গুরুদুয়ারা নানকশাহী

blank
আপসাইড ডাউন গ্যালারী
October 21, 2020
blank
ষাইট্টা বটগাছ
October 21, 2020
Show all

গুরুদুয়ারা নানকশাহী

blank

ঢাকার গুরুদুয়ারা নানকশাহী বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে অবস্থিত একটি শিখ ধর্মের উপাসনালয়। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর ক্যাম্পাসের কলাভবনের পাশে অবস্থিত। এই গুরুদুয়ারাটি বাংলাদেশে সবকটি গুরুদুয়ারার মধ্যে বৃহত্তম। কথিত আছে যে, ঢাকার এই গুরুদুয়ারাটি যেখানে অবস্থিত, সেই স্থানে ষোড়শ শতকে শিখ ধর্মের প্রবর্তক গুরু নানক অল্প সময়ের জন্য অবস্থান করেছিলেন। এই স্থানে থাকা কালে তিনি শিখ ধর্মের একেশ্বরবাদ এবং ভ্রাতৃত্ববোধের কথা প্রচার করেন এবং ধর্মের আচার অনুষ্ঠান পালনের শিক্ষা প্রদান করেন।

শিখ ধর্মের ৬ষ্ঠ গুরু হরগোবিন্দ সিং এর সময়কালে (১৫৯৫-১৬৪৪ খ্রিঃ) ভাইনাথ (মতান্তরে আলমাস্ত) নামের জনৈক শিখ ধর্ম প্রচারক এই স্থানে আগমন করে গুরুদুয়ারাটি নির্মাণের কাজ শুরু করেন। কারো কারো মতে, গুরুদুয়ারাটি নির্মাণের কাজ শুরু হয় ৯ম শিখ গুরু তেগ বাহাদুর সিং এর সময়কালে (১৬২১-১৬৭৫ খ্রিঃ)। ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে এর নির্মাণকার্য সমাপ্ত হয়। পরবর্তীতে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এটি ভগ্নদশা প্রাপ্ত হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে ১৯৭২ সালে গুরুদুয়ারাটির ভবনের কিছু সংস্কার করা হয়। ১৯৮৮-৮৯ সালে এটির ব্যাপক সংস্কার সাধন করা হয়, এবং বাইরের বারান্দা ও সংলগ্ন স্থাপনা যোগ করা হয়। সংস্কার কার্যের অর্থায়ন করা হয় বাংলাদেশে ও বিদেশে অবস্থানরত শিখ ধর্মাবলম্বীদের দানের মাধ্যমে। ঢাকার আন্তর্জাতিক পাট সংস্থার তদানিন্তন প্রধান সর্দার হরবংশ সিং এর নির্মাণকার্য তদারক
করেন। ২০১১ সালে গুরুদুয়ারার মূল ভবনের পশ্চিমপাশে শিখ রিসার্চ সেন্টার, অফিস কক্ষ ও বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্য অতিথিকক্ষ নিয়ে দ্বিতলবিশিষ্ট একটি ভবন নির্মিত হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের স্ত্রী গুরু শরণ কাউর এটি উদ্বোধন করেন।

একসময় গুরুদুয়ারা নানকশাহী (Gurdwara Nanak Shahi) এর বিপুল পরিমাণ ভূসম্পত্তি ছিল। আজকের মতো বিরাট ও জমকালো উপাসনালয় না থাকলেও তখন গুরুদুয়ারা নানকশাহীর আয়তন ছিল বিপুল। এর উত্তর দিকে ছিল একটি প্রবেশদ্বার। দক্ষিণদিকে ছিল কূপ ও সমাধিস্থল এবং পশ্চিমে ছিল একটি শান বাঁধানো পুকুর। মূল উপাসনালয় ছাড়াও ভক্তদের থাকার জন্য ছিল কয়েকটি কক্ষ। তবে সেসবের এখন আর অবশিষ্ট নেই। বর্তমান উপাসনালয়টি সীমিত জায়গার ওপর গড়ে উঠেছে এবং বারবার সংস্কারের ফলে বর্তমান রূপ পরিগ্রহ করেছে।

উঁচু প্রাচীরবেষ্টিত গুরুদুয়ারা নানকশাহীর বর্তমান প্রবেশপথটি রয়েছে দক্ষিণদিকে। উপাসনালয়টির সামনে রয়েছে চমৎকার সবুজ লন। এর বাম দিকে আছে শিখ রিসার্চ সেন্টার, ডানদিকে দোতলা দরবার হল। সামনে পতাকা টাঙানোর স্ট্যান্ড, বৈশিষ্ট্যময় এই উপাসনালয়টি শিখদের নিজস্ব স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত। উপাসনালয়টির ওপর পৃথিবী আকৃতির একটি কাঠামো নির্মিত। তার চারদিকে শিখ ধর্মীয় চিহ্ন খাণ্ডা শোভিত। উপাসনালয়ের শীর্ষে রয়েছে ছাত্রার। এটি শিখদের উপাসনালয়ের চিহ্ন। গুরুদুয়ারা নানকশাহীর ঠিক মাঝখানে রয়েছে একটি বড় কক্ষ। এই কক্ষের চারদিকে চারটি দরজা আছে। মাঝখানে কাঠের তৈরি বেদির ওপর রয়েছে শিখ ধর্মগ্রন্থ গ্রন্থসাহেব। এটাকে বলা হয় শ্রী দরবার সাহিব। বেদির সামনে নবম শিখগুরু তেগ বাহাদুর সিংয়ের ব্যবহূত একজোড়া খড়ম একটি কাচের বাক্সের মধ্যে যত্নসহকারে রাখা আছে। এ কক্ষের মেঝেতে লাল রঙের কার্পেট পাতা আছে। তাতে ভক্তরা বসে গ্রন্থসাহেব পাঠ শোনেন। কক্ষের চারদিকে বারান্দা আছে।

গুরুদুয়ারা নানকশাহীতে একেক সময় একেকজন গ্রন্থির (পুরোহিত) দায়িত্ব পালন করেন। ১৯১৫ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত শ্রীচন্দ্র জ্যোতি নামে এক শিখসাধু এই উপাসনালয়ের পুরোহিত ছিলেন। ১৯৪৭ সালের পর থেকে ষাট দশক পর্যন্ত উপাসনালয়টি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সংস্কার করে এর বর্তমান রূপ দেওয়া হয়। বর্তমানে ভাই পিয়ারা সিং প্রধান গ্রন্থির দায়িত্ব পালন করছেন।

গুরু নানকশাহীতে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা দুবার গ্রন্থসাহেব পাঠ ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। তা ছাড়া প্রতি শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত সাপ্তাহিক জমায়েত ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। পুরোহিত গ্রন্থসাহেব পাঠ ও কীর্তন করেন। গুরুদুয়ারার এই কীর্তন ভক্তদের আকুল করে তোলে। সংগীতশিল্পী কিরনচন্দ্র রায় এই গুরুদুয়ারার অতিথিনিবাসে থেকে দীর্ঘদিন এখানে কীর্তন পরিবেশন করেন। কীর্তন ও প্রার্থনা শেষে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। এখানে শুক্রবারে আগত অতিথিদের জন্য মধ্যাহ্নভোজেরও ব্যবস্থা আছে। গুরুদুয়ারায় আয়োজিত বার্ষিক অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে গুরু নানকের জন্মবার্ষিকী এবং পয়লা বৈশাখ। এ দুটি পর্ব এখানে অত্যন্ত ধুমধামের সঙ্গে পালন করা হয়।

গুরুদুয়ারায় কারও প্রবেশে বাধা নেই, জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে সব বয়সী নারী ও পুরুষ এখানে প্রবেশ, প্রার্থনায় অংশগ্রহণ এবং প্রসাদ পেতে পারেন। ঢাকায় বসবাসরত শিখ সম্প্রদায়ের লোকজন নিয়মিত এই গুরুদুয়ারায় আসেন। তা ছাড়া অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকজনকেও শুক্রবার এই উপাসনালয়ে আসতে দেখা যায়। স্থানীয় ভক্ত ও বিদেশি দাতাদের সাহায্যে প্রতিষ্ঠানটির ব্যয় নির্বাহ হয়।

প্রতি সপ্তাহেই ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থেকে শিখ ধর্মের অনুসারীরা এখানে জমায়েত হয় এবং প্রার্থনা করে। দেশে শিখদের সবচেয়ে বড় জমায়েত হয় এখানেই।

কিভাবে যাবেন
ঢাকার যে কোন জায়গা থেকে শাহবাগ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে প্রচুর বাস চলাচল করে। আপনি এসব বাসে চেপে চলে যেতে পারেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে। সেখান থেকে এই উপসনালয়টি ঘুরতে আসতে পারবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *