দুবাই ভ্রমণ কেন করবেন । ১০ টি কারন যে জন্য দুবাই আপনার প্রিয় গন্তব্য হতে পারে
দুবাই আমাদের অনেকের কাছেই স্বপ্নের একটি গন্তব্য। যারা দুবাই সম্পর্কে কিছুটা হলেও জানেন তারা তো সুযোগ পেলে দুবাই ভ্রমণের জন্য এক বাক্যে রাজী হয়ে যাবেন! দুবাই এর জাঁকজমক ও জৌলুসপূর্ণ জীবন যাপন সবাইকে টানে। তবে অনেকেই আছেন যারা এ সম্পর্কে খুব বেশী জানেন না। তাদের উদ্দেশেই আমাদের আজকের ব্লগ।
দুবাই সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি প্রধান শহর। এটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি প্রধান আমিরাত বা প্রদেশ। এটি আরব আমিরাতের সাতটি প্রদেশের মধ্যে একটি প্রদেশ। এটি পারস্য উপসাগরের দক্ষিণ তীরে আরব উপদ্বীপে অবস্থিত। ১৮৩৩ সাল থেকে দুবাই শাসন করে আসছে আল মাকতুম পারিবার। দুবাইয়ের বর্তমান শাসকের নাম মুহাম্মদ বিন রশীদ আল মাকতুম। ৪,১১৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই চমৎকার প্রদেশের জনসংখ্যা ৩.১৩ মিলিয়ন। দুবাইয়ের প্রধান রাজস্ব আয় হচ্ছে পর্যটন, রিয়েল এস্টেট এবং অর্থনৈতিক সেবা।
নীচে আমরা দুবাইয়ের প্রধান আকর্ষণীয় বিষয়গুলো নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করেছি।
দুবাইকে বলা হয়ে থাকে স্কাই-স্ক্র্যাপার বা উঁচু ভবনের শহর। এখানকার সুউচ্চ অট্টালিকাগুলো সত্যি দেখার মত। বিখ্যাত বুরজ আল খলিফার নাম অনেকেই শুনে থাকবেন ইতিমধ্যে, যা কিনা এখন পর্যন্ত মানুষ নির্মিত সব থেকে উঁচু স্থাপনা। তবে শুধু বুরজ খলিফা নয়, সমগ্র দুবাই মিলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পৃথিবীর অন্যতম সেরা কিছু অট্টালিকা। এর মধ্যে আছে মেরিনা ১০১, প্রিন্সেস টাওয়ার, ২৩ মেরিনা, এলিট রেসিডেন্স, আলমাস টাওয়ার এবং আরও অনেক। এগুলো শুধু উচুই না। এসব অট্টালিকা গুলোর ভিতরেও অনেক জাঁকজমক পূর্ণ। এর সাথে আরো সংযুক্ত হতে যাচ্ছে পৃথিবীর সর্ব প্রথম ঘূর্ণায়মান বা রোটেটিং টাওয়ার। দুবাই বেড়াতে গেলে এসব আকর্ষণীয় সুউচ্চ ভবনগুলো আপনাকে মুগ্ধ করবেই।
দুবাইকে বহুজাতিক সংস্কৃতির মিলন মেলা বলা হয়ে থাকে। এখানে প্রায় ২০০ এরও বেশী জাতীয়তার মানুষ এক সাথে বসবাস করে। মজার ব্যাপার হল দুবাই এর প্রায় ৯০% মানুষই দুবাইয়ের বাইরে থেকে আগত। দক্ষিণ এশিয়া তথা ভারত এবং পাকিস্তান থেকে প্রচুর মানুষ দুবাই গিয়ে স্থায়ি ভাবে বসবাস করছে। দুবাই সরকারও বিদেশিদের বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা দেয়ার ব্যাপারে খুবই আগ্রহি। আপনি যে দেশ থেকে দুবাই বেড়াতে যান না কেন, আপনার স্বদেশী মানুষের দেখা পাবেনই।
যেহেতু দুবাইতে অনেক ধর্ম, বর্ণ ও জাতীয়তার মানুষ বাস করে, তাই এটা স্বাভাবিক যে এখানকার সংস্কৃতিও অনেক বর্ণিল হবে। সংস্কৃতির বৈচিত্রপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে একটি হল খাবার। দুবাইয়ে পাবেন বিচিত্র রকমের সব খাবার। দুবাইবাসিদের নিজস্ব খাবার তো আছেই। এছাড়া আরও পাবেন, হিন্দি, পাঞ্জাবি, মারাঠি, পাকিস্তানি, চাইনিজ, সহ বিভিন্ন প্রকার বিচিত্র খাবারের দারুন সমারোহ। আরও আছে ফ্রেঞ্চ, জাপানিজ, ব্রিটিশ, মেক্সিকান সহ নানা উপাদেয় সব ক্যুজিন। এখানে বিভিন্নও দেশের পর্যটক বেড়াতে আসেন, তাই বলা চলে পৃথিবীর প্রায় সব দেশের খাবারের ব্যাবস্থা এখানে থাকবেই। তাই অন্যান্য ব্যাপারগুলোর পাশাপাশি রসনা বিলাসের জন্য দুবাই একটি চমৎকার গন্তব্য হতে পারে।
দুবাইয়ের দারুন সমুদ্র সৈকত গুলোতে আপনাকে মনকে মুগ্ধ করবেই। দুবাই শহরটি পারস্য উপসাগরের ঠিক পাড়েই অবস্থিত। তাই সৈকতের কোন কমতি পাবেন না। এখানকার চমৎকার সূর্যালোক ও নিরাপত্তাবেষ্টিত সমুদ্র সৈকত পশ্চিমা নাগরিকদের কাছে অনেক জনপ্রিয়। এখানকার জনপ্রিয় সৈকত গুলোর মধ্যে আছে জুমেইরাহ সৈকত, মেরিনা সৈকত, আল মামজার সৈকত, আজুর সৈকত এবং আরও অনেক।
পর্যটনের জন্য যে সব জায়গা আমরা বেছে নেই, তার সবগুলোতেই কম বেশী দ্বিপ থাকেই। কিন্তু মনুষ্য নির্মিত আর্টিফিশিয়াল দ্বিপ কোথায় পাবেন? দুবাই আপনার এই তৃষ্ণাও মিটাতে পারবে। ২০০১ থেকে ২০০৬ মাত্র এই ৫ বছরের মধ্যে পৃথিবীর বৃহত্তম এই মানব সৃষ্ট দ্বিপপুঞ্জ নির্মাণ করেছে দুবাই সরকার। মুল উদ্দেশ্য ছিল আরও বেশী পর্যটকদের আকৃষ্ট করা। সে উদ্দেশে তারা সফল। এখানে প্রতিবছর অনেক পর্যটকদের সমাগম হয়ে থাকে। তাঁদের সেবা দেয়ার জন্যে এখানে রয়েছে, ৫ তারকা বিশিষ্ট হোটেল, অনেক গুলো সমুদ্র সৈকত এবং আরও আধুনিক সব স্থাপনা।
দুবাইকে বলা হয়ে থাকে দ্য শপার্স প্যারাডাইস। কেনা কাটা করতে যারা ভালবাসেন তাঁদের জন্য দুবাই এক অসাধারন জায়গা। গুচি, নাইকি থেকে শুরু করে অ্যাপল, র্যালফ লরেন, ওমেগা, মেবিলাইন, শ্যানেল এমন কোন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড নেই যাদের শোরুম দুবাইয়ে পাবেন না। শোরুম থেকে কেনার কারনে একদিকে আপনি যেমন সঠিক দামে আসল প্রোডাক্ট পাচ্ছেন, তেমন ভাবে কোম্পানির এক্সক্লুসিভ বিক্রয়ত্তর সেবার স্বাদও গ্রহন করতে পারবেন। এছাড়া দুবাই এয়ারপোর্টের স্পেশাল ডিউটি ফ্রি শপিং তো রয়েছেই।
দুবাই বেড়াতে গিয়ে যদি বরফের মাঝে আইস স্কেটিং করতে ইচ্ছা হয়, তাও সম্ভব। শুনতে অবাক লাগছে? মরুভুমির বুকে স্কি কেমনে সম্ভব! কিন্তু এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে তারা। এখানে রয়েছে বিখ্যাত স্কি দুবাই। ২২,৫০০ স্কয়ার মিটার এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে ৮৫ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট এই ইনডোর স্কি লাউঞ্জ। এখানেই পাবেন পৃথিবীর সর্বপ্রথম ৪০০ মিটার দীর্ঘ ব্ল্যাক রান। এর ভিতরে গেলে কিছু সময়ের জন্য হলেও এন্টার্কটিকার স্বাদও পেয়ে যাবেন।
২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে ওয়ার্ল্ড এক্সপো ২০২০ এর আয়োজক হিসেবে দুবাই এর নাম ঘোষণা করা হয়। এ উপলক্ষে দুবাইয়ে সাজ সাজ রব পড়ে গেছে। এজন্য বিশেষ ভাবে নির্মিত হচ্ছে এক্সপো ভিলেজ। ৪৩৮ হেক্টর জমির উপরে গড়ে উঠছে অত্যাধুনিক এই ভিলেজ। এক্সপো ২০২০ তে আগত দর্শনার্থী এবং বিনিয়োগকারিদের সর্বোত্তম সুবিধা দেয়ার জন্য বিশেষ ভাবে নির্মিত এই ভিলেজ প্রায় ২৫ মিলিয়ন দর্শনার্থীকে সেবা দিতে সক্ষম হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ৬ মাস ব্যাপি এই এক্সপোর মাধ্যমে দুবাইয়ের অর্থনীতিতে প্রায় ৪০ বিলিয়ন ইউ এস ডলার বিনিয়োগ হবে বলে আয়োজকরা আশাবাদী। দুবাই এক্সপো ২০২০ এর মধ্যেই সবার মধ্যে বেশ সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছে। এই এক্সপো উপভোগ করতে পৃথিবীর বিভিন্নও দেশ থেকে উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীরা দুবাইয়ে ভিড় জমাবেন। দুবাই ভ্রমণের জন্য এটা অবশ্যই একটা বড় উপলক্ষ হতে পারে।
দুবাই এর অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে এখানকার বিশুদ্ধ এবং উন্নত মানের স্বর্ণের বিশাল বাজার। সবগুলো শপিং মল তো আছেই, তবে বিশেষ ভাবে যারা স্বর্ণ ভালবাসেন তাঁদের জন্য দুবাইয়ের বিশেষ আয়োজন হল সউক। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী মার্কেট প্লেস যেখানে শুধুমাত্র স্বর্ণ কেনা বেচা হয়ে থাকে। ১৯৪০ সাল থেকে এই সউক দুবাইয়ের ব্যাবসার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। সঠিক দামে উন্নতমানের স্বর্ণ কেনার উদ্দেশ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ক্রেতারা এই সউক এ চলে আসেন। বলা হয়ে থাকে যে এই সউকে জমকৃত স্বর্ণের পরিমান ১০ মেট্রিক টনেরও বেশী হবে।
দুবাইয়ের অন্যান্য জৌলুসের কথা বাদ দিলেও বুরজ খলিফার কথা আপনাকে ভাবতেই হবে। পৃথিবীর সর্বচ্চ এই স্থাপনা যে শুধুমাত্র এখানেই পাবেন! সর্বচ্চ স্থাপনা হবার পাশাপাশি বুরজ খলিফা একটি ৭ তারকা বিশিষ্ট হোটেলও বটে। ৫ তারকা বিশিষ্ট হোটেল অনেক পাবেন, কিন্তু সত্যিকার ৭ তারকা বিশিষ্ট হোটেল পৃথিবীতে আছে হাতে গোনা, মাত্র ৫ টি। এর মধ্যে দুটি দুবাই এ, যার একটি এই বুরজ খলিফা। জুমেইরা সৈকত থেকে ২৮০ কিলোমিটার দূরে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মনুষ্য নির্মিত দ্বিপের উপর বুরজ আল খলিফা অবস্থিত। হোটেলের আয়োজনের মধ্যে অন্যান্য আকর্ষণের পাশাপাশি রয়েছে অতিথিদের জন্য রোলস রয়েস নামক বিলাস বহুল গাড়ির ব্যাবস্থা। এছাড়া যাদের নিজস্ব হেলিকপ্টার রয়েছে তাঁদের জন্য রয়েছে তাঁদের জন্য তো হেলিপ্যাড তো থাকছেই।
দুবাইকে বলা হয়ে থাকে পৃথিবীর অন্যতম প্রধান ট্রাভেল হাব। অতি সম্প্রতি দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরকে পিছনে ফেলে পৃথিবীর ব্যাস্ততম বিমানবন্দর হিসেবে নিজের নাম লিখিয়েছে। দুবাই থেকে প্রায় পৃথিবীর সব দেশে যাবার জন্য সরাসরি ফ্লাইট পাওয়া যাবে, যেটা একটা চমৎকার সুবিধা। বিদেশী পর্যটকদের সরাসরি ফ্লাইট সুবিধা দিতে দুবাইয়ের বিখ্যাত বিমান সংস্থা এমিরেটস তাঁদের বহরে বহু সংখ্যক নতুন বিমান সংযুক্ত করেছে।
আশা করব দুবাই সম্পর্কিত বেশ কিছু তথ্য আপনারা ইতিমধ্যে পেয়ে গেছেন। এখান থেকে আমাদের সম্মানিত পাঠকরা কিছুটা উপকৃত হলেই আমাদের পরিশ্রম সার্থক হবে।
WhatsApp us