সড়ক পথে নেপাল ভ্রমন ২০২৩ – Nepal Tour by Road 2023
প্রথমে নেপাল ভিসাঃ
প্রথমে নেপালের ভিসার জন্য পাসপোর্ট দিন। যথারীতি পরের দিন ভিসা সহ পাসপোর্ট ফেরত পেয়ে যাবেন।
ভারতের ট্রানজিট ভিসাঃ
এরপর ভারতের ট্রানজিট ভিসার জন্য পাসপোর্ট জমা দিন। ট্রানজিট ভিসার অনেক নিয়ম কানুন আছে। সেগুলো ঠিকমত রেডি করে জমা দিলে অবশ্যই ভিসা হবে। যাদের ভিসা হয় না তারাই বলেন যে ট্রানজিট ভিসা দেয় না। ভিসা পেয়ে গেলেই বাসের টিকিট কেটে ফেলুন।
যাত্রা শুরুঃ
রাত ৭ঃ৩০ হানিফ পরিবহনের বাস আছে। বাস ভাড়া ৬৫০টাকা ঢাকা থেকে বুড়িমারী, রাতের খাবার খেয়ে নিন অথবা বাসে উঠার সময় কিনে নিন।
১ম ও ২য় দিনঃ সকালে বুড়িমারী পৌঁছাতে ১০টা বেজে যাবে। তাড়াতাড়ি নাস্তা করে নিবেন। ডাল ভাজি পরটা ৩৫ টাকা নিবে, বন্দর উন্নয়ন ফি ৫০ টাকা পরবে। প্রায় ১ ঘন্টার মত সময় লাগবে বাংলাদেশের ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করতে। ভারতীয় ইমিগ্রেশনেও প্রায় ৩০ মিনিট সময় লাগে। এরপর টাকা ভাংগিয়ে রানিগঞ্জের জন্য গাড়ি রিজার্ভ করবেন। একটা গাড়ি ভাড়া করতে খরচ পড়বে ১৭০০ রুপি। গ্রুপ টুর হলে ভালো হয়। গ্রুপে যত মানুষ বেশি হবে, পার হেড ভাড়াও কম পড়বে। গাড়িতে ৫-৬ জন যাওয়া যায়। প্রায় ৩ ঘন্টা পর রানিগঞ্জ বর্ডারে পৌছাবেন।
রানিগঞ্জ নেমে ২০ মিনিটে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে সোজা চলে যাবেন নেপালের কাঁকরভিটা ইমিগ্রেশনে। কাকারভিটা ইমিগ্রেশনে ১৫ মিনিটে কাজ শেষ করে কাঠমুন্ডু যাওয়ার বাসের টিকিট কাটবেন। বাসের ভাড়া ৭০০রুপি জন প্রতি। আপনাদের কাকারভিটা ইমিগ্রেশনে এ বিকেল হয়ে যাবে, তাই দুপুরের খাবার খেয়েই কাঠমুন্ডু যাওয়ার বাসের টিকিট তাড়াতাড়ি কাটবেন। সন্ধা ৭ টায় কাঠমুন্ডুর উদ্দেশ্যে শেষ বাস ছাড়ে। পথে বেশ কয়েকবার যাত্রা বিরতি দেয়,পথে নাস্তা করে নিতে পারেন, ৬০-৭০ রুপি পড়বে। রাতের খাবার কিনে নিবেন গাড়িতে উঠার আগে। অথবা রাতে যাত্রা বিরতি দিলে নেমে রাতের খাবার খেয়ে নিতে পারেন।
জার্নিটা একটু লম্বা এবং কষ্টের। প্রায় ১৬ ঘন্টার জার্নি। চারিদিকে পাহাড় দেখতে দেখতে যাবেন। সারা রাত জার্নির পর সকালের নাস্তার বিরতি দিলে নাস্তা করে নিবেন। নাস্তা করতে ২০০-২৫০রুপি লাগবে একটা জিনিস মাথায় রাখবেন, নেপালে খাবারের দাম অনেক বেশি। তাই খাবারের জন্য প্রতি বেলা বাজেট ২৫০-৩০০ রূপি রাখতে হবে। এরপর আবার গাড়ি চলা শুরু করবে, যেন পথ যেন ফুরায় না!! অবশেষে সকাল ১১টাই কাঠমুন্ডু পৌছাবেন। থামেলে হোটেল খুঁজেন। ২৫০০-৩০০০ রুপি নিবে, ৪-৫জন থাকতে পারবেন। যদি আপনারা স্টুডেন্ট হয়ে থাকেন তাহলে আসেপাশে হোস্টেল খুঁজতে পারেন, ৩০০ রুপিতে হোস্টেলে থাকা যায়। তবে এটা কাপলদের জন্য না। ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবারের জন্য বের হয়ে যান। নেপালি থালি খাবার ৩৩০রুপি পড়বে। ট্রাই করতে ভুলবেন না।
খাবার খেয়ে গুগল ম্যাপ ধরে হেটে দরবার স্কয়ার চলে যান। সন্ধা পর্যন্ত দরবার স্কায়ারে থেকে রাতের থামেল দেখতে দেখতে হোটেলে ফিরে আসেন।ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে চলে যান আল-মদিনা হালাল ফুডস, মহিষের মাংস দিয়ে রাতের খাবার খেয়ে নিতে পারেন, ৩০০রুপি পড়বে, চা-২০রুপি।
৩য় দিনঃ (কাঠমুন্ডু) সকালে উঠে আলু পরটা+চা (১২০রুপি ) খেয়ে বের হয়ে পড়ুন সাইট সিন এর জন্য। কাঠমুন্ডু সাইড সীনের জন্য ৪৫০০ রুপি দিয়ে গাড়ি ভাড়া করেন।
যে সব জায়গা ঘুরে দেখাবেঃ পশুপথিনাথ টেম্পল, ওয়াল্ড হেরিটেজ বুদ্ধনাথ স্তুপা, বুড়া নীলকন্ঠ, চন্দ্রগিড়ি, স্বয়ম্ভুনাথ টেম্পল, কাঠমুন্ডু দরবার স্কয়ার।
নাস্তার জন্য বিস্কুট, কমলা নিয়ে নিবেন, ৫০ রুপি পড়বে। দুপুরে চন্দ্রগিড়িতে ৩৩০ রুপিতে নেপালী ভেজ খেতে পারেন। রাতে আবার আল-মদিনা হোটেলে চলে যান। আজ ২৭৫ রুপিতে বিরিয়ানি খেয়ে দেখতে পারেন। আগামীকাল সকালে পোখারা যাওয়ার বাসের টিকিট কেটে এডভান্স কেটে রাখুন। ৭০০রুপি জন প্রতি বাসের টিকিট।
৪র্থ দিনঃ (পোখাড়া) সকালে ঘুম থেকে উঠে চা, বিস্কুট ৫০রুপি দিয়ে খেয়ে ৭ঃ০০ টায় পোখারার বাসে উঠে পড়ুন। বাসে নাস্তার জন্য বিস্কুট, কমলা নিয়ে নেন ৫০ রুপি দিয়ে। পোখারা পৌছাতে ২টা বেজে যাবে। বাস থেকে নেমে গুগল ম্যাপ ধরে হাঁটতে হাঁটতে লেক সাইডে চলে যাবেন। কয়েকটা হোটেল দেখে ৩০০ রুপি পার হেড একটি হোটেল নিয়ে নিবেন হোস্টেল টাইপ। আর যদি কাপল হন তাহলে ২০০০-২৫০০ রুপিতে ভালো হোটেল নিবেন। হোটেলে উঠে ফ্রেশ হয়ে এরপর দুপুরের খাবারের জন্য বের হন। গুগল ম্যাপের সাহায্যে নিয়ে পোখারা হালাল ফুড নামের রেস্টুরেন্ট চলে যান। ৩০০রুপি দিয়ে মহিষের মাংস দিয়ে খাবার খেয়ে নেন। খাবার খেয়ে ফেওয়া লেকের পাড়ে ঘুরতে চলে যান। বিকেলের নাস্তা বিস্কুট,চা ৫০রুপি দিয়ে খেয়ে নেন। রাতে হোটেলে আসার সময় রাতের খাবার খেয়ে নিবেন একই হোটেল থেকে। পরে হোটেলে ব্যাক করে হোটেল ম্যানেজারের সাথে কথা বলে পরের দিন সাইড সীনের জন্য গাড়ি রিজার্ভ করে ফেলুন ৭০০০রুপি দিয়ে। গাড়িতে ৭জন যেতে পারবেন। প্রতিদিন সন্ধায় পোখারার রাস্তায় বিভিন্ন ফেস্টিভ্যাল চলে। সময়টা দারুণ কাটবে।
৫ম দিনঃ সকাল ৫ঃ৩০টায় ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়েই রিজার্ভ করা গাড়িতে চলে যান সারাংকোট, প্রবেশ ফি পার হেড ৬০রুপি। সকালের সূর্যোদয়+অন্মপুর্না উপভোগ করে নিচে নেমে যান। তারপর ব্যাট কেভে ৮০ রুপি টিকিট কেটে ঘুরে আসুন। গেটের বাইরেই সকালের নাস্তা করে নিন ১৫০ রুপি দিয়ে। তারপর মাহেন্দ্র কেইভ, বিন্দবাসিনী মন্দির, ওয়াল্ড পিস প্যাগোডা, ডেভিস ফলস, শতী রিভার, গুপ্তেশ্বর মহাদেব কেইভ ঘুরে বিকেলে হোটেলে ফিরে আসুন। দুপুরের খাবার খেয়ে নিন। সন্ধায় ফেওয়া লেকের পাড়ে ঘুরতে যেতে পারেন এবং চা (৩০রুপি) খেতে পারেন। রাতে পোখারা হালাল রেস্টুরেন্টে ৩০০রুপি দিয়ে রাতের খাবার খেয়ে নিয়ে হোটেলে গিয়ে ঘুম দেন।
৬ষ্ঠ দিনঃ এই দিনটা ফেওয়া লেকে ঘোরাঘুরি জন্য রাখতে পারেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে ১৫০রুপি দিয়ে নাস্তা করে ফেওয়া লেকে চলে যান। ১২০০ রুপি দিয়ে ২ঘন্টার জন্য একটা বোট ভাড়া করেন। বোটে ৫-৬ জন উঠতে পারবেন। ২ঘন্টা লেকে ঘুরে হোটেলে ফিরে ফ্রেশ হয়ে হালাল রেস্টুরেন্টে ৩০০রুপি দিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে নিন। তারপর ১৫০ রুপি ঘন্টা হিসেবে সাইকেল ভাড়া করে ১ঘন্টা আসেপাশে ঘুরে হোটেলে ফিরে আসুন। সাইকেল চালাতে জানলে এই সময়টা ভালো কাটবে। রাতে আবার সেই হালাল রেস্টুরেন্টে ৩০০রুপি দিয়ে রাতের খাবার খেয়ে নিন। হোটেলে এসে ম্যানেজারের সাথে কথা বলে পরের দিন বিকেলের কাঁকরভিটার বাসের টিকিট কেটে রাখবেন। পার হেড ১৩০০ রুপি পড়বে।
৭ম দিনঃ সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে নিন। যেহেতু বিকেল পর্যন্ত সময় আছে,তাই সাইকেল ভাড়া নিন ১৫০রুপি দিয়ে।সাইকেল চালিয়ে প্যারাগ্লাইডিং ল্যান্ড মাঠে চলে যান।৩০০০ রূপি পড়বে প্যারাগ্লাইডিং করতে। দামাদামি করে খুব একটা লাভ নেই। প্যারাগ্লাইডিং শেষ করে দুপুরে হোটেলে এসে ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে নিন। তারপর গুগল ম্যাপ ধরে বাস স্টান্ডে রওনা দেন, ৩ কিলো দূরে। বিকেল ৩ঃ৩০ টায় কাকারভিটার উদ্দেশ্যে বাস রওনা হবে। বাসের মধ্যে নাস্তার জন্য মুড়ি+চানাচুর,কমলা কিনে নিতে পারেন।বাস রাতে কয়েকবার বিরতি দেয় রাতের খাবার খাওয়ার জন্য।
৮ম দিনঃ সকালে কাঁকরভিটা নেমে নাস্তা করে নিন। তারপর নেপাল ইমিগ্রেশন+রানিগঞ্জ ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে লোকাল বাসে ৩০রুপি দিয়ে শিলিগুড়ি চলে আসুন। ১০০০ রুপি দিয়ে একটা রুম নিয়ে নিন। হোটেলে ফ্রেশ হয়ে ভেনাস মোড়ে “পাকিজা” মুসলিম রেস্টুরেন্টে যেয়ে ১৪৫ রুপি দিয়ে গরুর মাংস দিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে নিন।তারপর টুকটাক কেনাকাটা করে রাতে পাকিজা রেস্টুরেন্টে বিরিয়ানি খেয়ে (১০০ টাকা) রাতে হোটেলে ফিরে জম্পেশ ঘুম দেন।
৯ম দিনঃ সকালে ঘুম থেকে উঠে ৭০ রুপি দিয়ে গরুর কলিজা+রুটি খেয়ে নিন। তারপর অটো ভাড়া করে শিলিগুড়ি বাসস্ট্যান্ডে যান ৩০রুপি দিয়ে।বাসে ৭০রুপি দিয়ে চেংরাবান্দার উদ্দেশ্যে রওনা হন। বাস থেকে নেমে ৩০রুপি অটো ভাড়া দিয়ে বর্ডারে চলে আসুন। দুইপাশের ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করতে বিকেল হয়ে যাবে। বিকেলে দুপুরের খাবার খেয়ে নিন। তারপর বিকেল ৫টার বাসে ৬৫০টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। রাতে বাস যখন বিরতি দিবে তখন রাতের খাবার খেয়ে নিবেন।
এই টুরে আপনার খরচ হবে জন প্রতি ২০০০০ টাকার মত যদি গ্রুপে মিনিমাম ৫ জন থাকেন। ভিসা থেকে শুরু করে দেশে ফেরত আসা পর্যন্ত। আপনি যদি প্যারাগ্লাইডিং না করেন তাহলে এই টুর ১৬০০০ টাকায় করা সম্ভব।
নেপাল ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ
পাসপোর্ট (অবশ্যই নুন্যতম ৬মাস মেয়াদ থাকতে হবে), পাসপোর্টের ফটোকপি। পাসপোর্ট সাইজ ছবি ১কপি। জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি।পেশাগত প্রমানপত্রের কপি(ছাত্র হলে স্টুডেন্ট আইডি কার্ডের ফটোকপি,চাকুরীজীবি হলে ছুটির প্রমানপত্র)। নেপালে হোটেল বুকিংয়ের কপি। বাই রোডে গেলে ঢাকা-বুড়িমারি যাওয়া আসার টিকিটের ফটোকপি। ভিসা আবেদন ফরম অনলাইন থেকে ডাউনলোড করে হাতে পুরন করতে পারেন,অথবা অ্যাম্বাসী গেট থেকে নিয়েও পুরন করে জমা দিতে পারেন।
বছরের ১ম বার নেপালের ভিসা করতে কোন টাকা লাগে না। একই বছরে ২য় বার গেলে টাকা লাগে।
ভারতের ট্রানজিট ভিসার কাগজপত্রঃ
অনলাইনে পুরন করা আবেদন ফরম ২×২ ছবিসহ। পাসপোর্টের ফটোকপি। পেশাগত প্রমানপত্র। ব্যাংক স্টেটমেন্ট/ডলার এন্ডোজমেন্ট। বাসস্থানের যে কোন বিলের কপি। নেপালের হোটেল বুকিং এর কপি। ঢাকা-বুড়িমারি যাওয়া আসার টিকিটের ফটোকপি। নেপালের ভিসার ফটোকপি।।
সতর্কতাঃ
ঢাকা থেকে কাঠমুন্ডু পৌছাতে প্রায় ৩৬ ঘন্টা,কাঠমুন্ডু থেকে পোখারা যেতে ৭ ঘন্টা সময় লাগে,পর্যাপ্ত মনোবল+এনার্জি না থাকলে সড়কপথে না যাওয়াটা ভালো।
কাঠমুন্ডু তেমন ভালো নাও লাগতে পারে, ঢাকার মতই হই-চই, কিন্তু পোখারা একদম নিরব, সাজানো-গোছানো, পরিষ্কার শহর।
দয়া করে ঘুরতে যেয়ে পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু করবেন না।মনে রাখবেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ।
দয়া করে ঘুরতে যেয়ে মদ,জুয়া,নেশা করবেন না।
সফরকালে নামাজ আদায় করতে ভুলবেন না, দিনে সফরে থাকলে রাতে সারাদিনের নামাজ একসাথে কসর পরুন, তবুও নামাজ ছাড়বেন না।