বালিয়াটি জমিদার বাড়ি

blank
তেওতা জমিদার বাড়ি
October 25, 2020
blank
করটিয়া জমিদার বাড়ি
October 25, 2020
Show all

বালিয়াটি জমিদার বাড়ি

blank

বালিয়াটি জমিদার বাড়ি (Baliati Zamindar bari) বাংলাদেশের মানিকগঞ্জ জেলা সদর থেকে আনুমানিক ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং ঢাকা জেলা সদর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি গ্রামে অবস্থিত। মোট সাতটি স্থাপনা নিয়ে এই জমিদার বাড়িটি অবস্থিত। ঐতিহ্য বুকে ধরে এখনো কালের সাক্ষী হিসেবে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে। এই বালিয়াটি জমিদার বাড়ি বা প্রাসাদটির সবগুলো ভবন একসাথে স্থাপিত হয় নি। এই প্রাসাদের অন্তর্গত বিভিন্ন ভবন জমিদার পরিবারের বিভিন্ন উত্তরাধিকার কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে স্থাপিত হয়েছিল। বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্লকটি যাদুঘর। এই প্রাসাদটি বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ কর্তৃক সংরক্ষিত ও পরিচালিত। একটি নিম্নবিত্ত সাহা পরিবার থেকেই পরবর্তীতে বালিয়াটী জমিদার বংশের উদ্ভব।

দর্শনীয় স্থানসমূহ বালিয়াটি জমিদার বাড়ীতে আছে দৃষ্টিনন্দন ইমারত, নির্মাণ কৌশল আর অলংকরণে অপূর্ব। বিশাল বিশাল ভবন জমিদার আমলে জমিদারদের বিত্ত বৈভবের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। ঝড়-তুফান, বৃষ্টি-বাদল উপেক্ষা করে এখনো কালের সাক্ষী হিসেবে টিকে আছে। জমিদার বাড়ির সিংহ দরজায় প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে প্রশস্ত আঙ্গিনা। একই লাইনে দাঁড়িয়ে আছে চারটি বহুতল ভবন। এগুলোর পেছনে জমিদার অন্দরমহল এবং রয়েছে কয়েকটি পুকুর।

জমিদারবাড়ির ভেতরে রং মহল নামে খ্যাত ভবনে বর্তমানে জাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে। পুরো জমিদার চত্বরটি উঁচু প্রাচীরে ঘেরা। প্রাচীন ঐতিহ্যের প্রাসাদের ২০০ কক্ষের প্রতিটি কক্ষেই রয়েছে প্রাচীন শিল্পের সুনিপুণ কারুকাজ। প্রাসাদ চত্বরটি প্রায় ১৬ হাজার ৫৫৪ বর্গমিটার জমির ওপর ছড়িয়ে থাকা সাতটি দালানের সমাবেশ। প্রতিটি দালানই ঊনবিংশ শতকে নির্মিত। জমিদারবাড়ির প্রবেশ দরজার দুপাশে রয়েছে দুটি তেজী সিংহের পাথরের মূর্তি। এরপরই নজরে আসবে প্রশস্ত আঙিনা। বর্তমানে এটি ফুলের বাগান। পেছনের অন্দর মহলে বিশালাকার পুকুর। পুকুরের একপাশে রয়েছে শৌচাগার। পুকুরের চারপাশে রয়েছে চারটি শান বাঁধানো নান্দনিক ঘাট। বাড়ির প্রতিটি দেয়াল ২০ ইঞ্চি পুরু। গাঁথুনিতে সিমেন্টের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে চুন-সুরকি আর শক্তিশালী কাদামাটি। লোহার রডের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে লোহার পাত। ভেতরে রয়েছে লোহার সিঁড়ি। ধারণা করা হয় সামনের চারটি প্রাসাদ ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করা হতো। অন্দরমহলে গোবিন্দরাম পরিবার বসবাস করতেন।

বালিয়াটি
প্রাসাদ বালিয়াটি প্রাসাদটি স্থাপত্যকৌশলের অন্যতম নিদর্শন। সুবিশাল প্রাসাদটি পাঁচটি স্বতন্ত্র ব্লকের সমন্বয়ে গঠিত। যার মধ্যে পূর্বদিকের একটি ব্লক ছাড়া চারটি ব্লকের দুটিতে একটি দ্বিতল ভবন এবং একটি টানা বারান্দা বিশিষ্ট ত্রিতল ভবন রয়েছে। প্রাসাদটির পেছনে অন্দরমহল। উত্তরদিকের ভবনটি কাঠের কারুকার্যে তৈরি। সুবিশাল প্রাসাদটির চারপাশেই সুউচ্চ দেয়াল। প্রতিটি অর্ধ-বৃত্তাকার খিলান আকৃতির সিংহ খোদাই করা তৌরণ বিদ্যমান।

গোলাবাড়ি
জমিদারবাড়িটির ঐতিহ্য শুরু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে। আর এই গোলাবাড়িটি লবণের একটি বিশাল গোলা ছিল বলেই ধারণা করা হয়। জমিদাররা ধর্মপ্রাণ হওয়ায় বাড়ির মন্দিরে পূজা অর্চনা করা হতো। স্বাধীনতা যুদ্ধে এখানে লুটপাট করা হয়।

পশ্চিম বাড়ি
জমিদারবাড়ির পশ্চিম অংশে অবস্থান বলেই বাড়িটির নাম পশ্চিম বাড়ি। ১৮৮৪ সালে জমিদারের উত্তরাধিকার জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরী বিখ্যাত জগন্নাথ কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।

পূর্ববাড়ি
বালিয়াটির পূর্ব অংশে এ বাড়ির অবস্থান বলেই এ বাড়ির নামকরণ করা হয় পূর্ববাড়ি। এ বাড়ির প্রথম জমিদার পুরুষ রায় চাঁন। তিনি দুটি বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রীর সন্তানদের সম্পত্তির দশ আনা অংশ এবং দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর সন্তানদের দান করেন ছয় আনা অংশ। দশ আনির জমিদার বাড়িটিই বর্তমানে পর্যটকদের দর্শনীয় স্থান। এখানে পশ্চিম থেকে পূর্ব পর্যন্ত চারটি সুবৃহৎ অট্টালিকা বিদ্যমান। এগুলো বড় তরফ, মেঝো তরফ, নয়া তরফ এবং ছোট তরফ নামে পরিচিত। ছয় আনির জমিদার বাড়ির অস্তিত্ব বর্তমানে নেই।

বালিয়াটি জমিদার বাড়ি কখন খোলা/বন্ধ থাকে
গ্রীষ্মকাল : সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিরতি : দুপুর ১টা থেকে ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত শীতকাল : সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিরতি : দুপুর ১টা থেকে ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত শক্রবার : দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট থেকে ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত বিরতি বন্ধ : রবিবার পূর্ণদিবস ও সোমবার অর্ধদিবসসহ সরকারি ছুটির দিন। ঈদের পরের দিন এই প্রাসাদ বন্ধ থাকে।

খরচ / টিকেট মূল্য
বালিয়াটি জমিদার বাড়িতে প্রবেশের জন্য জনপ্রতি টিকিটের মূল্য ২০ টাকা। এই মূল্য কেবল দেশি দর্শনার্থীদের জন্য। তবে বিদেশি দর্শনার্থীরাও বেড়াতে আসেন এই বিখ্যাত জমিদারবাড়িতে। তাদের টিকিটের মূল্য রাখা হয় ২০০ টাকা, সার্কভুক্ত দর্শনার্থী – ১০০ টাকা।

কিভাবে যাবেন
ঢাকার গাবতলী থেকে পাটুরিয়া, আরিচা বা মানিকগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া বাসে চড়ে মানিকগঞ্জের ৮ কিমি আগেই সাটুরিয়া বাসস্টপে নেমে যেতে হবে। ভাড়া লাগবে ৩৫-৪০ টাকা। আর মানিকগঞ্জ থেকে যেতে চাইলে শুভযাত্রা, পল্লীসেবা, শুকতারা ইত্যাদি বাসে চড়ে চলে যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে ভাড়া লাগবে ২০ টাকার মত। সাটুরিয়া বাসস্টপে থেকে ১২ কিমি দূরে এই বালিয়াটি জমিদার বাড়ির অবস্থান। সাটুরিয়া থেকে পাকুটিয়াগামী রাস্তায় সাটুরিয়ার জিরোপয়েন্টে নামতে হবে। এখান থেকে মাত্র ১ কি.মি এর কম দূরত্ব বালিয়াটি জমিদার বাড়ির।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *