পঞ্চগড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা (Kangchenjunga)

blank
চিম্বুক
October 29, 2020
blank
রাতারগুলে সরকারি ফী নির্ধারণ !
November 2, 2020
Show all

পঞ্চগড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা (Kangchenjunga)

blank

পঞ্চগড় (Panchagarh) হলো বাংলাদেশের সর্বউত্তরের জেলা যেখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা (Kangchenjunga) দেখা যায়, যার তিন দিকেই ভারতের প্রায় ২৮৮ কিলোমিটার সীমানা-প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। এর উত্তর দিকেই ভারতের দার্জিলিং জেলা। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা সদরে একটি ঐতিহাসিক ডাকবাংলো আছে। এর নির্মাণ কৌশল অনেকটা ভিক্টোরিয়ান ধাঁচের। জানা যায়, কুচবিহারের রাজা এটি নির্মাণ করেছিলেন। ডাকবাংলোটি জেলা পরিষদ পরিচালনা করে। এর পাশাপাশি তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদ একটি পিকনিক স্পট নির্মাণ করেছে। ওই স্থান দুটি পাশাপাশি অবস্থিত হওয়ায় সৌন্দর্যবর্ধনের বেশি ভূমিকা পালন করছে। সৌন্দর্যবর্ধনে এ স্থান দুটির সম্পর্ক যেন মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। মহানন্দা নদীর তীরঘেঁষা ভারতের সীমান্তসংলগ্ন (অর্থাৎ নদী পার হলেই ভারত) সুউচ্চ গড়ের ওপর সাধারণ ভূমি থেকে প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিটার উঁচুতে ডাকবাংলো ও পিকনিক স্পট অবস্থিত। ডাকবাংলোর বারান্দায় দাঁড়ালে আপনার চোখে পড়বে ভারত-বাংলাদেশের অবারিত সৌন্দর্য। ওই স্থান থেকে হেমন্ত ও শীতকালে কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। বর্ষাকালে মহানন্দা নদীতে পানি থাকলে এর দৃশ্য আরো বেশি মনোরম হয়।

পঞ্চগড়ের কোন জায়গা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা ভালো দেখা যায়?
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা, তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো, তেঁতুলিয়া বাইপাস, ভজনপুর করতোয়া সেতুসহ বিভিন্ন স্থানের ফাঁকা জায়গা থেকে খুব সকালে মেঘ এবং কুয়াশামুক্ত নীল আকাশে খালি চোখেই দেখা মেলে কাঞ্চনজঙ্ঘার মনোরম দৃশ্য। এছাড়া পঞ্চগড়ের ভিতরগর এলাকা থেকে সবচেয়ে স্বষ্ট দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা।

কখন কাঞ্চনজঙ্ঘা ভালো দেখা যায় বা কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার সেরা সময় কখন?
সাধারণত অক্টোবর এর মাঝামাঝি থেকে নভেম্বর এর মাঝামাঝি পর্যন্ত যখন আকাশে মেঘ থাকে না আবার কুয়াশাও পড়া শুরু হয় না শুধুমাত্র তখনই তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। যাওয়ার আগে পঞ্চগড় এবং ভারতের শিলিগুড়ি, দার্জিলিং, সিকিম এসব এলাকার আবহাওয়ার রিপোর্ট দেখে আসবেন। দুই বাংলার আকাশ পরিষ্কার থাকলে তবেই দেখা যাবে কাঞ্চনজঙ্ঘা ! আর অবশ্যই ২-৩ দিন সেখানে থাকার জন্য প্ল্যান করবেন কারন গেলে সাথে সাথেই যে দেখা মিলবে এটার কোন গ্যারেন্টি নাই।

তেতুলিয়া থে‌কে ভজনপুর এর ভাড়া কত?
তেতুলিয়া থেকে ইজিবাইক কিংবা সিএনজি যোগে ভজনপুর যাওয়া যায়। ইজিবাইক ভাড়া ৩০টাকা (জন প্রতি) এবং সিএনজি ভাড়ার হার ২০টাকা (জন প্রতি)।

কখন যাবেন ?
তেঁতুলিয়া থেকে বছরের সব সময় কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায় না! সাধারণত অক্টোবর এর মাঝামাঝি থেকে নভেম্বর এর মাঝামাঝি পর্যন্ত যখন আকাশে মেঘ থাকে না আবার কুয়াশাও পড়া শুরু হয়নি, শুধুমাত্র তখনই তেঁতুলিয়া থেকে দেখা যায় বরফে ঢাকা ধবল পাহাড়ের চুড়া – কাঞ্চনজঙ্ঘা!

পঞ্চগড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে যাওয়ার উপায়
সরাসরি পঞ্চগড় যেতে হলে আপনি হানিফ কিংবা নাবিল পরিবহনে যেতে পারেন। ভাড়া পড়বে ৪০০-৫০০ টাকার মধ্যে। বাসগুলোতে যেতে পারেন। যদি এসি বাসে যেতে চান তাহলে আপনার জন্য রয়েছে গ্রীন লাইন, আগমনী, টি-আর ট্র্যাভেলস বাসগুলো। ভাড়া লাগবে ৭৫০-৮০০ টাকার মতো। তবে সমস্যা হলো এই বাসগুলো যায় রংপুর পর্যন্ত। রংপুর থেকে পঞ্চগড়ে আপনাকে আলাদা পরিবহনে যেতে হবে। এখানকার বিভিন্ন স্থানে বেড়ানোর জন্য পঞ্চগড় শহর থেকে গাড়ি বা মাইক্রোবাস ভাড়া করে যাওয়া ভালো। সারা দিনের জন্য এসব জায়গা ঘুরতে রিজার্ভ কারের ভাড়া পড়বে ২০০০-২৫০০ টাকা আর মাইক্রো বাসের ভাড়া পড়বে ২৫০০-৩৫০০ টাকা। পঞ্চগড় কেন্দ্রীয় বাসস্টেশন এবং শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে এসব ভাড়ার গাড়ি পাওয়া যাবে।
পঞ্চগড় থেকে তেঁতুলিয়ায় বাস চলাচল করে সারাদিন, ভাড়া পড়বে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। এছাড়াও ঢাকা থেকে তেঁতুলিয়ায় সরাসরি চলাচল করে হানিফ ও বাবুল পরিবহনের বাস, ভাড়া ৫০০ টাকা। পঞ্চগড় বা তেঁতুলিয়ার পথে কোনো এসি বাস নেই। তেঁতুলিয়ায় নেমে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর, চা বাগান বা আশপাশের এলাকায় ঘোরাঘুরির জন্য স্কুটার ভাড়া করাই ভালো।

ট্রেনে যেতে চাইলে
ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, একতা বা দ্রুতযান এক্সপ্রেসে করে সরাসরি পঞ্চগড় নামতে পারবেন। যাত্রাপথে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা।
পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনটি প্রতিদিন ঢাকা থেকে রাত ১০ঃ৪৫ মিনিটে ছেড়ে পঞ্চগড়ে পৌঁছাবে পরদিন সকাল ০৮ঃ৫০ মিনিটে। আর পঞ্চগড় থেকে বেলা ১টা ১৫ মিনিটে ছাড়বে এবং ঢাকায় পৌঁছাবে রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে। পঞ্চগড় থেকে ঢাকাগামী এই ট্রেনটি কেবল পার্বতীপুর, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও স্টেশনে থামবে। পঞ্চগড় এক্সপ্রেসের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে – শোভন ৫৫০ টাকা, এসি চেয়ার ১০৫৩ (স্নিগ্ধা), প্রথম বার্থ ১৯৪২ টাকা।

কোথায় থাকবেন
পঞ্চগড়ে অনেক হোটেল আছে, ভাড়া পড়বে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা। এক হাজার টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন এসি কক্ষ। তেঁতুলিয়ায় মহানন্দা নদী তীরের ডাকবাংলোতে থাকার জন্য তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। দুই বেডের প্রতি কক্ষের ভাড়া পড়বে ৪০০ টাকা। বন বিভাগের রেস্টহাউসে থাকার জন্য জেলা সদর অথবা তেঁতুলিয়ায় বন বিভাগ থেকে অনুমতি নিতে হবে। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরেও জেলা পরিষদের ডাকবাংলো আছে, এখানে থাকার অনুমতি নিতে হবে পঞ্চগড় থেকে। এখানে প্রতি কক্ষের ভাড়া ২০০ টাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *