বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়াগুলোর মধ্যে সিপ্পি আরসুয়াং (Sippi Arsuang) অন্যতম, যার উচ্চতা আনুমানিক ৩০৩৪ ফুট যা বাংলাদেশের ১০ম সর্বোচ্চ চূড়া। সিপ্পি আরসুয়াং পাহাড়ের অবস্থান বাংলাদেশের পার্বত্য চট্রগ্রামের বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলার অনেক গহীনে। রোয়াংছড়িতে অবস্থিত এই পাহাড়টি বিগিনারদের জন্য আদর্শ ট্রেক হতে পারে। সময়ও কম লাগে। মাত্র তিনদিনেই এই ট্রেক শেষ করে আসা যায়। রনিনপাড়া থেকে সিপ্পি ট্রেইল ধীরে ধীরে আকাশমুখী হয়েছে। সিপ্পি রেঞ্জে পাহাড়চূড়া তিনটি। মূল সামিট চূড়াটি দূর থেকে চেনা গেলেও যতই কাছে আসতে থাকবেন ততই চোখে ধুলো দিতে সে লুকোচুরি খেলতে শুরু করবে অন্য চূড়াগুলোর আড়ালে। মোট চারটি ধাপ, মানে চারটি পাহাড় অতিক্রম করে পৌঁছাতে হবে সিপ্পি চূড়ায়।
বিভিন্ন আদিবাসী ভাষায় এর নাম বিভিন্ন। বম জাতিরা বলে- সিপ্পি, তংঞ্চঙ্গা বলে- রামেতং, মার্মা বলে- রামাতং, পাংখোয়া বলে– আরসুয়াং যার অর্থ মোরগের ঝুঁটি। এছাড়া রামজুম সহ অনেক নামে ডাকে। সিপ্পি পাড়া থেকে যে তিনটি চুঁড়া দেখা যায় তার দক্ষিনের চুঁড়া বামপাশের টাই সিপ্পি। মাঝেরটি আরসুয়াং। ডানেরটির নাম তংখং তং। কেউ কেউ আবার দক্ষিনের টিকে সিপ্পি আরসুয়াংও বলে। তবে যত নামই থাকুক, ভ্রমণকারীদের কাছে এই পাহাড় পরিচিত সিপ্পি আরসুয়াং নামেই।
সিপ্পি থেকে শঙ্খমুনী পাড়াসহ বেশ কয়েকটি পাড়া দেখা যায়। সিপ্পির চূড়ায় নাকি আগে ব্রিটিশদের একটা ক্যাম্প ছিল। রনিনপাড়ার আগমুহূর্তে একটা খাড়া পাহাড় বেয়ে নামতে হয়, ওটা থেকে সিপ্পি দেখা যায়। শোনা যায়, সিপ্পির চূড়ার জঙ্গলে নাকি বাঘ থাকে। এ ছাড়া ওই জঙ্গলে নাকি হরিণ আর শূকর বেশ সহজলভ্য। ২০১৫ এর ডিসেম্বরের দিকে সিপ্পির জঙ্গলে পেতে রাখা ফাঁদে হরিণ ধরা পড়েছিল। পরে শিকারিরা সেই হরিণ আনতে যেয়ে ভুক্তাবশেষ খুঁজে পায়। তবে নিজের চোখে কাছাকাছি সময়ের মধ্যে কেউই বাঘ দেখেনি।
যাবার উপযুক্ত সময়
যেহেতু শুধু পাহাড় সামিটই মূল লক্ষ্য তাই বর্ষায় না যাওয়াই ভাল। নভেম্বর থেকে মার্চ এর মধ্যে যাওয়া ভাল।
রুট প্ল্যান
সিপ্পি আরসুয়াং পাহাড়ে যাবার তিনটি রুট আছে। যে কোনটি দিয়ে গিয়ে অন্যটি দিয়ে ফেরা যাবে। বান্দরবান – রোয়াংছড়ি- পাইক্ষ্যাং পাড়া – রনিন পাড়া – সিপ্পি বান্দরবান – রোয়াংছড়ি – ব্যাঙছড়ি পাড়া – ব্যাঙছড়ি বাজার – অংজাই পাড়া – লুংলাইন পাড়া – তারাছা পাড়া – প্রতিক্যা কারবারী পাড়া – নাইন স্টেপ পাহাড় – পুরান ফাংপুড়ি পাড়া – সিপ্পি পাড়া – সিপ্পি বান্দরবান – রুমা – মুন নৌয়াম পাড়া- পাইন্দু খাল – বিল পাড়া – সাইজাম পাড়া- সিপ্পি পাড়া – সিপ্পি
প্রথম পথঃ
সিপ্পিতে খুব কম মানুষই যায়। যারা যায় তার বেশীর ভাগই প্রথম রুটে যায়। এই পথটি পরিচিত ও একটু সহজ। বান্দরবান থেকে প্রথমে রোয়াংছড়ি যেতে হবে। রোয়াংছড়ি থেকে পাইক্ষ্যাং পাড়া যেতে হবে সময় লাগবে ৩ ঘন্টার মত। পাইক্ষ্যাং পাড়া থেকে রনিন পাড়া ২.৪০ ঘন্টার মত লাগবে। রনিন পাড়া থেকে সিপ্পি চুড়ায় যেতে ৪ ঘন্টার মত লাগবে।
দ্বিতীয় পথঃ
বান্দরবান থেকে প্রথমে রোয়াংছড়ি যেতে হবে। রোয়াংছড়ি থেকে ফরেস্ট অফিস হয়ে ব্যাঙছড়ি পাড়া যেতে হবে সময় লাগবে ১.৩০ ঘন্টার মত। ব্যাঙছড়ি পাড়া থেকে ব্যাঙছড়ি বাজার ১০ মিনিটের পথ। ব্যাঙছড়ি বাজার থেকে অংজাই পাড়া ১৫ মিনিট। অংজাই পাড়া থেকে লুংলাইন পাড়া ১.৪০ ঘন্টার মত। লুংলাইন পাড়া থেকে তারাছা পাড়া ১.৪০ ঘন্টার মত। তারাছা পাড়া থেকে প্রতিক্যা কারবারী পাড়া ১ ঘন্টার মত। প্রতিক্যা কারবারী পাড়া থেকে পুরান ফাংপুড়ি পাড়া ৩ ঘন্টার মত।
তৃতীয় পথঃ
বান্দরবান থেকে প্রথমে রুমা বাজার যেতে হবে। বাসে বা চাঁদের গাড়িতে যেতে পারবেন। রুমা বাজার থেকে মুন নৈয়াম পাড়া হয়ে যেতে হবে।
প্ল্যান একঃ দিন ০. ঢাকা – বান্দরবান দিন ১. বান্দরবান – রোয়াংছড়ি- পাইক্ষ্যাং পাড়া- রনিন পাড়া দিন ২. রনিন পাড়া- সিপ্পি – রনিন পাড়া দিন ৩. রনিন পাড়া – পাইক্ষ্যাং পাড়া – রোয়াংছড়ি – বান্দরবান – ঢাকা
প্ল্যান দুইঃ দিন ০. ঢাকা – বান্দরবান দিন ১. বান্দরবান – রোয়াংছড়ি – ব্যাঙছড়ি পাড়া- ব্যাঙছড়ি বাজার – অংজাই পাড়া- লুংলাইন পাড়া – তারাছা পাড়া- প্রতিক্যা কারবারী পাড়া দিন ২. প্রতিক্যা কারবারী পাড়া – নাইন স্টেপ পাহাড়- পুরান ফাংপুড়ি পাড়া – সিপ্পি পাড়া – সিপ্পি -রনিন পাড়া দিন ৩. রনিন পাড়া – পাইক্ষ্যাং পাড়া – রোয়াংছড়ি – বান্দরবান – ঢাকা
প্ল্যান তিনঃ দিন ০. ঢাকা – বান্দরবান দিন ১. বান্দরবান – রুমা- মুন নৌয়াম পাড়া- পাইন্দু খাল – বিল পাড়া – সাইজাম পাড়া দিন ২. সাইজাম পাড়া- সিপ্পি পাড়া – সিপ্পি – রনিন পাড়া দিন ৩. রনিন পাড়া – পাইক্ষ্যাং পাড়া – রোয়াংছড়ি – বান্দরবান – ঢাকা অনেকেই সিপ্পি এর সাথে তিনাপ সাইতার একই ট্যুরে রেখে থাকে। তাই তিনাপ সাইতার নিয়ে রুট প্ল্যান সাজালে হতে পারে এমনঃ ১ম দিনঃ ঢাকা -> বান্দরবান -> রোয়াংছড়ি -> রনিন পাড়া ২য় দিনঃ রনিন পাড়া -> সিপ্পি পাহাড় -> দেবছড়া পাড়া ৩য় দিনঃ দেবছড়া পাড়া -> পাইন্দু…
যাওয়ার উপায়
ঢাকা থেকে বান্দরবানের বাসে করে বান্দরবান নেমে ফ্রেস হয়ে রোয়াংছড়িগামী লোকাল বাসে চেপে রোয়াংছড়ি বাসস্যান্ডে নামতে হবে। আগে থেকেই গাইড ঠিক করে রাখলে গাইড আপনাদের জন্যে বাস স্ট্যান্ডে অপেক্ষা করবে। রোয়াংছড়ি বাজার থেকে পাহাড়ে হাঁটার উপযোগী ভালো গ্রিপের স্যান্ডেল আর অন্যান্য প্রয়োজনীয় টুকিটাকি জিনিসপত্র কিনে নিন। রোয়াংছড়ি থেকে প্রথমে যেতে হবে ২৭ কিলোমিটার দূরের রনিনপাড়া। যাওয়ার উপায় ঢাকা থেকে বান্দরবানের বাসে করে বান্দরবান নেমে ফ্রেস হয়ে রোয়াংছড়িগামী লোকাল বাসে চেপে রোয়াংছড়ি বাসস্যান্ডে নামতে হবে। আগে থেকেই গাইড ঠিক করে রাখলে গাইড আপনাদের জন্যে বাস স্ট্যান্ডে অপেক্ষা করবে। রোয়াংছড়ি বাজার থেকে পাহাড়ে হাঁটার উপযোগী ভালো গ্রিপের স্যান্ডেল আর অন্যান্য প্রয়োজনীয় টুকিটাকি জিনিসপত্র কিনে নিন। রোয়াংছড়ি থেকে প্রথমে যেতে হবে ২৭ কিলোমিটার দূরের রনিনপাড়া।
রনিনপাড়া থেকে সিপ্পির দিকে যাত্রা শুরু করতে হবে পরের দিন খুব সকালে কেননা দেরী করে রওনা দিলে রোদের তাপে ভুগতে হবে। রনিনপাড়া থেকে সিপ্পি যেতে আসতে সব মিলিয়ে ৮ ঘন্টার মত সময় লাগে। রনিনপাড়া থেকে ঘন্টা খানেক হাঁটার পরে পৌছে যাবেন দেবাছড়াপাড়ায়। সাথে করে নিয়ে যাওয়া খাবার এখানে রান্না করে খেয়ে নিতে পারেন, যেমন- নুডুলস/স্যুপ ইত্যাদি। এর পরের রাস্তাটুকু আরও দূর্গম এবং ঘন জঙ্গলে ঢাকা। তাই ম্যাচেটি দিয়ে কেটে কেটে আগাতে হয়। প্রায় ৪-৪ঃ৩০ ঘন্টা হাঁটার পরে সিপ্পির চূড়ায় পৌছে যেতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন
বান্দরবান শহরে থাকার অনেক আবাসিক হোটেল আছে। রোয়াংছড়িতে দুইটি আবাসিক হোটেল আছে। রুমা বাজারে কয়েকটি আবাসিক হোটেল আছে। পাহাড়ের ভিতরে আদিবাসীদের ঘরে থাকতে পারবেন।
কোথায় খাবেন
বান্দরবান শহরে, রোয়াংছড়ি ও রুমা বাজারে খাবার হোটেল আছে। পাহাড়ে আদিবাসীদের ঘরে নিজেদের রান্না করে খেতে হবে। যাবার সময় তেল মসলা আলু পিঁয়াজ নিয়ে যেতে হবে।
WhatsApp us