ফালুট

blank
বিচু
October 17, 2020
blank
ফতেহপুর সিক্রি
October 17, 2020
Show all

ফালুট

blank

সান্দাকফু-ফালুট ট্রেকের সর্বশেষ গন্তব্য ফালুট (Phalut) যা সান্দাকফু থেকে ২৩ কিমি দূরে অবস্থিত। ফালুট টপের উচ্চতা ৩৬০০ মিটার বা ১১৭৯০ ফিট যা ভারতের পশ্চিমবঙ্গে দ্বিতীয়। হিমালয়ের অপরূপ শোভার জন্যই ফালুট এর খ্যাতি। মেঘ না থাকলে কাঞ্চনজঙ্ঘা আর এভারেস্ট দুই শৃঙ্গই এখান থেকে স্পষ্ট দেখা যায়। এখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তও বেশ মনোরম। ফালুট যাওয়ার পথেই পড়বে সবুজে ঢাকা উপত্যকা সামানদেন। রডোডেনড্রন, ম্যাগনোলিয়া, ফার, ওক ছাওয়া পথে বেড়িয়ে নেওয়া যায় রামাম আর সিংগালিলা পাস।
ফালুট ট্রেকের বিশেষত্ব হচ্ছে এই ট্রেইলের কোথাও পানি নেই। শুধু ১৪ কিলো দূরে আছে সাবারগ্রাম নামে একটা জায়গা যেখানে ছোট্ট একটা এসএসবি ক্যাম্প আছে। এখানে ট্যুরিস্টদের জন্য খাবার-পানি আর বিশ্রাম নেবার ব্যবস্থা আছে। এখান থেকে একটা পথ নিচে ‘মলে’ নামক একটা জায়গায় নেমে গিয়েছে সেটা দিয়ে রামাম যাওয়া যায় এবং রামাম থেকে রিম্বিক হয়ে বের হওয়া যায়। রিম্বিক থেকে সরাসরি গাড়ি দিয়ে দার্জিলিং অথবা শিলিগুড়ী চলে যাওয়া যায় অথবা মলে থেকে আবার গুরদুম হয়ে শ্রীখোলা যাওয়া যায়।
ফালুট ট্রেকের উপযুক্ত সময়
ক্রিষ্টাল ক্লিয়ার ভিউ পাবার জন্যে অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস সব থেকে ভালো সময়। এ সময় কাঞ্চনজঙ্ঘা সবথেকে ভালো ভাবে দেখা যায়। তবে স্নোফল পেতে চাইলে জানুয়ারি থেকে মার্চ এর মাঝামাঝি বেস্ট সময় কিন্তু মনে রাখতে হবে এসময় প্রচন্ড ঠান্ডা থাকে। আর যদি রডোডেনড্রন দেখার জন্য প্ল্যান করে থাকেন তবে এপ্রিলের শুরু থেকে মে পর্যন্ত ভালো সময়।
প্রয়োজনীয় সাজ-সরঞ্জাম ও প্রস্তুতি
ট্রেকিং বুট: ভালো গ্রিপের একটি ট্রেকিং বুট খুবই দরকারি। ৭ দিন পাথরের টেরেইনের মধ্যে এবং বস্তুত উঁচু-নিচু পাথরের রাস্তায় ট্রেক করতে হবে তাই পায়ের জুতাটি আরামদায়ক হওয়া বাধ্যতামূলক। পায়ের বুট গিরার উপর পর্যন্ত উঁচু হওয়া উত্তম। একদম নতুন বুট পড়ে ট্রেক করবেন না। ট্রেকের পূর্বে পাঁচ-ছয় দিন বুট পরে ঘুরবেন। সাথে ঊলের মোজা নিবেন।
ঊইন্ড ব্রেকারঃ একটা প্যারাসুট জ্যাকেট (wind cheater) নিতে হবে যা ঊইন্ড ব্রেকার হিসেবে পরিচিত।
ব্যাকপ্যাক: ভাল মানের একটি ব্যাকপ্যাক আরামদায়ক ট্রেকের জন্য গুরুত্বপূর্ন। ভালো ব্যাক সিস্টেম, কাঁধে আর কোমড়ে সমানভাবে ওজন নেয়, কাঁধে চাপ পড়ে না, এমন ব্যাকপ্যাক ব্যবহার করা ভালো। এই ট্রেকের জন্য ৪০-৫০ লিটার ব্যাকপ্যাক হলেই যথেষ্ট।
মাংকি ক্যাপ/বালাক্লাভা : বালাক্লাভা ওজনে হালকা, ফানেল আকারের এক টুকরো কাপড়। এটা দিয়েই মাংকি ক্যাপ, মাথা ঢাকা, কান ঢাকা, প্রয়োজনের সময় এটা দিয়েই গলা ঢাকা যায়। সান্দাকফু এবং সান্দাকফু থেকে ফালুট যাবার পথে প্রচন্ড বাতাসের তোপে এটা থাকা খুবই জরুরি। সাথে অবশ্যই মাফলার রাখবেন।
হাতমোজাঃ মোটা হাতমোজা নিতে হবে।
পলিব্যাগ: আপনার জিনিসপত্র পানি থেকে বাঁচাতে সব কিছু আলাদাভাবে পলিতে প্যাক করে নিবেন। সাথে করে অতিরিক্ত কয়েকটি জিপ লক/সাধারণ পলিথিন নিয়ে যাবেন। বিশেষ করে এপ্রিল-মে’র শেষের দিকে বৃষ্টির আশংকা সব সময়ই থাকে।
হেড ল্যাম্প/টর্চঃ সাথে অতিরিক্ত ব্যাটারি। ঠাণ্ডায় ব্যাটারীর চার্জ অল্পতেই শেষ হয়ে যায় এই বিষয়টা সবসময় মাথায় রাখবেন। ট্রেক করতে গিয়ে রাত হয়ে গেলে অথবা রাতে টয়লেটে যেতে হলে এটার বেশ প্রয়োজন হতে পারে, তাই আকৃতিতে ছোট হলে ভালো।
সানগ্লাস: বরফের মধ্যে সূর্যের আলো পড়ে কয়েক গুন বৃদ্ধি পেয়ে আমাদের চোখে পড়ে। খালি চোখে তাই ট্রেক করা বিপদজনক। তুষার অন্ধত্ব হতে পারে। তাই ভালো দেখে একটি ‘পোলারাইজড’ রোদ চশমা নিয়ে যেতে হবে। জানুয়ারির দিকে সান্দাকফু গেলেই এটার প্রয়োজন হবে কারণ তখনি সেখানে বরফ পড়ে।
ক্যামেরা, মেমরি কার্ড, পাওয়ার ব্যাংকঃ ট্রেইলের অধিকাংশ অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই।
ট্রেকিং পোল/ওয়াকিং স্টিকঃ দুইটি পোল নেওয়ার জন্য চেষ্টা করবেন। নিদেনপক্ষে একটা। ট্রেকিং পোল ব্যবহার করলে শরীরের উপর চাপটা অনেক কম পড়ে।
ট্রেক কিট: সুঁই, সুতা, সেফটি পিন, ১০০ ফিটের প্যারাকর্ড। কখন কি কাজে লেগে যায় বলা তো যায় না। এই জিনিসগুলো সব সময় কাজে লাগে।
ট্রেইল মিক্স/চকলেট/লজেন্স: এমনিতে পুরো ট্রেইল জুড়েই কিছুদূর পর পর গ্রাম পড়বে যেখানে হালকা চা-নাস্তার ব্যবস্থা আছে। তারপরেও পথিমধ্যে মুখের স্বাদ পরিবর্তনের জন্য কিছু নিয়ে যেতে পারেন। পানির বোতল।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং তথ্য
সিঙ্গালিলা পার্কের এন্ট্রি টিকেট মানেভাঞ্জান থেকে নিতে হয় তবে ট্রেকে মেঘমা এর পরে আরেকটা চেকপোস্ট থেকেও নেয়া যায়। সিংগালিলা পার্কের টিকেট – ২০০ রুপি
ক্যামেরা থাকলে তার জন্য – ১০০ রুপি
গাইডকে প্রতিদিন দিতে হবে – ৮০০ রুপি
পাসপোর্টের ফটোকপি: ২-৫ কপি (ভিসার পাতাসহ)
পাসপোর্ট সাইজের ছবি: ৪ কপি সাথে রাখবেন। সাথে দুই কপি স্ট্যাম্প সাইজ ছবি হলে আরো ভাল, তাতে মোবাইলের সিম নিতে সুবিধা হবে।
মোবাইল নেটওয়ার্ক
সান্দাকফু – ফালুট ট্রেকে বেশিরভাগ সময়েই মোবাইল নেটওয়ার্ক এর কভারেজ পাওয়া যায় না। Vodafone এবং BSNL এর নেটওয়ার্ক মাঝে মাঝে পাওয়া যায় কিন্তু সেটাও খুব দুর্বল।
প্রয়োজনীয় ঔষধ
প্রাথমিক ফার্স্ট এইড কিটের ঔষধসমূহ (গ্যাসের ওষুধ, পেইন কিলার, মুভ, স্যাভলন) সাথে কিছু তুলা, গজ-ব্যান্ডেজ, পভিডন আয়োডিন, স্যাভলন, ব্যান্ড এইড। সেফটির জন্য ইনিহেলার নিয়ে যান। হাই অল্টিচ্যুড এ যাদের প্রবলেম আছে তারা ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ নিয়ে যাবেন অবশ্যই।
যাওয়ার উপায়
সান্দাকফু থেকে পায়ে হেঁটে বা জিপে ফালুট পৌঁছানো যায়।
কোথায় থাকবেন
ফালুটে ডি জি এইচ সি এর ট্রেকার্স হাট ও ইয়ুথ হোস্টেল আছে। এছাড়াও সামানদেন, মোলে ও রামাম এ থাকার ব্যাবস্থা আছে।
অত্যাবশ্যকীয় কিছু বিষয়
ট্রেকিং এর সময় দাঁড়িয়ে রেস্ট নিন, মুখ দিয়ে নিশ্বাস না ছেড়ে নাক দিয়ে ছাড়ার চেষ্টা করুন, বসতে যাবেন না, পা ধরে যাবে। পানি যথাসম্ভব কম খাবেন। পাসপোর্ট কাছাকাছি রাখুন, পথে অনেক বার এন্ট্রি করতে হবে। জিন্স পরে ট্রেকিং না করার বেটার, দুইটা ট্রাউজার লেয়ারে পরে নিন। ট্রেকিং আর পাহাড়ের আলাদা এক নেশা আছে তাই ট্রেক এর মাঝে নেশা করে শরীর অসুস্থ না করাই ভালো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *