বালি, ইন্দোনেশিয়ার একটা দ্বীপ। অত্যন্ত সুন্দর সেখানকার বিচ আর পানিগুলো। অন এরাইভাল ভিসা আর সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার জন্য ইদানিংকালে বালিতে টুরিস্টদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ইন্দোনেশিয়া মুসলিম দেশ হলেও একমাত্র বালিতে মুসলমান নেই বললেই চলে। অপরূপ সুন্দর এই দেশে বাংলাদেশিরা ২০২২ সাল পর্যন্ত অন-এরাইভাল ভিসা নিয়ে ঘুরতে পেরেছিল। কিন্তু ২০২৩ থেকে বালির অন-এরাইভাল ভিসা বাংলাদেশিদের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখন অনলাইনে সিঙ্গেল এন্ট্রি B211A ভিসা আবেদন করতে হবে। আর ভিসার কন্ডিশন আগের থেলে অনেক কঠিন হয়ে যাওয়ায় খুব কম টুরিস্ট বালি ঘুরতে যেতে পারবেন। ভিসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন।
যাত্রা শুরুর প্রস্তুতিঃ
ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা হল বালি। বালির এয়ারপোর্টের নাম ডেনপাসার। ঢাকা থেকে সরাসরি বালির ফ্লাইট নাই। আপনাকে হয় থাইল্যান্ড হয়ে কানেক্টিং ফ্লাইটে যেতে হবে অথবা মালয়শিয়ার কুয়ালালামপুরে ট্রানজিট নিতে হবে অথবা সিঙ্গাপুর হয়ে কানেক্টিং ফ্লাইটে যেতে হবে। সে জন্য বালিতে যেতে এয়ার টিকিটের দাম একটু বেশি পড়বে। বছরে যদি অফার পান তাহলে ৫০০০০ টাকায় আপ-ডাউন পেতে পারেন। Air Aisa তে থাইল্যান্ড হয়ে বালি গেলে ভাল কারন বছরে প্রায়ই Air Aisa অফার দিয়ে থাকে। কুয়ালালামপুর হয়ে গেলে অযথা দীর্ঘসময় এয়ারপোর্টে ট্রাঞ্জিটে বসে থাকতে হবে। ট্রাঞ্জিটে ৮-১৪ ঘন্টা সময় লাগতে পারে।
যাত্রা শুরু এবং ইমিগ্রেশনঃ
থাইল্যান্ড অথবা মালয়শিয়া হয়ে যেতে চাইলে ঢাকা থেকে ফ্লাইটগুলো রাত ১২ টায় থাকে। আর সিঙ্গাপুর হয়ে গেলে সকালে অথবা রাতে ফ্লাইটে যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে থাইল্যান্ড অথবা কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্ট পার করে পরের দিন দুপুরে/রাতে বালির ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট ডেনপাসার এ পৌঁছানোর পর ইমিগ্রেশন এ যাবেন।
ট্রানজিট
থাইল্যান্ড অথবা কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টে ট্রানজিট ৮-১৮ ঘন্টা হতে পারে। ১২ ঘন্টার উপর হলেই ট্রানজিট ভিসা লাগবে। টিকিট কাটার সময় দেখবেন যেন ট্রানজিট ৮ ঘন্টার কম হয়। মেইন বিল্ডিং এ বোর্ডিং গেট ছাড়া আর কিছু নেই। ঘুরার জন্য এবং খাবার জন্য এয়ারোট্রেন (ফ্রি) ধরে মেইন টার্মিনাল বিল্ডিং থেকে স্যাটেলাইট টার্মিনাল বিল্ডিং এ যেতে হবে। সেখানে বার্গার কিং, ম্যাকডোনাল্ডস, স্টারবাকস সহ অনেক খাবার রেস্টুরেন্ট আছে। বিল পেমেন্ট ক্রেডিট কার্ডে। ফ্রি ওয়াইফাই সহ সময় কাটানোর জন্য এখানে আরও আছে 'জাংগল ব্রডওয়াক'। জংগলের মধ্য দিয়ে হাঁটা আর ওয়াটার ফল দেখার অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর একটা জায়গা। এছাড়াও সময় কাটানোর জন্য এখানে ফ্রি মুভি লাউঞ্জও আছে।
এয়ারপোর্ট হতে হোটেল যাত্রাঃ
অনলাইনে Agoda সহ অনেক সাইট আছে যাদের মাধ্যমে গাড়ী আগে থেকে বুক করা যায়। হোটেলকে বলা যায় গাড়ি পাঠাতে বা এয়ারপোর্ট হতে লোকাল টেক্সি নেয়া যায়। একা থাকলে বা লাগেজ কম থাকলে সবচেয়ে ভাল হবে মেইন এয়ারপোর্ট হতে বাইরে পার্কিং এ যেয়ে Grab নেয়া, সবচেয়ে কম খরচ Grab এ। আমাদের দেশের Uber এর মত। এয়ারপোর্ট থেকে কুটা (বালির দর্শনীয় জায়গা যেখানে টুরিস্ট বেশি যায়) এর ভাড়া Grab প্রায় ৪০,০০০ থেকে ৫০,০০০ ইন্দো. রুপি, আর লোকাল টেক্সিতে প্রায় ১.৫-২ লাখ ইন্দো রূপি নিবে, হোটেল থেকে গাড়ি পাঠাতে বললে ২.৫ লাখ ইন্দো. রুপি নিবে। টাকার এমাউন্ট লাখ থেকে ভয় পাওয়ার কিছু নাই। ওদের টাকা শুরু হয় ১০০০ টাকার নোট দিয়ে। ইন্দো রূপি যেটা হবে সেটাকে ১০০০ দিয়ে ভাগ দিবেন, তারপর ৬ দিয়ে গুন দিলে বাংলাদেশি টাকার সমপরিমান টাকার মুল্য পেয়ে যাবেন। তাঁর মানে, ৫০,০০০ ইন্দো. রুপি = ৩০০ টাকা।
ডলার ভাঙ্গানো এবুং সীম কিনাঃ
এয়ারপোর্টে ডলার কম ভাঙ্গাবেন। ৫০ ডলার ভাঙ্গালেই হয়। এয়ারপোর্ট থেকে পাসপোর্ট দিয়ে টেলকমসেল সীম কিনবেন যেটা সাধারণত টুরিস্টরা ব্যাবহার করে। সিমের দাম এক এক যায়গায় এক একরকম। কোন ব্যালেন্স ছাড়া আসল দাম মাত্র ১০,০০০ ইন্দো. রুপি (৬০ টাকা)। কিন্তু সিম কিনে আপনি ঠকবেনই, ৬ জিবি ইন্টারনেট সহ এর দাম নিবে অবস্তাভেবে ১ থেকে ২.৫ লাখ ইন্দো. রুপি।
হোটেলঃ
থাকবেন কুটা এলাকায়, Booking.com অথবা Agoda থেকে বুকিং টুরের ২ মাস আগেই নিয়ে নিবেন, নন রিফান্ডেবল উইথ ব্রেকফাস্ট। এতে অনেক কম পরবে। যাওয়ার তারিখ নিশ্চিত না হলে ফ্রি ক্যান্সেলেশন অপশনে যাওয়ায় ভাল। থাকার জন্য কুটা এলাকা বালির সেন্টারে পরে। অনেকে নুসা দুয়া, সেমিনায়ক বা উবুদ এলাকায় থাকে। অনেকে ২/৩ দিন পর পর শিফট করে। ভাড়া ডিপেন্ড করে। দিনে ২৫ ইউ এস ডলারে কুটা এলাকায় মানসম্পন্ন ডাবল রুম পাওয়া সম্ভব। প্রায় প্রত্যেক হোটেল বা রিসোর্টে সুইমিং পুল আছে, অনেক রিসোর্টে আবার প্রাইভেট সি বিচও আছে। Booking.com এর অনেক হোটেলে আমাদের ১০% ডিস্কাউন্ট আছে। চাইলে নিতে পারেন।
যাতায়াতঃ
একমাত্র মাধ্যম টেক্সি অথবা বাইক। গ্রাব, গোজেক, ব্লু বার্ড অথবা লোকাল টাক্সি। ভাল হবে Grab এবং Gojek এর Apps ডাউনলোড করে নিয়ে যাওয়া। ২ টাই লাগবে কারন অনেকস্থানে Grab পাবেন না। কমন যায়গাগুলোতে Grab এবং Gojek এর ভাড়া তুলনা করে কমটাতে যাওয়া যায়। ঘন্টাচুক্তি হিসেবে টেক্সি ফিক্সড করে নেয়া যায়, দিনে ৮-১০ ঘন্টা, ৪-৬ লাখ রুপি নিবে। দিনে ১/২ টা স্পটে গেলে Grab এবং Gojek সাশ্রয়ী, আর ৪/৫ টা স্থানে গেলে ঘন্টা চুক্তি সাশ্রয়ী। পরিবার ছাড়া গেলে বাইক ভাড়া নিলে সবচেয়ে সাশ্রয়ী। সারাদিনের জন্য 75K রুপি নিবে বাইকে। মানে ৪৫০ টাকা মাত্র !
মানি এক্সচেঞ্জঃ
বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জ এ অনেক পার্থক্য হয়। ১ ইউ এস ডলারে ১৩ হাজার থেকে ১৪ হাজার ৯০০ পর্যন্ত দেখা যায়। লোভে পরা যাবেনা। শুধুমাত্র অথরাইজড মানি এক্সচেঞ্জ থেকে ভাংগাবেন। রেট কম পেলেও। ১ ডলার = ১৩,৮৭৫ ইন্দো. রুপি পেলে তা ভাল রেট ও সেইফ। ফ্রডের পাল্লায় পরলে আম-ছালা সবই যাবে। ১ ইন্দো. রুপি = ০.০০৬১ টাকা।
খাওয়া-দাওয়াঃ
বার্গার কিং, ইন্ডিয়ান ফুড খেতে পারেন। সি ফুড অনেক পাওয়া যায়। খাবারের জন্য ভাল পরিমান বাজেট রাখতে হবে। লোকাল খাবার মশল্লার গন্ধের জন্য খাওয়া কস্ট। তবে নাসি গোরেং (ফ্রাইড রাইস), মী গোরেং (নূডুলস) মোটামুটি ভালই লাগবে কম খরচে।
ঘুরা-ঘুরিঃ
বালিতে মিনিমাম ৭ দিন থাকা উচিত। এখানে ঘুরার জন্য মোটা দাগে যে জায়গাগুলো আছে তা হল-
* বালির বিচসমূহ | * উবুদ মার্কেট ও উবুদ এলাকা | * নুসা পেনিদা আইল্যান্ড | * নুসা ল্যাম্বুগান আইল্যান্ড | * গিলি গিলি আইল্যান্ড | * বিভিন্ন শপিং এলাকা
★ কুটা বিচ:
কুটা বিচ আমাদের কক্সবাজারের মতো অনেক লম্বা। বিচের পাড়ে কিছু বিচ রেস্টুরেন্ট আছে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, Oceans 27 Beach Club & Grill. বিচে প্রচুর প্রবাল এর টুকরো আছে। পানি বালুমিশ্রিত হলেও মোটামুটি ভাল। এখানে এক বিকেল বিচ ও সুর্যাস্ত দেখার জন্য প্ল্যান করা যায়।
★ নুসা দুয়া বিচ:
কুটা থেকে বাইক বা টেক্সিতে যাওয়া যায়। অনেক লম্বা বিচ, নুসা দুয়া থেকে অয়োদ্ধা পর্যন্ত। এখানকার বিচের পানি ময়লা ও ঘাস মিশ্রিত। বিচ প্রবাল আর ভাংগা শামুক- ঝিনুকে ভর্তি। সাগরের কাছে বালি বেশ মোটা ও ধারাল। একটু সমস্যা হলেও এই বিচ অনেক ভাল লাগবে। Grab করে কুটা থেকে নুসা দুয়া বিচ গ্রিল ক্লাব। সেখানে ৫,০০০ রুপি এন্ট্রি ফি এই বিচে ঢুকবেন। বিচে সময় কাটিয়ে রিসোর্টের সুইমিং পুলে দাপাদাপি করতে পারেন। পরে নুসা দুয়া বিচ গ্রিল ক্লাবে লাঞ্চ করতে পারেন। এখানের খাবার খুবই সুস্বাদু। তারপর বিচ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে যাবেন অয়োদ্ধা বিচে, এটা পাবলিক বিচ। সেখান থেকে আবার Gojek টেক্সিতে সামান্য দুরেই ওয়াটার ব্লো ঘুরে আসতে পারেন।
★ ওয়াটার ব্লো:
এখানে সাগরের পাড়ে পানির ঢেউ আছড়ে মারে, এতো জোরে যে পানি ছিটকে অনেক দুর আসে। পানিতে রঙধনুর সৃষ্টি হয়। উল্লেখযোগ্য একটি টুরিস্ট স্পট। এন্ট্রি ফি নেই। এ মাস্ট ভিজিট প্লেস। নুসা দুয়া এবং ওয়াটার ব্লো একদিনে প্লান করা যায়।
★ সুলুবান বিচ:
সুলুবান বিচ এবং উলুউটু টেম্পল কাছাকাছি আর এক দিনে প্লান করা যায়। একে হিডেন বিচও বলা যায়। এখানে যেতে আসতে পায়ের জোড় থাকা প্রয়োজন। অনেক নিচ পর্যন্ত সিঁড়ি ভেঙে নামতে হয়। একেবারে নিচে নামলে দেখা যাবে দুই দিকে পাহাড় আর মাঝে বালি। সামান্য হাঁটলেই খাঁজ কাটা পাহাড়ের মাঝেই এই বিচ দেখা যাবে। এখানে সাগরের পানি বেশ পরিষ্কার। বিচ ছোট আর প্রচুর প্রবাল আর শামুক-ঝিনুক ভাঙা টুকরো আছে তাই এখানে হাঁটতে একটু সমস্যা হতে পারে। কিন্তু এই হিডেন বিচের সোন্দর্যের কাছে সেটা কিছুই না। এই বিচের পানিতে নামা মাস্ট। এই বিচে অনেকে সার্ফিং করে থাকে। এই বিচের কাছেই সুইমিংপুলসহ আছে ডেলপি ক্যাফে। খাবারের দাম কস্টলি। অবশ্য বেশিরভাগ টুরিস্টরাই উপরে না যেয়ে নিচে দিয়েই সরাসরি বিচে চলে যায়।
★ প্যাডাং প্যাডাং বিচ:
সুলুবান বিচ থেকে এ ২০-২৫ মিনিটের যাত্রা। এখানে এন্ট্রি ফি আছে, আডাল্ট ১৫ আর কিড ১০ হাজার রুপি। এদের ভাল ওয়াশরুম আছে, সাগরের পানিতে নামার পর এর প্রয়োজন হবে। এটাও খুব সুন্দর ছোট একটা বিচ। এখানেও সিঁড়ি দিয়ে কিছুটা নামতে হয় মূল বিচে যেতে। পানি পরিস্কার, ঢেউ কম, অনেকদুর পর্যন্ত হেঁটেই যাওয়া যায়। এখানকার পাড়েও প্রবাল আর শামুকের ভাঙা টুকরো আছে ফলে সাগরের কাছের বালিতে হাঁটতে একটু কস্ট হতে পারে। কিন্তু সৌন্দর্য বিবেচনায় এই সামান্য কস্ট কিছুই না। এখানে সারি সারি বিচ আমব্রেলা আর সান বেড আছে, ভাড়া ২-২.৫ লাখ। এই বিচও ওয়ান অব দি বেস্ট বিচ।
★ ড্রিমল্যান্ড বিচ:
এখানকার বিচের আলাদা পার্কিং আছে। সেখানেই গাড়ি রাখতে হয়। ভাড়া ২০,০০০ রুপি। পার্কিং থেকে ওদের আলাদা টুরিস্ট বাস সার্ভিস আছে বিচ পর্যন্ত যাবার জন্য। বাস থেকে নামলে এক সারিতে কিছু রেস্টুরেন্ট আর অন্যান্য দোকান। ড্রিম কর্নার রেস্তোরাঁয় লাঞ্চ করতে পারেন। খাবার ভাল। এই বিচটা ও বেশি বড় না। সারি সারি বিচ ছাতা। এখানকাত পানি খুবই পরিস্কার এবং ফ্রেশ। কোন ময়লা নেই। ঢেউ অনেক বড় থাকায় এই বিচ ও সার্ফিং এর জন্য বেশ উপযুক্ত। এখানেও পানিতে নামা মাস্ট। এই বিচের সৌন্দর্যও অত্যন্ত দৃষ্টি নন্দন। ফেরত আসতে ইচ্ছা করবেনা।
জিম্বারান বিচ
অনেক লম্বা একটা বিচ। এই বিচে সারি সারি বিচ ছাতাসহ চেয়ার। পাড়ে সি ফুডের অনেক রেস্টুরেন্ট। বিচে অনেক চেয়ার টেবিল আছে খাবার জন্য। এখানে পানি কিছুটা বালি মিশ্রিত। এই বিচ সুর্যাস্ত দেখা আর সি ফুডের জন্য বিখ্যাত। এখানে সুর্যাস্তের আগেই গিয়ে একটা টেবিল দখল করতে হয়। অপরুপ সুর্যাস্ত দেখে কিছু সি ফুডের অর্ডার দিতে পারেন। দাম আইটেম ভেদে প্রায় ৫-১০ লাখ ইন্দো. রুপি। প্রতি টেবিলে একটা করে কাঁচঘেরা ক্যান্ডেল জ্বালানো। সাগরের অপার্থিব গর্জন আর বাতাসে বসে আলো-আঁধারি অপূর্ব পরিবেশে সি ফুড। এরই মাঝে একদল মিউজিসিয়ান এসে চমৎকার লাইভ লোকাল গান আর বাজনা পরিবেশন করবে, সব মিলিয়ে অভূতপূর্ব এক পরিবেশ, কখন সময় কেটে যাবে টেরই পাওয়া যায় না।
★ পটেটো হেড বিচ
এই বিচটা পটেটো এর মতো। এই জায়গাটা এক কথায় মাস্তি করার যায়গা। পটেটো হেড বিচের পাশেই পটেটো হেড বিচ ক্লাব। এই বিচে ঢোকার আলাদা সিকিউরড গেইট আছে, যেখানে চেকিং করে ধুকতে হয়। এন্ট্রি ফি নেই। ইউ টাইপের ক্লাব ও রেস্টুরেন্ট, মাঝে গ্রিন আর ইনফিনিটি সুইমিং পুল। হাজারো টুরিস্ট সান বেডে বসে রিলাক্স করছে। সকাল ১১ টার দিকে সকল সানবেড ফুল। এগুলার ভাড়া ১ মিলিয়ন ইন্দো. রুপি (প্রায় ৬,০০০ টাকা)। ডাব এর দাম ৬৫ লাখ রুপি (৩৫০ টাকা !!)। কোন বসার যায়গা পাওয়া যায়না। এখানে বিচের পানি খুবই ময়লা। বিচ ভাঙা প্রবাল আর শামুকে ভর্তি। তবে কারো যদি ঝিনুক কুড়াতে ভাললাগে, এখানে অনেক কুড়াতে পারবেন। বিচ থেকে এসে নেমে যেতে পারেন ইনফিনিটি সুইমিংপুলে। অনেকক্ষন দাপাদাপি করতে পারবেন। এখান থেকে সমূদ্রের খুবই সুন্দর ভিউ পাওয়া যায়। একটা জিনিস লক্ষ করা যায় যে, আমরা বাংগালীরা শরীরের উপড় অনেক প্রেশার দিয়ে অল্প সময়ে সব ঘুরে দেখতে চাই, যাকে বলে '১৬ আনা উসুল'। আর বিদেশীরা যায় রিলাক্স করতে, তারা কোন বিচে গেল হয়তো ৫-৭ ঘন্টা সেখানেই কাটিয়ে দেয়। এটাই প্রকৃত ভ্রমন। এখানে খাবার কস্টলি হলেও স্বাদ ভাল। ওভালঅল, হাইলি রেকোমেন্ডেড।
★★ সানুর বিচ
পরিস্কার ও টুরিস্ট ফ্রেন্ডলী এবং ভীড় ছাড়া এক বিচ। এখানের সূর্যাস্তের দৃশ্য সুন্দর। কিন্তু সূর্যোদয়ের দৃশ্য আরো বেশি সুন্দর। আশে-পাশে অনেক বার ও রেস্টুরেন্ট আছে। এখানেই হল সানুর পোর্ট আছে যেখান থেকে নুসা পেনিদা বা গিলি গিলি আইল্যান্ডে যাওয়া যায়।
কোন লোকাল এজেন্সি থেকে নুসা পেনিদা যাওয়া, লাঞ্চ, স্নরকলিং, ঘুরা, হোটেল থেকে পিক আপ, ড্রপ সব সহ প্যাকেজ আছে। কুটা বা যেকোন এলাকায় অনেক এজেন্সি আছে। নিজে নিজে সব করতে চাইলে সানুর চলে যাবেন অনেক সকালে, সেখান থেকে ফার্স্ট বোট ভাড়ার জন্য বিচে অনেক কোম্পানি আছে, সবার একই রেট। স্যান্ডেল নিয়ে যেতে হবে কারন পানিতে নেমে তারপর বোটে উঠতে হয়। সানুর থেকে ফার্স্ট বোটে যেতে ৩০-৪০ মিনিটের মতো লাগে, ভাড়া ৪ লাখ রুপি (প্রায় ২,৫০০ টাকা) যাওয়া ও ফেরত। বোট এর সময় সকাল ৮ টা, ১১ টা, ১৫.৩০ আর ১৭.৪৫ ঘটিকা আর পেনিদা থেকে ফেরত এর সময় সকাল ৭টা, ৯ টা, ১৪.৩০ আর ১৭.০০ ঘটিকা। যাওয়া আসার টিকিট একসাথেই দিবে, তাই টিকিট অনেক যত্ন করে রাখবেন। টিকিট হারালে আবার টিকিট কাটা লাগবে। বোটে করে যাওয়ার পর নামতে হবে নুসা পেনিদার ওয়েস্টার্ন সাইডে। সেখানে যেয়ে গাড়ি বা বাইক ভাড়া করে প্রথমে হোটেলে উঠবেন। এখানের গাড়ি ভাড়া অনেক বেশি। ১ কিঃমিঃ দূরে হোটেলে নিয়ে যেতে আপনার কাছে ৩ লাখ রূপি, মানে ১৮০০ টাকা চেয়ে বসতে পারে!! চেষ্টা করবেন Booking.com অথবা Agoda থেকে আগেই হোটেল বুক করে রাখতে। নুসা পেনিদাতে যেখানে বোট থেকে নামবেন তাঁর ১ কিঃমিঃ এর মধ্যে অনেক হোটেল আছে। হেঁটেই হোটেলে যাবেন যদি পারেন। একা থাকলে বাইক নিতে পারেন। হোটেলে প্রথম দিন রিল্যাক্স করে পরের দিন থেকে টুরিস্ট স্পটে যাওয়া যায়। গাড়ি ভাড়া সারাদিন প্রায় ৫-৭ লাখ রুপি (৩,০০০-৪,০০০ টাকা)। বাইক ভাড়া সারাদিনে ৪০০ টাকা, তেল নিজের ভরতে হবে। নিজে বাইক চালানো খুবই রিস্কি কারন যাবার রাস্তা ভয়াবহ খারাপ। টুরিস্ট স্পটগুলো হলঃ
★ কেলিংকিং বিচ ★ ব্রোকেন বিচ ★ এঞ্জেল বিলাবং ★ ক্রিস্টাল বে
সবগুলো জায়গাই অসম্ভব সুন্দর এবং কোনটাই মিস করার মতো না। এখানকার পানি অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর রকম নীল। প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলো খুবই ভাল লাগবে। একদিনেই সব স্থান কাভার করা সম্ভব।
নুসা লেম্বুগান আর নুসা পেনিদা খুবই কাছাকাছি। এই দুইটা একই দিনে দেখা যাবে কিন্তু শরীরের উপড় অনেক প্রেশার পরবে। একই সাথে প্লান করলে নুসা পেনিদায় একদিন থাকা উচিত। এটাও অত্যন্ত সুন্দর একটি জায়গা। টুরিস্ট স্পটগুলো হলঃ
- ডেভিলস টিয়ার - ড্রিম বিচ - ইয়োলো ব্রিজ - মাশরুম বে ইত্যাদি।
এখারকার পানিও অসম্ভব সুন্দর ও নীল। সম্ভব হলে পেনিদা আর লেম্বুগান দুইটাতেই যাওয়া উচিত।
গিলি গিলি আইল্যান্ড জায়গাটা বালি থেকে বেশ দূরে। সময় থাকলে সেখানেও যাওয়া যায়। এখানে কাছাকাছি তিনটা দ্বীপ আছে। Gili Trawangan, Gili Meno Gili Air Island. সময়, খরচ, দুরত্ব, কস্ট ইত্যাদি বিবেচনা করে গিলির চেয়ে নুসা পেনিদা/লেম্বুগান অথবা নুসা পেনিদা ও নুসা লেম্বুগান একত্রে যাওয়া রেকমেন্ডেড।
★ উবুদ মার্কেট
মাংকি ফরেস্ট পার হয়ে একটু সামনেই উবুদ মার্কেট। এই মার্কেটে অনেক ধরনের শো পিস, কাপড়, বেতের ব্যাগ, হোম ডেকরেশনের জিনিসপত্র ইত্যাদি পাওয়া যায়। কিন্তু নির্লজ্জভাবে দামাদামি করতে হবে। যেমন, ২ লাখ রুপির জিনিস ৫০,০০০ এ কিনতে চেষ্টা করবেন।
★ বিচওয়াক শপিং মল
এটা কুটা এলাকায়। ব্রান্ড আইটেমের শপিং মল। অনেক বড় এবং অনেক কস্টলি। ঘুরার জন্য যাওয়া যেতে পারে।
★ ডিসকভারী শপিং মল
সুলভ মুল্যের শপিং মল। এখানে ছেলে-মেয়ে উভয়ের কাপড়, জিন্স, সুন্দর টি শার্ট, বাচ্চাদের কাপড়, জুয়েলারি ইত্যাদি কেনা যেতে পারে। বালির মানুষদের কোমর অনেক চিকন। জিন্স কোমর ২৭ এর বেশি হয় না।
★ বিনতাং সুপার মার্কেট
সেমিনায়ক এলাকায়। ভাড়া ২৫-৩০ হাজার রুপি। সব ধরনের জিনিস পাওয়া যায়। বিভিন্ন ধরনের টয়লেট্রিজ, কসমেটিকস, চকলেট, ইস্ট বালির বিখ্যাত কাজুবাদাম, খেলনা হাজারও রকমের জিনিস এখানে পাবেন। এটা একটা মাস্ট গোয়িং প্লেস।
★ কৃশ্না শপিং মল
কুটার কাছে। বালিনিজ লোকাল প্রোডাক্ট পাওয়া যায়। মেইনলি ব্যাগ, সুভেনির আইটেম ইত্যাদি সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়।
উল্লেখযোগ্য যে দিক সব সময় মাথায় রাখবেনঃ