পোখরা

blank
অন্নপূর্ণা
October 20, 2020
blank
জমসম
October 20, 2020
Show all

পোখরা

blank

পোখরা (Pokhara) নেপালের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ শহর যা নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে ২০০ কিমি পশ্চিমে অবস্থিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর পোখরা শহরকে “নেপালের ভূস্বর্গ” ও “নেপাল রানী” বলা হয়। নেপাল পর্যটন বিভাগের একটি শ্লোগান আছে,” তোমার নেপাল দেখা পূর্ণ হবে না, যদি না তুমি পোখরা দেখ।” পোখরা থেকে বিশ্বের দীর্ঘতম (১৪০কিলোমিটার) সারিবদ্ধ হিমালয় পাহাড়ের সারি দেখা যায়। পোখরাকে,”মাউন্টেন ভিউ” – এর শহরও বলা হয়। এখান থেকে ‘অন্নপূর্ণা’ ও মাছের লেজের মতো দেখতে মচ্ছ পুছরে (৬,৯৭৭ মিটার) পর্বতশৃঙ্গ দেখা যায়, যা বিশ্বখ্যাত চারটি পর্বতশৃঙ্গের একটি। এই পোখরাতেই আছে অনেক দর্শনীয় স্থান। পোখরা থেকে হেলিকপ্টারে জমসম পৌঁছে ঘন্টাদুয়েকের যাত্রায় বেড়িয়ে নেওয়া যায় মুক্তিনাথ। এখানে মুক্তিনাথ মন্দির ও জ্বালামুখী মন্দির দর্শনীয়। আকাশ পরিষ্কার থাকলে এখান থেকে অন্নপূর্ণা রেঞ্জ খুব সুন্দর দেখা যায়। পোখরা থেকে গাড়িতে কুরিন্তার পৌঁছে কেবলকারে মনোকামনা দেবীর মন্দির দর্শন করা যায়।

পোখরার দর্শনীয় স্থানগুলো
ফেওয়া লেক – এটি নেপালের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক লেকের একটি। দৈর্ঘে ৪ কিলোমিটার এবং প্রস্থে ১.৫ কিলোমিটার। প্রথমটির নাম “রারা লেক” যা নেপালের পশ্চিমের মুগু জেলার দুর্গম অঞ্চলে অবস্থিত। ফেওয়া বা ফিউয়া লেকটি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু এবং আদর্শ বিনোদন কেন্দ্র। রঙ বেরঙের নৌকা ভাড়ায় পাওয়া যায়, প্যাডেল বোট ও পালতোলা নৌকাও পাওয়া যায়। সময় হিসেব করে ভাড়া মেটাতে হয়। লেকের প্রবেশ পথেই টিকেটের ব্যবস্থা রয়েছে। ভিনদেশী পর্যটকদের চেয়ে সার্কভুক্ত দেশের জন্য টিকেটের দাম অনেক কম রাখা হয়। লেকের মাঝে একটি মন্দীর আছে, নাম “বারাহি হিন্দু মন্দির”। হিন্দু সম্প্রদায়ের সবাই নৌকায় পার হয়ে মন্দিরে যায়, অনেক পর্যটকও যায় ওখানে। নৌকা নিয়ে বেড়াতে ভীষণ ভাল লাগে।

পোখারার সবচেয়ে মূল আকর্ষন ফেউয়া লেকে নৌকা ভ্রমন যা করতে হবে দিন বাড়ার আগেই। এখানে নৌকার ভাড়া নির্ধারন করে দেয়া। তাই দামাদামির কিছু নাই। ছোট এবং বড় দুই ধরনের নৌকা আছে। গ্রুপ/ফ্যামিলি নিয়ে গেলে বড় নৌকা নেয়াই ভালো। ৯-১০ জন যেতে পারবেন বড় নৌকাতে। চোখ ধাঁধানো সুন্দর এই লেক। হঠাৎ করে দেখলে ইউরোপের কোন লেক মনে হতেই পারে। পাহাড়ের গা ঘেষে চলতে যে কারো ভালো লাগবে।

পিস প্যাগোডা – পিস প্যাগোডা এর একটি স্থানীয় নাম রয়েছে – শান্তি স্টুপা। আন্দু পর্বতের উপর তৈরি বুদ্ধ ধর্মালম্বীদের জন্য করা একটি প্যাগোডা। এখানে মেডিটেশনের জন্য মানুষ আসে। পাহাড়ের উপরে করা খুব সুন্দর এই স্থাপনা যে কারো কাছেই ভালো লাগবে। এটি মূলত ফেউয়া লেকের একপাশে। প্যাগোডা যেহেতু পাহাড়ের একদম উপরে তাই উপর থেকে ফেউয়া লেক এবং পুরো পোখারা সিটি ভালো করে দেখতে পাবেন। এখানে ছবি তোলার জন্য দারুণ জায়গা বলতেই হবে। তবে মাথায় রাখবেন এটা ট্যুরিস্ট প্লেস না। এটা ধর্মীয় উপাসনালয়ের জন্যই সুন্দর করে তৈরি করা। পিস প্যাগোডার এরিয়ায় ঢোকার প্রথমেই লেখা থাকে সাইলেন্স। যদিও প্যাগোডার মূল অংশে ট্যুরিস্ট কাউকেই ঢুকতে দিবে না, তারপরও ভুলেও চিৎকার/জোড়ে কথা বলবেন না। তাদের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো আমাদের দায়িত্ব। কেউ জোরে কথা বললে প্যাগোডার দায়িত্বে থাকা মানুষজন তা তাৎক্ষনিক নিয়ন্ত্রণ করে।

ডেভিস ফল – ডেভিস ফলস পোখারার অন্যতম আকর্ষন। ছোট একটি ঝর্ণার নাম ডেভিস ফলস। নামকরন নিয়ে একটি ইতিহাসও আছে। ডেভিস ফলস এর একপাশে রয়েছে একটি বাঁধ। কোন একসময় যখন বাঁধে পানি নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকাকালীন ঝর্নায় পানির স্রোত তেমন ছিল না। এক দম্পতি ঝর্নায় নেমে গোসল করছিল। এই সময়ে বাঁধের পানি কিছুটা ছেড়ে দেয়া হলে ঝর্নায় পানির ঢল নামে। মুহুর্তেই মহিলাটি স্রোতের সাথে হারিয়ে যান। ৩দিন পর তার মৃত দেহ উদ্ধার করা হয়। পরবর্তিতে নেপাল সরকার স্থানটিতে রেলিং দিয়ে ঘিরে দেয়। নামকরন করা হয় মৃত ট্যুরিস্টের নামে। খুব বেশী বড় ঝর্না না হলেও দেখার জন্য যেতে পারেন। এখানে প্রবেশ মুল্য ৩০ রুপি। পুরো অর্থটি একটি স্কুলের তহবিলে চলে যায়। গেইটের বাইরে বেশ কিছু দোকান পাবেন। চাইলে কেনাকাটা করতে পারেন। তবে দামাদামি করে নিবেন। যা দাম চাইবে তার ৪০% থেকে বারগেইন শুরু করবেন।

মহেন্দ্র গুহা – ডেভিস ফল-এর বিপরীতে চুনা পাথরের গুহাটিকে মহেন্দ্র গুহা বলে। এই গুহাটি মৃত রাজা মহেন্দ্র বির বিক্রম শাহাদেব-এর নামে, নামকরণ করা হয়। এর ভিতরে ছোট ছোট স্বল্প পাওয়ারের বাল্ব লাগানো আছে। ভিতরে ঢুকতে একজন গাইড এবং জনপ্রন্তি একটি করে টর্চের প্রয়োজন হয়। হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসীরা গুহার ভিতরে তাদের প্রধান যুদ্ধ দেবতা মহাদেবের মুর্তি স্থাপন করেছেন। সেখানে একজন পুরোহিতও আছেন। এটি তাদের একটি ধর্মীয় উপাসনালয়ও। ভিতরে পায়ের নিচে বড় বড় পাথর, স্বল্প আলো, হাতে টর্চ, সাথে গাইড, গা ছমছম পরিবেশ, অবশ্যই নতুন অভিজ্ঞতা হবে! আরো কিছু দূরে আরেকটি গুহা আছে, যার নাম “চামেরি গুহা”। এর ভিতরে প্রচুর বাদুরও আছে।

শরনকোট – পোখরার শরনকোট (Shoronkot) পর্যটকদের কাছে সব চেয়ে আকর্ষণীয় ভিউ পয়েন্ট, যেখান থেকে পর্বতমালার অপূর্ব দৃশ্য, পোখরা ভ্যালী ও ফিউয়া লেক দেখা যায়। শরনকোট পোখরা থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে, সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১৫৯২ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এখানে পর্যটকেরা মূলত আসে পর্বতশৃঙ্গে সূর্য্যের প্রথম আলোর বর্ণালী দেখতে। একদিকে নতুন সুর্য্য, আরেকদিকে অন্নপূর্ণা, ফিস টেইল। সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য!!

ইন্টারন্যাশনাল মাউন্টেন মিউজিয়াম
–পোখরা শহরের কেন্দ্রস্থলে, বিমানবন্দর থেকে ১.৫ কিলোমিটার দক্ষীণে এই মিউজিয়ামটি অবস্থিত। এখানকার অন্যতম বৈশিষ্ট হলো, এখান থেকে তিনটি পর্বতশৃঙ্গ দেখা যায়। যার নাম, ধওলাগীরি, অন্নপূর্ণা ও মানাস্‌লু। এই মিউজিয়ামের প্রধান বৈশিষ্ট হলো, এতে পর্বতারোহনের কলা কৌশল, বিশ্বব্যাপি প্রধান পর্বতমালার তথ্য সমূহ, পর্বতমালার ভৌগলিক অবস্থান, বিশ্বব্যাপি পর্বতারোহীদের ব্যবহৃত সরঞ্জামাদী, পোশাক-আশাক এবং আরোহনের ইতিহাস প্রদর্শন করা আছে।

গুরখা মেমোরিয়াল মিউজিয়াম – এই মিউজিয়ামটিও পোখরা শহরেই অবস্থিত। এখানে বিশ্ববিখ্যাত গুরখা সৈন্যদের যুদ্ধজয়ের কাহিনী, পোশাক, ব্যাচ, ব্যবহৃত অস্ত্র, অন্যান্য সরঞ্জামাদি বর্ণনা সহ প্রদর্শণ করা আছে। গুরখাদের আদীবাস পোখরার কাছেই যা বর্তমানে গুরখা ল্যান্ড নামেই পরিচিত।

তিব্বতিয়ান বুদ্ধীজম মোনাষ্ট্রী – পোখরার শহরতলীতে, বিমানবন্দর থেকে চার কিলোমিটার দূরে শ্বেতি নদির পাশে অবস্থিত। এটি বৌদ্ধদের একটি উপাসনালয়।

⌚ কখন যাবেন
ফেব্রুয়ারি থেকে মে এবং অগাস্ট থেকে নভেম্বর বেড়ানোর জন্য ভালো সময়।

✈ কিভাবে যাবেন
কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন এয়ারপোর্ট (Tribhuvan International Airport) বেশ নামকরা বিমানবন্দর। নানান দেশের বিমান কাঠমান্ডু যাচ্ছে নিয়মিত। বাংলাদেশ বিমান ও ইউনাইটেড এয়ারের ঢাকা-কাঠমান্ডু সরাসরি ফ্লাইট রয়েছে। নেপালের ত্রিভুবন এয়ারপোর্ট থেকেই পোর্ট এন্ট্রি ভিসা নেওয়া যায়। তবে ঢাকার নেপাল দূতাবাস থেকে ভিসা নিয়ে যাওয়াই সুবিধাজনক। প্যাকেজ ট্যুরের আওতায় বিমান টিকিটসহ হোটেলে ২ রাত ৩ দিন থাকার জন্য জনপ্রতি খরচ পড়বে সাধারণত ২৪-৩৫ হাজার টাকা।

সড়কপথে ভারত-নেপাল সীমান্তের কাকরভিটা, বিরজুং, রক্সৌল (Raxaul), সুনৌলি, নেপালগঞ্জ, ধানগাধি, মহেন্দ্রনগর এবং চিন-নেপাল সীমান্তের কোদারি দিয়ে নেপাল প্রবেশ করা যায়। কাঠমান্ডু থেকে নেপালের অন্যান্য স্থানগুলি প্যাকেজ ট্যুরে বা গাড়িতে বেড়িয়ে নেওয়া যায়। পোখরা ও মুক্তিনাথের জন্য হেলিকপ্টার সর্ভিস আছে। চিতওয়ানেও আকাশপথে পৌঁছোনো যায়। বিমানে বা বাস যাত্রায় পৌঁছাতে হবে লুম্বিনী।

কোথায় থাকবেন
পোখারাতে থাকার জন্যে প্রচুর ভালো মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হোটেলের নাম দেওয়া হলো –
হোটেল লেকষ্টার – ভাড়া ১৫০০-২০০০ টাকা
হোটেল ভিউষ্টার – ভাড়া ১৫০০-১৮০০ টাকা
হোটেল ভিউ রিসর্ট ভাড়া ১৪০০-১৯০০ টাকা।

খাবারের ব্যবস্থা
নেপালে খাবারের স্বাদ বেশ। ভাত বা রুটি যাই খান প্রথমেই পরিবেশিত হবে পাঁপড়। সঙ্গে থাকবে ঝাল চাটনি। ভাত, সবজি ও ডাল পাবেন। সাধারণ রেস্টুরেন্ট বা একেবারে রোডসাইড ধাবাতেও পাবেন মুখরোচক খাবার। ভাত, তরকারি সব কিছুর সঙ্গেই মিলবে পাঁপড় ও চাটনি।}

ডাল-ভাত নেপালের বিখ্যাত খাবার। ডাল রাঁধা হয় মশলা দিয়ে, খেতে দারুন মজা। মাংস ও মাছ বড় রেস্তোরাঁ ছাড়া পাবেন না। নেপালে সাধারণ খাবারের দোকানে গরুর মাংস পাওয়া যায় না। কাঠমান্ডুতে তিব্বতি খাবারের অনেক রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এখানে মোমো নামে তিব্বতী খাবার পাওয়া যায়। লাল সসে ডুবানো এই খাবারটি এক ধরনের মিট বল। বিভিন্ন মাংসের হতে পারে। চিকেন মোমো খেলে মজা পাবেন।

ভারতীয় রেস্টুরেন্ট যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে কেএফসি এবং পিৎজা হাটের মতো চেইন ফুড শপ। নেপালি ভাষার পাশাপাশি সাধারণ মানুষ হিন্দি বোঝে। আপনি যদি কাজ চালানোর মতো হিন্দি বলতে পারেন তাহলে কোনো সমস্যা নেই। একটু ভালো শপিং সেন্টারে ও হোটেলে ইংরেজি বোঝে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *