ইনসার আলী খুদের ভাত

blank
সাউথ টাউন মসজিদ
October 21, 2020
blank
সারিঘাট
October 21, 2020
Show all

ইনসার আলী খুদের ভাত

blank

ইনসার আলী খুদের ভাত (Insar Alir Khuder Vaka) মরিচ ভর্তা, সরিষা, শুটকি , ধনে পাতা, আলু ,বেগুন ভর্তা , আর ডিম ভাজা দিয়ে পরিবেশন করেন। প্রতি প্লেটের বর্তমান মূল্য ৫০ টাকা। ইতিমধ্যে এই খুদের ভাতের স্বাদের সুখ্যাতি বেশ ছড়িয়ে পড়েছে। এর সন্ধান মূলত খুঁজে বের করেন ঢাকার বিভিন্ন সাইকেলিস্ট গ্রুপ, তারা এর সন্ধান সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়াতে এর পরিচিতি পায়। রোজ প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন খাদ্য রসিকের ভিড় জমে এখানে। খুদের ভাত বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী নাস্তা হিসেবে বেশ পরিচিত, খুদের ভাত অনেক জায়গায় বৌ ভাত, খুদের ভাকা নামেও পরিচিত।

ঢাকা শহর থেকে খুব বেশি দূরে নয়। কেরানীগঞ্জ উপজেলার একটি গ্রাম, নাম রোহিতপুর। রাস্তার দু’পাশে টিনের ঘর, ফাঁকা জায়গাগুলোতে কোথাও ছোট ছোট ডোবা, কোথাও বা ধানি জমি। পুরোপুরি গ্রাম্য পরিবেশ। দু’পাশের প্রকৃতি দেখতে দেখতেই কখন সোহানা হোটেলে পৌঁছে যাবেন, টেরও পাবেন না। সাইনবোর্ডে বড় বড় করে লেখা সোহানা হোটেল। এক যুগ আগে এক অতি সাধারণ মানুষ ইনসার আলী চালু করেছিলেন সোহানা হোটেল। ছোট্ট হোটেলটিতে সাধারণ খাবার-দাবার বিক্রি হতো। তবে বিশেষ একটা জিনিস রান্না করতেন তিনি; খুদের খিচুড়ি। কৃষি শ্রমিক ইনসার আলী মাত্র ৭০০ টাকায় এ হোটেল শুরু করেন। তিনি মনে করেছেন, গ্রামের শ্রমিকরা ২০ টাকায় অন্য নাস্তা না খেয়ে একই দামে এক প্লেট খিচুড়ি খেলে শরীরে শক্তি পাবেন, আর ভাতের ক্ষুধাও মিটবে। কিন্তু খুদের খিচুড়ি তো কেউ খেতেনই না বরং তাকে নিয়ে সবাই হাসি-ঠাট্টা করতেন। কয়েক বছর পর এক সকালে একদল সাইক্লিস্ট সোহানা হোটেলে নাশতার বিরতি দেয়। খুদের খিচুড়ি সেদিন সবার মনে ধরেছিল। সোশ্যাল মিডিয়ায় তারা ছড়িয়ে দেন খুদের খিচুড়ির কথা। বাকিটা তো ইতিহাস! ছুটির দিনগুলোতে তো রীতিমতো সমাবেশের মতো মানুষের সমাগম। ইনসার আলীর এ খিচুড়ি এখন বিখ্যাত। স্বাদও মনে রাখার মতো। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত খুদের খিচুড়ি বিক্রির ধুম লেগে থাকে। জায়গা না পেয়ে প্লেট হাতে বাইরে দাঁড়িয়ে খেতেও আপত্তি নেই মানুষের।

কি আছে এই খুদের খিচুড়িতে
চাল ঝাড়ার পর ভাঙা ছোট ছোট যে চালটা পাওয়া যায়, সেটাই খুদ। সেই খুদ ইনসার আলী রাঁধেন পোলাওয়ের মতো। সঙ্গে ১০ পদের ভর্তা আর ডিম। রান্নার এই চালকে কেরানীগঞ্জের ভাষায় বলে ‘খুদের ভাকা’। টেবিলের ওপর বড় একটা হাঁড়িতে রাখা খুদের ভাকা। পাশে গুটিকয় প্লাস্টিকের বাটিতে সাজানো লাল, সবুজ ও নানা রঙের ভর্তা। প্লেটে প্রথমে দেওয়া হয় গরম গরম খুদের ভাত, এরপর প্লেটের চারপাশে সাজিয়ে দেওয়া হয় চিংড়ি, শুঁটকি, বেগুন, আলু, কালো জিরা, সরিষা, মরিচসহ ১০ পদের ভর্তা। প্লেটের মাঝখানে ডিম ভাজা। এই ডিম ভাজাটা একদমই আলাদা, তুলার মতো নরম আর গরম গরম পরিবেশনে স্বাদটা যেন দ্বিগুণ বেড়ে যায়। প্রতি প্লেটের দাম ৫০ টাকা। চাইলে গরু এবং মুরগির মাংসও নেওয়া যায়। খাওয়া শেষে চায়ের ব্যবস্থাও আছে এখানে। গরুর দুধ দিয়ে বানানো হয় এই চা। এ ছাড়া নিজেদের তৈরি দই ও কয়েক প্রকারের মিষ্টি তো আছেই।

ঢাকার খুব কাছে হওয়ায় এখানে যেকেউ দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসতে পারবেন। ঢাকার খুব কাছে এমন গ্রাম দেখার সৌভাগ্য খুব কমই আছে। কেউ চাইলে ইনসার আলীর সুখ্যাত খুদের ভাতের স্বাদ নিয়ে গ্রামটি ঘুরে ফিরতে পারেন। উল্লেখ্য রোহিতপুরের হাতে বানানো গামছা, লুঙ্গী খুব বিখ্যাত।

যাওয়ার উপায়
মোহাম্মদপুর বছিলা ব্রিজ ধরে কেরানীগঞ্জের আঁটিবাজারের ওপর রোহিতপুরের সড়ক। আঁটিবাজার থেকে পাঁচ কিলোমিটার যাওয়ার পর রোহিতপুর বাজার। বামের পথ ধরে গোয়ালখালী বাজার থেকে অল্প একটু গেলেই রোহিতপুর ইনসার আলীর সোহানা হোটেল। ঢাকার মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে খুব সহজে যেতে পারবেন। প্রথমে মোহাম্মদপুর থেকে মাত্র ১০ টাকা লেগুনা ভাড়ায় যেতে হবে আটির বাজার। আটিবাজার থেকে জনপ্রতি ৪০ টাকা সিএনজি ভাড়া দিয়ে যেতে হবে গোয়ালখালী রোহিতপুর। ওখানে গিয়ে ইনসার আলীর খুদের ভাকা বললে সবাই দেখিয়ে দিবে। কেরানীগঞ্জ থেকে কেউ যেতে চাইলে বুড়িগঙ্গার দ্বিতীয় সেতু দিয়ে গোয়ালখালী হয়ে যেতে পারেন রোহিতপুর।

গুলিস্থান থেকে নবাবগঞ্জগামী বাসে রোহিতপুর নেমে গোয়ালাখালী অটো রিক্সায় যাওয়া যায় ইনসার আলীর খুদের ভাতের “সোহানা হোটেলে”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *