লামাহাট্টা

blank
মণিকরণ
October 19, 2020
blank
তাকদা
October 19, 2020
Show all

লামাহাট্টা

blank

প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনের কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে ঘুরে আসতে পারেন দার্জিলিং এর চাকচিক্য থেকে অনেক দূরে শেরপাদের গ্রাম লামাহাট্টায় (স্থানীয় উচ্চারণ-এ লামাট্টা)। ৫৭০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই গ্রামে তামাং, ভুটিয়া, ডুকপা ইত্যাদি পার্বত্য উপজাতির বাস। তিব্বতী লামাদের ভারত সরকার এইখানে বসবাসের ব্যবস্থা করায়, সেই থেকে জায়গার নাম লামাহাট্টা— এ যেন রূপ-বৈচিত্রের সম্ভার। পাইনের জঙ্গল, পাহাড়, আকাশ, নিরবতা আর গ্রামবাসীর সরলতা এখানে মিলেমিশে একাকার। এন.জে.পি থেকে গাড়িতে তিন থেকে চার ঘন্টার রাস্তা হলেও এখানে পৌঁছানোর পর সকল ক্লান্তি একনিমেষে উধাও হয়ে যাবে এখানকার সৌন্দর্যে আর গ্রামবাসীর আপ্যায়নে। গ্রামের প্রথমেই চোখে পরবে এক অনুপম ইকোপার্ক।

পাইনের জঙ্গলের ভিতরে গাছগাছালি, পাহাড় আর অসংখ্য ফুলের অপরূপ সমারোহ এই পার্কে। ২০১২ সাল থেকে সরকারি উদ্যোগের সাথে উপজাতিরা হাত মিলিয়ে যত্নকরে গড়েতুলেছে এই পার্ক যেখানে ১০ টাকাতেই মিলবে প্রবেশের ছাড়পত্র। পার্কের ভিতরে আছে সুন্দর বসার জায়গা যেটা ফটো প্রেমিকদের আকর্ষণ করবেই আর আছে একটি কাঠের ওয়াচটাওয়ার। যতদূর চোখ যায় শুধুই চিরহরিৎ এর ঘন বন। সুবিশাল পাইন গাছগুলি দম্ভেরসাথে আকাশ ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর তাদের সাথেই পাল্লাদিয়ে পত্পত্ করে দুলে চলেছে নানা রঙের কাপড়ের পতাকা , স্থানীয় লোকেদের বিশ্বাস , এই পতাকার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত বাতাসে চারপাশের পরিবেশ ও মানুষের মন পবিত্র হয়। বাগানের একবারে উপরে যাওয়ার জন্য জঙ্গল কেটে আঁকাবাঁকা রাস্তা তৈরী করা হয়েছে। পাহাড়ি রাস্তায় ট্রেকের অ্যাডভেঞ্চারের লোভ সামলানো দায়। চূড়ায় পৌঁছে দেখতে পাবেন সুন্দর একটি লেক যেটা গ্রামবাসিদের কাছে খুব পবিত্র। এখানকার জনজীবন বড়ই সরল, সাধাসিদে, কোলাহল বর্জিত। দেখলেই মন-প্রাণ ভরে যায়। কত সামান্য জিনিসেই এরা খুশি থাকে আর নিজেদের মধ্যে প্রচন্ড একতা। সব থেকে উপভোগ্য এখানকার সকাল আর রাতগুলি। সন্ধ্যে নামতেই চারিদিক শুনশান, রাতগুলি আরও নির্জন। কোনও শোরগোল নাই, যেন জনমানবহীন এক প্রন্তরে শুধু আপনি আর আপনাকে ঘিরে রয়েছে প্রকৃতি। রাতে শুধু কিছু আচেনা পোকার একটানা ডাক ছাড়া আর কিছুই শোনা যায় না।

এখানকার একটি বিরলতম আকর্ষণ দুষ্প্রাপ্য সব অর্কিড। পরিবেশেই নাকি দুষ্প্রাপ্য অর্কিড সৃষ্টির রহস্য, সঙ্গে অফুরন্ত জল। না খুব শীত না খুব গরম তাই সবে মিলে লামাহাট্টা জমজমাট। অর্কিড দেখতে হলে যেতে হবে নভেম্বর মাসে।

লামাহাট্টাকে কেন্দ্র করে ঘুরে নেওয়া যায় আরও অনেক জায়গা যা লামাহাট্টার খুব কাছাকাছির মধ্যেই আছে। গাড়িতে ডানডা মাত্র ৩ কিমি লামাহাট্টা থেকে। এখানে একটি ‘হিল টপ ওল্ড ফোর্ট’ রয়েছে। পেশক ভিউ পয়েন্ট লামাহাট্টা থেকে মাত্র ৬ কিমির মধ্যে। লামাহাট্টা (Lamahatta) থেকে একটু ট্রেক করে গেলেই রয়েছে ‘ডেন্স ধুপি প্ল্যানটেশন’। নানা বাহারি ফুল ও সবুজের সমারোহে অপূর্ব। দেখতে পারেন হিল টপ ওয়াটার বডিস, পাহাড় চূড়ায় এই দুটি ছোট পুকুর স্থানীয় মানুষের কাছে খুবই পবিত্র। অসাধারণ ফুল ও অর্কিডের বাগান

রোড সাইড গার্ডেন-ও দেখবার মতো। এখানে একটি ওয়াচ টাওয়ারও আছে। তাকদা এ অর্কিড সেন্টার, টি-এস্টেট, বরবাটে হেরিটেজ ঝুলন্ত ব্রিজ দেখার মতোই। তাছাড়া ট্রেকিং যাঁদের আকর্ষণ করে তাঁদের জন্যও রয়েছে অসাধারণ কিছু ট্রেক।

কিভাবে যাবেন
প্রচুর ট্রেন শিয়ালদা থেকে নিউ জলপাইগুড়ি যাচ্ছে। তার মধ্যে বিশেষ কয়েকটি হল, দার্জিলিং মেল, উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস, নিউ জলপাইগুড়ি এক্সপ্রেস, পদাতিক এক্সপ্রেস, কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস। এই সব ট্রেনগুলিই আগের দিন রাতে ছেড়ে পরের দিন সকালে পৌঁছয়। যাঁরা সকালের দিকে যেতে চান, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ধরতে পারেন, এটি সন্ধেবেলা পৌছে। আগে থেকে গাড়ি বুক করে রাখা ভাল। না হলে যেখানে থাকা, সেখানে বললে তারাও ব্যবস্থা করে দিতে পারে। লামাহাট্টা যাওয়ার দুটি পথ আছে। একটি শিলিগুড়ি থেকে তিস্তা বাজার হয়ে পেশক, তারপরই লামাহাট্টা। অন্যটি শিলিগুড়ি থেকে মংপু, পেশক হয়ে লামাহাট্টা। দ্বিতীয় পথটিতে উপরিপাওনা হিসাবে রয়েছে কবিগুরু স্মৃতি বিজড়িত মংপু। সময় থাকলে কবিগুরুর বাড়িটি ঘুরে দেখতে বেশ ভাল লাগবে। আবার যাঁরা দার্জিলিং সরাসরি যাচ্ছেন তাঁরাও কিন্তু দার্জিলিং থেকে ঘুম হয়ে লামাহাট্টা দেখতে যেতে পারবেন। ঘুম থেকে লামাহাট্টা মাত্র ১০-১১ কিমি দূরত্ব।

কখন যাবেন
যে কোনও সময়ে লামাহাট্টা যাওয়া যায়। বর্ষাকালেও অসাধারণ। শীত পোশাক সঙ্গে রাখা ভাল। প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সঙ্গে রাখা ভাল তবে হঠাৎ অসুস্থ হলে ডক্তর পাওয়া যায়। মোবাইলে সিগন্যাল পাওয়া যায়।

কোথায় থাকবেন
থাকার জন্য রয়েছে লামাহাট্টা লজ, এটি বর্তমানে ‘হোমস্টে’ লজিং ও ফুডিং ফেসিলিটি সহ। ফোন নং: ৯৪৩৪২৩০৭০৪, ৯৫৯৩৭৩৫৫৯৯, ৯৮৩২০৩৩৪৪৪। যাওয়ার আগে যোগাযোগ করে যাওয়া ভালো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *