Bandarban Tour

বান্দরবান, চট্টগ্রাম বিভাগের একটি অন্যতম প্রসিদ্ধ জেলা। পাহাড় দিয়ে ঘেরা এক অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভুমি এই বান্দরবান জেলায। বান্দরবান জেলায় অনেক দর্শনীয় স্থান আছে ভ্রমণ করার জন্য। বিশেষ করে শীতকাল আসার পূর্বে এবং শীতকাল পর্যন্ত এই জেলা শহরের অনেকগুলো দর্শনীয় স্থানে প্রতিবছর বহু পর্যটক ঘুরতে আসেন। অনেকে পরিবার নিয়ে আসেন, অনেকে বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরতে চলে আসেন। আমরা বান্দরবানের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের একটি দিক তুলে ধরবো। সাথে সাথে আপনি যদি পরিবার এবং বন্ধুবান্ধব নিয়ে দুই দিনের সফরের জন্য বান্দরবান ঘুরতে আসেন তাহলে কোন কোন জায়গা না ভ্রমন করলেই না সেটার ব্যাপারে এখানে আমরা একটি ট্যুর গাইড লাইন দিচ্ছি।

বান্দরবনে ঘুরতে আসলে আপনি প্রথম দিন বান্দরবানের কিছু জায়গা এবং দ্বিতীয় দিন অন্য কিছু জায়গা ঘুরে দেখতে পারেন। বান্দরবনে দুইদিনে যেসব জায়গায় আপনি ঘুরতে পারেন তার মধ্যে আছে নীলগিরি, চিম্বুক পাহাড়, মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র, নীলাচল, শৈলপ্রপাত, স্বর্ণমন্দির। এই দর্শনীয় স্থানগুলো আপনি দুই দিনেই শেষ করতে পারেন আবার অনেকেই দ্রুত ভ্রমন করতে চাইলে একদিনে সবকিছু দেখতে পারেন। কিন্তু একদিনে সবকিছু দেখে শারীরিক কষ্ট না করাটাই উত্তম।


ঢাকা অথবা চট্টগ্রাম যেখান থেকে আসার চেষ্টা করেন না কেন চেষ্টা করবেন বান্দরবান জেলায় যেন সকাল-সকাল পৌঁছে যান। তারপরে সকালে হোটেলে চেকিং করে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে আপনি ঘুরতে বেরিয়ে যেতে পারেন। তাই প্রথম দিন আপনি ঘুরে আসতে পারেন নীলগিরী। নিলগীরি একটি দারুন জায়গা। পাহাড়ের উপর থেকে এত সুন্দর ভিউ যেন মনকে কিছুখনের জন্য অবচেতন করে দিবে। যাওয়ার পথে আপনি চিম্বুক পাহাড় টা অবশ্যই ঘুরে দেখতে পারেন। এই জায়গায় একদিন সময় কাটিয়ে দিতে পারেন। দ্বিতীয় দিন আপনি নীলাচল এবং মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র ঘুরে দেখতে পারেন। মেঘলা যাওয়ার পথে শৈলপ্রপাত পড়বে তাই শৈলপ্রপাত দ্বিতীয় দিনে রাখতে পারেন এবং বিকালের দিকে স্বর্ণমন্দির টা ঘুরে আসতে পারেন।

সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে বর্ষাকাল এবং শীতকাল। আপনার যেই সময় ভালো লাগে সেই সময় ভ্রমন করতে পারেন। তবে গরম কালে না যাওয়াই উত্তম। অনেক গরম থাকে আবহাওয়া। শীতকাল উত্তম সময়, এই সময় আবহাওয়া একটু ঠান্ডা থাকে। কিন্তু বর্ষাকালে না গেলে ঝরনা দেখার ভাগ্য নাও হতে পারে।

প্রথমে আপনাকে বান্দরবান শহরে যেতে হবে। ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন বান্দরবানের উদ্দেশ্যে কয়েকটি পরিবহন কোম্পানির গাড়ি ছেড়ে যায়। যেমন শ্যামলি, হানিফ, ইউনিক, এস আলম, ডলফিন- এর যেকোনো একটি বাসে চড়ে আপনি বান্দরবানের যেতে পারেন। রাত ১০ টায় অথবা সাড়ে ১১টার দিকে কলাবাগান, সায়েদাবাদ বা ফকিরাপুল থেকে এসব বাস বান্দরবানের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। নন এসি বাসে জন প্রতি ভাড়া ৫৫০ টাকা। এসি ৯৫০ টাকা।
চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান যেতে পারেন। বদ্দারহাট থেকে বান্দারবানের উদ্দেশে পূবালী ও পূর্বানী পরিবহনের বাস যায়। এসব বাসে জনপ্রতি ২২০টাকা ভাড়া রাখা হয়।

বান্দরবানে অসংখ্য রিসোর্ট, হোটেল, মোটল এবং রেস্টহাউজ রয়েছে। যেখানে ৬০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় রাত্রিযাপন করতে পারবেন।
হলিডে ইন রিসোর্ট : মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্সের বিপরীতে ছোট্ট পাহাড়ের চূড়ায় হলিডে ইন রিসোর্ট। এখানে ছোটছোট অনেকগুলো কটেজ রয়েছে। ফোন-০৩৬১-৬২৮৯৬।
হিলসাইড রিসোর্ট : বান্দরবান-চিম্বুক সড়কের ৫ কিলোমিটার নামকস্থানে অবস্থিত মিলনছড়ি। এখানে রয়েছে উন্নত পরিবেশে রাত্রি যাপনের সু-ব্যাবস্থা। মোবাইল-১৫৫৬৫৩৯০২২।
হোটেল ফোর স্টার : বান্দরবান শহরে অবস্থিত হোটেল ফোরস্টার। এখানে এসি এবং নন এসি দু রকমের রুম রয়েছে। হোটেলের প্রতিটি কক্ষে রয়েছে টেলিভিশন। ফোন-০৩৬১-৬২৪৬৬।

প্রথম দিনঃ নীলগিরি, চিম্বুক পাহাড়

দ্বিতীয় দিনঃ নীলাচল, মেঘলা, শৈল প্রপাত, স্বর্ণ মন্দির

প্রথম দিনঃ নীলগিরি কিভাবে যাবেন ?

পর্যটকদের নীলগিরি যেতে হলে বান্দরবান জেলা সদরের রুমা জীপষ্টেশন থেকে থানছিগামী জীপ অথবা বাসে করে নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রে যাওয়া যায়। বান্দরবন জীপ ষ্টেশন থেকে জীপ, ল্যান্ড রোভার, ল্যান্ড ক্রুজারসহ অন্যান্য হালকা গাড়ী ভাড়ায় পাওয়া যায়। নীলগিরি যাওয়ার পথে সেনা চেকপোষ্টে পর্যটকদের নাম ও ঠিকানা লিপিবদ্ধ করতে হবে। বান্দরবান জেলা সদর থেকে সাধারণত বিকেল ৫ টার পর নীলগিরির উদ্দেশে কোন গাড়ী যেতে দেয়া হয় না।

চান্দের গাড়ির জন্যে

বাদশা ড্রাইভার – (৫ সিটের ল্যান্ড ক্রুজার ড্রাইভার) ফোন:-০১৫৫০৬০১৬৩৫,০১৯২৫৮৭০০২৭। এই ড্রাইভারের মাধ্যমে (নীলগিরি + চিম্বুক + শৈলপ্রপাত + স্বর্ণ মন্দির) এই চারটি সাইট দেখতে পারবেন মাত্র ২৮০০ টাকায়। ইচ্ছে করলে স্থানীয় ড্রাইভার বাদশার সহযোগীতা নিতে পারেন। আপনারা চাইলে সিএনজি সারাদিনের জন্য ভাড়া করতে পারেন। ২৫০০-৩০০০ টাকা ভাড়া নিবে সারা দিনের জন্য। সিএনজিতে ৩/৪ জন যেতে পারবেন।

ভাড়াঃ সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্ধারিত আসা-যাওয়া-ছোট জীপঃ (৫সিট) ২৫০০ টাকা এবং বড় জীপ (৮সিট) ৩০০০ টাকা। টিকেট মূল্যঃ ঘুরে বেড়াতে পর্যটকদের জনপ্রতি ১০০ টাকা এবং গাড়ির জন্য আলাদা ৩০০ টাকা অতিরিক্ত ফি নেয়ার নিয়ম চালু রয়েছে।

নীলগিরি রিসোর্টঃ সেনানিয়ন্ত্রিত নীলগিরি রিসোর্টে ছয়টি কটেজ রয়েছে। নামগুলো হচ্ছে আকাশনীলা, মেঘদূত, নীলাঙ্গনা, হেতকরা রাইচা এবং মারমারাইচা। কটেজগুলো থাকতে হলে পর্যটকদের গুণতে হবে ৫ হাজার থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত। বুকিংয়ের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর অফিসার পর্যায়ের একজন কর্মকর্তার রেফারেন্স অবশ্যই লাগবে। রেফারেন্স ছাড়া কোনো বুকিং নেয়ার নিয়ম নেই নীলগিরি রিসোর্টে।


সাধারন পর্যটকের জন্য নীলগিরি কর্টেজ বুকিং ব্যবস্থাঃ পেট্রো এভিয়েশন ৬৯/২, লেভেল-৪,রোড-৭/এ, ধানমন্ডি, ঢাকা। ওয়েবসাইটঃ http://nilgiriresort.com ইমেইলঃ info@nilgiriresort.com যোগাযোগঃ ০১৭৬৯২৯৯৯৯৯ খাদ্য ও অন্যান্য সুবিধার জন্যে যোগাযোগঃ ক্যাম্প কমান্ডার (০১১৯০৮১১৩২২)

নীলগিরি দেখতে কেমন ?

মেঘ ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছা পূরণ করতে চাইলে যেতে হবে বান্দরবনের নীলগিরি। নীলগিরি গেলে মেঘ নিজে এসে ধরা দেবে আপনার হাতে। মাথার উপর নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা খেলা করে নীলগিরির পাহাড়ে। অপরূপ সৌন্দর্য্যের এক নীলাভূমি এই নীলগিরি। নীলগিরির কারণে বান্দরবানকে বাংলাদেশের দার্জিলিং বলা হয়। যারা এডভেঞ্চার পছন্দ করেন তাদের জন্য রাতের নীলগিরি হতে পারে উৎকৃষ্ট স্থান। জেলা সদর থেকে মাত্র ৪৫ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের চূড়ায় নীলগিরির অবস্থান। নীলগিরি (Nilgiri) যেন প্রকৃতির এক অনন্য দান। নীলগিরির চূড়া থেকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাহাড় কেওক্রাডং, প্রাকৃতিক আশ্চর্য বগালেক, কক্সবাজারের সমুদ্র, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের আলো-আঁধারি বাতি এবং চোখ জুড়ানো পাহাড়ের সারিও দেখতে পাওয়া যায়। নীলগিরির কাছাকাছি রয়েছে বেশ কয়েকটি ম্রো উপজাতীয় গ্রাম। নীলগিরির একদম কাছে কাপ্রু পাড়া, আপনি সহজেই পরিদর্শন করে ম্রো আদিবাসী সম্পর্কে জানতে পারবেন। নীলগিরিতে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি ক্যাম্প। ফলে এখানে নিরাপত্তার কোন ঘাটতি নেই। আপনার যে কোন প্রয়োজনে সেনা সদস্যরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে। দুর্গম পাহাড়ে নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রে গড়ে তোলা হয়েছে আকাশ নীলা, মেঘদূত, নীলাতানা নামে পর্যটকদের জন্য সকল সুবিধা সম্বলিত তিনটি কটেজ। কটেজগুলো রাত্রি যাপনের জন্য ভাড়া পাওয়া যায়। এখানে রয়েছে অত্যাধুনিক একটি রেস্টুরেন্টও। পাহাড়ি পথ পেরিয়ে নীলগিরিতে পৌঁছেই রেস্টুরেন্টে পেট পুরে খাওয়া যায়।

চিম্বুক পাহাড়

বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম পর্বত চিম্বুক । চিম্বুক সারা দেশের কাছে পরিচিত নাম। বান্দরবান জেলা শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে চিম্বুক পাহাড়ের অবস্থান। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ২৫০০ শত ফুট। চিম্বুক যাওয়ার রাস্তার দুই পাশের পাহাড়ী দৃশ্য খুবই মনোরম। যাওয়ার পথে সাঙ্গু নদী চোখে পড়ে। পাহাড়ের মাঝে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সড়ক দিয়ে এঁকেবেঁকে যাওয়ার সময় মনে হবে গাড়িতে করে বুঝি চাঁদের বুকে পাড়ি জমাচ্ছেন। ২৫০০ ফুট উঁচুতে দাঁড়িয়ে এ অপরূপ বিচিত্র প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে পাবেন চিম্বুকে। পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে দেখতে পাবেন নিচে ভেসে যাচ্ছে মেঘের ভেলা। পার্শ্ববর্তী জেলা কক্সবাজার আর চট্টগ্রাম এর বিভিন্ন উপজেলাগুলোকে দেখা যায় এখান থেকে। বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ের পাশ দিয়ে ভেসে যাওয়া মেঘ দেখে মনে হয় মেঘের স্বর্গরাজ্য চিম্বুক। থানছি সড়কের দূর্গম পাহাড়ী এলাকায় চিম্বুক (Chimbuk) অবস্থিত হওয়ায় এখানে হোটেল বা রেস্তোরাঁ গড়ে ওঠেনি। জেলা প্রশাসকের তত্ত্ববধানে একটি রেস্টহাউস আছে। জেলা প্রশাসকের অনুমোতিক্রমে রাত্রি যাপনের সুযোগ রয়েছে। চিম্বুকের পাশে সেনাবাহিনীর ক্যান্টিন রয়েছে। এখানে সকালের নাস্তা ও দুপুরে খাবার পাওয়া যায়। এছাড়া খাবারের জন্য বান্দরবান থেকে চিম্বুক যাওয়ার পথে মিলনছড়ি ও শাকুরা নামে ২টি পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। তবে বান্দরবান থেকে হালকা খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে রওনা দেওয়াটাই সবচেয়ে ভাল।


চিম্বুক মাত্র ২০ কিমি দূরে নীলগিরি থেকে। চিম্বুক যেতে হলে বান্দরবান শহরের রুমা বাস স্টেশন থেকে চাঁদের গাড়ি হিসেবে পরিচিত জীপ, ল্যান্ড ক্রুজার, ল্যান্ড রোভার, পাজেরো এবং বান্দরবান-থানছি পথে যাতায়াত করা বাস ভাড়া নিতে হবে (স্পেশাল বাস যা দূর্গম পাহাড়ী পথে চলাচল করতে সক্ষম)। আপনি যদি সিএনজি একবারে ভাড়া করে নেন তাহলে নীলগিরি ঘুরে এসে চিম্বুক ঘুরে আসতে পারেন একই সিএনজি তে। রাস্তা বেশ দূর্গম হওয়ায় বাসে যাতায়ত করা ঝুঁকিপূর্ণ। চিম্বুক-থানছি পথে বিকেল ৪ টার পরে কোন গাড়ি চলাচল করে না। তাই পর্যটকদের ৪ টার মধ্যে ফিরে আসা উচিত।

বান্দরবনের সকল দর্শনীয় স্থান দেখতে এই লিঙ্কে ভিজিট করুনঃ

Explore Bandarban
ভাল লাগলে শেয়ার করুন।

বান্দরবান ভ্রমনের দ্বিতীয় দিন

নীলাচল, মেঘলা, শৈল প্রপাত, স্বর্ণ মন্দির

ভ্রমনের দ্বিতীয় পর্বে আপনাদের আমন্ত্রন।

সময় লাগবে
১ দিন
ভ্রমন সময়
যে কোন দিন
যাত্রা শুরু
বান্দরবান শহর
খরচ
৩০০০-৪০০০ টাকা