চেরাপুঞ্জি (Cherrapunji)

blank
শিলিং
October 24, 2020
blank
মেঘনা ভিলেজ হলিডে রিসোর্ট
October 25, 2020
Show all

চেরাপুঞ্জি (Cherrapunji)

blank

চেরাপুঞ্জি (Cherrapunji) পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিপাতের স্থান যা তামাবিল থেকে একেবারেই কাছে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে অবস্থিত। শিলং থেকে ৫৬ কিলোমিটার দূরের এই শহরের উচ্চতা ৪,২৬৭ ফুট। বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে চেরাপুঞ্জি সোজাসুজি কুড়ি কিলোমিটারেরও কম। বাড়ির পাশেই বিশ্বের বৃষ্টিবহুল এই এলাকা, সেখানে আষাঢ় কিংবা শ্রাবণের বৃষ্টি উপভোগ এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। বৃষ্টির মৌসুমে ঘুরে আসুন চেরাপুঞ্জি থেকে। সাথে মেঘালয়ের (Meghalaya) রাজধানী ভারতের অন্যতম পর্যটন শহর শিলং। কেউ কেউ বলেন, দার্জিলিং যদি হয় রূপের রানী তা হলে শিলং (Shillong) হচ্ছে রাজা।

দূরত্ব কুড়ি কিলোমিটারের কম হলেও সীমান্তের যেখানে ইমিগ্রেশন অফিস আছে, সেই তামাবিল থেকে চেরাপুঞ্জি যেতে আপনাকে ঘুরতে হবে প্রায় ৬০ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ। আর এটুকু পথ পেরুতে সময় লাগবে অন্তত দুই ঘণ্টা। শিলংয়ের দূরত্ব এর চেয়ে সামান্য বেশি, সময়ও কিঞ্চিত্ বেশি লাগতে পারে। তবে সীমান্ত পার হয়ে যখন পাহাড়চূড়ার আঁকাবাঁকা পথে চলতে থাকবেন তখন মনে হবে এই দূরত্ব আরও বেশি হলেই বোধহয় ভালো ছিল। চলার পথে আপনাকে সঙ্গ দেবে চারপাশের অসাধারণ সুন্দর সব পাহাড়। কখনও আপনাকে চারপাশ থেকে ঢেকে দেবে মেঘ। প্রকৃতির মধ্যে নিজেকে মনে হবে বিশ্বভ্রমণে বেরিয়ে পড়া যাযাবর। কখনওবা পাহাড়ের ঢালে সরু রাস্তার আরেক পাশেই গভীর খাদ। এ এক ‘ভয়ঙ্কর সুন্দর’ দৃশ্য। চেরাপুঞ্জি মানেই বৃষ্টি। ঘরের জানলা দিয়ে অবিশ্রান্ত ধারা দেখতে ভাল লাগলেও বাইরে বের হলে দরকার পড়তে পারে ছাতা, বর্ষাতি ও রবারের জুতো। রওনা হওয়ার আগে সঙ্গে নিতে ভুলবেন না। সর্দি, কাশি, জ্বর, মাথাব্যাথা ও সাধারণ পেটের অসুখের ওষুধ সঙ্গে রাখা উচিত হবে। মেঘালয়ে সাধারণ মানুষের কথ্য ভাষা খাসিয়া। পর্যটকদের সঙ্গে অবশ্য হিন্দি-ইংরেজি মেশানো এক মিশ্র ভাষায় এরা কথা বলেন।

কখন যাবেন
ঘন বর্ষার দেশ চেরাপুঞ্জিতে বেড়ানোর জন্য বর্ষাকালকে বেছে নিতে পারেন। ঘন বর্ষার দুমাস জুলাই-আগস্ট। বর্ষাকে কাছ থেকে উপভোগ করার জন্য যাবেন এই দুই মাসের যেকোনো সময়।

দর্শনীয় স্থানসমূহ
চেরাপুঞ্জি যাওয়ার পথশোভার তুলনা হয় না। চেরাবাজার ঘিরেই চেরাপুঞ্জি গ্রাম। এখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বসতি। দেখবেন, চেরাবাজারে ছোট ছোট স্থানীয় খাবার হোটেল রয়েছে। চেরাগ্রাম ঘিরে রয়েছে কমলালেবু বাগিচা। খাড়া খাসি পাহাড়ের গা বেয়ে মেঘেরা উঠে আসছে ওপরে। বর্ষণ মৌসুমে খাসি পাহাড় টপকে যেতে পারে না পানিভরা মেঘ। পাহাড়ে বাধা পেয়ে চেরাপুঞ্জি ও মাওসিনরাম অঞ্চলে ঝরে পড়ে অবিশ্রান্ত ধারায় বৃষ্টি। জুলাই মাসেই হয় ৩৬৬ ইঞ্চি বর্ষণ অর্থাৎ সর্বাধিক বৃষ্টি। খাসি সাহিত্য ও সংস্কৃতির শীর্ষস্থানও এই চেরাপুঞ্জি। এই স্থান খ্যাত তার চুনাপাথরের গুহা, কয়লা ও মধুর জন্য। চেরাপুঞ্জির কাছে খাসি পাহাড়ের দক্ষিণ ঢালের মাওসিনরামে বছরে ২৩০০ মিমি বৃষ্টি হয়ে রেকর্ড গড়েছে। মাওসিনরামের আরেক দর্শনীয় স্থান হলো চেরাপুঞ্জির বিস্ময় এক প্রাচীন গুহায় স্ট্যালাগ মাধই পাথরের শিবলিঙ্গ। স্বাভাবিকভাবে এটি গড়ে উঠেছে। আরণ্যক পরিবেশের এই গুহাটির জন্ম-ইতিহাস আজও অজ্ঞাত। দৈর্ঘ্য ও গভীরতাও অজানা। জনশ্রুতি আছে, গারো পাহাড়ের সিজুগুহার সঙ্গে সংযোগ রয়েছে এর। বেশ কয়েকটি মনোলিথ পিলার তোরণ সাজিয়েছে প্রবেশপথে।

চেরাপুঞ্জির আরেক আকর্ষণ বাজার থেকে ৬ কিমি দূরে বিশ্বের চতুর্থ উচ্চতম জলপ্রপাত মোসমাই ফলস। হাজার দুয়েক ফুট উঁচু থেকে কয়েকটি পানির ধারা নামছে। বর্ষায় এখানে ভয়ঙ্কর আকার নেয়। চেরাবাজার থেকে ৩ কিমি দূরে পল কালিকাই ফলস। মোসমাই-এর থেকেও আকর্ষণীয় এটি। এখানে নানা ধর্মীয় আর্কিড ও প্রজাপতি মধুময় করে তুলেছে পরিবেশকে। আবার মেলার পথে ১০ কিমি গিয়ে কেইনরেম ফলসটিও দেখে নিতে পারেন। এখানে পাহাড়ের মাথায় বিরাট প্রাসাদের সারিও দেখবেন। দূর থেকে মনে হবে কোনো এক দুর্গ। কিন্তু দুর্গ নয়, এটি হলো চেরাপুঞ্জির রামকৃষ্ণ মিশন। মনে রাখবেন চেরাপুঞ্জির ডাবল ডেকার রুট ব্রিজে পৌঁছতে সকালে সিঁড়ি বেয়ে ২,৫০০ ফুট নিচে নামতে হবে। আবার বিকেলের মধ্যে ২,৫০০ ফুট সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসতে হবে। হাঁটুর জোর থাকলে তবেই এ পথে এগাবেন। ডাবল ডেকার রুট ব্রিজের সামনেই ঝর্ণার পানি পড়ে কু তৈরি হয়েছে। এখানে গোছল করে পথের ক্লান্তি দূর করতে পারেন। ঝর্ণার পাশে কাপড়-জামা বদলানোর ছোট ঘর আছে।

একনজরে চেরাপুঞ্জির দর্শনীয় স্থানসমূহ –
রামকৃষ্ণ মিশন (স্কুল+মন্দির+মিউজিয়াম)
সেভেন সিস্টার ফলস
মকটক ভিউ পয়েন্ট
মোসমাই কেইভ
ইকো পার্ক
খরম্মা স্টোন
থাংখারাং পার্ক
নোহকালিকাই ফলস
ডাবল ডেকার রুট ব্রিজ
রেইনবো ফলস
আরওয়া কেইভ

চেরাপুঞ্জিতে খাওয়া দাওয়া
চেরাপুঞ্জি হলিডে রিসোর্টে থাকলে স্থানীয় খাদ্য জাদো স্টেম চিকেন ও চিকেন নেইয়ং অবশ্যই খেয়ে দেখবেন। জাদো স্টেম চিকেন হলো স্থানীয় চিকেন বিরিয়ানি আর চিকেন নেইয়ং হলো কালো তিল সহযোগে প্রস্তুত চিকেনের পদ। এই দুটি পদ একসঙ্গে খাওয়াই ভালো। অবশ্য যারা হালাল-হারাম বাছাই করেন তারা চিকেন ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক জবাই করা হয়েছে কিনা আগেই জিজ্ঞাসা করে নিবেন।

কিভাবে ঘুরবেন
শিলং, চেরাপুঞ্জি, মওসিনরাম, নারটিয়াং এবং মাওলিনং বেড়ানোর ভালো উপায় হলো মেঘালয় পর্যটন দপ্তর আয়োজিত কন্ডাক্টেড ট্যুরে অংশ নেওয়া। গাইডের তত্ত্বাবধানে এই ট্যুর শুরু হয় পুলিশবাজারের জেল রোডে অবস্থিত ট্যুরিস্ট ইনফরমেশন সেন্টার থেকে। ৭-৮ জনের দল হলে সুমো টাটা গাড়ি ভাড়া করাই ভালো। এর ফলে ট্যুরিস্ট প্লেসগুলোর তালিকা নিজের ইচ্ছানুসারে তৈরি করা যাবে। পুলিশবাজারের ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে ট্যাক্সিভাড়ার তালিকা দেওয়া আছে।

শিলং থেকে রওনা হওয়ার প্রায় পঞ্চাশ মিনিট পর ঝুলন্ত লোহার ব্রিজ পেরিয়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়বে। অদূরেই রয়েছে দুয়ানসিং সিয়েম ভিউ পয়েন্ট। এখান থেকে মাওডক ভ্যালির শোভা দৃষ্টিগোচর হয়। চেরাপুঞ্জির একটু আগেই পড়বে সোহরাবাজার। এখানে কিনতে পাওয়া যাবে কমলালেবুর মধু, দারচিনি আর চেরি ব্র্যান্ডি। শীতের মওসুমে পাওয়া যাবে কমলালেবু।

সোহরা (Sohra) থেকে চেরাপুঞ্জির দিকে এগিয়ে গেলেই দূর থেকে চোখে পড়বে রামকৃষ্ণ মিশনের ঘরবাড়ি এবং মন্দিরের চূড়া। এই অঞ্চলে শিক্ষার বিস্তার এবং সমাজসেবামূলক কাজে রামকৃষ্ণ মিশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। আশ্রম পরিসরে রয়েছে রামকৃষ্ণ মিশন, বিদ্যালয়, দাতব্য চিকিৎসালয় এবং নৃতাত্ত্বিক সংগ্রহশালা। রামকৃষ্ণ মিশন দেখে পরবর্তী গন্তব্য নোহকালিকাই ফলস। এই জলপ্রপাতটি এশিয়ার দ্বিতীয় উচ্চতম বলে দাবি করা হয়।

শিলং থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরবর্তী মওসিনরাম জায়গাটির অবস্থান চেরাপুঞ্জির পশ্চিমে। মওসিনরাম সর্বাধিক বৃষ্টিপাতের স্থান রূপেই বিখ্যাত। মওসিনরামে বেড়াতে গিয়ে যেসব দর্শনীয় স্থান দেখার সুযোগ হয়, তাদের মধ্যে দুটি নাম বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। এদের মধ্যে একটি হলো ক্রেমমাওজুমবুইঁ এবং অপরটির নাম জাবরেম।
ক্রেমমাওজুমবুইঁ একটি প্রাকৃতিক গুহার নাম। একজন পথপ্রদর্শককে সঙ্গে নিয়ে এই গুহার ভিতরে প্রবেশ করা এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। মেঘালয়ের খাসি এবং গারো পাহাড়ে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য প্রাকৃতিক গুহা। এ পর্যন্ত আটশ’র বেশি গুহার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। জাকরেম জায়গাটি উষ্ণ প্রস্রবণের জন্য বিখ্যাত। স্থানীয় মানুষজনের বিশ্বাস, প্রস্রবণের পানিতে গোছল করলে নানারকম চর্মরোগ সেরে যায়। মওসিনরামের অন্য দুটি দেখার জায়গা হলো খ্রেং খ্রেং রক এবং রিতমাংসির ভিউ পয়েন্ট।

চেরাপুঞ্জিতে কোথায় থাকবেন
সবচেয়ে ভাল হল Booking.com থেকে হোটেল বুকিং দেয়া। তারপরও কিছু লিস্ট আপনাদের দেয়া হল। আপনাদের সুবিধা মত হোটেল বুকিং দিবেন।

চেরাপুঞ্জির রূপ, রস আর রহস্যকে পুরোপুরি উপভোগ করতে একটা রাত এখানে থাকতেই হবে। রাত্রিবাসের জন্য সেরা জায়গাটি হলো চেরাপুঞ্জি থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে লাইকিনসিউ গ্রামে অবস্থিত চেরাপুঞ্জি হলিডে রিসোর্টস (Cherrapunjee Holiday Resort)। স্ট্যার্ন্ডড ডাবল রুমের ঘরের ভাড়া ৩,০৬৫ রুপি, ডিলাক্স রুমের ভাড়া ৩,৩০০ রুপি, এক্সিকিউটিভ রুমের ভাড়া ৩,৮২৫ রুপি। এই খরচের মধ্যে ব্রেকফাস্টে অন্তর্ভূক্ত। যোগাযোগঃ +৯১৯৪৩৬১১৫৯২৫
পালা রিসোর্ট (Pala Resort): ৩৮৫০ রুপী থেকে শুরু করে ৪৯৫০ রুপী পর্যন্ত বিভিন্ন মানের রুম।
ক্যাফে চেরাপুঞ্জি (Cafe Chrerrapunjee): তাবু এবং কটেজ দুটোরই ব্যবস্থা আছে। তাবুর ভাড়া পড়বে ১০০০-২৮৪২ রুপী এর মধ্যে। আর কটেজের ভাড়া পড়বে ৪০৪৫ রুপী। যোগাযোগঃ +৯১৮০ ১৪৮৫৯৭০০

খরচ
সব কিছুর দাম বেড়ে চলেছে তাতে খরচ সম্পর্কে একটা আইডিয়া দেয়া যায় মাত্র! খরচ কমিয়ে চলতে পারলে ১০ হাজার প্রতিজনে ঢাকা-শিলং-চেরাপুঞ্জি-ঢাকা ট্যুর দিয়ে আসতে পারবেন। আর বিলাসিতা করতে গেলে আপনার যত ইচ্ছা ততই খরচ করতে পারেন। খরচ কমাতে চাইলে ঢাকা থেকে সিলেট যাবেন ট্রেনে। সেখান থেকে তামাবিল যাবেন বাসে, কষ্ট মনে হলে সিএনজিতে। সেখান থেকে শিলং যেতে ট্যাক্সি ছাড়া উপায় নেই। শিলং এবং চেরাপুঞ্জি ঘুরতে ট্যাক্সি ব্যবহার করলে খরচ পড়বে বেশি। শিলং এর জন্য ১৫০০ রুপি, এবং চেরাপুঞ্জির জন্য ১০০০ রুপি। এটা কামাতে পারেন বাস ব্যবহার করে। ভারত সরকারের ট্যুরিষ্ট বাস আছে, যেটা আগের দিন বিকালে ব্যুকিং করতে হয়। ভাড়া শিলং এবং চেরাপুঞ্জির জন্য আলাদা আলাদা ভাবে ৩০০ রুপির আশেপাশে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *