ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, জামালপুর, শেরপুর নামের ৪টি জেলা নিয়ে ময়মনসিংহ বিভাগ গঠিত। ময়মনসিংহ বাংলাদেশের অষ্টম প্রশাসনিক বিভাগ।ঢাকা বিভাগের জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা জেলা নিয়ে ময়মনসিংহ বিভাগ গঠন করা হয়। ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিভাগ প্রতিষ্ঠা হয়। তখন থেকে ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্তমান ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলাে ঢাকা বিভাগের অংশ ছিল। ১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে ময়মনসিংহ জেলা গঠন করা হয়। পরে, এটাকে ময়মনসিংহ, কিশোেরগঞ্জ, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল ,জামালপুর ও শেরপুর নামের ছয়টি জেলায় ভাগ করা হয়। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ১১জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে ময়মনসিংহ বিভাগ গঠনের ঘােষণা দেন। বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্ভুক্ত ময়মনসিংহ, কিশােরগঞ্জ, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল, জামালপুর ও শেরপুর-এই ৬টি জেলা নিয়ে ময়মনসিংহ বিভাগ গঠনের পরিকল্পনা করা হয়। তবে টাঙ্গাইল ও কিশােরগঞ্জবাসী, ময়মনসিংহ বিভাগের অন্তর্ভুক্ত হতে অনীহা ও বিরােধিতা করে এবং ঢাকা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত থাকার ইচ্ছাপােষণ করে। ফলে টাঙ্গাইল ও কিশােরগঞ্জকে ময়মনসিংহ বিভাগে অন্তর্ভুক্ত করা হতে বাদ দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ৪টি জেলা নিয়ে ময়মনসিংহ বিভাগ গঠিত হয়।
এ জেলার উত্তরে ভারতের মেঘালয়, দক্ষিণে গাজীপুর; পূর্বে নেত্রকোণা ও কিশােরগঞ্জ এবং পশ্চিমে টাঙ্গাইল, জামালপুর ও শেরপুর জেলা অবস্থিত। ময়মনসিংহ জেলার আয়তন ১,৬৮৪.৩৮ বর্গমাইল অর্থাৎ ৪,৩৬৩.৪৮ বর্গ কিলােমিটার। বাংলাদেশের পুরাে আয়তনের তুলনায় ময়মনসিংহ জেলার আয়তন ২.৯৫ ভাগ। আয়তনের দিক হতে এটি বাংলাদেশের পঞ্চম বৃহত্তম জেলা। ১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দের ১ মে ময়মনসিংহ জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দের ১ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ জেলাকে বিভক্ত করে টাঙ্গাইল জেলা গঠন করা হয়। ময়মনসিংহ সদর, ভালুকা, ধােবাউড়া, ফুলবাড়িয়া, গফরগাঁও, গৌরীপুর,হালুয়াঘাট, ইশ্বরগঞ্জ, মুক্তাগাছা, নান্দাইল, ত্রিশাল এবং ফুলপুর নামক ১২টি উপজেলা নিয়ে ময়মনসিংহ জেলা গঠিত।
ঢাকা থেকে ময়মনসিং যাওয়ার জন্য স্থল পথে বাসের ব্যবস্থা রয়েছে । বাসের মধ্যে এসি/নন এসি উভয় ধরনের বাসের ব্যবস্থা আসে।
এনা ট্রান্সপোর্ট: নন এসি – ভাড়া ২২০ টাকা (যোগাযোগ)
আপনি যদি ঢাকা থেকে ময়মনসিং ট্রেনে যেতে চান তাহলে নিচের ট্রেনের সময়সূচী দেখে রেল স্টেশন থেকে টিকিট কেটে ভ্রমন করতে পারেনঃ
ময়মনসিংহে রাত্রিযাপনের জন্যে রয়েছে অসংখ্য আবাসিক হোটেল/ডাক বাংলো /গেষ্ট হাউজ:-
ময়মনসিংহের বিখ্যাত খাবারের মধ্যে রয়েছে —মন্ডা, প্রেসক্লাবের মোরগ পোলাও,ময়মনসিংহ শহরের মুখুল ভাইয়ের চা,সিঙ্গারা,পুরি ।
এছাড়া বিভিন্ন ধরনের হোটেল / রেষ্টুরেন্ট রয়েছে। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি রেষ্টুরেন্ট হলোঃ
ময়মনসিংহ নামে পরিচিত এলাকাটির পূর্ব নাম ছিল নাসিরাবাদ। পঞ্চদশ শতকে সুলতান হােসেন শাহ এলাকাটি দখল করে তার পুত্র নাসিরউদ্দিন নসরত শাহকে শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। হােসেন শাহের পুত্র নাসিরউদ্দিন নসরত শাহ এলাকাটিকে নাসিরাবাদ নামকরণ করে শাসন কার্য শুকু করেন। সে হতে এলাকাটির পূর্ব নাম বিলুপ্ত হয়ে নাসিরাবাদ নাম ধারণ করে । নুসরাত শাহের পরে মােমেন শাহ নামক তৃতীয় একজন ওমরাহ নাসিরাবাদ এলাকার শাসনকর্তা নিযুক্ত হন। তার শাসনামলে নাসিরাবাদ নামটি বিলুপ্ত হয় এবং শাসনকর্তার নামানুসারে এলাকাটির নাম হয় মােমেনশাহী। বর্তমানে প্রচলিত ময়মনসিংহ হচ্ছে মােমেন শাহ-এর নামানুসারে নামায়িত মোমেনশাহীর পরিবর্তিত রূপ।
হাওড়-জঙ্গল মােষের শিং, এই তিনে ময়মনসিংহ বলে একটা প্রবাদ প্রচলিত আছে। এক সময় এখানে প্রচুর মােষ ছিল। তাই অনেকে মনে করেন মােষের শিং হতে এলাকার নাম হয়েছে ময়মনসিংহ। তবে এ প্রবাদটি কেউ সত্য বলে মনে করেন না।
ময়মনসিংহ শহরে ১৯৬১ সালে এই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রাকৃতিক নৈসাগিক সৌন্দর্যে ঘেরা এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রায় ১২০০ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে। ২০১৭ সালে ওয়েব মেটিক্স র্যাঙ্কি অনুসারে এটি বাংলাদেশের এক নম্বর বিশ্ববিদ্যালয় হয়।গবেষণায় বিভিন্ন সাফল্যর মাধ্যমে এ বিশ্ববিদ্যালয় কৃষি সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ রাখে। এ বিশ্ববিদ্যালয় উলেখযোগ্য সংখ্যক শস্য জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে । যেমনঃ বাউ ৬৩,বাউকুল,উফশী ধান ইত্যাদি জাত উদ্ভাবন করেন। শিক্ষার্থীদের জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ১৩ টি আবাসিক হল তার মধ্যে মেয়েদের জন্য রয়েছে ৪টি আবাসিক হল। এটি একটি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়।
কিভাবে যাবেনঃ টেক্সি, রিক্সা, বাস কিংবা অটোতে করে ময়মনসিংহ শহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারবেন। এটি ময়মনসিংহ শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দক্ষিণে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত।
প্রায় ১৭০০ শতাব্দীর দিকে এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে ধারনা করা হয়। গৌরীপুর জমিদার বাড়ি শুনতে একটা বাড়ি মনে হলেও এখানে পাশাপাশি দুই জমিদারের জমিদারী ছিল। দুই জমিদারের দুইটি আলাদা আলাদা বাড়ি ছিল। স্থানীয় লোকজন একটিকে আনন্দ কিশোরের ও অন্যটিকে সুরেন্দ্র প্রসাদ লাহড়ীর জমিদার বাড়ি হিসেবে বলে থাকে। এই রাজবাড়ীগুলো ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলাতে অবস্থান হওয়ায় গৌরীপুর রাজবাড়ী নামে অধিক পরিচিত।
বর্তমানে জমিদার আনন্দ কিশোরের বাড়িটি ও জমিদার সুরেন্দ্র প্রসাদ লাহড়ীর বাড়িটি যথাক্রমে গৌরীপুর মহিলা কলেজে এবং গৌরীপুর সরকারী কলেজ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বহু বরেণ্য ব্যক্তি এই প্রাসাদে অবস্থান করেছেন। ময়মনসিংহ সফরকালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুুর ১৯২৬ সালে আলেকজান্ডার ক্যাসেলে চার দিন অবস্থান করেছিলেন। এছাড়াও এখানে লর্ড কাজন, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু,কামাল পাশা, নবাব স্যার সলিমুল্ল্হ প্রমুখ ব্যাক্তিগণ পদার্পণ করেছিলেন।
কিভাবে যাবেনঃ ময়মনসিংহ সদর উপজেলা থেকে সহজে বাস বা রিক্সা করে গৌরীপুর রাজবাড়ি যেতে পাররেন।
ময়মনসিংহ জেলা ১৭৮৭ খ্রিষ্টাব্দে স্থাপিত হয়। ময়মনসিংহ জেলা প্রতিষ্ঠা শতবাষিকী উৎযাপন উপলক্ষে মহারাজা সুকান্ত সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী ১৮৮৯ থ্রিষ্টাব্দে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা ব্যয় করে এই প্রাসাদটি নির্মাণ করেন। ময়মনসিংহ শহরের প্রাচীন স্থাপনার মধ্যে এটি অন্যতম। এটি নিমার্ণে লোহার ব্যবহারের কারণে জনসাধারণের কাছে “ লোহার কুটি ” নামে পরিচিত ছিল।
কিভাবে যাবেনঃ ময়মনসিংহ শহরের যে কোন স্থান হতে রিক্সা বা অটোরিক্সা নিয়ে আলেকজান্ডার ক্যাসেল যাওয়া যায়।
বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কলেজগুলোর একটি । এই কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন শ্রেষ্ঠ বাঙালি শিক্ষাবিদ , রাজনীতিবিদ সমাজসংস্কারক আনন্দমোহন বসু। তিনি ময়মনসিংহ শহরের তার পৈত্রিক বাড়িতে ১ জানুয়ারী ১৮৮৩ সালে “ময়মনসিংহ ইনস্টিটিউশন” প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৮০ সালে এই ইনস্টিটিউশন শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেন “ময়মনসিংহ সিটি কলেজিয়েট কলেজ” নামে। এই কলেজটি “কলকাতা সিটি কলেজ” কাউন্সিলের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত হত। আনন্দমোহন বসুর মৃত্যুর পর কলকাতা সিটি কলেজের অর্থ সহায়তা দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। যখন অর্থ সংকটে কলেজ বন্ধ হওয়ার উপক্রম তখন আনন্দমোহন বসুর বন্ধু মৌলভী হামিদ উদ্দিন আহমদ ২৬ বিঘা জমি দান করেন। পরে ১৯০৮ সালের শেষের দিকে “ময়মনসিংহ সিটি কলেজ” থেকে নাম পরিবর্তন করে “ আনন্দমোহন কলেজ” করা হয়। কলেজটি ১৯৬৪ সালে সরকারিকরণ করা হয়।
কিভাবে যাবেনঃ ময়মনসিংহ শহরের যে কোন স্থান হতে রিক্সা বা অটোরিক্সা নিয়ে আনন্দমোহন কলেজ যাওয়া যায়।
বোকাইনগর প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে তেমন কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায় না কিন্তু জনসাধারণের মধ্যে এই নিয়ে মতবাদ রয়েছে। একপক্ষের মতে, পনেরো শতকে কামরূপ রাজ্য যখন বিভিন্ন অংশে ভাগ হয়ে যাচ্ছিল তখন বোকাই নামের একজন কোচ উপজাতি – প্রধান এ দুর্গটি নিমার্ণ করেন। বোকাই মারা যাওয়ার তার নামেই দুর্গটির নামকরণ করেন। অন্যপক্ষের মতে, মজলিস খান হুমায়ুন দুর্গটি নিমার্ণ করেন। ১৯৪৫ সালে দুর্গটি হোসেন শাহ এর নিয়ন্ত্রনে আসে এবং তিনি তার পুত্র নুসরত শাহকে এর অধিকর্তা নিয়োগ করেন। পরবর্তী সময়ে উসমান খান আফগান মুগলদের কাছে পরাজিত হয়ে উড়িষ্যা থেকে পালিয়ে ঈশা খান এর আশ্রয় গ্রহণ করেন এবং বোকাইনগরের সামন্তরাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। তিনি নগরের বিভিন্ন দুর্গ পুনঃনির্মাণ করে এটিকে শক্তিশালী সামরিক ঘাঁটি হিসেবে গড়ে তোলেন এবং এখান থেকে মোঘলদের বিরুদ্বে কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তোলতে সক্ষম হন।
কিভাবে যাবেনঃ ময়মনসিংহ সদর হয়ে ময়মনসিংহ – কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক পথে কলতা পাড়া হয়ে (প্রায় ২০ কি.মি) দূরে গৌরিপুর উপজেলায় যাবেন।গৌরিপুরের ভিতরে রেল স্টেশন সংলগ্ন এ নগর।
মুক্তাগাছার জমিদার মহারাজা সূর্যকান্তের বসতবাড়ি শশীলজ। নিজের কোনো পুত্র না থাকায় দত্তক পুত্র শশীকান্ত আচার্য চৌধুরীর নামে উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি তিনি দ্বিতল বিশিষ্ট বাড়ি নিমার্ণ করেন। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে দ্বিতল ভবনটি ভেঙ্গে গেলে বর্তমান বাড়িটি পুনঃনিমার্ণ করা হয়। এই ভবনের সিঁড়িতে বিশেষ বাদ্যের ব্যবস্থা ছিল। সিঁড়িতে মানুষ চলাচল করলে সুমধুর বাজনা বাজত। স্ফটিক সাঙ্গিত বাক্সটি মহারাজা প্যারিস থেকে এক লক্ষ টাকার বিনিময়ে কিনি এনেছিলেন। শশীলজ ধ্বংস হওয়ার পর মহারাজা তার এলাকায় দ্বিতল পাকা বাড়ী নিষিদ্ধ করেন। বর্তমানে বাড়ীটিতে অসংখ্য দুর্লভ প্রাচীন বৃক্ষ রয়েছে।
কিভাবে যাবেনঃ ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল আন্তজেলা সড়কের পাশে জেলা পরিষদের সাথেই এই বাড়িটির অবস্থিত। ময়মনসিংহ সদর থেকে রিক্সা বা অটোরিক্সা করে যাওয়া যায়।
১৮৮৪ খিষ্টাব্দে ময়মনসিংহের বিভিন্ন জমিদারদের আর্থিক সহায়তায় ময়মনসিংহ টাউন হল স্থাপিত হয়। এই টাউন হলকে কেন্দ্র করেই ময়মনসিংহে সাংস্কাতিক কর্মকান্ডের প্রসার হয়। এ টাউন হল প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল মহারাজা সূর্যকামেত্মর। তিনি প্রায় ৩০০০০ টাকা ব্যয়ে লাইব্রেরি সহ এটি নিমার্ণ করেন। বহুবছর পর ১৯৭৪ খিষ্ঠাব্দে নতুনভাবে ঢেলে সাজানো হয় ফলে ময়মনসিংহের নাট্যচর্চা,সামাজিক কর্মকান্ড আরো বেশি বিস্তার লাভ করে । এছাড়াও এই টাউন হল অনেক রাজনৈতিক উন্থান -পতনের সাক্ষী। কারণ একসময় এখানে অনেক মিছিল মিটিং ও সভা হত।
কিভাবে যাবেনঃ ময়মনসিংহের মাসকান্দা বাস টার্মিনাল হতের অটোরিক্সা বা ট্যাক্সি যোগে যাওয়া যায়।
ময়মনসিংহ জেলার জয়সিদ্ধি গ্রামে ২৩ শে সেপ্টেম্বর ১৮৪৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একাধারে বাঙালি রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক ছিলেন। বিজ্ঞানী জগদিশচন্দ্র বসুর বোনজামাই হলেন আনন্দ মোহন বসু। আনন্দ মোহন বসু ১৮৮৪,১৮৯০,১৮৯৫ সালে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ময়মনসিংহ শহরে ময়মনসিংহ ইনস্টিটিউশন (আনন্দমোহন কলেজ , বাংলাদেশ) এবং কলকাতায় সিটি স্কুল (আনন্দমোহন কলেজ, কলকাতা)নামে বিদ্যালয় স্থাপন করেন। তিনি ২০ আগষ্ট ১৯০৬ সালে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
তিনি একাধারে একজন সাংবাদিক,রাজনীতিবিদ,সাহিত্যিক ছিলেন। তিনি ময়মনসিংহের ত্রিশালের ধানিখোলা গ্রামে ৩ নভেম্বর ১৮৯৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯২৩ সালে দৈনিক মোহাম্মদী পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক হিসেবে তার সাংবাদিকতা কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৩৬ সালে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় যোগদান করেন। ১৯৪০-৬২ সাল পর্যন্ত দৈনিক আজাদে সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। “পূর্ব পাকিস্তান রেনেসাঁ সোসাইটির (১৯৪০)” তিনি সভাপতি ছিলেন। ভাষা আন্দোলনের সময় বাংলা ভাষার দাবি সংক্রান্ত সম্পাদকীয় প্রকাশ করে তিনি ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেন। ২৩ ফেব্রুয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে প্রথম যে শহীদ মিনার নির্মিত হয়েছিলেন তা আবুল কালাম শামসুদ্দিন উদ্বোধন করেন। সিতারা-ই খিদমত,সিতারা-ই-ইমতিয়াজ, একুশে পদক সহ অসংখ্য পুরুষ্কার লাভ করেন। তিনি ৪ মার্চ ১৯৭৮ সালে মৃত্যু বরণ করেন।
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে প্রথন বাঙালী মহিলা কবি। তিনি আনুমানিক ১৫৫০ সালে ময়মনসিংহের পাতুয়ারী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলা ভাষায় রামায়ণ রচনা করেছিলেন। ড.দীনেশচন্দ্র সেন ১৯৩২ সালে চন্দ্রাবতীর রামায়ণ রচনা করেছে। দীনেশচন্দ্রের মতে, মাইকেল মধুসূদন দত্ত তার মেঘনাদবধ কাব্যের সীতা-সরমার কথোপকথনের অংশটি ‘চন্দ্রাবতীর রামায়ণ’ থেকে গ্রহণ করেছিলেন। চন্দ্রাবতী আনুমানিক ১৬০০ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
আবদুল জব্বার ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার পাঁচুয়া গ্রামে ১৯১৯ সালের ১০ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। আবদুল জব্বার পনেরো বছর বয়সেই গৃহত্যাগ করেন। এবং কাজের তিনি বার্মা (মায়ানমার) গমন করেন । দশ-বার বছর সেখানে অবস্থানের পর তিনি পাকিস্তান ন্যাশনাল গার্ড এ যোগ দেন। পরে আনসার বাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী তার অসুস্থ শাশুড়িকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল আসেন। ৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ছাত্ররা মিছিল বের করে তাতে আবদুল জব্বার যোগ দেন । এ সময় আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশ গুলি বর্ষণ করে এবং জব্বার গুলিবিদ্ধ হন।রাতে ঢাকা মেডিকেলে জব্বার মৃত্যুবরণ করেন।ভাষা শহীদ হিসেবে আবদুল জব্বার আমাদের মাঝে অমর হয়ে আছে।
তিনি ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার ধানিখোলা গ্রামে ১৮৯৮ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একাধারে রাজনীতিবিদ, আইনজ্ঞ ও সাংবাদিক এবং বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্রূপাত্মক রচয়িতা। “আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর” তার বিখ্যাত আত্মজীবনীমূলক রচনা।আবুল মনসুর আহমদ নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর কংগ্রেস আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন । পরে তিনি মুসলিম লীগের সাথে যুক্ত হন। তিনি যুক্তফন্ট নির্বাচনী কর্মসূচি ২১ দফার অন্যতম প্রণেতা ছিলেন। ১৯৫৪ সালে তিনি ফজলুল হকের মন্ত্রীসভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৫৬ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের শিক্ষামন্ত্রী এবং ১ ৯৫৬-৫৭ সালে বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৩-১৯৫৮ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তবাদী দল থেকে নির্বাচন করে ময়মনসিংহ-৭(ত্রিশাল) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৮মার্চ ১৯৭৯ সালে ঢাকায় মৃত্যু্বরণ করেন।
১২ মে ১৮৬৩ সালের ময়মনসিংহ জেলার বর্তমন কিশোরগঞ্জ জেলার কাটিয়াদি উপজেলার মসূয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক নাম ছিল কামদারঞ্জন রায়। উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী বিখ্যাত বাঙালি শিশুসাহিত্যিক,বাংলা ছাপাখানার অগ্রপথিক। তিনি একাধারে লেখক,প্রকাশক,চিত্রাকর,বেহেলাবাদক ও সুরকার ছিলেন।সন্দেশ পত্রিকার যাত্রা তার মাধ্যমে শুরু হয় যা পরে পুত্র সুকুমার রায় ও পৌত্র সত্যজিৎ রায় সম্পাদনা করেন। গুপি-গাইন-বাঘা-বাইন,-টুনটুুনির বই তার অমর সৃষ্টি। তিনি ২০ ডিসেম্বর ১৯১৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন
সুকুমার রায় ৩০ অক্টোবর ১৮৮৭ সালে ময়মনসিংহ জেলার বর্তমন কিশোরগঞ্জ জেলার কাটিয়াদি উপজেলার মসূয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।সুকুমার রায় ছিলেন বাঙালি শিশুসাহিত্যিক ও ভারতীয় সাহিত্যে “ননসেন্স ছড়া”র প্রবর্তক।তিনি জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশাের রায় চৌধুরীর সন্তান এবং তার পুত্র খ্যতিমান ভারতীয় চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়।তার লেখা কবিতার বই আবোল-তাবোল,গল্প হ-য-ব-র-ল,গল্প সংকলন পাগলা দাশু এবং সর্বযুগের সেরা নাটক “ননসেন্স” শিশুসাহিত্যের অন্যতম বলে মনে করা হয়।সুকুমার রায় ১০ সেপ্টেম্বর ১৯২৩ সালে মাত্র ৩৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
তার প্রকৃত নাম আবুল ফজল মোহাম্মদ আহসান উদ্দিন চৌধুরী । তিনি ১ জুলাই ১৯১৫ সালে ময়মনসিংহ জেলার গৌরিপুর উপজেলার বোকাইনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশের ১১ তম রাষ্ট্রপতি।হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি এবং সুপ্রিম কোর্টে আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।তিনি ৩০ আগষ্ট ২০০১ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
জগদীচন্দ্র বসু ১৮৫৮ সালের ৩০ শে নভেম্বর ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল রেজিমেন্ট(বর্তমান বাংলাদেশ) অঞ্চলের মুন্সিগন্জে জন্মগ্রহণ করেন।বিক্রমপুরের রাঢ়িখাল গ্রামে তার পরিবারের প্রকৃত বাসস্থান ছিল।জগদীশচন্দ্র বসু একাধারে বাঙালি পদার্থবিদ,জীববিজ্ঞানী ও কল্পবিজ্ঞান রচিয়তা ছিলেন।তাকে একজন রেডিও বিজ্ঞানের জনক হিসেবে অভিহিত করেন ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার্স।বিজ্ঞানে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি নাইটহুড, রয়েল সোসাইটির ফেলো সহ আরো অনেক সম্মাননা পান। ২৩ নভেম্বর ১৯৩৭ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এছাড়াও মনসুর বয়াতী, (১৯১৯-১৯৫২, জ্যোতির্ময়গুহঠাকুরতা (১৯২০-১৯৭১), আচার্য ব্রজেন্দ্রকিশোর চৌধুরী (১৮৭৪-১৯৭৫),কমরেড মণি সিংহ (১৯০১-১৯৯০) এবং সাহিত্যিক শেখ আবদুল জব্বার (১৮৮১-১৯১৮) প্রমুখ ময়মনসিংহ জেলার কয়েকজন স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব।
WhatsApp us
1 Comment
Can you attach photographs of this places??