লাচুং (Lachung) ভারতের নর্থ সিকিমের একটা গ্রাম যা ৯৬০০ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত। প্রকৃতির নৈসঃর্গিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্যে নিঃসন্দেহে খুব উপরের দিকেই জায়গা করে নেবে। এত সুন্দর, নিরালা ছবির মত পাহাড়ি গ্রাম সিকিম এ খুব কমই পাবেন। গ্যাংটক থেকে লাচুং পর্যন্ত আপনার সঙ্গী হয়ে থাকবে প্রকৃতির অপরূপ শোভা যা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে লাচুং আসার পথের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে।
প্রকৃতির কোলে ছবির মতো সেজে আছে লাচুং নামের এই পাহাড়ি গ্রাম। জনবসতি খুবই কম। পাহাড় ও বনভূমি নিঝুম। এগাঁয়ে আকাশ ছুঁয়েছে পাইন, ফার আর ধুপিগাছের সারি। আর আছে নানান প্রজাতির রডোডেনড্রন। পাশে বয়ে চলেছে তিস্তা। এই তিস্তারই শাখা প্রশাখা নদী লাচুং ও লাচেন।
লাচুং গ্রামের কার্পেট বুনন কেন্দ্র ও গুম্ফাটিও দেখে নিন যদি হাতে সময় থাকে। রাতটা লাচুং এ কাটিয়ে পর দিন সকালে যাত্রা শুরু করুন ইয়ুমথাং ভ্যালীর দিকে। লাচুং থেকে দূরত্ব মাত্র ২৩ কিলোমিটার। ১১,৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই ইউমথাং উপত্যকা শীতকালে পুরোপুরি ঢেকে যায় শ্বেতশুভ্র বরফচাদরে, তখন তার এক অন্য রূপ। বাকি সময় সবুজ ঘাসের কার্পেটে মোড়া এই উপত্যকা, আর নীলরঙা নদীর বয়ে চলা মুগ্ধ করবে ভ্রমণপিপাসু মানুষজনকে। উপত্যকার শুরুতেই রয়েছে একটি উষ্ণ প্রস্রবণ।
ইউমথাং উপত্যকা দেখে এ বার শিবমন্দির পেরিয়ে পৌঁছে যান ইয়ুমেসামডং বা জিরো পয়েন্ট। ইয়ুমথাং থেকে জিরো পয়েন্টের দূরত্ব ২৩ কিলোমিটার। চীন সীমান্ত কাছাকাছি বলে সাধারণ পর্যটকদের এই পর্যন্তই যাওয়ার অনুমতি মেলে। ১৫০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত ইয়ুমেসামডং-এর অনাবিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নজর কাড়বেই।
লাচুং থেকে অন্য একটি রাস্তা (নদীর উপর ব্রিজ পেরিয়ে) ধরে পৌঁছনো যায় বরফের রাজ্য কাটাও (Katao) যা লাচুং থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। যদিও পর্যটকদের জন্যে অফিসিয়ালি এটি বন্ধ কিন্তু স্থানীয় ড্রাইভার এবং ট্যুর এজেন্টরা পারমিট ম্যানেজ করে দিতে পারে।
লাচুং ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত অত্যধিক বরফের জন্য আবার বর্ষাকালে (জুলাই-অগস্ট) রাস্তা প্রায়শই ভেঙে যাওয়ার কারনে লাচুং ভ্রমণ কিছুটা অনিশ্চিত হলেও বছরের বাকি যেকোন সময় লাচুং ভ্রমণে যাওয়া যায়। এপ্রিল-মে মাসে ‘ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার’ ইউমথাং উপত্যকা ভরে থাকে বিভিন্ন রঙের রডোডেনড্রনে, সঙ্গে প্রিমুলা ও অন্য নানান প্রজাতির ফুলও শোভা বাড়ায় সেই অসাধারণ সৌন্দর্যে। বছরের বাকি সময় চোখ জুড়োনো সবুজ উপত্যকা, তার বুক চিরে বয়ে যাওয়া নীল নদী, তুষার মুকুট মাথায় পড়া পাহাড়শ্রেণি দারুণ ভাবে আকর্ষণ করে পর্যটককে।
লাচুং যাওয়ার উপায়
গ্যাংটক থেকে ২ রাত্রি ৩ দিন কিংবা ৩ রাত্রি ৪ দিনের প্যাকেজেই মূলত লাচেন এবং লাচুং ঘোরানো হয়। ২ রাত্রি ৩ দিনের প্যাকেজে (ইয়ুমথাং সমেত) মাথাপিছু খরচ পড়ে ৩৫০০-৪৫০০ টাকা (থাকাখাওয়া, যাতায়াত, সব খরচই ধরা থাকে এর মধ্যে), আর ৩ রাত্রি ৪ দিনের প্যাকেজে (ইয়ুমথাং সহ) মাথাপিছু খরচ পড়ে ৫০০০-৬০০০ টাকা (থাকাখাওয়া, যাতায়াত নিয়ে)। গাড়িতে ৮ জন যাত্রী যাবে, এই ভিত্তিতে প্যাকেজ ট্যুরের খরচ ঠিক হয়। গ্যাংটকের বহু ট্রাভেল এজেন্ট প্যাকেজ ট্যুরের ব্যবস্থা করে দেন।
লাচুং জীপ স্ট্যান্ড থেকে জীপ নিয়ে নর্থ সিকিম যেতে হবে। MG Marg থেকে এখানে যেতে ১০০ রুপী লাগবে।
কোথায় থাকবেন
লাচুং এ একরাত নিদেন পক্ষে অবস্থান করতে হয়। হোটেল এবং থাকার খাওয়ার ব্যবস্থা ট্যুর প্যাকেজের মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত থাকে।
নর্থ সিকিম ভ্রমণে কিছু দরকারি তথ্য
উত্তর সিকিম যাত্রীদের অনুমতি গ্যাংটক থেকেই নিয়ে নিতে হয়। ভারতীয়দের ভোটার কার্ডের এক কপি জেরক্স ও ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি নিয়ে আবেদন করলে সহজেই মেলে এই অনুমতিপত্র। বাংলাদেশীদের লাগবে পাসপোর্ট, ভিসার ফটোকপি এবং ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি। গ্যাংটকের হোটেল বা যে কোনও ট্রাভেল এজেন্টের অফিসে ডকুমেন্টগুলি জমা দিলে, তারাই আনিয়ে দেবে প্রয়োজনীয় অনুমতিপত্র।
অধিক উচ্চতার জায়গায় বেশি দৌড়ঝাঁপ না করাই ভালো। শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাওয়ার আগের দিন থেকে হোমিওপ্যাথি কোকা-৬ ওষুধটি খেয়ে দেখতে পারেন। উচ্চতাজনিত সমস্যার সমাধান হতে পারে।
WhatsApp us