Bandarban Tour Part 2

বান্দরবান ভ্রমনের এই পর্বে আমরা আপনাদের জন্য নীলাচল, মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র, শৈল প্রপাত এবং স্বর্ণমন্দির এর নানান দিক তুলে ধরছি।

Bandarban Tour Part 2

নীলাচল

Bandarban Tour Part 2

মেঘলা

Bandarban Tour Part 2

শৈল প্রপাত

Bandarban Tour Part 2

স্বর্ণ মন্দির

বান্দরবান শহরের কাছে প্রায় দুই হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ের উপর অবস্থিত নীলাচল (Nilachal) পর্যটন কেন্দ্র। শহর থেকে মাত্র ৫কিমি দুরে অপরূপ সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি এই নীলাচল যা টাইগার পাড়া এলাকায় অবস্থিত। চারদিকে দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড়ের ঢালে কোথাও আঁকা-বাঁকা রাস্তা, পাহাড়ী পাড়া আর রূপালী নদী গুলো যেন শিল্পীর আঁকা ছবি। এই পাহাড় থেকে এক নজরে দেখা যাবে পুরো বান্দরবান শহর। সুর্যোদয় আর সুর্যাস্ত দেখা যেতে পারে এখান থেকেও। নীলাচল পাহাড়ি এলাকাটি অনেকেই স্বর্গভূমি বলে থাকেন। মেঘমুক্ত আকাশে কক্সবাজারর সমুদ্রসৈকতের অপুর্ব দৃশ্য নীলাচল থেকে পর্যটকেরা উপভোগ করতে পারেন। বিশেষকরে নীলাচলে সুর্যাস্তের দৃশ্য আমাদের মনে স্বর্গীয় অনুভূতি আনে। এই জায়গায় বর্ষা, শরৎ কি হেমন্ত— তিন ঋতুতে ছোঁয়া যায় মেঘ। শহর ছেড়ে চট্টগ্রামের পথে প্রায় তিন কিলোমিটার চলার পরেই হাতের বাঁ দিকে ছোট একটি সড়ক এঁকেবেঁকে চলে গেছে নীলাচলে। এ পথে প্রায় দুই কিলোমিটার পাহাড় বেয়ে তাই পৌঁছুতে হয়। মাঝে পথের দুই পাশে ছোট একটি পাড়ায় দেখা যাবে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর মানুষের বসবাস।
নীলাচলে সম্প্রতি নতুন কয়েকটি জায়গা তৈরি করা হয়েছে পর্যটকদের জন্য। এখানকার টিকেট ঘরের পাশে ‘ঝুলন্ত নীলা’ থেকে শুরু করে ক্রমশ নীচের দিকে আরও কয়েকটি বিশ্রামাগার তৈরি করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘নীহারিকা’ এবং ‘ভ্যালেন্টাইন’ পয়েন্ট। পাহাড়ের ঢালে ঢালে সাজানো হয়েছে এ জায়গাগুলো। একটি থেকে আরেকটি একেবারেই আলাদা। একেক জায়গা থেকে সামনের পাহাড়ের দৃশ্যও একেক রকম। তবে মূল নীলাচলের সৌন্দর্য অনেক বেশি। এখান থেকে পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় আরও ভালোভাবে।
নীলাচলের বাড়তি আকর্ষণ হল এখানকার রিসোর্ট। নাম নীলাচল স্কেপ রিসোর্ট। সাধারণ পর্যটকদের জন্য এ জায়গায় সূর্যাস্ত পর্যন্ত অনুমতি আছে। তবে রিসোর্টের অতিথিদের জন্য সর্বক্ষণই খোলা এ জায়গা। আপনি চাইলে নীলাচল স্কেপ রিসোর্টে থাকতে পারেন। নীলাচল স্কেপ রিসোর্টে তিনটি কটেজে ছয়টি কক্ষ আছে। প্রতিটি কক্ষের ভাড়া ৩ হাজার টাকা। এছাড়া রিসোর্টের অতিথিদের জন্য ভালো মানের খাবারের ব্যবস্থা করে থাকেন কর্তৃপক্ষ। যোগাযোগঃ ০১৭৭৭৭৬৫৭৮৯। আর যদি না থাকতে চান তাহলে বান্দরবান বাস স্টেশনের সাথেই অনেক ভালো হোটেল আছে যেগুলো আগের পোস্টে দেয়া হয়েছে।
নীলাচলে প্রবেশমূল্য: নীলাচল পর্যটন কমপ্লেক্সে জনপ্রতি প্রবেশ মূল্য ৩০ টাকা। নীলাচলে যেতে সড়কের টোল পরিশোধ করতে হয়। অটো রিকশা ৩০ টাকা, জিপ ৬০ টাকা। পর্যটকরা সকাল থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নীলাচলে অবস্থান করতে পারবেন।
কিভাবে যাবেনঃ বান্দরবান বাস ষ্টেশন থেকে নীলাচল পর্যটন কমপ্লেক্স যেতে অবস্থানের সময়ানুযায়ী অটো রিকশার ভাড়া পড়বে ৫শ’ থেকে ১ হাজার টাকা। আর চাঁদের গাড়ি কিংবা জিপ গাড়ির ভাড়া পড়বে ১ হাজার ২শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা।

মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রটি বান্দরবন শহরের প্রবেশদ্বার বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কের পাশে অবস্থিত। বান্দরবান জেলা শহরে প্রবেশের ৫ কি:মি: আগে মেঘলা পর্যটন এলাকাটি অবস্থিত। মেঘলায় চিত্তবিনোদনের বিভিন্ন উপকরণের মধ্যে রয়েছে- চিড়িয়াখানা, শিশুপার্ক, সাফারি পার্ক, প্যাডেল বোট, ক্যাবল কার, উন্মুক্ত মঞ্চ ও চা বাগান। এখানে সবুজ প্রকৃতি, লেকের স্বচ্ছ পানি আর পাহাড়ের চূঁড়ায় চড়ে দেখতে পাবেন ঢেউ খেলানো বান্দরবানের নয়নাভিরাম দৃশ্য। বেশ কিছু উঁচু নিচু পাহাড় দ্বারা ঘেরা একটি লেককে ঘিরে গড়ে উঠেছে মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র। ঘন সবুজ গাছ আর লেকের স্বচ্ছ পানি পর্যটকদের প্রকৃতির কাছাকাছি টেনে নিচ্ছে প্রতিনিয়ত।
প্রবেশ মূল্যঃ মেঘলা (Meghla) পর্যটন কমপ্লেক্সে জনপ্রতি প্রবেশ ফি ২০ টাকা এবং গাড়ির পার্কিংয়ের জন্য ১৫০-২০০ টাকা।
বান্দরবান বাস ষ্টেশন থেকে মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স যেতে লোকাল বাসে জনপ্রতি ১০-১২ টাকা এবং টেক্সি রিজার্ভ ১০০-১২০ টাকা, এবং ল্যান্ড ক্রোজার, ল্যান্ড রোভার ও চাঁদের গাড়ী ৪৫০-৫০০ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকে।
মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে রয়েছে জেলা প্রশাসনের একটি সুন্দর রেস্ট হাউজ রয়েছে। যেখানে অবকাশ ভোগ করা যায় ভালভাবে। এখানে রাত্রিযাপনের জন্য চারটি কক্ষ রয়েছে। প্রতি কক্ষ ২৫০০/- (প্রতিদিন)। যে কেউ বুকিংয়ের জন্য ফোন করতে পারেন- ০৩৬১-৬২৭৪১ ও ০৩৬১-৬২৭৪২ নম্বরে। তাছাড়াও বান্দরবানে বাস স্ট্যান্ডের কাছে অসংখ্য রিসোর্ট, হোটেল, মোটল এবং রেস্টহাউজ রয়েছে যা আগের পোস্টে দেয়া হয়েছে। যেখানে ৬০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় রাত্রিযাপন করতে পারবেন।

বান্দরবান রুমা রাস্তার ৮ কিলোমিটার দূরে শৈল প্রপাত অবস্থিত। এটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব সৃষ্টি। সারাক্ষণ ঝর্ণার হিমশীতল পানি এখানে বয়ে যাচ্ছে। এই ঝর্ণার পানিগুলো খুবই স্বচ্ছ। বর্ষাকালে এ ঝর্ণার দৃশ্য দেখা গেলেও ঝর্ণাতে নামা বেশ কঠিন। বছরের বেশিরভাগ সময় দেশী বিদেশী পর্যটকে ভরপুর থাকে। রাস্তার পাশেই শৈল প্রপাত এর অবস্থান হওয়ায় এখানে পর্যটকদের ভিড় বেশি দেখা যায়। এখানে দুর্গম পাহাড়ের কোল ঘেঁষা আদিবাসী বম সমপ্রদায়ের সংগ্রামী জীবন প্রত্যক্ষ করা যায়।
বান্দরবান শহর থেকে টেক্সি, চাঁদের গাড়ি কিংবা প্রাইভেট কার বা জীপ ভাড়া করে শৈলপ্রপাত এ যাওয়া যায়। শহর থেকে জীপ গাড়ীতে ৬০০-৭০০ টাকা এবং চাঁদের গাড়ীতে ৪৫০-৫০০ টাকা লাগবে। যদিও শৈলপ্রপাতকে উদ্দেশ্য করে আলাদা ভাবে এখানে যাবার প্রয়োজন নেই। কারন আপনি যখন চিম্বুক বা নীলগিরি যাবেন, পথেই শৈ্লপ্রপাত পড়বে। কাজেই ভাড়া করা গাড়ী রাস্তার পাশে থামিয়েই বেড়াতে পারেন।

বান্দরবানের উপশহর বালাঘাটাস্থ পুল পাড়া নামক স্থানে স্বর্ণমন্দির এর অবস্থান যা মহাসুখ মন্দির বা বৌদ্ধ ধাতু জাদী নামে পরিচিত। নাম স্বর্ণমন্দির হলেও এখানে স্বর্ণ দিয়ে তৈরি কোন দেব-দেবীও নেই। এটি তার সোনালি রঙের জন্য বর্তমানে স্বর্ণমন্দির নামে খ্যাত। বান্দরবান জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব ৪ কিলোমিটার। সুউচ্চ পাহাড়ের চুড়ার তৈরী সুদৃশ্য এ প্যাগোডা। এটি বুদ্ধ ধর্মালম্বীদের একটি পবিত্র তীর্থস্থান । এখানে দেশ বিদেশ থেকে অনেক বুদ্ধ ধর্মালম্বী দেখতে এবং প্রার্থনা করতে আসেন। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম এই বৌদ্ধ ধাতু জাদী (Buddha Dhatu Jadi) কে স্বর্ণমন্দির (Golden Temple) নামাকরন করা হয়। গৌতমবুদ্ধের সমসাময়িক কালে নির্মিত বিশ্বের সেরা কয়েকটি বুদ্ধ মুর্তির মধ্যে একটি এখানে রয়েছে। প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে এটি নির্মাণ করা হয়। এই প্যাগোডাটি দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার সেরা গুলোর মধ্যে অন্যতম। এই সুউচ্চপাহাড়ের উপর দেবতা পুকুর নামে একটি পানি সম্বলিত ছোট পুকুর আছে। বর্তমানে স্বর্ণমন্দির উপাশনালয়টি বান্দরবান জেলার একটি অন্যতম পর্যটন স্পট হিসাবে পরিগনিত হচ্ছে। এটি বৌদ্ধ ধর্মাম্বলীদের একটি উল্লেখযোগ্য উপাশনালয়। এটির নির্মাণশৈলী মায়ানমার, চীন ও থাইল্যান্ডের বৌদ্ধ টেম্পল গুলোর আদলে তৈরী করা হয়। বান্দরবান ভ্রমণে আপনিও এই জাদী বা স্বর্ণমন্দিরটি একবার স্বচক্ষে দেখে আসতে পারেন। এই প্যাগোডা থেকে বান্দরবানের বালাঘাটা উপশহর ও এর আশপাশের সুন্দর নৈস্বর্গিকদৃশ্য দেখা যায়। এ ছাড়া বান্দরবান রেডিও ষ্টেশন, বান্দরবান চন্দ্রঘোনা যাওয়ার আকাঁবাকাঁ পথ ও দর্শনীয়। এই প্যাগোডা একটি আধুনিক ধর্মীয় স্থাপত্যের নিদর্শন। প্রতিবছর নিদ্দিষ্ট সময়ে এখানে মেলা বসে। এ প্যাগোডাটি পুজারীদের জন্য সারাদিন খোলা থাকে। যদি এই স্বর্ণ মন্দির দেখতে যান তাহলে অবশ্যই সকাল ৮টা ৩০ মিনিট থেতে ১১.৩০ মিনিটের মধ্যে যাবেন, আর যদি সকালে যেতে না চান তাহলে দুপুর ১২টা ৪৫ মিনটি থেকে বিকেল ৬টার মধ্যে যেতে পারেন।
টিকেট মূল্যঃ প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ৫০টাকা।
বান্দরবান বাস ষ্টেশন থেকে রিক্সা অথবা টেক্সি করে যাওয়া যায় । রিক্সা ৩০-৩৫ টাকা এবং টেক্সি রিজার্ভ ১১০-১৩০ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকে। সকাল ৮টা থেকে রাত ১০ পর্যন্ত এখানে গাড়ী চলাচল করে।

প্রথমে আপনাকে বান্দরবান শহরে যেতে হবে। ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন বান্দরবানের উদ্দেশ্যে কয়েকটি পরিবহন কোম্পানির গাড়ি ছেড়ে যায়। যেমন শ্যামলি, হানিফ, ইউনিক, এস আলম, ডলফিন- এর যেকোনো একটি বাসে চড়ে আপনি বান্দরবানের যেতে পারেন। রাত ১০ টায় অথবা সাড়ে ১১টার দিকে কলাবাগান, সায়েদাবাদ বা ফকিরাপুল থেকে এসব বাস বান্দরবানের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। নন এসি বাসে জন প্রতি ভাড়া ৫৫০ টাকা। এসি ৯৫০ টাকা।
চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান যেতে পারেন। বদ্দারহাট থেকে বান্দারবানের উদ্দেশে পূবালী ও পূর্বানী পরিবহনের বাস যায়। এসব বাসে জনপ্রতি ২২০টাকা ভাড়া রাখা হয়।


বান্দরবনের সকল দর্শনীয় স্থান দেখতে এই লিঙ্কে ভিজিট করুনঃ

Explore Bandarban
ভাল লাগলে শেয়ার করুন।

সিলেট ভ্রমন টুর প্রথম দিন

সিলেট- ভোলাগঞ্জ (কোম্পানীগঞ্জ ) সাদা পাথর

ভ্রমনের প্রথম পর্বে আপনাদের আমন্ত্রন।

সময়
১ দিন
ভ্রমনের সময়
যে কোন দিন
যাত্রা শুরু
আম্বারখানা
খরচ
২০০০-৩০০০ টাকা