সাউথ সিকিম এর রাবাংলা থেকে মাত্র ১৭ কিলোমিটার দূরের বোরং (Borong) গ্রামটি অফবীট লোকেশন হিসেবে প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে আদর্শ একটি জায়গা। মধুচন্দ্রিমা কিংবা হানিমুনের জন্যও খুব রোমান্টিক জায়গা এটি। নির্জন আপন ভোলা একটি গ্রাম বোরং। হাঁটি হাঁটি পা পা করে গ্রামীণ প্রকৃতিকে দেখা ছাড়াও এখানকার সিলভার ফলসের (Silver Falls) শুভ্র উচ্ছল জলের খেলা, ঝুলন্ত ব্রীজের নিস্তব্ধ সবুজ মায়াবী রূপ, একটু হেঁটে নদীর ধারের চা-চু হট স্প্রিং দেখে চোখ কান ও মনের প্রশান্তির খোঁজ মিলবে। এরপর ফ্যামটম গ্রামে গিয়ে বড় এলাচের চাষ দেখার সাথে অপূর্ব স্বাদ নেওয়ারও সুযোগ আছে। কাছেই রালোং মোনাস্ট্রি। তিব্বতের উদ্দেশ্যে চতুর্থ চোগ্যালের সফল তীর্থযাত্রার স্মৃতিতে এটি তৈরি করা হয়েছিল। মোনাস্ট্রির বুদ্ধমূর্তিটি ও দুষ্পাপ্য বেশকিছু পেইন্টিং অসাধারণ শিল্পকলার সাক্ষ্য বহন করছে। প্রায় শখানেক সন্ন্যাসীকে এখানে বৌদ্ধধর্মের দীক্ষা দেওয়া হয়। প্রকৃতির সান্নিধ্য ছাড়াও যারা একটু অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ নিতে চান, তাদের জন্য নানা ট্রেকিং রুট খোলা আছে। বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা ছাড়াও হামিং বার্ড, সান বার্ড, ফ্লাই ক্যাচার, থ্রাশ বার্ড, পাহাড়ি বাবুই, কাঠঠোকরা, কোকিল প্রভৃতির উপস্থিতি টের পাবেন পাখিপ্রেমীরা। বিভিন্ন রকমের রংবেরং এর পাখিদের স্বর্গ রাজ্য এই বোরং। এছাড়া ছোট শৃগাল, হরিণ বা বাইসনেরও দেখা মিলতে পারে। এখনও সেভাবে পর্যটন মানচিত্রে উঠে না আসায় খুবই ফাঁকা। শুধু হিমালয়, প্রচুর ভেষজ উদ্ভিদ, পাহাড়ি ঝর্ণা, নাম না জানা ফুল, এলাচ গাছ,পাখি, পোকার ডাক আর সবুজের সমারোহ। ঝুলন্ত ব্রীজের (Barely Bridge) কাছে পাহাড়ে নিজের নামের প্রতিধ্বনি শুনতে পারেন। একটি হ্যান্ড মেড পেপার ফ্যাক্টরিও (Handmade Paper Factory) আছে যা ২০০৩ সালে তৈরি হয়। কাগজ, খাতা, ডাইরি ইত্যাদি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সুন্দর Handcrafted Paper Products ও তৈরি হয় এই কারখানায়। চাইলে কাগজ তৈরির পদ্ধতি দেখে নেয়া যায়। নিজেকে খুঁজে পাওয়ার ঠিকানা এই বোরং। বোরোং এ সময় যেন থমকে যায়। দিনের বেলা সবুজের ফাকে চলে মেঘ আর রোদ্দুরের লুকোচুরির খেলা। আকাশ পরিস্কার থাকলে একদম সামনেই প্যান্ডিম, সিনলচু, নরসিং। দেখা যায় কাঞ্চনজংঘাও।
ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
বর্ষার ঠিক পরেই, মানে অক্টোবর নভেম্বর মাসে গেলে সবুজ বোরং এর দেখা মিলবে। নভেম্বরের মাঝামাঝি গেলে উপরি পাওনা হিসেবে থাকছে টেমি টি গার্ডেনের সৌন্দর্য্য, কারন তখন চেরী ফুল ফোটে। চেরী ব্লোসম টেমি টি গার্ডেনের সৌন্দর্য্য অন্য লেভেলে নিয়ে যায়।
বোরং যাওয়ার উপায়
রাবাংলা থেকে একদিনেই বোরং ঘুরে আসা যায় কারন রাবাংলা থেকে বোরং এর দূরত্ব মাত্র ১৭ কিলোমিটার। শিলিগুড়ি থেকে সরাসরি গেলে ৫ থেকে ৬ ঘন্টার রাস্তা। নামচির কাছে রাস্তার অবস্থা খুব একটা ভালো না হওয়ার কারনে সময় একটু বেশি লাগে।
কোথায় থাকবেন
বোরং এ থাকার জায়গা হিসেবে Wild Flower Retreat একমাত্র ও আদর্শ সুন্দর থাকার জন্য। এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘাও দৃশ্যমান। এই রিসর্টটি অনেকটা জায়গা নিয়ে তৈরি, চারপাশে আছে বিভিন্ন ফুলের গাছ। এখানে আছে ৬ টি কটেজ যেগুলোকে বিভিন্ন ফুলের নামে নামকরণ করা হয়েছে। রিসর্টের লাগোয়া রয়েছে একটি পেপার ফ্যাক্টরি। এছাড়া আপার বোরং এ আছে রাহুল হোমস্টে। ফোন নাম্বার – 9733098497 আরও আছে The Brang Mountain Resort যা মাউন্ট নরসিং আর Club 8000 যৌথভাবে চালায়।
WhatsApp us