শ্রীলংকা (Sri Lanka), আদি নাম সিলন যা দক্ষিণ এশিয়ার একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। ভ্রমণ জগতে বর্তমানে খুব জনপ্রিয় একটি গন্তব্যের নাম। এর প্রশাসনিক রাজধানীর নাম শ্রী জয়াবর্ধেনেপুরা কোট্টে। এর প্রধান শহর কলম্বো। শ্রীলঙ্কা চা, কফি, নারিকেল, রাবার উৎপাদন ও রফতানিতে বিখ্যাত। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সংবলিত সমুদ্রসৈকত, ভূদৃশ্য তদুপরী সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য শ্রীলঙ্কাকে সারা পৃথিবীর পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
রীলংকার দর্শণীয় স্থানসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি স্থান হচ্ছে কলম্বো, অনুরাধাপুর, ক্যান্ডি, পোলোন্নারুভা, এডামস পিক, সিগরিয়া রক, শ্রীলংকার জাতীয় জাদুঘর প্রভৃতি। শ্রীলংকার অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান বুদ্ধমন্দির কেলানিয়া রাজা মহাভিহার যা কলম্বোতে অবস্থিত। প্রত্যেক জানুয়ারি মাসে এ মন্দিরে ধার্মিক অনুষ্ঠান পেরাহেরা অনুষ্ঠিত হয়। ক্যান্ডিতেও যেতে ভুলবেন না শ্রীলংকা বেড়াতে গেলে। এখানে রয়েছে দ্যা টেম্পল অফ টুথ, দ্যা ওল্ড ওয়েল প্যালেস কম্পাউন্ড, লঙ্কাতিলকা মন্দির, এম্বেকা মন্দির যা অবশ্যই দেখার মতো জায়গা। ক্যান্ডিকে শ্রীলঙ্কার সাংস্কৃতিক রাজধানী বলা হয়।
শ্রীলংকা এই উপমহাদেশেই অবস্থিত হওয়ায় শ্রীলংকা বেড়ানোর খরচ অন্য অনেক দেশের তুলনায় কম। যারা বিমানে ঢাকা থেকে আসতে চান তারা মিহিন লংকা এয়ার লাইন্স ব্যবহার করতে পারেন। এটা শ্রীলংকার বিমান। এছাড়া সরাসরি শ্রীলংকা না এসে ভারত হয়েও আসতে পারেন আপনি। এভাবে আসতে চাইলে কলকাতা থেকে ট্রেনে চেন্নাই গিয়ে সেখান থেকে বিমানে করে কলম্বো যেতে হবে। কলম্বো আসার পর বাসে বা ট্রেনে শ্রীলংকার যে কোন জায়গায় যেতে পারবেন। অথবা জেট এয়ারওয়েজে দিল্লি হয়ে কলম্বো আসা অনেক সহজ।
শ্রীলঙ্কার আবহাওয়া শ্রীলঙ্কাতে সারা বছর প্রায় একরকম তাপমাত্রাই থাকে। উপকূলবর্তী এবং নিম্নাঞ্চল গুলোতে গড়ে ২৬-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকে। ক্যান্ডির মত উঁচু এলাকা গুলোতে তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত কম (১৮-২২ ডিগ্রি)। সারা বছর জুড়ে আদ্রতা বরাবরই বেশী থাকে। কখন যাবেন শ্রীলঙ্কা শ্রীলঙ্কার ভৌগোলিক অবস্থান এর কারনে আবহাওয়া বেশ চমৎকার। চারদিকে সমুদ্র থাকার কারনে এর আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ। এখানে অক্টোবর এবং নভেম্বর মাসে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়। তাই পর্যটকদের এই সময়টা এড়িয়ে চলাই ভাল। শ্রীলঙ্কা ভ্রমন করার জন্য বছরের সবচেয়ে ভাল সময় হল ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস।
ঢাকা থেকে সরাসরি আকাশপথে কলম্বো যেতে পারেন অথবা যদি কম খরচে যেতে চান তাহলে ভারত হয়ে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনার পাসপোর্টে ভারতের ডাবল এন্ট্রি ভিসা লাগাতে হবে। ঢাকায় অবস্থিত শ্রীলঙ্কার হাইকমিশন থেকে ভিসা নিতে হবে এক্ষেত্রে। বিমানে যেতে চাইলে এয়ার ইন্ডিয়া, জেট এয়ারওয়েজ, মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স, মালিন্দ এয়ার, শ্রীলংকান এয়ারওয়েজ সহ আরও অন্যান্য এয়ারলাইন্স এ ঢাকা থেকে শ্রীলঙ্কা যেতে পারেন।
ঢাকায় শ্রীলংকান হাই কমিশনের ঠিকানাঃ
High Commission for the Democratic Socialist Republic of Srilanka House #15, Road #50, Gulshan- 2, Dhaka
Telephone: 8810779, Fax: 8823971 | অনলাইনে ভিসার আবেদনের জন্য এই ওয়েবসাইট ভিজিট করুনঃ http://www.eta.gov.lk/slvisa
শ্রীলংকায় সনাতন ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মিশেল পেতে চাইলে কলম্বো (Colombo) ঘুরে দেখার কোনও বিকল্প নেই। এখানে যেমন আছে ঐতিহ্যগত নিস্তব্ধতা, তেমনি আধুনিক উজ্জ্বলতাও। ইতিহাস, সংস্কৃতি, বৌদ্ধ দর্শন ইত্যাদিতে আগ্রহী হলে একটা গোটা দিন রেখে দেন জাতীয় যাদুঘরের জন্য। জাতীয় যাদুঘর দালানটা খুব সুন্দর, সম্ভবত উপনিবেশিক আমলে তৈরি। যাদুঘরের সামনে বট গাছের নিচে শ্বেতশুভ্র ধ্যানরত বুদ্ধের মূর্তি আছে। যারা বৌদ্ধ দর্শনে আগ্রহী তাদের জন্য গোটা শ্রীলঙ্কা জুড়ে দেখার, শোনার, শেখার অনেক কিছু আছে। স্থিরবাদী (থেরাভাদা) বৌদ্ধ দর্শনের ঘাঁটি হিসেবে মনে করা হয় শ্রীলঙ্কাকে।
গল ফেস গ্রিন বিচও কলম্বোর অন্যতম উলেখযোগ্য সৌন্দর্যের একটি। যেখানে সুনীল সমুদ্র আর সমুদ্রের ঢেউ ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ওয়াটার স্পোর্টসের ব্যবস্থা। এখন যদিও কমার্শিয়াল সেন্টারে পরিণত হয়ে গেছে এলাকাটা তার পর্তুগিজ এবং ডাচ পিরিয়ডের ফোর্টের আবেদন একটুকু কমেনি। এই এলাকার অসংখ্য দর্শনীয় স্থান একটু কষ্ট করে হেঁটেই দেখে নেওয়া সম্ভব। সাগরের পাশেই বিশাল মাঠে বিকাল বেলা লোকে ঘুড়ি ওড়ায়, যুবক-যুবতিরা বসে প্রেম করে, বাবা-মায়েরা বাচ্চাদের নিয়ে বেড়াতে আসে। খুব মনোরম পরিবেশ।
কলম্বো থেকে ১২ কিমি. দূরে অবস্থিত বিচের নাম মাউন্ট লাভিনিয়া। ১৮০৫ সালে তৈরি গভর্নর হাউস এখানে অবস্থিত। যা এখন মাউন্ট লাভিনিয়া হোটেলে পরিণত হয়েছে। এলিফেন্ট শো এর জন্য বিখ্যাত এক চিড়িয়াখানার নাম, দেহিওয়ালা জু। ১১ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত এই চিড়িয়াখানায় দুর্লভ প্রজাতির পশুপাখি রয়েছে। এছাড়া কলম্বোতে দেখার মতো রয়েছে কেলানিয়া রাজা মহাবিহার। জানুয়ারি মাসে প্রতিবছর এখানে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পেরাহেরা অনুষ্ঠিত হয়।
ক্যান্ডিকে (Kandy) শ্রীলংকার সাংস্কৃতিক রাজধানী বলা হয়। শ্রীলংকার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ক্যান্ডি। কলম্বো থেকে ১১৫ কিমি. দূরে অবস্থিত এই শহর। এখানেই অনুষ্ঠিত হয় শ্রীলঙ্কার সবচাইতে বর্ণাঢ্য উৎসব ‘এসালা পেরাহেরা’। ক্যান্ডির দক্ষিণে আছে দেশের সবচাইতে উঁচু এলাকা ‘নুয়ারা এলিয়া’। একে দেশের প্রসিদ্ধ চা শিল্পের কেন্দ্র বিন্দু বলা চলে।
ক্যান্ডি শহরের মাঝখানে বিশাল হ্রদ। হ্রদের চারপাশে বুদ্ধের দাঁতের মন্দির, সিংহল সংস্কৃতি কেন্দ্র (এখানে নিয়মিত ঐতিহ্যবাহী নাচ দেখা যায়), উডাওয়াত্তাকেলে অভয়ারণ্য সহ আরও অনেক কিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। উডাওয়াত্তাকেলে অভয়ারণ্যে প্রচুর জীব জন্তু আছে। প্রবেশ পথের কাছেই একটা জায়গায় বানরের দল ঘোরাফেরা করে। তবে এরা খুব নিরীহ বানর। ক্যান্ডি শহর থেকে যেতে পারেন টুথ রেলিক টেম্পল। শ্রীলঙ্কার অন্যতম পবিত্র ধর্মস্থান। গৌতম বুদ্ধের দাঁত এনে এই মন্দিরে স্থাপন করেছিলেন রাজকন্যা হেমামালী ও তার স্বামী যুবরাজ দন্ত। তার পরে কত যুদ্ধ! বিদেশি শক্তির লাল চোখ দেখেছে এই মাটি, তার চিহ্ন রয়েছে মন্দিরের আনাচে কানাচে। রয়েছে তথাগতের বোধিবৃক্ষও। ইতিহাস বাদ দিলেও ভারী সুন্দর, নিপুণ ভাস্কর্যের সাক্ষী এই মন্দির। সেখান থেকে মাত্র ন’মিনিট দূরেই পেরাডেনিয়ার রয়্যাল বটানিক্যাল গার্ডেন। প্রায় ১৪৭ একর জায়গা জুড়ে এই বাগানে রয়েছে তিনশোরও বেশি অর্কিড, অসংখ্য গাছ— সে এক সমারোহ। গাছ-গাছালিতে আগ্রহ থাকলে একটা গোটা দিন রাখতে হবে এই স্থান ঘুরে দেখার জন্য।
হ্রদের পাশ ঘেঁষে একটা রাস্তা চলে গেছে শহরের মধ্যে। সেই রাস্তা ধরে, দাঁতের মন্দির পাশ কাটিয়ে আরও কিছুদূর গেলে একটা মসজিদ আছে। সেই মসজিদের বিপরীত পাশে একটা “ভাতের হোটেল” মার্কা রেস্তোরাঁ আছে নাম সালগাডো। এখানে ক্যান্ডির সেরা স্ট্রিং হপার পাওয়া যায়। সাথে লুনু-মিরিছ, নারিকেলের চাটনি ইত্যাদি। ক্যান্ডি থেকে আরও উত্তরে গেলে পাওয়া যাবে প্রাচীন শহর অনুরাধাপুর, পলন্নারুওা এবং বিখ্যাত গুহা মন্দিরের শহর দাম্বুলা।
একনজরে ক্যান্ডির দর্শনীয় স্থানগুলো
- Pinnawala Elephant Orphanage
- Temple Of Tooth Relic
- Kandy Lake
- Hulu River Waterfall
- Knuckles Mountain Range
- Bahirawakanda Temple
- Ranweli Spice Garden
- Royal Botanical Garden
- Udawattekele Sanctuary
- CommonWealth War Cemetery
- Millennium Elephant Foundation
- Horton Plains National Park Ohiya
- Ceylon Tea Museum
- Wales Park
- Riverton Gap
- Tour to the Highlands
- Mountains
- Galmaduwa Temple
- Ranawana Purana Rajamaha Vihara
- Pallekele Cricket Stadium
কিভাবে যাবেন
কলম্বো থেকে ট্রেনে কয়েক ঘন্টায় ক্যান্ডি যাওয়া যায়। যাওয়ার পথে ট্রেন ঢাল বেয়ে উঠতে থাকে তাই সময় বেশি লাগে কিন্তু ফিরে আসার পথে ঢাল বেয়ে নামে তাই কম সময়ে যাত্রা শেষ হয়ে যায়। সম্ভব হলে ট্রেনের মধ্যে থেকে চারপাশের দৃশ্য উপভোগ করার যেই বিশেষ কোচটা থাকে সেটায় বসার চেষ্টা করবেন।
কোথায় থাকবেন
ক্যান্ডিতে ভাল থাকার জায়গা আছে স্বার্নানাঙ্কারা মাওয়াথায় (বাংলায় হবে স্বর্ণালঙ্কার সড়কে)। এখানে ব্যাকপ্যাকারের জন্য উপযুক্ত বাজেটে ঘর পাওয়া যায়, ঘরের মান বেশ ভালই। কোন কোন হোটেলে ফ্রি Wifi আছে।
শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তের শ্রীপাডা নামক প্রদেশের রত্নাপুরা জেলায় এডামস পিক অবস্থিত যা ২২৪৩ মিটার বা ৭ হাজার ৩৫৮ ফুট উঁচু এবং আকৃতিতে কোণের মত দেখতে। শুধু মুসলিম নন, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ – এই তিন ধর্মের অনুসারীদের কাছেও অতি পবিত্র এই চূড়াটি বা পাহাড়টি। সকলের ধারনা আদম পাহাড়েই আমাদের আদি পিতা হজরত আদম (আঃ) বেহেশত থেকে সরাসরি আগমণ বা পতিত হয়েছিলেন। চূড়াটির চারদিকে সবুজের বিপুল সমারোহ, মাঝেমধ্যে পাহাড়ি উঁচু নিচু টিলা। পাহাড়ি চূড়ার আশপাশে রয়েছে অসংখ্য ছো্ট নদী এবং পাহাড়ি ঝরনা। সব মিলে এক মায়াবী নয়নাভিরাম দৃশ্য।
এডামস পিক (Adam’s Peak) এ রয়েছে একটি প্রকাণ্ড পাথরখণ্ড। এর উচ্চতা ৮ ফুট। এর ওপরেই রয়েছে ওই পদচিহ্ন যা আদম (আঃ) এর পায়ের যে চিহ্ন বলে বিশ্বাস করা হয়। পদচিহ্ন এর পরিমাপ হচ্ছে প্রায় ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি, দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ হচ্ছে ২ ফুট ৬ ইঞ্চি। বৌদ্ধ ধর্ম মতে খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দে এই পদচিহ্ন আবিষ্কৃত হয়। আবিষ্কৃত হওয়ার পরে পদচিহ্নের চতুর্দিকে ঘেরাও দিয়ে রাখা হয়েছে। যুগ যুগ ধরে শত শত পর্যটক পরিভ্রমণ করেছে চূড়াটিতে। বিশ্বের চূড়াটিতে যারা পরিভ্রমণ করেছেন তারা এর চতুর্দিকে পরিদর্শন করা ছাড়াও স্পর্শ করে দেখেছেন আদম (আঃ) এর পদচিহ্ন। শুধু শ্রীলংকাবাসী নয়, বাহিরের অনেক দেশের মুসলমান বিশ্বাস করেন হজরত আদম (আঃ) কে যখন পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল তখন তিনি প্রথম পা রাখেন শ্রীলঙ্কার ওই পাহাড়ে। এজন্যই মুসলমানরা সেই পাহাড়কে অসীম শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। আর এজন্যই এর নাম দেওয়া হয়েছে আদম’স পিক বা এডাম’স পিক (Adam’s Peak) বা আদমের পাহাড়। এ পাহাড়ের প্রতিটি পরতে পরতে রয়েছে রহস্য। এ পাহাড়ের চূড়ায় যে পদচিহ্ন রয়েছে সেখানে পৌঁছা খুব ঝুঁকিপূর্ণ এডভেঞ্চার। তবে অনেকে ঝুঁকি নিয়ে সেখানে গিয়েছেন। তারা নিজের চোখে ওই পায়ের ছাপ দেখে বিস্মিত হয়েছেন।
এছাড়াও দেখার জন্যে আছে পবিত্র পায়ের পদচিহ্ন, ভাগাভা কেভ, ওয়ার্ল্ড পিস প্যাগোডা এবং অপার্থিব সূর্যোদয়। এ্যাডামস পিক এ আরোহণ করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। চূড়ায় পৌঁছতে হলে যে পথ তা চলে গেছে জঙ্গলের ভিতর দিয়ে। সেই জঙ্গল নানারকম ঝুঁকিপূর্ণ। আছে বিষধর কীটপতঙ্গ। তবে চূড়ার কাছাকাছি একটি ধাতব সিঁড়ি আছে। তাতে রয়েছে ৫০০০ ধাপ এর মত। এর প্রতিটি ধাপ নিরাপদ নয়। তার ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে শীর্ষে যেতে হলে কমপক্ষে ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা সময় লাগে। জটিল এক আবহাওয়ার এক অঞ্চলের মধ্যে এর অবস্থান। বছরে মাত্র তিন থেকে চার মাস এ পাহাড়ে আরোহণ করা যায়। বছরের অন্য সময়টাতে এতে আরোহণ অসম্ভব হয়ে ওঠে। কারণ, কাব্যিক অর্থে বলা যায় এ পাহাড় তখন মেঘের ভিতর লুকিয়ে যায়। চারদিক থেকে মেঘে জেঁকে ধরে।
কখন যাবেন
ডিসেম্বরের ফুল মুন বা ভরা পূর্ণিমা থেকে এপ্রিলের ফুল মুন পর্যন্ত তীর্থযাত্রীদের জন্যে পিক সময়। এছাড়া ছুটির দিন এবং পূর্ণিমার এর সময় ভীড় সবসময় বেশি থাকে। অনেকেই রাতে যাত্রা বা হাইকিং শুরু করে থাকেন যাতে সকালে যেয়ে সূর্যোদয় দেখতে পারেন। আপনি চাইলে দিনেও হাইকিং করে পারেন, রাতে ওখানে গুহাতে থাকার ব্যবস্থা আছে। স্লিপিং ব্যাগ ও খাবার নিয়ে যাবেন। সূর্যোদয় দেখে পরদিন সকাল বেলা ব্যাক করবেন। তবে সবসময় বৃষ্টি এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করবেন। কারন এতে যাত্রা যেমন ঝুকিপূর্ণ হয়ে যাবে তেমনি আশেপাশের নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য মিস করবেন। উপরে ওঠার পথে অন্তত ১৩ টি ঝর্নার দেখা মিলবে।
কিভাবে যাবেন
আপনি কলম্বো বাস স্ট্যান্ড থেকে বাস নিতে পারেন অথবা ক্যান্ডি শহরের পোস্ট অফিস এর কাছে অবস্থিত গুড শেড বাস ডিপার্টমেন্ট থেকে বাসে চড়তে পারেন। ট্রেনে যেতে চাইলে আপনাকে কলম্বো – ক্যান্ডি – নুওয়ারা এলিয়া লাইনের ট্রেনে করে হ্যাটটন নামতে হবে। হ্যাটটন থেকে একাধিক প্রাইভেট বাস পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত নিয়ে যায়, যে পথের দূরত্ব প্রায় ৩৩ কিলোমিটার। সাহসী ভ্রমণকারীরা হ্যাটটন পথটি উপরে উঠার জন্যে এবং রত্নপুরু পথটি নিচে নামার জন্যে ব্যবহার করেন। এই দ্বিতীয় পথটি শুধুমাত্র ট্র্যাকিং এর জন্যে ব্যবহৃত হয়। এই পথে কয়েকটি খাদ্য স্টল আছে যাতে জল এবং খাবার পাওয়া যায়। ট্রেনে হ্যাটটন পৌঁছে বাসে কিংবা টুকটুক এ করে ডালহৌসি পৌছানো যায়। বাসে পৌছাতে সময় লাগে দেড় ঘন্টার মত আর টুকটুকে সময় লাগে এক ঘন্টা। বাসে ভাড়া ০.৬৫ ডলার এবং টুকটুক এ পড়বে ৭-১১ ডলার।
কোথায় থাকবেন
রত্নাপুরা জেলার ডালহৌসি শহর হলো এডামস পিকের সবথেকে কাছের জায়গা। এই শহরের মেইন রোডের কাছে সব ধরনের হোটেল পাওয়া যায়। বাজেট ট্রাভেলার্সদের জন্যে আছে – White House [$25 USD/night] দারুন লোকেশন এবং ঝকঝকে রুম। Grand Adams Peak [$25 USD/night] – এডামস পিক থেকে মাত্র ৩৫০ ফিট দূরে। প্রত্যেক রুমের সাথে ব্যালকনি আছে।
এছাড়া মিড রেঞ্জের ট্রাভেলার্সদের জন্যে আছে – White Elephant Hotel [$46 USD] দারুন লোকেশন। রুমের বারান্দা থেকে পিক দেখা যায়। Punsisi Rest [$57 USD] দারুন লোকেশন এবং সেই সাথে দারুন ভিউ।
লাক্সারি ট্রাভেলার্সদের জন্যে আছে Mandira Craig Appin Bungalow [$225 USD]
নোটঃ যাবার সময় অবশ্যই গরম কাপড়, রাতের জন্যে খাবার ও স্লিপিং ব্যাগ নিয়ে যাবেন।
ভাল লাগলে শেয়ার করুন।