কাশ্মীর ভ্রমণের টুকিটাকি – কিভাবে যাবেন? খরচ কেমন?

blank
সোনমার্গ – Sonamarg
October 19, 2020
blank
October 19, 2020
Show all

কাশ্মীর ভ্রমণের টুকিটাকি – কিভাবে যাবেন? খরচ কেমন?

blank

অনেকে, যারা কাশ্মীর (Kashmir) ভ্রমণের ব্যাপারে খুটিনাটি জানতে চান, তাদের জন্য আমার এই পোস্ট। তবে কাশ্মীর (Kashmir) ভ্রমণের ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে হলে এই লিঙ্কে ভিজিট করুনঃ KASHMIR INDIA

১) ঢাকা থেকে বিমানেও কাশ্মীর যাওয়া যায়, তবে খরচ বেশী পড়বে। ঢাকা থেকে দিল্লি সরাসরি ফ্লাইট – ভাড়া ১৫০০০ টাকা জন প্রতি। এরপর দিল্লি থেকে শ্রীনগর সরাসরি ফ্লাইট – ভাড়া ৬০০০ টাকা জন প্রতি। সময় ভেদে টিকিটের দাম বাড়ে কমে।

২) কম খরচে সবচেয়ে ভাল রুট হল বেনাপোল দিয়ে বর্ডার পার হয়ে কলকাতা থেকে প্লেনে বা ট্রেনে যাওয়া। এতে কলকাতা ফ্রি দেখা হয়ে যাবে।

৩) তাছাড়া পঞ্চগড়ের বাংলাবান্দা বর্ডার দিয়েও যাওয়া যায়, তারপর শিলিগুড়ি থেকে ট্রেন বা প্লেন, এতেও একটু এগিয়ে গিয়ে (মাত্র ৭৮কিমি) দার্জিলিং ঘুরেও আসা যায়। এতে সময় নিয়ে ঘুরতে হবে আপনাকে।

blank



৪) কাশ্মীর গেলে আপনাকে দিল্লী হয়ে যেতেই হবে। তাই প্রথমে ট্রেনে দিল্লী, তারপর প্লেনে কাশ্মীর অথবা, কলকাতা বা শিলিগুড়ি থেকে সরাসরি কাশ্মীর যাওয়া যায় ট্রেনে করে। এখানে কাশ্মীর বলতে জম্মু তাওয়াই নাগাদ, এই জম্মু থেকে শ্রীনগর আরও প্রায় ২৪৮ কিমি, যা পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে গেলে প্রায় ১০/১২ ঘন্টা লাগে ট্যাক্সিতে।

৫) চাইলে আরেকটু মানে, ৫২ কিমি এগিয়ে উদামপুর নাগাদ যাওয়া যায়, তারপর সেখান থেকে ১৫২ কিমি ট্যাক্সিতে প্রায় ৫/৬ ঘন্টায় বানিহিল নাগাদ যেয়ে বাকি অংশ মানে বানিহিল থেকে শ্রীনগর নাগাদ রেলে যাওয়া যায়। এতে সময় ও খরচ দুটোইই বাঁচে। এই পথে পাহাড়ের নীচ দিয়ে প্রায় ১১২৫০ মিটার লম্বা টানেল পার হয়ে যেতে হয়, তাছাড়া উদামপুর ও জম্মু মধ্যেও অনেকগুলো টানেল রয়েছে।

৬) কলকাতা বা শিলিগুড়ি থেকে বিমানে গেলে শ্রীনগর নাগাদ যেতে সময় লাগবে কমপক্ষে ২/৩ ঘন্টা। ভাড়া লাগবে ৮/১২ হাজার রুপি, একবারের জন্য। আর ট্রেনে গেলে জম্মু বা উদামপুর যেতে সময় লাগবে প্রায় ৪৫-৪৮ ঘন্টা। ভাড়া লাগবে সেকেন্ড এসিতে ২৮০০ রুপি, থার্ড এসিতে ১৮০০ রুপি করে। এখানে সেকেন্ড এসি মানে, কেবিনে চার জন, আর থার্ড এসিতে ছয়জন। ট্রেনেই সব খাবার দেয়। আরামের ভ্রমণ, সময় কিভাবে কেটে যায়, বুঝা যায় না। তারপর আবার ট্যাক্সিতে, ট্যাক্সি/ট্রেনে ৮/৯ ঘন্টা, এই অংশে খরচ পড়বে ৬০০ রুপি করে।



৭) ঢাকা থেকে কলকাতার ভাড়া গড়ে ১২০০ টাকা, সাথে ৫০০ টাকা ভ্রমণকর। ট্রেনে জম্মু নাগাদ ভাড়া ৩৪০০ টাকা আর বাকি পথে ৭৫০ টাকা, মোট লাগছে, ৫৮৫০ টাকা, তার মানে যেতে আসতে প্রায় ১১৪০০ টাকা। আর প্লেনে যেতে আসতে ৩২০০০ থেকে ৩৬০০০ টাকা যা সম্পূর্ণ নির্ভর করে, টিকেট কত আগে কাটা যায়, দিনে প্লেনের সময়, ও বছরে কোন সময়ে যাচ্ছেন তার উপর।

৮) শ্রীনগরে থাকার জন্য অনেক হোটেল আছে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০০ নাগাদ। পছন্দ আপনার কাছে। আগে বুকিং দেবার প্রয়োজন নেই, গিয়ে দেখে ইচ্ছামত নেয়া যায়, দামাদামি করা যায়। তবে যদি পিক সিজনে যান তাহলে ৪ মাস আগেই হোটেল বুক করতে হবে। কাশ্মীরের পিক সিজন হল এপ্রিল-মে মাস। সে সময় গিয়ে হোটেল পাওয়া কষ্ট হবে। গড়ে ১২০০ থেকে ২৫০০ রুপির মধ্যে দুইজনের জন্য ভাল রুম পাওয়া যায়। থাকার জন্য সবচেয়ে ভাল টুরিস্ট এরিয়া ডাল লেকের পাশে বউল্ভারড রোড, যদিও ভাড়া একটু বেশী লাগবে এখানে, তবে ডাল লেকের সৌন্দর্যে তা পুষিয়ে যায়। অবশ্য, অন্য এলাকায় থাকলে তার অর্ধেক খরচে থাকা যাবে। অনেক হোটেলের সাথেই রেস্টুরেন্ট থাকে বা আশেপাশেই হাঁটার দূরত্বেই খাবার রেস্টুরেন্ট পাওয়া যায়। সকালের নাস্তা মেলে ১০০ রুপির মধ্যে, আর দুপুর বা রাতের খাবার খেলে লাগবে ১৫০ রুপি। আপনি চাইলে একই খাবার দ্বিগুণ বা তিনগুণ দামেও কিনে খেতে পারেন। ইচ্ছা আপনার উপর।

blank



৯) কাশ্মীর দেখার মত অনেক জায়গা রয়েছে, তাই কমপক্ষে হাতে ৫ দিন রাখাই ভাল। শহরের বাইরে রয়েছে, গুলমার্গ, সোনমার্গ ও পাহেলগাম। আর শহরের ভিতর ডাল লেক, বোটানিক্যাল গার্ডেন, টিউলিপ গার্ডেন, নিশাত বাগ, শালিমার বাগ, হযরত বাল মসজিদ। শহরের মধ্যে দেখার জায়গা গুলো একদিনেই দেখা যায়, গাড়ী(৬-৮ জন) ভাড়া নিয়ে ঘুরলে ২০০০ রুপি ভাড়া নেবে আর অটোরিক্সা ভাড়া নিলে নিবে ৮০০ রুপি। ডাল লেকে শিকারা বা ছোট নৌকায় বেড়ালে ভাড়া নেয় ঘন্টা প্রতি ৫০০ রুপি, আর হোটেলের বদলে লেকের পানিতে ভেসে থাকা হাউজবোটে থাকলে ভাড়া লাগবে ১৮০০-৩০০০ রুপি। তবে এটা এক ব্যতিক্রম অভিজ্ঞাতা।

১০) গুলমার্গঃ সারা বছর বরফ দেখার জন্য গুলমার্গ বিখ্যাত, যা শ্রীনগর থেকে প্রায় ৫২ কিমি দূরে অবস্থিত। যেতে ও ফিরে আসতে সারা দিন লেগে যায়, মানে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫ টা। গাড়ী ভাড়া নেবে ২০০০ রুপি। ওখানে দুই ধাপের কেবল কার বা রোপ ওয়ে আছে। নভেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে গেলে একধাপ উঠলেই বরফ দেখা যায়, যায় ভাড়া ৭০০ রুপি করে। আর বাকি সময়ে গেলে দ্বিতীয় ধাপে উঠলে বরফ মেলে যার ভাড়া আরও ৯০০ রুপি করে। রুপি খরচ করে বরফে অনেক বিনোদন নেয়া যায়, স্কেটিং, স্কুটার, প্যারাগ্লাইডিং ইত্যাদি। তাছাড়া বরফের জন্য পোশাক ভাড়া নিলে খরচ পরে ২০০ রুপি করে, আর গাইড নিলে ৫০০/৭০০ রুপি। পথে আপেলের বাগান চোখে পরে।

সোনমার্গঃ
শ্রীনগর থেকে ৪২ কিমি দূরে অবস্থিত, দ্রাস, কারগিল, লে লাধাখের পথে। গাড়ী ভাড়া লাগবে ২০০০ রুপি। অনেক সুন্দর উপত্যকা ও ঝর্ণা দেখা যায় সেখানে।

পাহেলগামঃ শ্রীনগর থেকে প্রায় ৯৭ কিমি দূরে অবস্থিত। ট্যাক্সি ভারা নেবে প্রায় ২৫০০ রুপি। অনন্তনাগ থেকে বাকি অংশটা গেলে শুধু রাস্তার দুপাশে পড়বে আপেলের বাগান। জুলাই থেকে অক্টোবর, এই সময়ের মধ্যে গেলে গাছে আপেল দেখা যায়। পেহেলগাম নেমে আবার ছোট গাড়ি ভাড়া করে ঘুরে বেড়াতে হয়। কয়টা স্পট ঘুরবেন তার উপর এই গাড়ির ভাড়া নির্ভর করে, তবে গড়ে ২০০০ রুপিতেই হয়ে যায়। এখানে অনেকগুলো স্পট রয়েছে, তাদের মধ্যে আরু ভ্যালি, বাতেব ভ্যালি, চান্দেনওয়ারি বিখ্যাত।

১১) দলে সদস্য যদি ৪/৭ জন থাকে তাহলে ভাল, অনেক খরচ শেয়ার করা যায়, ফলে মোট খরচ কমে আসে। এভাবে একজনের ২০০০০/২৫০০০ হাজারেই হয়ে যাবে স্বপ্নের কাশ্মীর ভ্রমণ।

১২) কাশ্মীরের নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের মনে ভয় আছে, আসলে এসব কিছু না। আপনি নিশ্চিন্ত ভাবে ভ্রমণ করতে পারেন। ভারতীয় আর্মি দিন রাত ২৪ ঘন্টা টহল দেয় যা ট্যুরিস্টদের জন্য অনেক নিরাপদ।

এখানে এক রুপি সমান আমাদের প্রায় এক টাকা বিশ পয়সা। ( ১ রুপী = ১.২০ টাকা )

ঘুরে বেড়ান, নিজকে আবিষ্কার করুন। আরো বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুনঃ KASHMIR INDIA



1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *