্বতী নদীর কাছে উষ্ণ প্রস্রবনের জন্য পরিচিত। মানালিতে দেখার মত আরও আছে হাদিম্বা দেবীর মন্দির, গুম্ফা মনেস্টারি (Gumpha Monastery), মানালি ইকোপার্ক ইত্যাদি।
এসব দর্শনীয় স্থানগুলোতে যেতে হলে গাড়ি ছাড়া কোন বিকল্প ব্যবস্থা নেই কারন গাড়ি ছাড়া আর কোন যানবাহন সেসব জায়গাগুলোতে যেতে পারে না। আর গাড়ি ভাড়া করতে হলে আপনাকে শুধুমাত্র মানালি শহর থেকে ভাড়া করতে হবে। শহরে অনেক গাড়ির স্ট্যান্ড পাবেন। তাই দরদাম আর দক্ষ ড্রাইভার ঠিক করে আপনাকে গাড়ি ঠিক করে নিতে হবে।
কখন যাবেন
মানালির আবহাওয়া স্থিতিশীল নয়। তবে, সাধারণত এপ্রিল থেকে জুন এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যবর্তী সময় এই স্থান পরিদর্শনের শ্রেষ্ঠ সময় বলে বিবেচিত হয়। যদি স্নোফল পেতে চান তাহলে সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর
কিভাবে যাবেন
মানালি যেতে হলে প্রথমে কোলকাতা থেকে ট্রেনে বা বিমানে করে ভারতের রাজধানী দিল্লী যেতে হবে। দিল্লীর কাশ্মীরি গেট বাস টার্মিনাল থেকে মানালি যাওয়ার বাস ছাড়ে। মানালী যাওয়ার বাস দুই ধরনের হয়ে থাকে: পাবলিক আর প্রাইভেট পরিবহন। পাবলিক পরিবহনের মধ্যে হিমাচল এক্সপ্রেস হাইওয়ে আর প্রাইভেটের মধ্যে হিমাচল এসি ভোলভো এই দুটোই মানালির দিকে যায়। এসি ভোলভো বিকেল
সাড়ে পাঁচটায় কাশ্মীরি গেইট টার্মিনাল থেকে মানালির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। প্রায় ১১-১৩ ঘন্টা লাগে সড়ক পথে মানালি যেতে। এছাড়াও প্রাইভেট গাড়ি করে মানালি যাওয়া যায়। তখন প্রকার ভেদে ১৭০০-১৮০০ ভারতীয় রুপি খরচ হতে পারে।
অথবা আপনি চাইলে সরাসরি বিমানে যেতে পারেন, তবে বাংলাদেশ থেকে নয়। ভারতের ইন্টারনাল রুটে ভূন্টার বিমানবন্দর যাবেন যা কুলু মানালি বিমানবন্দর নামেও সুরিচিত, যা কুলু থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে এবং মানালি থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বিমানবন্দর থেকে গাড়ির মাধ্যমে কুলুতে পৌঁছাতে প্রায় ২০ মিনিট এবং মানালিতে পৌঁছাতে প্রায় ১ ঘন্টা সময় লাগে।
কোথায় থাকবেন
বড় বড় পাহাড়ের মাঝখানে গড়ে উঠেছে ছোট শহর মানালি। এখানের ম্যাল রোড সুবিখ্যাত। ম্যাল রোডে অনেক হোটেল-মোটেল গড়ে উঠেছে। প্রকারভেদে হোটেলের ভাড়া ১৫০০-১৮০০ ভারতীয় রুপী হতে পারে। হোটেলগুলোতে হিটার সিস্টেমের সুব্যবস্থা আছে। কেনাকাটার জন্য ম্যাল রোডে অনেক শপিং মল আছে যেগুলো হোটেল থেকে একদম হেঁটে যাওয়া যায়।
কোথায় খাবেন
মানালিতে অনেক ভালো মানের খাবারের হোটেল আছে। যেমন: গুজরাটি, মাদ্রাজি, পাঞ্জাবি, বাঙালি ইত্যাদি। বাঙালি খাবার হোটেলের মধ্য আছে Hotel Adarsh, New Ashapuri Bhojonaloy, Ashapuri Bengali Restaurant ইত্যাদি যেগুলো ম্যাল রোডে অবস্থিত। বাঙালি হোটেলের মধ্যে শান্তিনিকেতন হোটেল বেশ প্রসিদ্ধ।
WhatsApp us