চটকপুর (Chatakpur), দার্জিলিং জেলার কার্শিয়াং মহকুমায় টাইগার হিলের পাশের পাহাড়টায় তন্দ্রাচ্ছন্ন শ্যামল গ্রামটার নাম। সিঞ্চল অভয়ারণ্যে ৭৭৮৮ ফুট উচ্চতায় চটকপুর এর অবস্থান। জায়গাটির প্রাথমিক আকর্ষণ হ’ল এর দুর্দান্ত পর্বতমালার দৃশ্য এবং একটি শান্ত এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। মাত্র ১৯ টি পরিবারের বাস এখানে – জনসংখ্যা ৯০ এর কাছাকাছি। ছোট্ট এই গ্রামটির চারপাশে যেদিকে তাকাবেন শুধু সবুজ আর সবুজ। মাথায় বরফের মুকুট – দিগন্ত জোড়া কাঞ্চনজঙ্ঘা। এ ছাড়াও হিমালয়ের আরও কতগুলি বিখ্যাত শৃঙ্গ দেখাযায়। যদিও আকাশ পরিস্কারের উপর এটি নির্ভর করবে। ঘন জঙ্গলে অপার নৈঃশব্দ্য। মাঝে মাঝে তা ভেঙে যায় বিভিন্ন প্রজাতির পাখির ডাকে। পাহাড় থেকে নীচের দিকে তাকালে দেখা যায় শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ি শহরের ছবি। যেন ক্যানভাসে আঁকা। চটকপুর এ দেখতে পাবেন স্যালামান্ডার নামক প্রাণীটিকে।
পাহাড়ের ধাপে ধাপে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কাঠের সুন্দর দেখতে বাড়িগুলি। প্রত্যেক বাড়ির সংলগ্ন সব্জি ও ফুলের বাগান ভারী সুন্দর লাগে দেখতে। রাস্তা দিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে দেখতে হেটেই পৌঁছে যাওয়া যায় লোকাল হাটে। জনা ২৫ মানুষ তাদের সব্জি, ফল নিয়ে বসে আর প্রায় সমসংখ্যক ক্রেতা। এই হাটে বিক্রেতারাই ক্রেতা। অনেকটা আদান-প্রদান সম্পর্ক। দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বেড়িয়ে পড়তে পারেন স্থানীয় সিংচল স্যাংচুয়ারি পরিদর্শনে। পাইন, বার্চ, জুনিপারে ভরা এই স্যংচুয়ারি। ৭৮০০ ফুট উচ্চতায় ৩৯ স্কোয়ার কিমি বিস্তৃত এখানে নানা ধরনের পাখি, ময়ূর, হরিণ, চিতল, কালো ভাল্লুক, চিতা, বনবিড়াল ইত্যাদির বাস এখানে। প্রায় ঘন্টাখানেক পথ হেঁটে পৌছানো যায় একটা জলাশয়ের কাছে। এখানে বিভিন্ন প্রাণীরা দিনের বিভিন্ন সময় জল খেতে আসে। তাই অপেক্ষায় থাকলে বলগা হরিণ সহ বেশ কিছু বনের প্রাণীর দেখা মিলবে।
চটকপুর থেকে কাছাকাছির মধ্যে দার্জিলিং (দেড় ঘন্টা’র পথ) / লেপচাজগৎ / লামাহাটা ঘুরে আসতে পারেন কোনো এক ডে ট্রিপে। ভোরের ফটোশুট পর্ব সেরে সকালের নাস্তার পর ধীরে সুস্থে বেরিয়ে আবার সন্ধ্যের আগেই ফিরে আসা। আসা যাওয়া ৩০০০ রুপী আর কেবল ড্রপ ২০০০ রুপী
কিভাবে যাবেন
চটকপুরে যাওয়ার তিনটি আলাদা রাস্তা রয়েছে। একটি পেশোক রোডের তৃতীয় মাইল হয়ে, দ্বিতীয়টি হিল কার্ট রোডের সাথে সংযোগকারী শিলিগুড়ি দার্জিলিংয়ের দিলারামে এবং তৃতীয়টি দার্জিলিংয়ের নিকটে সোনাদা থেকে ডানদিকে (পোস্ট অফিসের পাশ দিয়ে)। আপনি যে কোনও পথ অনুসরণ করেন, মনে রাখবেন এটি বনভূমি এবং বন দফতরের অনুমতি ছাড়া বনে প্রবেশ করা একটি অপরাধ। যদি কেউ বনে যান বা এখানে একটি রাত কাটান তার জন্য বন বিভাগের অনুমতি নিতে হবে যার জন্য ১০০ টাকা লাগবে জন প্রতি এবং গাড়ি প্রতি (অনুমতির কূপনটি যত্ন করে রেখে দেবেন কারন এটি হোম স্টে এবং ফেরার হময় চেকপোস্টে দেখাতে হবে)। তিনটি রুটের মধ্যে সোনদা – চটকপুর রুটটি সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত।
নিউ জলপাইগুড়ি বা এনজেপি কিংবা শিলিগুড়ি থেকে ট্যাক্সি বুক করে কিংবা শেয়ারড ট্যাক্সি করে ঘুম বা জোড়বাংলো বা সোনাদা হয়ে চটকপুর পৌঁছনো যাবে। এনজেপি থেকে ৭৭ কিমি দূরে চটকপুর এর অবস্থান। এছাড়া লেপচাজগত থেকে চটকপুরের দূরত্ব ২২ কিমি। আর দার্জিলিং থেকে ঘুম বা জোরবাঙলো হয়ে গেলে ১১ কিমি রাস্তা ৪৫ মিনিটে পৌছে যাবেন।
কোথায় থাকবেন
নিরিবিলিতে চটকপুরে থাকার জায়গা হল চটকপুর ইকো রিসর্ট। বন দপ্তরের ২ ঘরের ২ টি কটেজ। যোগাযোগ করতে পারেন: ৯৬০৯৭৪০৪৮৯, ৯৬০৯৭১৭৬৫১, ৯০০২১৩৮৫১২।এ ছাড়া, কোনও গ্রামবাসীর বাড়িতে হোমস্টে পদ্ধতিতে থাকতে পারেন। তবে আপার চটকপুর এ হোমস্টে হলে গাড়ী থেকে নেমে হাঁটতে হবে বেশ কিছুটা চড়াই। তবে রাস্তা তৈরী হচ্ছে. খুউব শিগগিরই চালু হয়ে যাবে।
চটকপুর এ আছে ছবির মতো সব HomeStay ! আন্তরিক আতিথেয়তায় জনা দশেক গ্রামবাসীর ঘরে এখন থাকার ব্যবস্থা। কার্পেটে মোড়া ছিমছাম সুন্দর সব কটেজ, অ্যাটাচ ওয়েস্টার্ন ওয়াশরুম – গিজার তো আছেই। ঠান্ডার কাঁপুনিতে রুম হিটারও মিলবে এক্সট্রা কিছু পে করলেই। ব্রেকফাস্ট (পুরী সবজি+ওমলেট) – লাঞ্চ (ডিম) – ইভনিং স্নাক্স (পকোড়া/মোমো) – ডিনার (চিকেন) নিয়ে থাকা খাওয়া সমেত জন প্রতি ১২০০ রুপী। সব হোমস্টেতেই গ্রামের সিন্ডিকেটের ঠিক করা একই রেট।
WhatsApp us